অনেক বেশি পর্যটক আকর্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে করা চীনের ভিসামুক্ত নীতি সফল হচ্ছে বলে মনে করছেন দেশটির বিশ্লেষকরা। কারণ চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশটিতে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। খবর ব্যাংকক পোস্টের।
থাইল্যান্ডের সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় অভিবাসন প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মোট ১ কোটি ৪৬ লাখ ৪০ হাজার বিদেশি দেশটি পরিদর্শন করেছেন। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫২ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি। অভিবাসন প্রশাসনের তথ্যমতে, বিদেশিদের মধ্যে ভিসামুক্ত ভ্রমণকারীর সংখ্যা ৮৫ লাখ ছাড়িয়েছে, যা দেশের মোট ইনবাউন্ড (অভ্যন্তরীণ) ভ্রমণের ৫৮ শতাংশ এবং গত বছরের তুলনায় ১৯০ শতাংশ বেশি। প্রসঙ্গত, বিদেশি দর্শনার্থীদের মধ্যে যারা ব্যবসা, অবসর ও অন্যান্য উদ্দেশ্যে ১২ মাস পর্যন্ত সময়কালের জন্য অন্য কোনো দেশে গেলে তাকে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ বলে।
তবে বিদেশি পর্যটকের আগমন বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা এখনো পূরণ হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। খবরে বলা হয়, ২০১৯ সালের প্রথমার্ধে যখন ১ কোটি ৫৫ লাখ ৩০ হাজার বিদেশি পর্যটক এসেছিলেন, সেই তুলনায় বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা এখনো কোভিড মহামারি-পূর্ব স্তরে পৌঁছায়নি। তবে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দেশটির অভ্যন্তরীণ পর্যটনক্ষেত্রে ধস নামার মুখে পড়ায় চীন ধীরে ধীরে এমন দেশগুলোর সংখ্যা বাড়াচ্ছে, যাদের নাগরিকরা ব্যবসা, পর্যটন, পরিবার পরিদর্শন ইত্যাদির ক্ষেত্রে ১৫ দিন পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবে।
থাইল্যান্ডভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, নতুন ভিসামুক্ত নীতি ইউরোপের এক ডজনেরও বেশি দেশ ও অস্ট্রেলিয়াকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে। আরও ২৩টি দেশের সঙ্গে পারস্পরিক ভিসামুক্ত ভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে, যার মধ্যে এই বছর তালিকায় যোগ করা থাইল্যান্ডও রয়েছে। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার নাগরিকরা একবার ভ্রমণে সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারবেন।
গত নভেম্বরে থাইল্যান্ড তাদের ভিসামুক্ত ট্রানজিট নীতি ৫৪টি দেশে সম্প্রসারিত করেছে। এই দেশগুলোর নাগরিকরা যদি অন্য কোনো দেশের জন্য (ট্রানজিট নিতে) বৈধ টিকিটধারী হন, তবে তারা বেইজিং, সাংহাই এবং আরও ২০টি শহরে সর্বোচ্চ ১৪৪ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারবেন। এ ছাড়া ক্রুজ জাহাজের যাত্রীদের জন্য রয়েছে আরও অনেক ছাড়।
দেশটির জাতীয় অভিবাসন প্রশাসন জানিয়েছে, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে মোট ২৮ কোটি ৭০ লাখ ইনবাউন্ড ও আউটবাউন্ড ভ্রমণের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৭০ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে রয়েছে দেশের মূল ভূখণ্ডের ১৩ কোটি ৭০ লাখ যাত্রী, ১২ কোটি ১০ লাখ হংকং, ম্যাকাও ও তাইওয়ানের বাসিন্দা এবং ২ কোটি ৯২ লাখ বিদেশি নাগরিক।
ব্যাংকক পোস্ট জানায়, আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ সহজ করার বিভিন্ন ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা কার্ড ব্যবহার করে পর্যটকদের সবচেয়ে সাধারণ দেশীয় পেমেন্ট অ্যাপ ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার বিধিনিষেধ শিথিল করা, যা অতীতে একটি বড় সমস্যা ছিল। এই পেমেন্টের বিধিনিষেধ শিথিল করার কারণ হলো, বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নগদ অর্থ অথবা ভিসা বা মাস্টারকার্ডের মতো প্রধান আন্তর্জাতিক কার্ডগুলো গ্রহণ করে না।
বিদেশি পাসপোর্টধারীদের মোবাইল পেমেন্ট অ্যাপে ব্যয় করার সীমা বাড়িয়েছে পিপলস ব্যাংক অব চীন। একক লেনদেনের জন্য অনুমোদিত পরিমাণ ১ হাজার মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার ডলার হয়েছে এবং বার্ষিক মোট সীমা ১০ হাজার মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার ডলার করা হয়েছে।
থাই সরকারি কর্তৃপক্ষ ভ্রমণকারীদের জন্য আবাসন বুকিংয়ের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করেছে, বিদেশি দর্শনার্থীদের ফিরিয়ে না দিতে ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দিয়েছে এবং বিদেশি অতিথিদের গ্রহণের অনুমতি দেওয়ার জন্য হোটেলগুলোকে একটি সার্টিফিকেট নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে বাতিল করেছে।
চায়না ন্যাশনাল ট্যুরিজম অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সাবেক ডেপুটি ডিরেক্টর ঝু শানঝং ডিসেম্বরে সংবাদমাধ্যম টোয়েন্টিফাস্ট সেঞ্চুরি বিজনেস হেরাল্ডকে বলেছেন, বড় সংখ্যক বিদেশি দর্শনার্থী দেশীয় পর্যটনশিল্পের ভাগ্য উন্নয়ন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, “কোভিড মহামারির আগেও কিছু জনপ্রিয় গন্তব্যের সঙ্গে চীনের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বিদেশি পর্যটনের অবদানের ক্ষেত্রে একটি ‘বড় ব্যবধান’ ছিল, তবে আশা করছি শিগগিরিই এটি কমিয়ে আনার কাজ শুরু হবে।”
ঝু শানঝং আরও বলেন, ‘থাইল্যান্ডের পর্যটন বাজারের প্রবৃদ্ধি ১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বা ১৪ হাজার ৩০০ কোটি (১৪৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে এবং ভবিষ্যতে আমাদের দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বিদেশি পর্যটকদের থেকে পাওয়া রাজস্ব বেড়ে ১ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।’