রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও দেশের পুঁজিবাজারে এর প্রভাব পড়েনি। বরং প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে।
গত কয়েক কার্যদিবসের মতো সোমবারও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে কমেছে মূল্য সূচক। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্য সূচক কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে টানা ছয় কার্যদিবস পতনের মধ্যে থাকল শেয়ারবাজার।
এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। মাঝে কিছু সময়ের জন্য সূচক ঊর্ধ্বমুখী হলেও তা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। বরং লেনদেনের শেষদিকে দরপতনের মাত্রা আরও বাড়ে। এতে মূল্য সূচকের বড় পতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ৬৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০৭টি প্রতিষ্ঠানের। আর ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪৯ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৯২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২১৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্য সূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬৭৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৫৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে লিন্ডে বাংলাদেশের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩২ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের ৩০ কোটি ৭৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২১ কোটি ১১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এমজেএল বাংলাদেশ।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্র্যাক ব্যাংক, অগ্নি সিস্টেম, লাভেলো আইসক্রিম, এনআরবি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক এবং ইবনে সিনা।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে এদিন দর বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
এদিন মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর আগের কার্যদিবসের তুলনায় বেড়েছে ২ টাকা ৮০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৯২৯ শতাংশ। তাতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি।
দর বৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা বিকন ফার্মার শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় ৯ দশমিক ৯২১ শতাংশ বেড়েছে। আর শেয়ার দর ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ বাড়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে এনভয় টেক্সটাইল।
গতকাল দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো লিবরা ইনফিউশন, দেশবন্ধু পলিমার, এনআরবি ব্যাংক, সিভিও পেট্রো কেমিক্যাল, ফার্মাএইড, হাইডেলবার্গ মেটারিয়ালস এবং ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
এদিন রূপালী লাইফের শেয়ার দর আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে ১০ টাকা ৭০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তাতে দরপতনের শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি।
দর হারানোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা এসকে ট্রিমসের শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ার দর ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ কমে যাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে ইউসিবি।
গতকাল দরপতনের তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, কপারটেক, কনফিডেন্স সিমেন্ট, প্রাইম টেক্সটাইল, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, মিথুন নিটিং এবং ফিনিক্স ফাইন্যান্স।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৭২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ২২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭০টির এবং ১৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।