ঢাকা ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪

লক্ষ্মীপুরে বন্যায় প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৮ পিএম
আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:০৯ পিএম
লক্ষ্মীপুরে বন্যায় প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি
লক্ষ্মীপুরে বন্যায় পানিবন্দি গরু-ছাগলগুলো আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। ছবি: বাসস

লক্ষ্মীপুরে পাঁচটি উপজেলায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বন্যার কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। বন্যার পানিতে অবকাঠামো ও খাদ্য বিনষ্ট হয়েছে এবং খামারি ও গৃহস্থদের পশুপাখির মৃত্যু ঘটেছে। এতে স্থানীয়রা বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছেন। 

বন্যার কারণে লক্ষ্মীপুরে মোট ৮ কোটি ৬৫ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে ৫ লাখ ১১ হাজার ১১০টি পশু-পাখি এখনো বন্যার কবলে। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের এক প্রতিবেদনে এই ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। খবর বাসসের।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বন্যার পানির কারণে জেলার বিভিন্ন স্থানে খামার ও গৃহস্থের ১ লাখ ৬০ হাজার ২১৩টি পশুপাখির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৩৫টি গরু, ১৭৫টি ছাগল, ১৭টি ভেড়া, ১টি মহিষ, ১ লাখ ৫৯ হাজার ১০টি মুরগি এবং ৯৭৫টি হাঁস। ওই প্রাণীগুলোর মৃত্যুতে মোট ২ কোটি ৮৬ লাখ ৩ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। গবাদিপশু নিয়ে ৩০৩টি খামারের অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৭৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা এবং হাঁস-মুরগি নিয়ে ৪২৩টি খামারের অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এ ছাড়া বন্যার কারণে ১ কোটি ৫৭ লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকার পশুপাখির খাদ্যও বিনষ্ট হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মেঘনা উপকূলীয় এ জেলায় প্রথমে ভারী বর্ষণ ও নদীর তীব্র জোয়ারের কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। প্রথমে রামগতী ও কমলনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে যায়। গত ২৩ আগস্ট থেকে ফেনী ও নোয়াখালীর বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরে প্রবাহিত হতে শুরু করে। এর ফলে জেলার পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এ সময় প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যায়। চারপাশে পানি থইথই করছে, অনেক এলাকায় রাস্তার ওপর হাঁটু, কোমর এবং বুকসমান পানি জমে গেছে। ঘরবাড়ির ভেতরও পানি ঢুকে পড়েছে। এর ফলে পানি ও আবহাওয়াজনিত কারণে ১ লাখ ৬০ হাজার ২১৩টি পশুপাখি মারা যায়।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কুমুদ রঞ্জন মিত্র বাসসকে জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা ও অতিবর্ষণের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরে ৩০৩টি গবাদিপশুর এবং ৪২৩টি মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু গবাদিপশু ও মুরগির মৃত্যুতে খামারিদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে ৫ লাখ ১১ হাজার ১১০টি পশুপাখি বন্যার কবলে রয়েছে। এতে জেলার ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৬৫ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা। মাঠপর্যায়ের কর্মীরা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কাজ করছেন। ইতোমধ্যে সরকার গোখাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে এবং উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, বন্যার ফলে সৃষ্ট ক্ষতির একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন গত ২৯ আগস্ট চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনটির মাধ্যমে সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও পুনর্বাসনের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।

এমডি নেই ৬ সরকারি ব্যাংকে, স্থবির কার্যক্রম

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০৯ এএম
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৩ এএম
এমডি নেই ৬ সরকারি ব্যাংকে, স্থবির কার্যক্রম
বাণিজ্যিক ব্যাংক

ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নেই সরকারিমালিকানাধীন ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকে। গত দুই সপ্তাহ ধরে ওই সব ব্যাংকে প্রধান নির্বাহী পদ শূন্য রয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর এসব ব্যাংকের এমডিদের সরিয়ে দেওয়া হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। দীর্ঘ দিন ধরে এমডি না থাকায় এতে ব্যাংকগুলোর সার্বিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এমডি না থাকায় এসব ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যানরাও ভূমিকা রাখতে পারছেন না।

এদিকে এসব ব্যাংকের এমডি হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন সরকারি ব্যাংকের অবসরে যাওয়া ও বর্তমান উপব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (ডিএমডি) কেউ কেউ। তবে তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও বিভিন্ন ঋণখেলাপি গ্রুপের সঙ্গে সখ্যের অভিযোগ রয়েছে। এমডি-শূন্য থাকা ছয় সরকারি ব্যাংক হচ্ছে সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা, বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)।

জানা গেছে, এসব সরকারি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে বেসিক ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ শেখ আবদুল হাই বাচ্চু ২০০৯-১৪ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে সেটিতে নজিরবিহীন অর্থ লুটপাটের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থা সব জেনেও অনিয়ম ঠেকায়নি। ব্যাংকটির তখনকার এমডি কাজী ফখরুল ইসলামও ছিলেন এসবের সহযোগী। ব্যাংকটিতে এখনো ওই সব লুটপাটের ধকল চলছে। এটির ৬৫ শতাংশ ঋণ ইতোমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে, যার পরিমাণ ৮ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকের শেষ এমডি ছিলেন মো. আনিসুর রহমান, যিনি যোগ দিয়েছিলেন ২০২১ সালের এপ্রিলে।

চরম নাজুক অবস্থায় আছে জনতা ব্যাংক। সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত এননটেক্স গ্রুপকে অর্থায়ন করে প্রথমে ব্যাংকটিকে বিপদে ফেলেন। তাকে পরের চেয়ারম্যানরাও অনুসরণ করে গেছেন। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে জনতা ব্যাংকের সবচেয়ে বড় গ্রাহক বেক্সিমকো গ্রুপ ঋণ নিতে বেপরোয়া আচরণ শুরু করে। এর কর্ণধার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। ফলে জনতা ব্যাংকে গ্রুপটির ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ হাজার কোটি টাকায়। করোনার পর নিয়েছেন ১২ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণের বড় অংশ ইতোমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে। গত জুনে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়ায় ৫২ শতাংশ বা ৪৮ হাজার কোটি টাকায়, যা ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাংকে লম্বা সময় ধরে এমডি ছিলেন আবদুছ ছালাম আজাদ। ২০২৩ সালের এপ্রিলে যোগ দেন মো. আবদুল জব্বার। তাকে সরিয়ে দেওয়ায় জনতা ব্যাংক এখন এমডি শূন্য।

সূত্র জানায়, জনতা ব্যাংকের এমডি হতে অগ্রণী, রূপালী ও জনতা ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন ডিএমডি দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তাদের অনেকেই আগে ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থায়নে ভূমিকা রেখেছেন। তারাই এখন নতুন রাজনৈতিক পরিচয়ে এমডি হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে শোনা যায়।

অগ্রণী ব্যাংকে দীর্ঘ সময় অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত চেয়ারম্যান ও শামস উল ইসলাম এমডি ছিলেন। তাদের সময়ে দেওয়া ঋণ ইতোমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে। গত জুনে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের হার ৩০ শতাংশ ছাড়ায়, যা পরিমাণে ২১ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ব্যাংকটির এমডির দায়িত্বে ছিলেন মো. মুরশেদুল কবীর। সম্প্রতি তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

অগ্রণী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান ও সাবেক এমডি সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, ‘সরকারি সব ব্যাংকের অবস্থা খারাপ। অগ্রণী ব্যাংককে আমি যেভাবে রেখে গিয়েছিলাম, সে অবস্থায় নেই। এ জন্য এখন নেতৃত্ব দিতে পারে ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষ কাউকে সরকারি ব্যাংকটির এমডি হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। দক্ষ বোর্ড ও এমডিরাই ব্যাংকগুলোকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে পারেন।’

এদিকে হলমার্ক কেলেঙ্কারি থেকে সোনালী ব্যাংক যে শিক্ষা নিয়েছে, তা ব্যাংকটির আর্থিক ভিত্তি মজবুত করতে ভূমিকা রেখেছে। ফলে ব্যাংকটি বড় ঋণ বিতরণে না ঝুঁকে ট্রেজারি ব্যবসায় মনোযোগ দিয়েছে। ফলে নতুন করে কোনো ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি কমেছে। ব্যাংকটির মোট ঋণের প্রায় ১৫ শতাংশ এখন খেলাপি, যা আগে হলমার্কসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নামে গেছে। সম্প্রতি অপসারিত সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম ২০২২ সালের আগস্টে দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

রূপালী ব্যাংকের ২৩ শতাংশ ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে, যার পরিমাণ ১০ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। এই ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরও ২০২২ সালের আগস্ট থেকে দায়িত্বে ছিলেন। তাকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একটি সূত্র জানায়, সরকারি ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা নতুন করে সাজানো হচ্ছে। এ জন্য ব্যাপক রদবদল চলছে। আলোচ্য ছয় ব্যাংকের এমডি হওয়ার যোগ্য এমন ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি ব্যাংকের বর্তমান ও অবসরে যাওয়া ডিএমডিদের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের দক্ষ ব্যাংকারদের নামও ভাবা হচ্ছে। কারণ, সরকারি খাতে ব্যাংক চালানোর মতো দক্ষ ও সৎ ডিএমডির ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করা হয়।

৩ পার্বত্য জেলা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ক্ষতির মুখে পর্যটন খাত

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৮ পিএম
৩ পার্বত্য জেলা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ক্ষতির মুখে পর্যটন খাত
কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু। ছবি : খবরের কাগজ

নিরাপত্তাঝুঁকিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকদের ভ্রমণে বিরত থাকার জন্য জেলা প্রশাসনের অনুরোধ কার্যকর হচ্ছে। ফলে দুর্গাপূজা ও পাহাড়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘কঠিন চীবর দান’ অনুষ্ঠানের ছুটিতে পর্যটকরা আসতে পারছেন না। এতে রাঙামাটির পর্যটনকেন্দ্রিক পাঁচ খাতে দৈনিক ক্ষতির মুখে পড়বে ১ কোটি ২০ লাখ টাকারও বেশি। তবে ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের ভ্রমণ দ্রুত উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

পাহাড়, ঝরনা আর হ্রদের শহর রাঙামাটি প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে যেন মুগ্ধতার আরেক নাম। তাই সারা বছরই এটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। কিন্তু পাহাড়ের চলমান অস্থিরতায় পর্যটকসংখ্যা কমে গেছে। রাঙামাটি শহরে ৬৫টি হোটেল-মোটেল, ১৭টি ইকো রিসোর্ট, কাপ্তাই ও সাজেকে ১৩২টি কটেজে পর্যটকদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে।

পূজা ও কঠিন চীবর দান উৎসবের ছুটিতে আগাম বুকিং বাতিল হওয়ায় ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। একই সঙ্গে পর্যটকনির্ভর অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যেও ধস নেমেছে।

আবাসিক হোটেল-রিসোর্ট, খাবারের দোকান (রেস্টুরেন্ট), পাহাড়িদের তৈরি টেক্সটাইল কাপড়, সড়ক, নৌযান ও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান- এই পাঁচ খাতকে ঘিরেই মূলত রাঙামাটির পর্যটনশিল্প। সব মিলিয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ২৪ দিনে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়বেন পর্যটনসংশ্লিষ্টরা।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাঙামাটি শহর, কাপ্তাই ও সাজেক জেলার এই তিন পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকরা আসেন। স্বাভাবিক সময়ে সারা বছর গড়ে ১০-১২ হাজার পর্যটক ভ্রমণে আসেন। তবে শুক্র, শনিবার ও ঈদ-পূজা-পার্বণে সরকারি টানা ছুটিতে এই সংখ্যা বেড়ে ৬০-৭০ হাজারে পৌঁছায়। ফলে পর্যটন ব্যবসায়ীরা এ সময়টাকে টার্গেট করে ব্যবসার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।

পর্যটন নৌযান ঘাটের ট্যুরিস্ট বোটচালক রাকিব হোসেন বলেন, ‘ভাবছিলাম পূজা আর কঠিন চীবর দানে ভালো আয় করব। কিন্তু এই সমস্যায় (পর্যটক ভ্রমণে বিরত থাকার অনুরোধ) সেটা আর হচ্ছে না। আমাদের দেড় শতাধিক ট্যুরিস্ট বোটচালক এখন বেকার হয়ে গেছে। ইনকাম একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে।’

পর্যটন নৌযান ঘাটের ব্যবস্থাপক ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এমনিতেই সেতু ডুবে যাওয়ায় পর্যটক কমে গেছে। তার ওপর এখন ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা চলছে। এ অবস্থায় একেবারেই পর্যটক শূন্য হয়ে গেছে রাঙামাটি।’

পাহাড়িদের তৈরি টেক্সটাইল কাপড় বিক্রেতা টিনা চাকমা বলেন, ‘পর্যটক না থাকায় বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। দৈনিক খরচের টাকা উঠছে না।’

আবাসিক হোটেল ইফশার মালিক ইউছুপ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যারা পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, বলতে হবে আমাদের দুর্ভাগ্য। জুলাই বিপ্লব থেকে পর্যটক কম আসছে। এখন নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও দৈনিক খরচের টাকা তুলতে পারছি না। আগাম বুকিংও বাতিল করেছেন পর্যটকরা।’

রাঙামাটি রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুমেধ চাকমা বলেন, ‘জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন ও সাম্প্রতিক সহিংসতায় পর্যটক না আসায় আমাদের অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এখন প্রশাসনের আকস্মিক এই সিদ্ধান্তে আমরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি।’

এদিকে জেলা প্রশাসনের ‘পর্যটক ভ্রমণে বিরত থাকার’ নির্দেশনায় উদ্বেগ জানিয়েছে রাঙামাটির পর্যটন খাতসংশ্লিষ্ট ১০ সংগঠন। তারা অবিলম্বে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে গতকাল সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। একই সঙ্গে পর্যটনসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এ খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করার ও পর্যটন খাতে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য প্রণোদনা পাওয়ার দাবি জানিয়েছে।

 

বিএসইসির সুষ্ঠু নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তা করবে সশস্ত্র বাহিনী

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১৭ পিএম
বিএসইসির সুষ্ঠু নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তা করবে সশস্ত্র বাহিনী
বিএসইসি

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সঙ্গে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী এবং কোস্টগার্ড ও সশস্ত্র বাহিনী পদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় আগারগাঁও শেরেবাংলা নগর প্রশাসনিক এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিএসইসির সুষ্ঠু নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তা করবে বলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত রবিবার বিএসইসি ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার মুহাম্মদ মোহসিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সরকার ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিএসইসির সুষ্ঠু নিরাপত্তা নিশ্চিতে আগারগাঁও শেরেবাংলা নগর প্রশাসনিক এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সহায়তা করবে মর্মে উল্লিখিত বৈঠকে আলোচিত হয়। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কার্যক্রম যাতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ও নির্বিঘ্নভাবে সম্পাদিত হয়, তা নিশ্চিতেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, কমিশন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বাজারের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক ও আলোচনা করছে এবং একটি স্বচ্ছ, গতিশীল, বিনিয়োগ ও বিনিয়োগকারীবান্ধব পুঁজিবাজার তৈরিতে নিরলস কাজ করছে। বর্তমান কমিশন পর্যায়ক্রমে দেশের পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনায় বসছে। পুঁজিবাজারের সার্বিক সংস্কারসংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জ পিএলসি (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচেঞ্জ পিএলসি (সিএসই), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম), বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটস (বিএএসএম) ও ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) শীর্ষ নির্বাহীদের এবং গত ১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), অ্যাসোসিয়েশন অব ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অব বাংলাদেশ (এসিএরএবি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি), ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি), ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) ও ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) শীর্ষ প্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেও আলোচনায় বসার সুযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে ৬ অক্টোবর কমিশনের সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশের বৈঠক হয় এবং সে বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।

সর্বোপরি দেশের পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ও কল্যাণে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করে বাজারসংশ্লিষ্ট সবার মতামত ও পরামর্শের আলোকে পুঁজিবাজারের গঠনমূলক ও টেকসই সংস্কারের জন্য বিএসইসি কাজ করে যাচ্ছে।

পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১৩ পিএম
পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত

দেশের পুঁজিবাজারে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে দরপতন। এই দরপতনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়েও বিনিয়োগকারীরা থামাতে পারছেন না পতন। 

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (৭ অক্টোবর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ঢালাও দরপতন হয়েছে। ফলে দুই বাজারেই মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন দেখতে হলো বিনিয়োগকারীদের।

শুধু চলতি সপ্তাহ নয়, শেয়ারবাজারের এই দরপতন চলছে কয়েক সপ্তাহ ধরেই। যে কারণে এই দরপতনের প্রতিবাদে গত সপ্তাহে দুই কার্যদিবস এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। বিনিয়োগকারীদের এই বিক্ষোভ থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার বিএসইসির কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন থেকে এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বিএসইসির মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। এরপরে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার বিএসইসির কার্যালয়ের সামনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিএসইসির কার্যালয়ের সামনে পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়।

বিএসইসির কার্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও শেয়ারবাজারে দরপতনের ধারা অব্যাহত থাকে। ফলে রবিবার দিনের লেনদেন শেষে বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ আবারও বিএসইসির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে মানববন্ধন করেন।

এ পরিস্থিতিতে সোমবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। মাঝে কিছু সময়ের জন্য বেশির ভাগ ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ায় সূচক কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হয়। তবে লেনদেনের শেষ আড়াই ঘণ্টায় শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়। এতে দাম কমার তালিকা যেমন বড় হয়েছে, তেমনি সবকটি মূল্যসূচক কমেই দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে মাত্র ৫৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৮৮টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৫৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমলেও ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, লাফার্জহোলসিম এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো বড় মূলধনের কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ায় সূচকের খুব বড় পতন হয়নি।

ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪৩ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩৩৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৮৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৪২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সবকটি মূল্যসূচক কমার দিনে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৬৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৬৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৬ কোটি ৯৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অগ্নি সিস্টেমের ২৩ কোটি ৫৪ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ব্র্যাক ব্যাংক, লাভেলো আইসক্রিম, গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইবনে সিনা।

সোমবার ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি।

এদিন ডিএসইতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় ২ টাকা ৬০ পয়সা বা ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়েছে।

দর বৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে মার্কেনটাইল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স পিএলসি। কোম্পানিটির শেয়ারদর ১ টাকা ১০ পয়সা বা ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়েছে। দর বৃদ্ধির তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা ইসলামী ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ারদর বেড়েছে ৬০ পয়সা বা ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

সোমবার দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসা অপর কোম্পানিগুলো হচ্ছে- তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেড, আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচুয়াল ফান্ড, ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি।

সোমবার ডিএসইতে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড।

সোমবার দিন শেষে ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে ২০ টাকা ৬০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। তাতে দরপতনের শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে কোম্পানিটি।

এদিকে দর হারানোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসির শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ১০ টাকা বা ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ারদর ৭ দশমিক ২০ শতাংশ কমে যাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড।

এদিন দরপতনের তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- খুলনা প্রিন্টিং প্যাকিজিং লিমিটেড, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সেন্ট্রাল ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড, জিবিবি পাওয়ার লিমিটেড, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, রহিমা ফুড করপোরেশন লিমিটেড, দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড।

অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৫৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২২টির এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলে ২০০ ডলার ছাড়াতে পারে

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০১ পিএম
জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলে ২০০ ডলার ছাড়াতে পারে
ইরানের একটি জ্বালানি তেল পরিশোধানগার। ছবি : সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়লে ইরানের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদন ব্যবস্থা ধ্বংস হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। এর ফলে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ২০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও মনে করছেন তারা। সম্প্রতি একজন পণ্য বিশ্লেষক আমেরিকান বিজনেস নিউজ চ্যানেল সিএনবিসিকে এমনটা জানিয়েছেন।

লাটভিয়াভিত্তিক বৃহত্তম ব্যাংক এসইবির প্রধান বিশ্লেষক বিয়ার্নে শিলড্রপ বলেন, ইরান প্রতিদিন ২০ লাখ ব্যারেলের বেশি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন ও রপ্তানি করে। তিনি বলেন, যদি অঞ্চলের উত্তেজনা আরও ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে ইরানের তেল অবকাঠামো ধ্বংস করে দেয়, তাহলে এটি ওপেক প্লাস জোটের অতিরিক্ত জ্বালানি তেল সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। শিলড্রপ আরও বলেন, এটি কেবল দামই বাড়াবে তা নয়, বরং জ্বালানি তেলের বাজারে অনিশ্চয়তাও তৈরি করবে। বাজারে পরবর্তী প্রশ্ন হবে- এখন হরমুজ প্রণালিতে কী হবে এবং এই সংঘাত অবশ্যই জ্বালানি তেলের সঙ্গে একটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি (বিমা) প্রিমিয়াম যোগ করবে। অর্থাৎ এর ফলে অবশ্যম্ভাবীভাবে বাড়বে জ্বালানি পণ্যটির দামও। 

শিলড্রপ আশঙ্কা করছেন, এই সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়লে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি ২০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে, যেটি বর্তমান দামের থেকেও ১৬১ শতাংশ বেশি।

এদিকে রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল সোমবার জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার ছুঁইছুঁই করছিল। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ লেনদেন অনুযায়ী, জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৭৬ ডলার ৪৪ সেন্ট। ইসরায়েলের ওপর ইরানের বড় মিসাইল হামলার ফলে দাম গত মঙ্গলবারে তলানিতে ঠেকার পরে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেটি আবার প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। ইরানের এই হামলাটি লেবাননে ইসরায়েলের স্থলভাগে আক্রমণের জবাবে করা হয়েছিল বলে ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়। সিএনবিসির খবরে বলা হয়, ব্যবসায়ীরা আরও উত্তেজনা বাড়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন, বিশেষ করে ইসরায়েল কীভাবে প্রতিশোধ নেবে সে দিকে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছেন তারা।

এদিকে দাম বাড়া সত্ত্বেও ব্রেন্ট ক্রুড এখনো চলতি বছরের সর্বোচ্চ দাম ৯১ ডলারের চেয়ে প্রায় ১৬ শতাংশ নিচে লেনদেন হচ্ছে। অন্য বিশ্লেষকরা শিলড্রপের সঙ্গে সুর মেলাবেন বলেই মনে হচ্ছে। তাদের মতে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ততক্ষণ পর্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হবে না, যতক্ষণ না বিনিয়োগকারীরা জ্বালানি তেলের অবকাঠামোতে প্রকৃত ক্ষতি দেখতে পাবেন।

ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক (জ্বালানি বাজার, নীতি ও ভূ-রাজনৈতিক) বিশ্লেষণকারী সংস্থা র‌্যাপিডান এনার্জি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা বব ম্যাকনালি সিএনবিসিকে বলেছেন, ‘জ্বালানি তেলের বাজার ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নয়। আমরা সম্প্রতি লিবিয়ায় দেখেছি যেভাবে তেলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সে রকম কোনো ঘটনা যদি না ঘটে, তাহলে এই ঝুঁকির প্রভাব খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ হবে না।’

বব ম্যাকনালি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি তারা আশা করছে এবং তাদের প্রত্যাশা খুব সম্ভবত ইসরায়েল তার প্রতিক্রিয়ায় সংযত থাকবে এবং আমরা জ্বালানি উৎপাদন ও প্রবাহে কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যাঘাত দেখব না।’

তবুও কিছু বিনিয়োগকারী জ্বালানি তেল উৎপাদনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনায় এক রকম বাজি ধরছে বলে ব্লুমবার্গ রিপোর্ট করেছে। গত বুধবার প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড লেনদেন হয়েছে ১০০ ডলারে। এর অর্থ এটা দাঁড়ায় যে, ব্যবসায়ীরা তেলের দাম তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছানোর ঝুঁকি এড়াতে চাইছেন।

সিএনবিসি বলছে, ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনাই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর একমাত্র কারণ নয়। জ্বালানি তেলের উত্তোলন আরও কমানো হবে কি না- ডিসেম্বরে ওপেক প্লাস সেই সিদ্ধান্ত নেবে, যার ফলে উৎপাদন জোটের কিছু সদস্য তাদের জ্বালানি তেল উত্তোলনের সীমাবদ্ধতা থেকে ছাড় পাবে।

এই নিষেধাজ্ঞা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর জন্য চালু করা হয়েছিল, তবে জোটটিকে তাদের বাজারের অংশ হারাতে হয়েছে। এদিকে কিছু সদস্য তাদের কোটা মেনে চলেনি, যা ওপেকের নেতা সৌদি আরবের ক্ষোভের কারণ হয়েছে। গত সপ্তাহে সৌদি আরব হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে, ওপেক যদি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উৎপাদন না কমায়, তাহলে ব্রেন্টের দাম কমে ব্যারেলপ্রতি ৫০ ডলার পর্যন্ত নামতে পারে। কিছু দেশ এটিকে প্রচ্ছন্ন হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেছে। তারা মনে করেন, সদস্যরা যদি এই সিদ্ধান্ত না মানে, তাহলে রিয়াদ নিজেদের জ্বালানি তেলে উৎপাদন বাড়াবে। [সূত্র: রয়টার্স, ব্লমবার্গ ও সিএনবিসি]