ঢাকা ২৭ ভাদ্র ১৪৩১, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

যুক্তরাজ্যে দ্রুত বিমাগ্রহীতাদের ক্ষতিপূরণের আহ্বান

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০২:৩৪ পিএম
যুক্তরাজ্যে দ্রুত বিমাগ্রহীতাদের ক্ষতিপূরণের আহ্বান
দাঙ্গার পর ইংল্যান্ডের সাউথপোর্টের সাসেক্স রোড পরিষ্কার করতে সাহায্য করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যে গত সপ্তাহে সংঘটিত দাঙ্গা ও লুটপাটের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য বিমা কোম্পানিগুলোকে অনুরোধ করেছে দেশটির মন্ত্রীরা। বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথান রেনল্ডস দেশটির বিমা কোম্পানিগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্রিটিশ ইনস্যুরারকে (এবিআই) চিঠি লিখে বলেছেন, এটা যেন নিশ্চিত করা হয় যে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কোম্পানিগুলো তাদের বিমা পলিসির ক্ষতিপূরণ পায়। খবর বিবিসির।

ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, স্টকপোর্ট, লিভারপুল, হাল, সান্ডারল্যান্ড ও বেলফাস্টের দোকান ও হোটেলসহ বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জানালা বা ভবনের সামনের অংশ দাঙ্গাকারীরা ভাঙচুর করেছে ও আগুন দিয়েছে। কিছু ব্যবসায়ী লুটপাটের কথা জানিয়েছেন। 

এবিআই জানিয়েছে, তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রাহকদের সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করতে তাদের অন্য সদস্য, সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে কাজ করবে।

রেনল্ডস বলেন, তিনি শুক্রবার লিভারপুল গিয়েছিলেন যেখানে তিনি সহিংসতার ক্ষতিগ্রস্ত কিছু ছোট ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা (ব্যবসায়ীরা) জানত না যে, তাদের বিমা করা আছে কি না অথবা অপর্যাপ্ত পরিমাণ কভারেজ নিয়ে বিমা করা থাকলেও তার বিপরীতে সাহায্য পাওয়া যায় কি না।

দাঙ্গায় ব্যবসার ক্ষতি হলে পলিসি কি পরিশোধ করতে হবে?
বেশির ভাগ বাণিজ্যিক বিমা পলিসির আওতায় দাঙ্গা বা অশান্তির কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ ডাইরেক্ট লাইন নামের একটি বিমা কোম্পানি জানায়, তারা তাদের ব্যবসায়িক বিমা পলিসির অধীনে দাঙ্গা বা অশান্তির জন্য বিমা কভারেজ স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে থাকে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ‘ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহতকরণ’ও এই কভারেজের অন্তর্ভুক্ত থাকে। যেমন- পুলিশ যদি কোনো এলাকাকে ঘিরে ফেলে, এর ফলে ক্রেতারা দোকানে আসতে না পারলে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের আয় বাধাগ্রস্ত হলে, কোম্পানিটি বিমা প্রতিষ্ঠানের কভারেজের আওতায় পড়বে। তবে ব্যবসায়ীদের উচিত তাদের পলিসির আওতায় ঠিক কী কী আছে তা জানতে সর্বদা তাদের বিমা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা।

খবরে বলা হয়, ক্ষতিপূরণ পেতে হলে যেকোনো ক্ষতির বিষযয়ে পুলিশকে জানাতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করার জন্য পুলিশের কাছ থেকে একটি ‘অপরাধ রেফারেন্স নম্বর’ নিতে হবে।

যদি বিমার আওতায় থাকা কোম্পানি উত্তর আয়ারল্যান্ডে অবস্থিত হয়, তাহলে এবিআই বলেছে, নীতিগুলো পরিবর্তিত হতে পারে। কিন্তু দুর্বৃত্তদের দ্বারা ক্ষতি হয়ে থাকলে সে ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এবিআই বলেছে, এসব ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ (উত্তর আয়ারল্যান্ড) থেকে ক্ষতিপূরণ চাওয়া যায়।

এবিআইয়ের মতে, যদি কারও গাড়ি দাঙ্গার সময় ভাঙচুর করা হয়, তাহলে বেশির ভাগ সমন্বিত মোটর বিমার আওতায় গাড়ির ক্ষতির জন্য কভারেজ দিতে হবে।

বিমা করা না থাকলে কী ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে?
বিবিসি বলছে, বিমা না করলেও, আপনি দাঙ্গা ক্ষতিপূরণ আইনের (আরসিএ) মাধ্যমে এই ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। এ বিষয়ে ব্রিটিশ বাণিজ্যমন্ত্রী রেনল্ডস বলেছেন, লুটপাটের মতো ঘটনায় ক্ষতি, সম্পদ ধ্বংস ও চুরিজনিত ক্ষতির ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে, আপনাকে দেখাতে হবে যে, আপনি যে ক্ষতির দাবি করছেন, সেটি মূলত দাঙ্গার কারণেই হয়েছে।

যদি আপনার বিমা না থাকে অথবা বিমার পর্যাপ্ত কভারেজ নেওয়া না হয়, তাহলে দাঙ্গা ক্ষতিপূরণ আইন একটি ভালো অপশন।

সরকার জানিয়েছে যে, দাঙ্গা শেষ হওয়ার ৪২ দিনের মধ্যে ব্যবসায়ীরা আরসিএর মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন। যদি কোনো ব্যক্তি কভারেজের আওতাভুক্ত হন এবং তার বিমা কোম্পানি দাবির সম্পূর্ণ অথবা আংশিক অর্থ পরিশোধ করতে অস্বীকার করে, তাহলে তিনি আরসিএতে আবেদন করতে পারেন। তার বিমা কোম্পানি তাকে জানানোর ৪২ দিনের মধ্যে দাবি করতে পারেন যে, তিনি কভারেজ পাননি।

খবরে বলা হয়, বিমাকারী ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মালিক হন, তাহলে ভবনের ক্ষতির জন্য দাবি করতে পারেন। যদি ভাড়াটিয়া বা বাসিন্দা হন তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত বা চুরি হওয়া সামগ্রীর জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন। সরকার এটাও বলেছে যে, মালিকরা গাড়িতে রাখা ব্যবসায়িক সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত বা চুরি হওয়া এবং অপর্যাপ্ত বিমা কভারেজের আওতাভুক্ত গাড়িতে থাকা সামগ্রীর জন্যও ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন। 

ক্ষতিপূরণ নগদ অর্থের মাধ্যমে অথবা ‘দাবি কর্তৃপক্ষের’ মেরামতের খরচ বহন করার মাধ্যমে হতে পারে। এখন আসা যাক কীভাবে দাবি করতে হয়, সে বিষয়ে। দাবি কর্তৃপক্ষ হলো, যেখানে দাঙ্গা হয়েছে সেই নির্দিষ্ট এলাকার পুলিশ অ্যান্ড ক্রাইম কমিশনার। লন্ডনের ক্ষেত্রে এটি আলাদা, যার বিস্তারিত জানা যাবে ‘রায়ট কমপেনশন ক্লেইমস গাইডেন্স ফর ক্লেইমেন্টস’ সংক্রান্ত নির্দেশিকায়। ব্যবসায়ীদের যুক্তরাজ্যের পুলিশ বাহিনীর ওয়েবসাইটে যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। দাবির ফরমটি ক্লেইমস গাইডেন্স নামক ওই সরকারি নথির শেষে রয়েছে।

বিমা কোম্পানি অর্থ পরিশোধ করতে যদি খুব বেশি সময় নেয়?
যদিও দ্রুত কাজ করার জন্য বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিশ্চিয়তা দিতে রেনল্ডস এবিআইকে চিঠি লিখেছেন, তবে এটিও মনে রাখতে হবে যে, এবিআই একটি বাণিজ্যিক সংস্থা। এটি কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা নয় এবং তাই কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেরি করার জন্য শাস্তির আওতায় আনতে পারে না।

তবুও এবিআই বলেছে, ‘আমরা দাবি প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে আমাদের সদস্যদের সঙ্গে কাজ করব।’

যা হোক, যদি কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তাদের দাবির সঙ্গে যে গতিতে আচরণ করা হচ্ছে তাতে সন্তুষ্ট না হয়, তবে তারা তাদের বিমা কোম্পানির অভিযোগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে পারে। যদি সেখানেও কাজ না হয়, তবে গ্রাহকরা অভিযোগ করার জন্য আর্থিক খাতের অভিযোগ নিষ্পত্তিবিষয়ক কোম্পানি ফিন্যান্সিয়াল অম্বুডসম্যান সার্ভিসে যেতে পারেন।

ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ এএম
ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা
বাংলাদেশ ব্যাংক

ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণে নতুন নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নির্দেশের আওতায় একাধিক ঠিকানায় স্থাপিত একটি কোম্পানির বিভিন্ন ইউনিটের নামে ঋণ মঞ্জুর করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে একটি কোম্পানির একাধিক ইউনিটের নামে ঋণ মঞ্জুর করতে হলে ওই ইউনিটকেও যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরে (আরজেএসসি) নিবন্ধিত হতে হবে। 

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) থেকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।

নির্দেশে বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, দেশে বিভিন্ন ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানি ও কারখানা পৃথক ঠিকানায় স্থাপিত বিভিন্ন ইউনিটের নামে ঋণ মঞ্জুর করা হচ্ছে। এতে সিআইবি রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করছে। 

নতুন নির্দেশ অনুযায়ী আরজেএসসিতে নিবন্ধিত একটি কোম্পানি যেমন ‘ক লিমিটেড’। এর আওতায় ‘ক লিমিটেড (ইউনিট-১)’, ‘ক লিমিটেড (ইউনিট-২)’, ‘ক লিমিটেড (ইউনিট-৩)’, ‘ক লিমিটেড (গার্মেন্টস ইউনিট)’ নামে ইউনিটগুলোকে ‘ক লিমিটেড’ কোম্পানির আওতাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে গণ্য করে সিআইবি ডাটাবেজে রিপোর্ট করতে হবে। 

একাধিক ঠিকানায় ইউনিট বা কারখানা স্থাপন করলে সেই ইউনিট বা কারখানাগুলো ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানি হিসেবে আরজেএসসিতে নিবন্ধিত হলে ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানি হিসেবেই সিআইবি ডাটাবেজে রিপোর্ট করতে হবে।

 

ডিএসইর পরিচালক পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন মাজেদুর রহমান

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ পিএম
ডিএসইর পরিচালক পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন মাজেদুর রহমান
কে এ এম মাজেদুর রহমান

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নবনির্বাচিত পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি ডিএসইর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনে নিজের অপারগতার কথা জানিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন।

গত রবিবার বিএসইসির চেয়ারম্যানকে দেওয়া চিঠিতে মাজেদুর রহমান ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা জানিয়ে ডিএসইর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন। এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর বিএসইসির পক্ষ থেকে ডিএসইর পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। ওই দিন কমিশন সভায় ডিএসইতে সাত স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। এতে ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় সংস্থাটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও মালদ্বীপ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান কে এ এম মাজেদুর রহমান, আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাহিদ হোসেন, সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মফিজুল ইসলাম রাশেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির বিভাগের অধ্যাপক ও সিরডাপের গবেষণা পরিচালক মো. হেলালউদ্দিন, মেটলাইফ বাংলাদেশের সাবেক মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ হাম্মাদুল করীম ও বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার ও ডিজাস্টার রিকভারি সাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইসহাক মিয়াকে।

তবে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে বিএসইসির সঙ্গে ডিএসইর মনোমালিন্য বা বিতর্ক তৈরি হয়। কারণ ডিএসইর মতামত ছাড়াই এককভাবে বিএসইসির পক্ষ থেকে সংস্থাটিতে সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণ বা ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক নির্ধারণের দায়িত্ব সংস্থাটির নমিনেশন অ্যান্ড রেমুনারেশন কমিটির (এনআরসি)।

কিন্তু গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির মৌখিক নির্দেশনায় ডিএসইর গত পরিচালনা পর্ষদের স্বতন্ত্র পরিচালকেরা পদত্যাগ করেন। এতে এনআরসি কমিটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। যদিও এ নিয়োগের জন্য ডিএসইর পক্ষ থেকে নাম প্রস্তাব করা হলেও সেই তালিকা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এ কারণে ডিএসইর অংশীদারদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

জানা যায়, ডিএসইর পর্ষদ পুনর্গঠন নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় স্বতন্ত্র পরিচালক পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন কে এ এম মাজেদুর রহমান। যদিও তিনি ব্যক্তিগত কারণেই তার অপরাগতার কথা জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে।

বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, ডিএসইর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে এককভাবে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে এতে আইনগত জটিলতা দেখা দেয়। যার ফলে ১ সেপ্টেম্বর নতুন পর্ষদ গঠিত হলেও এখন পর্যন্ত নতুন পরিচালকরা দায়িত্ব নিতে পারেননি। এমনকি অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পর্ষদও এখনো পুনর্গঠন করা হয়নি। ফলে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালনায় শূন্যতা বিরাজ করছে।

২০১০ সালের শেয়ারবাজারে ধসের পর খ্যাতনামা ব্যাংকার খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৩ সালের নভেম্বরে ডিএসই ও সিএসই ডিমিউচুয়ালাইজড এক্সচেঞ্জ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এরপর থেকে স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালিত হয়ে আসছে স্বতন্ত্র পরিচালকদের নেতৃত্বে। ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ ১৩ সদস্যের। এর মধ্যে স্বতন্ত্র পরিচালক মোট সাতজন। এর বাইরে সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন চারজন শেয়ারধারী পরিচালক, কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন একজন পরিচালক। আর সংস্থাটির এমডি পদাধিকারবলে পর্ষদের সদস্য।

৩০৭ কোম্পানির দরপতনে কমেছে লেনদেন

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫২ এএম
আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫২ এএম
৩০৭ কোম্পানির দরপতনে কমেছে লেনদেন

রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও দেশের পুঁজিবাজারে এর প্রভাব পড়েনি। বরং প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে। 

গত কয়েক কার্যদিবসের মতো সোমবারও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে কমেছে মূল্য সূচক। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্য সূচক কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে টানা ছয় কার্যদিবস পতনের মধ্যে থাকল শেয়ারবাজার।

এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। মাঝে কিছু সময়ের জন্য সূচক ঊর্ধ্বমুখী হলেও তা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। বরং লেনদেনের শেষদিকে দরপতনের মাত্রা আরও বাড়ে। এতে মূল্য সূচকের বড় পতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ৬৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০৭টি প্রতিষ্ঠানের। আর ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪৯ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৯২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২১৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সবকটি মূল্য সূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬৭৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৫৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে লিন্ডে বাংলাদেশের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩২ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের ৩০ কোটি ৭৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২১ কোটি ১১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এমজেএল বাংলাদেশ।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্র্যাক ব্যাংক, অগ্নি সিস্টেম, লাভেলো আইসক্রিম, এনআরবি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক এবং ইবনে সিনা।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে এদিন দর বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

এদিন মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর আগের কার্যদিবসের তুলনায় বেড়েছে ২ টাকা ৮০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৯২৯ শতাংশ। তাতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি।

দর বৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা বিকন ফার্মার শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় ৯ দশমিক ৯২১ শতাংশ বেড়েছে। আর শেয়ার দর ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ বাড়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে এনভয় টেক্সটাইল।

গতকাল দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো লিবরা ইনফিউশন, দেশবন্ধু পলিমার, এনআরবি ব্যাংক, সিভিও পেট্রো কেমিক্যাল, ফার্মাএইড, হাইডেলবার্গ মেটারিয়ালস এবং ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।

এদিন রূপালী লাইফের শেয়ার দর আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে ১০ টাকা ৭০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তাতে দরপতনের শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি।

দর হারানোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা এসকে ট্রিমসের শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ার দর ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ কমে যাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে ইউসিবি।

গতকাল দরপতনের তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, কপারটেক, কনফিডেন্স সিমেন্ট, প্রাইম টেক্সটাইল, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, মিথুন নিটিং এবং ফিনিক্স ফাইন্যান্স।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৭২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ২২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭০টির এবং ১৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

বিশ্ববাজারে কমেছে মালয়েশিয়ান পাম অয়েলের দাম

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪ এএম
বিশ্ববাজারে কমেছে মালয়েশিয়ান পাম অয়েলের দাম
ছবি : সংগৃহীত

বিশ্ববাজারে মালয়েশিয়ান পাম অয়েলের দাম কমেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী সয়াবিন তেলের বেচাকেনা ভালো হওয়ায় গতকাল সোমবার পাম অয়েলের ভবিষ্যৎ সরবরাহ (ফিউচার) চুক্তিমূল্য কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বোর্ডের উৎপাদন ও মজুতের তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ, এই তথ্যের ওপর নির্ভর করে বাজারের ভবিষ্যৎ গতি নির্ধারিত হয়। খবর রয়টার্সের।

ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থাটির খবরে বলা হয়, বুরসা মালয়েশিয়া ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জে নভেম্বরে সরবরাহের চুক্তিতে বেঞ্চমার্ক পাম অয়েলের দাম ৩ রিঙ্গিত বা দশমিক ০৮ শতাংশ কমেছে। এর মধ্য দিয়ে বর্তমানে পাম অয়েলের দাম কমে টনপ্রতি ৩ হাজার ৮৯৫ রিঙ্গিতে (৮৯১ ডলার ৭১ সেন্ট) নেমেছে।

উদ্ভিজ্জ তেলের মুম্বাইভিত্তিক ব্রোকারেজ কোম্পানি সানভিন গ্রুপের গবেষণা প্রধান অনিলকুমার বাগানি বলেছেন, শিকাগোতে (শিকাগো বোর্ড অব ট্রেড) সয়াবিন তেল বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় অপরিশোধিত পাম অয়েলের ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিমূল্য কমেছে।

খবরে বলা হয়, মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বোর্ড (এমপিওবি) মঙ্গলবার তাদের মাসিক পাম অয়েলের পরিসংখ্যান প্রকাশ করার কথা রয়েছে।

রয়টার্সের একটি জরিপ দেখানো হয়েছে, রপ্তানির চাহিদা কম হওয়ার কারণে মালয়েশিয়ার পাম অয়েলের মজুত আগস্টের শেষনাগাদ ছয় মাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বৈশ্বিক পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান আমস্পেক অ্যাগ্রির মতে, আগস্টের জন্য দেশটির পাম অয়েল রপ্তানির পরিমাণ ১৩ লাখ ৭৬ হাজার ৪১২ টনে দাঁড়াতে পারে।

পাম অয়েলের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া প্রতিযোগিতা ও কৃষকদের আয় বাড়ানোর জন্য রপ্তানি শুল্ক কমানোর পরিকল্পনা করছে।

কারগো সার্ভেয়ার ইন্টারটেক টেস্টিং সার্ভিসের মতে, আগস্ট মাসে মালয়েশিয়ার পাম অয়েল পণ্যের রপ্তানি জুলাইয়ের ১৬ লাখ ৪ হাজার ৫৭৮ টন থেকে কমে ১৪ লাখ ৪৫ হাজার ৪৪২ টন হয়েছে। সে হিসাবে রপ্তানি কমেছে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ।
এদিকে সোমবার জ্বালানি তেলের ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিমূল্য প্রায় ১ শতাংশ বেড়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের উপসাগরীয় উপকূলের দিকে একটি সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে যাওয়ায় জ্বালানি তেলের দাম আগের সপ্তাহের বড় ধরনের ক্ষতি থেকে কিছুটা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিমূল্য পাম অয়েলকে বায়োডিজেল কাঁচামাল হিসেবে আরও আকর্ষণীয় বিকল্প করে তোলে।

রয়টার্সের প্রযুক্তিগত বিশ্লেষক ওয়াং তাও বলেছেন, পাম অয়েলের দাম টনপ্রতি সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৮৮৬ রিঙ্গিতের স্তরে উঠতে পারে। এর বিপরীতে দাম কমলে সর্বনিম্ন ৩ হাজার ৮৫৬ রিঙ্গিত পর্যন্ত নামার রেকর্ড হতে পারে।

রয়টার্স জানায়, গতকাল বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজার চার সপ্তাহের সর্বনিম্ন স্তরে নেমেছে। এশিয়ার কমে যাওয়া শেয়ারবাজারের চাপের কারণে এই অবস্থা হয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় শেয়ারবাজার বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ বৃহস্পতিবার ইসিবি (ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক) দ্বারা সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া সরকারি বন্ডের সুদহার বেড়েছে এবং জ্বালানি তেলের দাম গত সপ্তাহে পতনের পর চলতি সপ্তাহে আবার বেড়েছে।

চাকরি ছাড়তে বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হচ্ছেন জাপানিরা!

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৮ এএম
চাকরি ছাড়তে বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হচ্ছেন জাপানিরা!
জাপানের টোকিওর একটি সড়কে কর্মস্থলগামী একদল মানুষ। ছবি: সংগৃহীত

ইউকি ওয়াতানাবে নামের এক নারী প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা অফিসে কাজ করতেন। আর এটা ছিল তার ছোট কর্মদিবসগুলোর একটি। সাধারণত সর্বনিম্ন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করাটা সেখানে প্রত্যাশিতই ছিল। জাপানের বৃহত্তম টেলিযোগাযোগ ও ই-পেমেন্ট কোম্পানিগুলোর কয়েকটিতে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ২৪ বছর বয়সী ওয়াতানাবে বলেন, ‘যেদিন সবচেয়ে বেশি দেরি হতো সেদিন আমি রাত ১১টায় কর্মস্থল ত্যাগ করতাম।’

দীর্ঘ কর্মঘণ্টার ফলে ওয়াতানাবের স্বাস্থ্যগত সমস্যাও বাড়তে ছিল। তার ‘পা কাঁপত এবং পেটেরও কিছু সমস্যা হতো। তারপরেও এতই তীব্র চাপ ছিল যে, ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা নষ্ট হওয়ার ভয়ে সিএনএনের সঙ্গে কথা বলার সময় ওয়াতানাবে একটি ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। তিনি জানতেন, তাকে কাজ ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু একটি বিষয় তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল, সেটি হলো জাপানের কাজের সংস্কৃতি। কারণ দেশটির বিখ্যাত ও শীর্ষ থেকে নিচু স্তর পর্যন্ত সবখানেই কাজের সংস্কৃতি প্রায় একই ধরনের।

সময়মতো কাজ শেষ করা বা কিছু সময়ের জন্য ছুটি নেওয়া দেশটিতে যথেষ্ট জটিল হতে পারে। তবে আরও জটিল হলো পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া। কেননা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে এটাকে চূড়ান্ত অবমাননা হিসেবে দেখা হতে পারে। কারণ, সেখানে কর্মীরা ঐতিহ্যগতভাবে একই নিয়োগকর্তার সঙ্গে দশকের পর দশক, কেউ আবার সারা জীবন একই কর্মস্থলে কাটিয়ে দেয়।

সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হলো, খিটখিটে বসরা পদত্যাগপত্র ছিঁড়ে ফেলে দেন এবং কর্মীদের জোর করে থাকতে বাধ্য করার জন্য তাদের হয়রানি করেন।

ওয়াতানাবে তার আগের চাকরিতে অসন্তুষ্ট ছিলেন। তিনি জানান, তার সাবেক সুপারভাইজর প্রায়ই তাকে অগ্রাহ্য করতেন, তাকে খারাপ অনুভূতি দিতেন। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করার সাহস করেননি।

সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি চাইনি যে আমার প্রাক্তন নিয়োগকর্তা আমার পদত্যাগ অস্বীকার করুক এবং আমাকে এখানে আরও কাজ করতে বাধ্য করুক।’ 

কিন্তু তিনি এই অচলাবস্থা থেকে মুক্তি পেতে একটি উপায় খুঁজে পেলেন। তিনি ‘মোমুরি’ নামের একটি পদত্যাগ সংস্থার সাহায্য চাইলেন। প্রতিষ্ঠানটি ভীতু কর্মীদের তাদের ভয়ংকর বসদের কাছ থেকে পদত্যাগ করতে সাহায্য করে। একটি দামি নৈশভোজের বিনিময়ে অনেক জাপানি কর্মী এই প্রক্সি ফার্মগুলোকে পদত্যাগ করতে সাহায্য করার জন্য নিয়োগ করে। এর উদ্দেশ্য হলো তারা যেন চাপমুক্তভাবে পদত্যাগ করতে পারেন।

কোভিডের আগে থেকেই এই শিল্পটি বিদ্যমান ছিল। কিন্তু মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞদের মতে, বছরের পর বছর ‘হোম অফিস’ করার পর মহামারি-পরবর্তী সময়ে এটির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এমনকি জাপানের সবচেয়ে অনুগত কর্মীদেরও তাদের কর্মজীবন নিয়ে চিন্তা করতে উদ্ধুদ্ধ করেছে এই সংস্থাগুলো।

জাপানে কতগুলো পদত্যাগ সংস্থা গড়ে উঠেছে তার কোনো আনুষ্ঠানিক হিসাব নেই। তবে এগুলো পরিচালনা করা ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সংস্থাগুলোর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

গ্রাহকদের অনুভূতি থেকেই সংস্থার নামকরণ
মোমুরির অপারেশন ম্যানেজার শিয়োরি কাওয়ামাতা বলেছেন, গত এক বছরেই তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে ১১ হাজার পর্যন্ত আবেদন পেয়েছেন। টোকিওর ব্যস্ততম ব্যবসায়িক জেলা মিনাতোতে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালে শুরু হয়েছিল। সংস্থাটি এমন একটি নাম নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে, যা তাদের অসহায় গ্রাহকদের অনুভূতিকে ধারণ করে। তারা সংস্থার নাম দিয়েছেন ‘মোমুরি’, জাপানি ভাষায় এর অর্থ হলো ‘আমি আর পারছি না’। পূর্ণকালীন কর্মীদের ২২ হাজার ইয়েন (প্রায় ১৫০ ডলার) এবং খণ্ডকালীন কর্মীদের ১২ হাজার ইয়েন খরচে কর্মীদের পদত্যাগ করতে সহায়তা করে সংস্থাটি। সংস্থাগুলো নিয়োগকারী কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করা এবং আইনি বিরোধ দেখা দিলে আইনজীবীদের সুপারিশ পাওয়ার বিষয়ে গ্রাহকদের প্রতিশ্রুতি দেয়।

জাপানের আনুগত্যপূর্ণ কর্মস্থল সংস্কৃতির আরেকটি উদাহরণ দিয়ে শিয়োরি কাওয়ামাতা বলেন, ‘কিছু লোক তাদের পদত্যাগপত্র তিনবার ছিঁড়ে ফেলার পরও এবং নিয়োগকর্তারা মাটিতে হাঁটু গেড়ে প্রণাম করে চাকরি ছাড়তে না দেওয়ার পর আমাদের কাছে আসে।’ [সূত্র: সিএনএন; ভাষান্তর: ইসমাঈল হোসাইন সোহেল]