চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জুলাই মাসে উন্নয়ন সহযোগীরা যে পরিমাণ অর্থছাড় করেছে তার চেয়ে বেশি সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে, যার পরিমাণ ২ দশমিক ৭ কোটি ডলার।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যানুযায়ী, জুলাই মাসে উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থছাড় করেছে ৩৫ কোটি ৮৩ কোটি ডলার। অন্যদিকে, একই মাসে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের সুদ ও আসল মিলিয়ে মোট ৩৮ দশমিক ৫৬ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের শুরুতে এমনিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি কম থাকে। এ কারণে অর্থছাড়ও কম হয়। অন্যদিকে, জুলাই মাসজুড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে রাজনৈতিক সহিংসতা ছিল। এর প্রভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা হয়েছে। ফলে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় অর্থছাড় কিছুটা কমেছে।
ইআরডি সূত্র জানায়, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে সরকারি খাতে বিদেশি ঋণের দায় (আউটস্ট্যান্ডিং বা বকেয়া) বেড়ে হয়েছে ৬৯ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৬ বা ৭ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার বেশি। ২০২৬ সালের পরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অনেক মেগা প্রকল্পের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হবে। তখন বড় অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ফলে আগামীতে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ চাপ আরও বেড়ে যাবে।
গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে বিদেশি ঋণের ছাড় কমেছে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। গত অর্থবছরের জুলাই মাসে উন্নয়ন সহযোগীরা ছাড় করেছিল ৪০ কোটি ডলার। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে চীনের থেকে নেওয়া ঋণের আসল পরিশোধের পরিমাণ বাড়ায় বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে বিদেশি ঋণ পরিশোধ ৫২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশ বিদেশি ঋণ পরিশোধ করেছিল ২৫ কোটি ডলার।
এ সময়ে আসল পরিশোধ বেড়েছে ৮০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ বিদেশি ঋণের আসল পরিশোধ করেছে ২৬ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ১৪ কোটি ৬৫ কোটি ডলার।
এ ছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৮১ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন ডলার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৬৪ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ডলার, বিশ্বব্যাংক ৩৮ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলার, রাশিয়া ২৯ মিলিয়ন ডলার এবং ভারত ছাড় করেছে ২১ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন ডলার।
কয়েক বছর ধরেই বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ইআরডির সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১১০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ। পরের ১০ বছরে; অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ২০১ কোটি ডলারের উন্নীত হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা পৌনে ৩০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। বিদায়ী অর্থবছরের বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ ৩৩৬ কোটি ডলার খরচ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এর মানে, গত এক যুগে বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে তিন গুণ হয়েছে।
এদিকে প্রতিবছর যত অর্থ বিদেশি সহায়তা হিসেবে আসে, তার তিন ভাগের এক ভাগ আগের নেওয়া ঋণ বাবদ পরিশোধ করতে হয়। অবশ্য বাজেটে ঋণ পরিশোধে আলাদা অর্থ বরাদ্দ থাকে। সামনে ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।
সদ্য প্রকাশিত ইআরডির প্রাথমিক হিসাবে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণে ছাড় দেখানো হয়েছে ৯ দশমিক ২৬৭ বিলিয়ন ডলার।