ঢাকা ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাগেরহাটে কমেছে মাছ ও সবজির দাম

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০২:৪৬ পিএম
বাগেরহাটে কমেছে মাছ ও সবজির দাম
বাগেরহাট শহরে একটি সবজির দোকান। ছবি: খবরের কাগজ

দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বাগেরহাটে সব ধরনের সবজি ও মাছের দাম কমেছে। অপরিবর্তিত রয়েছে মাংস ও মসলার দাম। গতকাল বুধবার সকাল থেকে শহরের বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির  দাম কেজিতে ৫ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, আদাসহ বিভিন্ন প্রকার মসলা ও গরু, খাসি, মুরগি, ব্রয়লারের দাম আগের মতোই আছে। মাছের দামও কমেছে বেশ। তবে ওই দামও নাগালের বাইরে বলে দাবি সাধারণ ক্রেতাদের।

বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, বেগুন, করলা, ঢ্যাঁড়শ, কাকরোল ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০, ঝিঙে ৫০, মিস্টি কুমড়া ও পটোল ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ৭০-৮০ টাকা পিসের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা করে, কমেছে চালকুমড়ার দামও। প্রতি পিস চালকুমড়া বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। বাগেরহাটের বাজারে কমেছে মাছের দামও। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। ৩ থেকে ৫টিতে কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। কমেছে পাতারি, টেংরা, ফাইস্যা, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রকার মাছের দাম। সব থেকে কম ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছ।

এদিকে গরু, মুরগি ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে পূর্বের দামেই।  প্রতি কেজি গরু মাংস ৭৫০, খাসির মাংস ১ হাজার এবং মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকা দরে। মসলার দাম কমেনি। পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১১০, রসুন ২০০, মরিচ কেজি ৪০০, মরিচের গুঁড়া ৫০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম বেড়েছে কেজি ২ টাকা থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। ৪২-৪৩ টাকার স্বর্ণা বুলেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৪৮ টাকায়, চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে জাতভেদে ৫৮ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত। ৬৫ টাকা কেজির দেশি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজিতে।

এদিকে গত মঙ্গলবার দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নেমেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বাজারের বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের দোকানে দোকানে ক্রয় ও বিক্রয় ভাউচার চেক করতে দেখা যায়। পণ্যের গুণগতমান যাচাই ও ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে কি না সেটির তদারকি করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রতিটি দোকানে মূল্যতালিকা ঝুলিয়ে রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেন। শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

ছালেক শেখ নামের এক ভ্যানচালক বলেন, ‘সবজি, চাল, মাছ, মাংস সবকিছুর দাম এত বেশি যে কিনে খাওয়ার উপায় নেই। আর দাম বাড়ে ১০০ টাকা, কমে ১০ টাকা। দ্রব্যমূল্য কমাতে শিক্ষার্থীরা বাজার মনিটরিং করছে, তাতে আমরা খুব খুশি হয়েছি। এভাবে নিয়মিত মনিটরিং করলে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’

মনিটরিং কাজে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী হাসিব বলেন, ‘বাজারে অনেক অসংগতি রয়েছে। আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা এসব সমস্যার  সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাগেরহাটের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা বাজার মনিটরিং করছি। সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের আমরা সচেতন করছি। কেউ যদি সিন্ডিকেট বা কারসাজি করে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া  হবে।’

ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তোলার সীমা প্রত্যাহার

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১০ পিএম
ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তোলার সীমা প্রত্যাহার
ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলনে আর কোনো সীমা থাকছে না

আগামীকাল রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) থেকে গ্রাহকের ব্যাংকের টাকা উত্তোলনে আর কোনো সীমা থাকছে না। 

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য জানিয়েছে। সর্বশেষ এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে গ্রাহক কর্তৃক নগদ টাকা তোলার সীমা প্রত্যাহার করা হলো। 

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরু হয়। এরপর নগদ টাকা পরিবহনে নিরাপত্তার শঙ্কা ও ব্যাংক থেকে বেশি টাকা তুলে কেউ যেন পাচার কিংবা ব্যাংক খাতকে অস্থিতিশীল করতে না পারে সে জন্য নগদ টাকা উত্তোলনের সীমা আরোপ করা হয়েছিল।

এস আলম গ্রুপে ইসলামী ব্যাংকের কোনো বিনিয়োগ খেলাপি হয়নি

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২২ এএম
আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৬ এএম
এস আলম গ্রুপে ইসলামী ব্যাংকের কোনো বিনিয়োগ খেলাপি হয়নি

ইসলামী ব্যাংকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের অসত্য ও অপেশাদার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে এস আলম গ্রুপ। গ্রুপের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ‘এস আলম গ্রুপে ইসলামী ব্যাংকের কোনো বিনিয়োগ খেলাপি হয়নি। বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায় ক্ষতি হলেও এস আলম গ্রুপ ব্যাংকের পাওনা যথাযথভাবে পরিশোধ করে এসেছে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকটির নতুন পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভা শেষে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংকটি ঋণ হিসেবে যত অর্থ বিতরণ করেছে, তার অর্ধেকের বেশি টাকা একাই নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। তিনি আরও বলেছেন, এসব ঋণের পূর্ণাঙ্গ হিসাব এখন বের করা হচ্ছে। 

এস আলমের ঋণের বিপরীতে যেসব সম্পদ বন্ধক দেওয়া আছে, তারও পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে। কারণ, এসব সম্পদের দাম বেশি দেখিয়ে ঋণ বের করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকটি থেকে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা একাই বের করে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। 

উল্লেখ্য, এস আলম গ্রুপ ও এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিরা ব্যাংকটির ৮২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন।

এস আলম গ্রুপ গতকাল বিবৃতিতে জানায়, ‘এস আলম গ্রুপে ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ব্যাংকটির নবনিযুক্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্য আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তার এ মিথ্যা, মনগড়া আর ভিত্তিহীন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। 

প্রকৃতপক্ষে এস আলম গ্রুপ ১৯৮৯ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এ দীর্ঘ পথযাত্রায় ব্যাংকের বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ করে আমাদের গ্রুপের যেমন অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, তেমনি ব্যাংকও আমাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জন করেছে। আজ পর্যন্ত আমাদের কোনো বিনিয়োগ খেলাপি হয়নি। বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায় ক্ষতি হলেও আমরা ব্যাংকের পাওনা যথাযথভাবে পরিশোধ করে এসেছি।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান কোনো পরিসংখ্যান না দিয়ে বিভিন্ন স্বনামধন্য গ্রুপের বিনিয়োগ আমাদের গ্রুপের নামে চালিয়ে দিয়েছেন; যা অত্যন্ত অন্যায় এবং ব্যাংকের বিনিয়োগ আদায়কে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। আমরা দেখেছি নাবিল গ্রুপ, রংধনু গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ, এননটেক্স গ্রুপ এবং আরও কিছু কোম্পানি এবং ব্যক্তির নামে গৃহীত বিনিয়োগ আমাদের বলে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে। 

প্রকৃতপক্ষে এসব গ্রুপ ও ব্যক্তির সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ব্যবসায়িক লেনদেন আছে এবং এর বাইরে আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু আছে বলে কোনোভাবেই প্রমাণ হয়নি; যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। একটি বৃহৎ ব্যবসায়িক গ্রুপ হিসেবে অনেক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান এবং গ্রুপের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক লেনদেন পরিচালিত হয়ে থাকে। 

লেনদেন পরিচালিত হওয়া মানে তা আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, এটা কোনোভাবে হতে পারে না। আলোচিত নাবিল গ্রুপের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক লেনদেন আছে সত্য, কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানির নামে গৃহীত বিনিয়োগের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এসব কোম্পানির সঙ্গে আমাদের ভিন্ন কোনো লেনদেনও নেই।
 
আমরা আরও লক্ষ করেছি যে, নাবিল গ্রুপের কর্ণধার আমিনুল ইসলামের বাবার কোম্পানির নামে গৃহীত বিনিয়োগও আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বলে দেখানো হয়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি যে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এহেন অপেশাদার আচরণের ফলে প্রকৃত বিনিয়োগ গ্রহীতাদের বিনিয়োগ ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে দায়মুক্তি দেওয়ার ষড়যন্ত্র এবং আমাদের ব্যবসায়িক সুনাম এবং ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হলে একটি পক্ষ আমাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ নিয়ে ঢালাওভাবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে আসছে। এর আগ থেকে কয়েকটি মিডিয়া ধারাবাহিকভাবে আমাদের গ্রুপ এবং ব্যবসা নিয়ে নেতিবাচক প্রচার চালিয়ে আসছিল, যার ধারাবাহিকতা আমরা লক্ষ করছি। ওই সব মিডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আমাদের গ্রুপে ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসাব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি বিশেষ নিরীক্ষা চালানো হয়েছিল; যাতে আমাদের গ্রুপের প্রকৃত বিনিয়োগ উঠে এসেছিল। 

এমতাবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ যেন সঠিকভাবে বিনিয়োগের পরিসংখ্যান জাতির সামনে পেশ করা হয়। অন্যথায় আমরা আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হব।’

গত ২২ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েক ধাপে সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। 

গতকালই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে প্রথম বৈঠক করেন তিনি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ২০২২ সাল থেকে ব্যাংকে তারল্যসংকট শুরু হয়। এরপর থেকে পরিস্থিতি খারাপ হয় এবং ব্যাংকটির গ্রাহক, শেয়ারধারী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আস্থা রাখতে পারছেন না। এখন ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ে তিনটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা ব্যাংকের ঋণ, বিনিয়োগ ও মানবসম্পদের ওপর নিরীক্ষা করবে। আগে ভালো নিরীক্ষা হয়নি।

ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘হল-মার্ক কেলেঙ্কারিরর পর সোনালী ব্যাংকের দায়িত্ব পেয়েছিলাম। হল-মার্কের ঘটনা আলোচনায় আসার পরও সোনালী ব্যাংকে আমানত বেড়েছিল। ইসলামী ব্যাংকের সমস্যাটি অনেক বড়। এ জন্য আমরা দায়িত্ব নিয়েই পথনকশা প্রণয়ন করেছি। 

প্রতিদিন ব্যাংকে উপস্থিত থেকে তদারকির চেষ্টা করে যাচ্ছি। চলতি বছর পুরোটাই হবে গ্রাহকের আস্থা ফেরানোর বছর। আগামী বছরজুড়েও গ্রাহকের আস্থা ফেরানোর কাজ চলবে। পরের দুই বছর, অর্থাৎ ২০২৬-২৭ সাল হবে ঘুরে দাঁড়ানোর বছর। ২০২৮-৩০ সাল হবে এগিয়ে যাওয়ার বছর।’

ইসলামী ব্যাংক চেয়ারম্যানের বক্তব্যের নিন্দা এস আলম গ্রুপের

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৩ পিএম
আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫২ পিএম
ইসলামী ব্যাংক চেয়ারম্যানের বক্তব্যের নিন্দা এস আলম গ্রুপের
এস আলম গ্রুপ-ইসলামী ব্যাংক

ইসলামী ব্যাংকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এস আলম গ্রুপ।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নিন্দা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এস আলম গ্রুপের বিনিয়োগ সংক্রান্ত ইসলামী ব্যাংকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যানের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্য আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। উনার এ মিথ্যা, মনগড়া আর ভিত্তিহীন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য দেশবাসীর অবগতির জন্য পেশ করছি।

এস আলম গ্রুপ ১৯৮৯ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এ দীর্ঘ পথযাত্রায় ব্যাংকের বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ করে আমাদের গ্রুপের যেমন অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তেমনি ব্যাংকও আমাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জন করেছে। আজ পর্যন্ত আমাদের কোনো বিনিয়োগ খেলাপি হয়নি। বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায় ক্ষতি হলেও আমরা ব্যাংকের পাওনা যথাযথভাবে পরিশোধ করে এসেছি।

বিগত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হলে একটি পক্ষ আমাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ নিয়ে ঢালাও ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে আসছে। এর আগে থেকে কয়েকটি মিডিয়া ধারাবাহিকভাবে আমাদের গ্রুপ এবং ব্যবসা নিয়ে নেতিবাচক প্রচার চালিয়ে আসছিল, যার ধারাবাহিকতা আমরা লক্ষ্য করছি।

ওই মিডিয়াসমূহের একটি প্রতিবেদনে অনুরূপভাবে আমাদের বিনিয়োগের হিসাব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি বিশেষ নিরীক্ষা চালানো হয়েছিল, যাতে আমাদের গ্রুপের প্রকৃত বিনিয়োগ ওঠে এসেছিল।

আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান কোনো পরিসংখ্যানের ধার না ধেরে বিভিন্ন স্বনামধন্য গ্রুপের বিনিয়োগ আমাদের গ্রুপের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা অত্যন্ত অন্যায় এবং ব্যাংকের বিনিয়োগ আদায়কে ঝুকির মধ্যে ফেলবে।

আমরা দেখেছি নাবিল গ্রুপ, রংধনু গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ, এননটেক্স গ্রুপ এবং আরও কিছু কোম্পানি এবং ব্যাক্তির নামে গৃহীত বিনিয়োগ আমাদের বলে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এসব গ্রুপ এবং ব্যাক্তির সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ব্যবসায়িক লেনদেন আছে, তবে তা আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বলে কোনোভাবেই প্রমাণ করে না। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে।

একটি বৃহৎ ব্যাবসায়িক গ্রুপ হিসেবে অনেক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং গ্রুপের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক লেনদেন পরিচালিত হয়ে থাকে। লেনদেন পরিচালিত হওয়া মানেই আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, এটা কোনোভাবে হতে পারে না। আলোচিত নাবিল গ্রুপের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক লেনদেন আছে। কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানির নামে গৃহীত বিনিয়োগের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এসব কোম্পানির সঙ্গে আমাদের কোনো লেনদেনও নেই।

আমরা লক্ষ্য করেছি যে, নাবিল গ্রুপের কর্ণধার আমিনুল ইসলামের বাবার কোম্পানির নামে গৃহীত বিনিয়োগও আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বলে দেখানো হয়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি যে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এহেন অপেশাদার আচরণের ফলে প্রকৃত বিনিয়োগ গ্রহীতাদের বিনিয়োগ ফেরৎ দেওয়ার ব্যাপারে দায়মুক্তি দেওয়ার ষড়যন্ত্র এবং আমাদের ব্যবসায়িক সুনাম এবং ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।

এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ, যেন সঠিকভাবে বিনিয়োগের পরিসংখ্যান জাতির সামনে পেশ করা হয়।

বড় কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে সূচক নিম্নমুখী

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:০১ পিএম
বড় কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে সূচক নিম্নমুখী

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল বুধবার মূল্যসূচকের নেতিবাচক প্রবণতায় লেনদেন শেষ হয়েছে। তাতে প্রধান সূচক কমেছে ৪৭ পয়েন্ট। এর আগের কার্যদিবসে প্রধান সূচক ১৭ পয়েন্ট কমেছিল। এর মাধ্যমে গত দুই কার্যদিবসে সূচক কমেছে ৬৪ পয়েন্ট। 

দেশের পুঁজিবাজারে দুই দিন ধরে বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারে দরপতন হয়েছে। এর প্রভাবে সূচক ও লেনদেনও নিম্নমুখিতা পরিলক্ষিত হয়েছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল দিনভর সূচকে অস্থিরতা পরিলক্ষিত হয়েছে। দিন শেষে ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স ৪৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭৩৯ পয়েন্টে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৫ হাজার ৭৮৬ পয়েন্ট। গত দুই দিনে সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, গ্রামীণফোন, রবি, ইসলামী ব্যাংক, এমজেএল বাংলাদেশ, রেনাটা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), ব্র্যাক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার। 

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই দিন ধরে পুঁজিবাজারে দর সংশোধন চলছে। সতর্ক বিনিয়োগকারীদের অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিয়েছেন। এদিন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার কেনা ও বেচা দুই ধরনের প্রবণতাই দেখা গেছে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের বিগত সময়ের অনিয়ম, দুর্নীতি ও কারসাজির ঘটনা তদন্তে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্যোগের বিষয়টিও বাজারের গতিপ্রকৃতির ক্ষেত্রে কী ধরনের প্রভাব ফেলে, সেদিকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক দৃষ্টি ছিল।

গতকালের বাজার বিশ্লেষণ
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ায় লেনদেনের একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ২০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে লেনদেনের শেষ দিকে বিক্রির চাপ বাড়ান একশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা। ফলে দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে।

এতে একদিকে দাম কমার তালিকা বড় হয়, অন্যদিকে সব কটি মূল্যসূচক কমে দিনের লেনদেন শেষ হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ৮১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৬৪টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৫২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭৩৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৯ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১১৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২২৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সব কটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৯৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১৩৩ কোটি ৩ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অগ্নি সিস্টেমের ২১ কোটি ৬০ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২১ কোটি ২৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইবনে সিনা।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে গ্রামীণফোন, আইএফআইসি ব্যাংক, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, মিডল্যান্ড ব্যাংক, বঙ্গজ লিমিটেড এবং শাহজীবাজার পাওয়ার।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেড।
সূত্রমতে, এদিন ডিএসইতে শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেডের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১ টাকা ৬০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়েছে।

দর বৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ারদর ২ টাকা ৮০ পয়সা বা ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়েছে। দর বৃদ্ধির তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ারদর বেড়েছে ২ টাকা ৯০ পয়সা বা ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

গতকাল দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসা অপর কোম্পানিগুলো হচ্ছে খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, দ্য ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, শাহজীবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, আইসিবি এএমসিএল গোল্ডেন জুবিলি মিউচুয়াল ফান্ড, এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেড।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মাঝে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

এদিন ফারইস্ট ফাইন্যান্সের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে ৫০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। তাতে দরপতনের শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি।

দর হারানোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা এমবি ফার্মার শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ারদর ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কমে যাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড।

গতকাল দরপতনের তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো রূপালী লাইফ, ইউসিবি, নিউলাইন ক্লথিং, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ড, এমজেএল বিডি, ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স এবং তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িং।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৬৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৫টির এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিন বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে দুর্নীতি বন্ধের দাবি আইবিএফবির

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৫১ পিএম
বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে দুর্নীতি বন্ধের দাবি আইবিএফবির
গতকাল আইবিএফবিয়ের ‘জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সংস্কারের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সংগৃহীত

বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। তারা বলেন, সিস্টেম লসের নামে এ খাতে পুকুরচুরি হচ্ছে। এই খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা। গতকাল বুধবার ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত ‘জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সংস্কারের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারা আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলা রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় সংকট তৈরি হয়েছে। এ সংকট থেকে দ্রুত উত্তরণ সম্ভব নয়। এ পরিস্থিতি দেশের জ্বালানিনির্ভর শিল্পগুলোকে আরও দীর্ঘসময় ভোগাবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের দিকে যাওয়ায় কথা বলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো অনেক অপ্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। সে সুযোগে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। ফলে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায় ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, এ দেশে গ্যাসের সিস্টেম লস ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। এটি অসম্ভব। এ লসের কথা বলে গ্যাস চুরি হচ্ছে। যেভাবে লসের কথা বলা হয়, বাস্তবে সেটা অর্ধেকও হবে না। এ ছাড়া টেকনিক্যাল লস রয়েছে। এসব কমিয়ে স্বাভাবিক পর্যায়ে আনা সম্ভব হলে এখনকার সংকট হয়তো খুব স্বাভাবিকভাবে উতরে যাওয়া যেত।

ড. ইজাজ হোসেনের ভাষ্য, সিস্টেম লসের বিষয়টি একটি শুভঙ্করের ফাঁকি। গ্যাসের সিস্টেম লসটা পুরোপুরি চুরি, বিগত সরকার নিজেও সেটা জানত। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো আমাদের জাতীয় সম্পদ এভাবে চুরি হয়ে গেছে, কেউ কিছু বলেনি। আর এখন তো আমরা অনেকটা সোনার দামে এলএনজি কিনে আনছি। জাতীয় স্বার্থে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে গ্যাসের এই চুরি বন্ধ করা উচিত ছিল; কিন্তু রাজনৈতিক মদদে সেটা আরও বেশি হয়েছে। এই চুরি হওয়া গ্যাস দিয়ে কমপক্ষে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে পরিকল্পনাহীনতার বড় বড় দৃষ্টান্ত রয়েছে। গৃহস্থালিতে গ্যাস বিতরণ বাড়িয়ে অনিয়ম হয়েছে। এ খাতে ১১ শতাংশ গ্যাসের বড় অংশ চুরি হচ্ছে। নতুন সরকারকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধের আহ্বান জানান তিনি।

সেমিনারে আইবিএফবি সভাপতি হুমায়ূন রশিদ বলেছেন, জ্বালানিসংকটে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম বলেন, বিগত সরকারের সময় সব খাতে ‘তথ্য সন্ত্রাস’ হয়েছে, জ্বালানিতে তা আরও বেশি হয়েছে। সরকার একটি উন্নয়নের টার্গেট নিয়েছে, কিন্তু কোনো পরিকল্পনা ছাড়া ওই অবকাঠামো করা হয়েছে। তথ্যে উন্নয়ন দেখানো হয়েছে, যা বাস্তবে উন্নয়নে কাজে আসেনি।

তিনি বলেন, সরকারের কিছু বিষয় জ্বালানি খাতকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। টার্গেট করা হয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চতকল্পে উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার, কিন্তু সেটা ধরে-বেঁধে করা হয়েছে। উৎপাদন অর্ধেক হলেও কাগজে-কলমে শতভাগ দেখানো হয়েছে। ‘সরকার সুবিধা নিয়েছে এ খাত থেকে। সেজন্য এ খাতকে কুক্ষিগত করে রেখেছিল। কিন্তু উন্নত কোনো দেশের সরকার এ ধরনের খাত নিয়ন্ত্রণে রাখে না।’

ম তামিম বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ টেকনিক্যাল বিষয়, এটি রাজনৈতিকভাবে নির্ধারণ সম্ভব, যেটি আমাদের দেশে হয়েছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতায় উন্নয়ন করতে পারেনি।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি এ দুটো জিনিস এ খাতকে শেষ করে দিয়েছে। এটা থেকে বের হওয়া এখন কঠিন। তবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ধরে রাখতে হলে আমাদের এ জঞ্জাল থেকে বেরিয়ে আসতে হবেই। সেক্ষেত্রে নতুন সরকারের কাছে এটিই আমাদের বড় প্রত্যাশা।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন- জ্বালানিবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার’র সম্পাদক মোল্লা এম আমজাদ হোসেন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল ও বাংলাদেশ সোলার রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুল আক্তার প্রমুখ।