জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আমূল সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে হয়রানি ও অত্যাচার বন্ধে এনবিআর কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা বলেন তারা। জাতীয় রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখতে রপ্তানিমুখী বাণিজ্যিক সংগঠনের মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সোমবার (১২ আগস্ট) এই সভার আয়োজন করে পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও মোড়ক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএপিএমইএ)।
সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হওয়ার পেছনে এনবিআর চেয়ারম্যানের দায় আছে। এ ছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করেন তারা।
সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও থাই চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ, বাংলাদেশ সুইং থ্রেড ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল কাসেম হায়দার, বিজিএপিএমইএর সাবেক সভাপতি হাফেজ আলম চৌধুরী প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন বিজিএপিএমইএর সভাপতি মো. শাহরিয়ার।
সভায় বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার জন্য গণতন্ত্র আবশ্যক। কেউ দেশের জন্য সম্পদ সৃষ্টি না করেই সম্পদ অর্জন করলে সেটি হবে অবৈধ এবং দুর্নীতি। এ সময় তিনি দলীয় তথা রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ব্যবসায়িক স্বার্থে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ব্যবসায়িক স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে সরকারের সব সিদ্ধান্তকে সমর্থন করার মানসিকতা থাকা উচিত নয়।
দেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে এই ব্যবসায়িক নেতা বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনারা একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের সুযোগ করে দেবেন। এ জন্য বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বিজিএমইএর সহসভাপতি আবদুল্লাহ-হিল-রাকিব ওয়্যারহাউস থেকে মালামাল নিরাপদে স্থানান্তর করার, রুগ্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক সংযোগ ৬ মাস পর্যন্ত না কেটে প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যবসায় ফিরে আসার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান। তা ছাড়া সরকারি পরিসংখ্যানগত তথ্য সঠিক ছিল না বিধায় এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সময় পেছানোর, এনবিআর ঢেলে সাজানো, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকের মাধ্যমে শিল্পনীতি প্রণয়ন, দুই মাসের জন্য সফট লোনের ব্যবস্থা করা, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্লকড্ ব্যবসা পলিসি পরিবর্তন করে ব্যবসাসহায়ক পলিসি করার দাবি জানান তিনি।
মতবিনিময় সভার উদ্যোক্তা ও বিজিএপিএমইএর সভাপতি মো. শাহরিয়ার এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সময়সীমা ২০৩২ পর্যন্ত বাড়ানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল রাখার দাবি জানান। এ ছাড়া রপ্তানিমুখী বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর সব দাবি-দাওয়া একীভূত করে একত্রে সরকারের নিকট দাবি জানানোর জন্য সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক সংগঠনের সমন্বয়ে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম/কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন।
সবশেষে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম দেশের রপ্তানির তথ্য যথাযথ নয় প্রমাণিত হওয়ায় এলডিসিতে উত্তরণ আপাতত স্থগিত রাখার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট দাবি জানান। বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় রপ্তানি ধারা অব্যাহত রাখতে রপ্তানিকারী সংগঠনগুলো একত্রে সভার মাধ্যমে করণীয় সম্পর্কে একটি রূপরেখা প্রণয়ন, গ্যাসের বর্ধিত ধার্যমূল্য বাতিলপূর্বক আন্তর্জাতিক মূল্য পর্যালোচনা করে শিল্প খাতের জন্য গ্যাসের মূল্য পুনরায় নির্ধারণ, পলিসি প্রণয়ন এবং রাজস্ব আহরণ পৃথক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কারের দাবি জানান। সেই সঙ্গে তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রয়োজনে সরেজমিনে পরিদর্শন করে আর্থিক ও নীতিগত সহায়তা দেওয়া এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সেবা সহজ ও হয়রানিমুক্ত পাওয়ার জন্য করণীয় নির্ধারণের প্রস্তাব দেন।