কুমিল্লায় সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় কৃষকের সব স্বপ্ন ভেসে গেছে। বন্যায় ৬৩ হাজার ৭৯৪ হেক্টর ফসলিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং প্রাথমিক ক্ষতির পরিমাণ ৮৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত ২০ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বন্যায় ১৪ উপজেলার ফসল তলিয়ে গেছে। গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙার পর কৃষকের জমি ও ফসল ডুবে যায়। এতে অসংখ্য কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলাজুড়ে মোট ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক বন্যায় ৬৩ হাজার ৭৯৪ হেক্টর ফসলিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কষ্টের ফসল বানের তোড়ে হারিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা কাঁদছেন। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো অবলম্বন খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।
গত ২০ আগস্ট থেকে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হতে থাকে। সময় যতই গড়িয়েছে, বন্যার ভয়াবহতাও ততই বেড়েছে। ইতোমধ্যে ২২ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টায় কুমিল্লার কোলঘেঁষে বয়ে চলা গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। এরপর একে একে জেলার ১৭ উপজেলার মধ্যে ১৪ উপজেলায় প্লাবিত হয়ে পড়ে। ফলে কৃষকের ফসলিজমি তলিয়ে যায়। বন্যাকবলিত কুমিল্লার ১৪ উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলার ফসল প্রায় পুরোপুরি ডুবে গেছে। আর বাকি ৭ উপজেলায় ফসলের আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণ উপজেলার নাগাইশ এলাকার কৃষক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমার জমির ধানগুলো প্রায় পেকে ছিল। সপ্তাহখানেক পরেই ধান কেটে বাড়ি নিয়ে আসব ভাবছিলাম। কিন্তু শত চেষ্টা করেও ওই ফসল আর ঘরে তুলতে পারিনি। সব ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কী খেয়ে বাঁচব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
একই কথা বলছেন কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ইন্দ্রাবতী গ্রামের কৃষক নিখিল চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, ‘এবার জমিতে ধান চাষের পাশাপাশি নদীর আইল ঘেঁষা জমিতে সবজি চাষ করেছিলাম। সবজিগুলো বেড়ে উঠছিল, ধানেও পাক ধরছিল। কিন্তু বুড়বুড়িয়া এলাকা দিয়ে গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় আমার সব শেষ হয়ে গেছে। জমিগুলো ভাঙনের মুখে পড়ে পানির তীব্র স্রোতের কারণে সব ভেসে গেছে। এমনকি আমার ঘরটিও পানিতে তলিয়ে ভেঙে গেছে। এখন আমার আর কিছুই নেই। আমি নিঃস্ব।’
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে, রোপা আমন বীজতলা ৪ হাজার ৫১৫ হেক্টর, ধান ২৩ হাজার ৩০৯ হেক্টর, শাকসবজি ২ হাজার ১৯ হেক্টর, রোপা আউশ ৩৩ হাজার ৫৮০ হেক্টর, আমন ৩৩৫ হেক্টর এবং ২১৬ হেক্টর আখ। এর মধ্যে ২০ হাজার ৬৪১ হেক্টর রোপা আমন, ১ হাজার ৬১৫ হেক্টর শাকসবজি, ২০ হাজার হেক্টর রোপা আউশ এবং ১১ হেক্টর আখ ফসলের জমি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে বন্যার পানিতে তলিয়ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০৪ হেক্টর শাকসবজি, ১৩ হাজার ৪৩২ হেক্টর রোপা আউশ এবং ২০৫ হেক্টর আখ ফসলের জমি। সব মিলিয়ে প্রাথমিক ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইয়ুব মাহমুদ জানান, সাম্প্রতিক বন্যায় জেলায় কৃষি ক্ষেত্রে যে ক্ষতি হয়েছে, তা আগে কখনো হয়নি। এর মধ্যে আউশ ধান সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোপা আমন ও রোপা আমনের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন রোপা আমনের মৌসুম পেতে হলে দ্রুত চারা তৈরি করে চারা রোপণ করতে হবে। আমরা সরকারিভাবে বীজ সংগ্রহ ও বিতরণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। বন্যায় চলতি মৌসুমে সবজির পুরোটাই ক্ষতি হয়েছে। এখন আমাদের সামনের ফলন ও কৃষকদের পুনর্বাসনের কথা ভাবলে ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠা যাবে। সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ৮৫০ কোটি টাকার ক্ষতির হিসাব ধরা হয়েছে।