বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘বেক্সিমকো বা এস আলম গ্রুপ শুধু নয়; কোনো প্রতিষ্ঠানেরই ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ (জব্দ) করা হয়নি। এর উদ্দেশ্য দুটি। এক. বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভ্যালু নষ্ট করতে চায় না। দুই. ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত কর্মসংস্থান, বেতন-ভাতা তথা জীবিকা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কোনো ক্ষতি বাংলাদেশ ব্যাংক করবে না।’
গভর্নর বলেন, ‘গণমাধ্যমে এসব নিয়ে অপপ্রচার বা অভিসন্ধিমূলক সংবাদ প্রচার হচ্ছে, যা একেবারেই অপ্রত্যাশিত।’
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বিষয়টি পরিষ্কার করতেই এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যেকোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই হোক না কেন, তা নিজস্ব নিয়মে যথারীতি চলবে। অপপ্রচার করা হলে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আতঙ্ক ছড়ায়। এ বিষয়ে গভর্নর গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করেন।’
গভর্নর আরও বলেন, ‘আগামীতেও কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হবে না। কোনো ব্যাংক অতি উৎসাহিত হয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দ করে থাকতে পারে। কিন্তু এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা নয়।’
এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, ‘দেশের ৯-১০টি ব্যাংক আর্থিকভাবে অতি দুর্বল বা প্রায় দেউলিয়া অবস্থায় আছে। আমরা চাই না কোনো ব্যাংক বন্ধ হোক। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে দেউলিয়া পর্যায়ে থাকা ব্যাংকগুলো যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে। আমরা সেই চেষ্টাই করব। এসব ব্যাংক টেকনিক্যাল, অ্যাডভাইজরি ও লিকিউডিটি সুবিধা পাবে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্বল ব্যাংকগুলো সম্পর্কে এখন প্রতিদিন খোঁজ রাখা হচ্ছে। এসব ব্যাংকের প্রতিবেদন ডেইলি-বেসিস এ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর কোথায় সমস্যা, অসুবিধা সব দেখা হচ্ছে এবং প্রতিদিনই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
গভর্নর বলেন, ‘গ্রাহকদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। ব্যাংক যে অবস্থাতেই থাকুক গ্রাহকদের কোনো ক্ষতি হবে না। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আমানত সুরক্ষা বিমার পরিমাণ ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করেছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে আমানতকারী গ্রাহকদের ৯৯ দশমিক ৬০ শতাংশের স্বার্থ আমানত সুরক্ষা বিমার মাধ্যমে সুরক্ষা করা আছে। অর্থাৎ ২ লাখ টাকার মধ্যে যাদের অমানত রয়েছে তারা আমানতের পুরো টাকা ফেরত পাবেন। কিন্তু যাদের আমানত ২ লাখ টাকার বেশি আছে তারা পুরো টাকা পাবেন না। নির্ধারিত সীমার ওই ২ লাখই পাবেন।’
গভর্নর আরও বলেন, ‘কোনো দেশই ব্যাংকিং খাতের আমানতের ১০০ ভাগ গ্যারান্টি দেয় না। আমরাও ৯৯ শতাংশের বেশি গ্যারান্টি দিচ্ছি। আমাদের অর্জন যদি ৯৫ শতাংশও হয় এটা আমাদের স্বার্থকতা হবে।’
এক্সিম ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংকের প্রয়োজনে অর্থ সহায়তা দিয়ে ব্যাংকটিকে টিকিয়ে রাখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরই দায়িত্ব। ব্যাংক টিকে থাকলে ব্যবসা করতে পারবে এবং ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’
গভর্নর বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত পলিসিগুলো পর্যালোচনা করা হবে। কোনো পলিসি বিশেষ কোনো গোষ্ঠীকে দেওয়ার জন্য করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আগামী ১০ দিনের মধ্যে ব্যাংক খাতের টাস্কফোর্স গঠন করে কাজ শুরু করতে পারব বলে আশা করছি। এ লক্ষ্যে, কাজ হচ্ছে। এডিবি, বিশ্বব্যাংক আমাদের সহায়তা দেবে। আশা করছি ব্যাংক খাতের জন্য আমরা ভালো কিছু করতে পারব।’
গভর্নর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ২৫ হাজার কোটি টাকার ফান্ড রয়েছে। এই ফান্ড দীর্ঘদিন হলো অব্যবহৃত আছে। মূলত, ঋণ বিতরণে জটিল প্রক্রিয়া বা শর্তাবলির কারণে এটি হচ্ছে। কারণগুলো ব্যাংককে লিখিত আকারে দিতে বলা হয়েছে, তা সমাধান করে এসএমই খাতে ঋণ বিতরণে গতি আনা হবে। এতে একদিকে ব্যাংকগুলো উপকৃত হবে, অন্যদিকে এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা তারল্য সহায়তা পাবেন। অর্থনীতিতেও উৎপাদন কার্যক্রম বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘আগে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রতি মাসে এক দশমিক এক বিলিয়ন ডলার কমত। এখন সেটা কমছে না, বরং বাড়ছে। প্রবাসী আয় বেশি আসা ও ব্যাংকগুলোতে তারল্য বৃদ্ধির ফলে রিজার্ভের এই উন্নতি হচ্ছে।’