সরকার পতনের আন্দোলনের সময় সরকারি ছুটি, অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কারখানার উৎপাদন ও রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এই অবস্থায় পোশাকশিল্পকে ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের কাছে সহজ শর্তে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ঋণ চেয়েছেন বিজিএমইএর নতুন সভাপতি ও ডিজাইন ট্যাক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খন্দকার রফিকুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কার্যালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিজিএমইএ সভাপতি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। বৈঠকে পোশাকশিল্পের মালিকদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএসহ অন্যান্য সংগঠনের প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেন।
সভা শেষে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এক দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো এই সুবিধা ফিরিয়ে আনতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ইমেজ কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা পেতে চান এ দেশের ব্যবসায়ীরা। এটা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি সারা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি। ড. ইউনূসের ব্র্যান্ড ইমেজ কাজে লাগিয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পেতে চাই।
বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ছাত্র আন্দোলনের ঘটনা ও চলমান বন্যায় ১৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদন ব্যাহত ও পণ্যের শিপমেন্ট বাধাগ্রস্ত হয়। অর্থসংকটে পড়ে পোশাকশিল্প মালিকরা। এতে অনেক মালিক শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছেন না। তাই এ সংকট উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ চাওয়া হয়েছে। এটার মাধ্যমে আমরা কর্মীদের বেতন-ভাতা, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ ও বায়ারদের কনফিডেন্স ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। আমরা এক বছরের জন্য সফট ঋণ চেয়েছি। আশা করছি এক বছরের মধ্যে ফিরিয়ে দিতে পারব। আমরা আশ্বস্ত করেছি, আমরা ঘুরে দাঁড়ালে দেশের অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াবে। অনেক বেশি ব্যবসা বাংলাদেশে রান করবে।
অর্থ উপদেষ্টার কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন বলে জানান বিজিএমইএর নতুন সভাপতি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরাও তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করব বলে আশ্বস্ত করেছি। বাংলাদেশের রপ্তানি অনেক দ্রুত বাড়াতে কাজ করব। আশা করছি, আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে এবং সবার সহযোগিতা থাকলে বিদেশি বায়ারদের আস্থাও বাড়বে। ৬টি ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে খেলাপি হয়ে যাব। সেটা আমরা তিনটি করার দাবি করেছি। বন্যা ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে উৎপাদন বন্ধ থাকায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এটা করার জন্য দাবি করা হয়েছে।’
ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভিন্ন মত থাকতে পারে এমন জানিয়ে ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, কিন্তু ব্যক্তিগত মতামত ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে না। তৈরি পোশাক খাত অর্থনীতির জন্য লাইফলাইন। এখানে আমাদের শিল্পটা আগে। দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে হবে। এই সরকার যদি ব্যর্থ হয় তা হলে নির্বাচন ছাড়া পরের সরকার পাব না। তাই এখনই অর্থনীতি গতিশীল করতে এই সরকারকেই সহযোগিতা করতে হবে। অর্থনীতি গতিশীল রাখতে যা করা দরকার আমরা তাই করব। এ ক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে আমাদের সংগঠনের সাবেক সভাপতিদের পরামর্শ ও সমর্থনও প্রয়োজনে নেব। একসঙ্গে আমরা কাজ করে যাব।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এরপর দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। দেশজুড়ে থানাগুলোতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নৈরাজ্য সৃষ্টি হলে রাজধানী পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার অভাবে দুদিন বন্ধ রাখার পর কারখানা খোলার ঘোষণা দেয় বিজিএমইএ। তখন আশুলিয়া, মাওনা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে পোশাক কারখানা ভাঙচুর করা হয়। নিরাপত্তার অভাব আর শ্রমিক-কর্মচারীরা ওইদিন সবাই কাজে যোগ না দেওয়ায় পুরোপুরি উৎপাদনে যেতে পারেনি অধিকাংশ কারখানা। পরে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস পেলে চালু হতে থাকে পোশাক কারখানাগুলো।
অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এলসি খুলতে ছয়টা ব্যাংক মার্জিন চাচ্ছে। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টাকে বলেছি। বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা গভর্নরের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। কারখানার নিরাপত্তা জরুরি। তিনি বলেছেন, এটা সমাধান হয়ে যাবে। এখন কোনো ঝামেলা নেই। বায়ারদের একটা আস্থার অভাব ছিল এটাও কেটে যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেও বায়ারদের সঙ্গে কথা বলবেন এটা বড় পাওয়া।’
মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, দেশ আকস্মিক বন্যার কবলে পড়েছে। আমাদের শত শত ট্রাক মিরসরাই এলাকায় আটকে আছে। এগুলোতে নিরাপত্তার সমস্যা আছে। সাপ্লাই চেইনে সমস্যা হচ্ছে। বন্যার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামে সমস্যা হচ্ছে। তাই নারায়ণগঞ্জের পানগাঁও পোর্ট দ্রুত চালু করা দরকার বলে আমরা দাবি করেছি।