যুক্তরাজ্যে গত সপ্তাহে সংঘটিত দাঙ্গা ও লুটপাটের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য বিমা কোম্পানিগুলোকে অনুরোধ করেছে দেশটির মন্ত্রীরা। বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথান রেনল্ডস দেশটির বিমা কোম্পানিগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্রিটিশ ইনস্যুরারকে (এবিআই) চিঠি লিখে বলেছেন, এটা যেন নিশ্চিত করা হয় যে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কোম্পানিগুলো তাদের বিমা পলিসির ক্ষতিপূরণ পায়। খবর বিবিসির।
ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, স্টকপোর্ট, লিভারপুল, হাল, সান্ডারল্যান্ড ও বেলফাস্টের দোকান ও হোটেলসহ বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জানালা বা ভবনের সামনের অংশ দাঙ্গাকারীরা ভাঙচুর করেছে ও আগুন দিয়েছে। কিছু ব্যবসায়ী লুটপাটের কথা জানিয়েছেন।
এবিআই জানিয়েছে, তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রাহকদের সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করতে তাদের অন্য সদস্য, সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে কাজ করবে।
রেনল্ডস বলেন, তিনি শুক্রবার লিভারপুল গিয়েছিলেন যেখানে তিনি সহিংসতার ক্ষতিগ্রস্ত কিছু ছোট ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা (ব্যবসায়ীরা) জানত না যে, তাদের বিমা করা আছে কি না অথবা অপর্যাপ্ত পরিমাণ কভারেজ নিয়ে বিমা করা থাকলেও তার বিপরীতে সাহায্য পাওয়া যায় কি না।
দাঙ্গায় ব্যবসার ক্ষতি হলে পলিসি কি পরিশোধ করতে হবে?
বেশির ভাগ বাণিজ্যিক বিমা পলিসির আওতায় দাঙ্গা বা অশান্তির কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ ডাইরেক্ট লাইন নামের একটি বিমা কোম্পানি জানায়, তারা তাদের ব্যবসায়িক বিমা পলিসির অধীনে দাঙ্গা বা অশান্তির জন্য বিমা কভারেজ স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে থাকে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ‘ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহতকরণ’ও এই কভারেজের অন্তর্ভুক্ত থাকে। যেমন- পুলিশ যদি কোনো এলাকাকে ঘিরে ফেলে, এর ফলে ক্রেতারা দোকানে আসতে না পারলে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের আয় বাধাগ্রস্ত হলে, কোম্পানিটি বিমা প্রতিষ্ঠানের কভারেজের আওতায় পড়বে। তবে ব্যবসায়ীদের উচিত তাদের পলিসির আওতায় ঠিক কী কী আছে তা জানতে সর্বদা তাদের বিমা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা।
খবরে বলা হয়, ক্ষতিপূরণ পেতে হলে যেকোনো ক্ষতির বিষযয়ে পুলিশকে জানাতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করার জন্য পুলিশের কাছ থেকে একটি ‘অপরাধ রেফারেন্স নম্বর’ নিতে হবে।
যদি বিমার আওতায় থাকা কোম্পানি উত্তর আয়ারল্যান্ডে অবস্থিত হয়, তাহলে এবিআই বলেছে, নীতিগুলো পরিবর্তিত হতে পারে। কিন্তু দুর্বৃত্তদের দ্বারা ক্ষতি হয়ে থাকলে সে ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এবিআই বলেছে, এসব ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ (উত্তর আয়ারল্যান্ড) থেকে ক্ষতিপূরণ চাওয়া যায়।
এবিআইয়ের মতে, যদি কারও গাড়ি দাঙ্গার সময় ভাঙচুর করা হয়, তাহলে বেশির ভাগ সমন্বিত মোটর বিমার আওতায় গাড়ির ক্ষতির জন্য কভারেজ দিতে হবে।
বিমা করা না থাকলে কী ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে?
বিবিসি বলছে, বিমা না করলেও, আপনি দাঙ্গা ক্ষতিপূরণ আইনের (আরসিএ) মাধ্যমে এই ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। এ বিষয়ে ব্রিটিশ বাণিজ্যমন্ত্রী রেনল্ডস বলেছেন, লুটপাটের মতো ঘটনায় ক্ষতি, সম্পদ ধ্বংস ও চুরিজনিত ক্ষতির ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে, আপনাকে দেখাতে হবে যে, আপনি যে ক্ষতির দাবি করছেন, সেটি মূলত দাঙ্গার কারণেই হয়েছে।
যদি আপনার বিমা না থাকে অথবা বিমার পর্যাপ্ত কভারেজ নেওয়া না হয়, তাহলে দাঙ্গা ক্ষতিপূরণ আইন একটি ভালো অপশন।
সরকার জানিয়েছে যে, দাঙ্গা শেষ হওয়ার ৪২ দিনের মধ্যে ব্যবসায়ীরা আরসিএর মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন। যদি কোনো ব্যক্তি কভারেজের আওতাভুক্ত হন এবং তার বিমা কোম্পানি দাবির সম্পূর্ণ অথবা আংশিক অর্থ পরিশোধ করতে অস্বীকার করে, তাহলে তিনি আরসিএতে আবেদন করতে পারেন। তার বিমা কোম্পানি তাকে জানানোর ৪২ দিনের মধ্যে দাবি করতে পারেন যে, তিনি কভারেজ পাননি।
খবরে বলা হয়, বিমাকারী ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মালিক হন, তাহলে ভবনের ক্ষতির জন্য দাবি করতে পারেন। যদি ভাড়াটিয়া বা বাসিন্দা হন তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত বা চুরি হওয়া সামগ্রীর জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন। সরকার এটাও বলেছে যে, মালিকরা গাড়িতে রাখা ব্যবসায়িক সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত বা চুরি হওয়া এবং অপর্যাপ্ত বিমা কভারেজের আওতাভুক্ত গাড়িতে থাকা সামগ্রীর জন্যও ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন।
ক্ষতিপূরণ নগদ অর্থের মাধ্যমে অথবা ‘দাবি কর্তৃপক্ষের’ মেরামতের খরচ বহন করার মাধ্যমে হতে পারে। এখন আসা যাক কীভাবে দাবি করতে হয়, সে বিষয়ে। দাবি কর্তৃপক্ষ হলো, যেখানে দাঙ্গা হয়েছে সেই নির্দিষ্ট এলাকার পুলিশ অ্যান্ড ক্রাইম কমিশনার। লন্ডনের ক্ষেত্রে এটি আলাদা, যার বিস্তারিত জানা যাবে ‘রায়ট কমপেনশন ক্লেইমস গাইডেন্স ফর ক্লেইমেন্টস’ সংক্রান্ত নির্দেশিকায়। ব্যবসায়ীদের যুক্তরাজ্যের পুলিশ বাহিনীর ওয়েবসাইটে যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। দাবির ফরমটি ক্লেইমস গাইডেন্স নামক ওই সরকারি নথির শেষে রয়েছে।
বিমা কোম্পানি অর্থ পরিশোধ করতে যদি খুব বেশি সময় নেয়?
যদিও দ্রুত কাজ করার জন্য বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিশ্চিয়তা দিতে রেনল্ডস এবিআইকে চিঠি লিখেছেন, তবে এটিও মনে রাখতে হবে যে, এবিআই একটি বাণিজ্যিক সংস্থা। এটি কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা নয় এবং তাই কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেরি করার জন্য শাস্তির আওতায় আনতে পারে না।
তবুও এবিআই বলেছে, ‘আমরা দাবি প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে আমাদের সদস্যদের সঙ্গে কাজ করব।’
যা হোক, যদি কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তাদের দাবির সঙ্গে যে গতিতে আচরণ করা হচ্ছে তাতে সন্তুষ্ট না হয়, তবে তারা তাদের বিমা কোম্পানির অভিযোগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে পারে। যদি সেখানেও কাজ না হয়, তবে গ্রাহকরা অভিযোগ করার জন্য আর্থিক খাতের অভিযোগ নিষ্পত্তিবিষয়ক কোম্পানি ফিন্যান্সিয়াল অম্বুডসম্যান সার্ভিসে যেতে পারেন।