সরকার পরিবর্তনের পর শিক্ষার্থীরা বাজার মনিটরিংও শুরু করেছেন। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। অনেকে এতদিন চাঁদাবাজি করলেও এখন আর করছে না। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমেছে। অনেক সুযোগসন্ধানী বিক্রেতা এতদিন অতি মুনাফা করলেও বর্তমানে সাহস পাচ্ছেন না।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, করপোরেটদের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে আরও কমবে মুরগির দাম। কারণ তারাই দাম নির্ধারণ করে।
এসব কারণে সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগি কেজিতে ৩০-৫০ টাকা কমেছে। কারণ ১৮০-১৯০ টাকার ব্রয়লার বর্তমানে ১৫০-১৬০ ও ২৯০ টাকার সোনালি মুরগি ২৪০ টাকায় নেমেছে।
বুধবার (১৪ আগস্ট) কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে দাম কমতে শুরু করেছে। মুরগির দামের ব্যাপারে টাউন হল বাজারের সোনালি ব্রয়লার হাউসের কামাল ও ব্রয়লার হাউসের বেল্লাল হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘অস্থিরতার পর মুরগির দাম কমেছে। অনেক খামারি মুরগি ধরে রাখতে পারছেন না। আবার করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো কম লাভে বিক্রি করছে মুরগি। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লারে কমেছে ৩০ টাকা। সোনালিতে কমেছে কেজিতে ৪০-৫০ টাকা। মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভ কমিয়ে দিয়েছে। তারা আগে কেজিতে ৫ টাকা লাভ করলেও বর্তমানে ২-৩ টাকায় ছেড়ে দিচ্ছে। পাইকারিতে ব্রয়লার কেনা ১৪২-১৪৮ টাকা কেজি। বিক্রি করা হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা। সোনালির দামও কমেছে। এ জন্য কম দামে ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। খাদ্যের দাম কমলে সামনে আরও দাম কমবে।
কারওয়ান বাজারসহ অন্যান্য বাজারের মুরগি বিক্রেতাদেরও একই বক্তব্য। তারা জানান, খামারে দাম কমে গেছে। আবার পথে চাঁদা লাগে না। শিক্ষার্থীরা বাজার মনিটরিং করছেন। এতে অনেকে বেশি দাম করতে সাহস পাচ্ছে না। এ জন্য ভোক্তারা কম দামে মুরগি কিনতে পারছেন। কারওয়ান বাজারের জনপ্রিয় চিকেন আড়তের মালিক জনি ও সোহান পোলট্রি হাউসের আমির বলেন, ‘এখনো আগের মতো বিক্রি হয় না। কিন্তু সরবরাহ বাড়ছে। পথে চাঁদাবাজিও কমতে শুরু করেছে। এভাবে চলতে থাকলে দাম আরও কমতে পারে। ব্রয়লারের দাম কমে ১৫০-১৬০ টাকা, সোনালি ২৪০-২৫০ ও দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
পাবনার মুরগি ব্যবসায়ী মানিক ও বগুড়ার সুমন বলেন, ‘কয়েক দিন থেকে মুরগির দাম কমেছে। সিপি, ডায়মন্ডসহ বিভিন্ন কোম্পানি সেভাবে কম রেট দিচ্ছে। এ জন্য আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারছি। তারা ব্রয়লারের ১৩০-১৩২ টাকা কেজি রেট দিয়েছে। কিছু খরচ ধরে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। নরসিংদী, যশোর থেকেও কম দামে আসছে মুরগি।
মুরগির দামের ব্যাপারে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনের প্রভাব মুরগির বাজারেও পড়েছে। অস্থিরতার কারণে অনেকেই আতঙ্কে খামারে কম দামে মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছে। ব্রয়লার ১২০-১২৫ টাকা ও সোনালি মুরগি ২২০ টাকায় নেমে গেছে। এভাবে দাম কমে যাওয়ায় ভোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এলেও খামারিরা শেষ হয়ে যাবে। কারণ এভাবে কম দামে বিক্রি করায় খামারিদের ব্রয়লারে ৪০-৫০ টাকা ও সোনালিতে ৫০-৬০ টাকা লোকসান হচ্ছে। করপোরেটরা ইচ্ছা করে কম দামে মুরগি বিক্রি করছে। খামারিরা নিঃস্ব হয়ে যাবেন।
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে এই খামারি নেতা বলেন, ‘তবে খাদ্যের দাম কমলে মুরগির দাম কমতে পারে। কারণ বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান মুরগির বাচ্চার সঙ্গে খাদ্যও বেশি দামে বিক্রি করছে। এতে উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। করপোরেটদের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে কমবে মুরগি ও ডিমের দাম। তাতে খামারিদের লোকসান কমে আসবে।’
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন বাজারে তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও বাজার মনিটরিং করছেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, বাজার তদারকিতে দেখা যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনসংশ্লিষ্ট বিবিধ ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের সচেতনতামূলক বাজার মনিটরিং কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন করে যেন কেউ চাঁদাবাজিসহ হিডেন চার্জ নিতে না পারে, সেই ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।