দেশের পুঁজিবাজারে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে দরপতন। এই দরপতনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়েও বিনিয়োগকারীরা থামাতে পারছেন না পতন।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (৭ অক্টোবর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ঢালাও দরপতন হয়েছে। ফলে দুই বাজারেই মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন দেখতে হলো বিনিয়োগকারীদের।
শুধু চলতি সপ্তাহ নয়, শেয়ারবাজারের এই দরপতন চলছে কয়েক সপ্তাহ ধরেই। যে কারণে এই দরপতনের প্রতিবাদে গত সপ্তাহে দুই কার্যদিবস এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। বিনিয়োগকারীদের এই বিক্ষোভ থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিএসইসির কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন থেকে এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বিএসইসির মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। এরপরে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার বিএসইসির কার্যালয়ের সামনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিএসইসির কার্যালয়ের সামনে পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়।
বিএসইসির কার্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও শেয়ারবাজারে দরপতনের ধারা অব্যাহত থাকে। ফলে রবিবার দিনের লেনদেন শেষে বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ আবারও বিএসইসির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে মানববন্ধন করেন।
এ পরিস্থিতিতে সোমবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। মাঝে কিছু সময়ের জন্য বেশির ভাগ ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ায় সূচক কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হয়। তবে লেনদেনের শেষ আড়াই ঘণ্টায় শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়। এতে দাম কমার তালিকা যেমন বড় হয়েছে, তেমনি সবকটি মূল্যসূচক কমেই দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে মাত্র ৫৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৮৮টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৫৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমলেও ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, লাফার্জহোলসিম এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো বড় মূলধনের কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ায় সূচকের খুব বড় পতন হয়নি।
ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪৩ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩৩৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৮৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৪২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার দিনে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৬৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৬৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৬ কোটি ৯৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অগ্নি সিস্টেমের ২৩ কোটি ৫৪ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ব্র্যাক ব্যাংক, লাভেলো আইসক্রিম, গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইবনে সিনা।
সোমবার ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি।
এদিন ডিএসইতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় ২ টাকা ৬০ পয়সা বা ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়েছে।
দর বৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে মার্কেনটাইল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স পিএলসি। কোম্পানিটির শেয়ারদর ১ টাকা ১০ পয়সা বা ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়েছে। দর বৃদ্ধির তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা ইসলামী ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ারদর বেড়েছে ৬০ পয়সা বা ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
সোমবার দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসা অপর কোম্পানিগুলো হচ্ছে- তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেড, আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচুয়াল ফান্ড, ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি।
সোমবার ডিএসইতে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড।
সোমবার দিন শেষে ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে ২০ টাকা ৬০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। তাতে দরপতনের শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে কোম্পানিটি।
এদিকে দর হারানোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসির শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ১০ টাকা বা ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ারদর ৭ দশমিক ২০ শতাংশ কমে যাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড।
এদিন দরপতনের তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- খুলনা প্রিন্টিং প্যাকিজিং লিমিটেড, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সেন্ট্রাল ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড, জিবিবি পাওয়ার লিমিটেড, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, রহিমা ফুড করপোরেশন লিমিটেড, দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৫৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২২টির এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।