চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ হাজার ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার। গত ২০২৩-২৪ অথর্বছরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫ হাজার ১০৭ কোটি ডলার। পণ্য ও সেবা—উভয় খাত মিলিয়েই এ তথ্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, চলতি অর্থবছরের জন্য রপ্তানির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ ধরা হচ্ছে। তবে তিনি নিজে থেকে রপ্তানির মোট লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করেননি।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা হবে যুক্তিসংগত। এবার রপ্তানি আয় আগের থেকে কমবে না, বরং বেশি হবে। আর রপ্তানি নিয়ে কিছু তথ্যগত বিষয় নিয়ে আমরা আলাপ করেছি। তথ্য সংগ্রহ করার যেসব ব্যবস্থা আছে, আমরা সবগুলো চালু রাখব। সবার তথ্য সমন্বয় করে সত্য চিত্র দেব। একেক দপ্তর একেক রকম তথ্য দেবে, তা হবে না। কিছুটা পার্থক্য থাকে, এটা স্বীকার করতে হবে। বিরাট অসংগতি দূর করা হবে।’
রপ্তানির ক্ষেত্রে কর, শুল্ক ইত্যাদি–বিষয়ক যেসব বাধা আছে, সেগুলো পর্যালোচনা করার কথা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, রপ্তানি যেন বহুমুখীকরণ করা যায়, সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করবে।
উপদেষ্টা বলেন, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতটা পরিবর্তন হয়েছে। এ কারণে এবার রপ্তানি আয় আগের চেয়ে কমবে না। বরং বেশি হবে। আমেরিকাও সবদিক থেকে ইতিবাচক দৃষ্টি রাখবে।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন, কারফিউ জারি ও ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং ভয়াবহ বন্যার পরও চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে পণ্য রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে। এর মধ্যে জুলাইয়ে প্রায় ৩ শতাংশ ও আগস্টে প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ বেড়েছে রপ্তানি। এ দুই মাসে মোট ৭৮৯ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩২ কোটি ডলার বেশি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে পণ্য রপ্তানির এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। এই হিসাবের মধ্যে অবশ্য রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) প্রচ্ছন্ন রপ্তানি এবং স্যাম্পল বা নমুনা রপ্তানির তথ্যও সংযুক্ত আছে। যদিও পরিমাণটি কম।
এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৩৮২ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই মাসে ছিল ৩৭১ কোটি ডলার। তার মানে গত জুলাইয়ে রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ বা ১১ কোটি ডলার। অন্যদিকে আগস্টে ৪০৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যা গত বছরের একই মাসে ছিল ৩৮৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ সদ্য সমাপ্ত আগস্ট মাসে পণ্য রপ্তানি ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ বা ২১ কোটি ডলার বেড়েছে।
আপনারা কি এই অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, রপ্তানি নিয়ে কিছু কিছু তথ্যগত ইস্যু ছিল। আমরা এগুলো নিয়ে আলাপ করেছি। যারা তথ্য সংগ্রহ করে, আমরা সবগুলো চালু রাখব। আমরা সবগুলো সমন্বয় করে সত্য চিত্র দেব। এক একজন এক একরকম তথ্য দেবে, সেটা হবে না। কিছুটা পার্থক্য থাকে, এটা স্বীকার করতে হবে। বিরাট অসঙ্গতি দূর করা হবে।
তিনি বলেন, রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা হবে যুক্তিসঙ্গত। বিভিন্ন কম্পোনেন্ট আছে রপ্তানির। এগুলো দেখব। বিভিন্ন পণ্য আছে ওগুলো দেখা হবে। আর রপ্তানির ক্ষেত্রে যেসব বাধা আছে রেগুলেটরি, ট্যাক্সসংক্রান্ত সেগুলো আমরা রিভিউ করব। রপ্তানি যেন ডাইভারসিফাইড (বহুমুখীকরণ) করা হয়, সেটা আমাদের লক্ষ্য।
রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে আপনাদের প্রজেকশন কি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা রিয়েলাইজ করেছি রপ্তানি প্রবৃদ্ধি মোটামুটি ভালো হবে। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতটা চেঞ্জ হয়েছে, অতএব আগের থেকে কমবে না, আগের চেয়ে বেশি হবে।
আপনারা কি আমেরিকায় জিএসপি সুবিধা পাবেন এবার? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, জিএসপি সুবিধার জন্য এরই মধ্যে তাদের বলা হয়েছে। আমরা আবার চেষ্টা করব। আমরা আশা করি, আমেরিকা আমাদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টি রাখবে সবদিক থেকে। অতএব জিএসপিটা পজিটিভ। আমরা অন্যদের সঙ্গে আলাপ করছি রপ্তানির বিষয়ে।
চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কত হতে পারে? সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে সাহেলউদ্দিন আহমেদ বলেন, এবার রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১২.৪ শতাংশ।