জনগণের প্রতি সরকারের জবাবদিহি কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রথম উপগভর্নর সদিকুল্লাহ খালিদ বলেছেন, গত এক বছরে আফগান মুদ্রার বিনিময়মূল্য মার্কিন ডলারের বিপরীতে ১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় তিনি গ্রাহক আমানত উত্তোলনের পরিমাণ প্রতি সপ্তাহে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার আফগানি এবং প্রতি মাসে ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ আফগানি করার ঘোষণা দেন। আর ডলারের হিসাবে এই সংখ্যা প্রতি সপ্তাহে ১ হাজার থেকে ২ হাজার ডলার এবং প্রতি মাসে ৩ থেকে ৬ হাজার ডলারে উন্নীত করেন। খবর আফগান ভয়েস এজেন্সির।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিভাগের প্রধান আহমদ জাভেদ সাদাদ বলেছেন, কেন্দ্র ও প্রদেশ থেকে ৭ বিলিয়ন আফগানি নোট সংগ্রহ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর বদলে নতুন নোট চালু করা হয়েছে।
ব্যাংকিং তদন্ত বিভাগের উপ-পরিচালক ইহসানুল্লাহ মানসুর জানিয়েছেন, গত এক বছরে মুদ্রাবিনিময় অফিস ও মানি সার্ভিস কোম্পানিগুলোর ১৪৯টিকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মোট নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা ১ হাজার ৭৮০টিতে পৌঁছেছে।
অন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানের প্রধান আহমদ জহির নাসিরজাই দেশে ইলেকট্রনিক মুদ্রা ব্যবহারের জন্য একটি জাতীয় কৌশল গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। এই লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা, হাসপাতাল এবং সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরগুলোতে ইলেকট্রনিক মুদ্রা ব্যবহারের জন্য যন্ত্রপাতি ইনস্টল করা হয়েছে। আহমদ জহির নাসিরজাই বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত এক বছরে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আগের বছরগুলোতে মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৮ শতাংশ। কিন্তু গত বছরে সেটি কমে মাইনাস ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ হয়েছে।
দেশের পেমেন্ট সিস্টেমের প্রধান আসাদুল্লাহ মোশফাক বলেছেন, ৩৭৭টি মুদ্রাবিনিময় অফিস এবং মানি সার্ভিস কোম্পানি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষণের আটটি অসঙ্গতি ও ইলেকট্রনিক মানি প্রতিষ্ঠানের বিদেশি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ছয়টি অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে মুদ্রা আদান-প্রদানের ৭০০টি পদ্ধতি নিবন্ধন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত বছর আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট খোলা, প্রাথমিক আমানত, নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট সক্রিয়করণ এবং ব্যক্তিগত ও করপোরেট অ্যাকাউন্টের জন্য বার্ষিক ফি সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় সুবিধা চালু করেছে।
জবাবদিহিতা কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, ব্যাংকটি গত বছরে আফগান মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল করার জন্য ৩৯ বার ডলার নিলাম করেছে। তারা জানান, এই মুদ্রানীতি বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে আফগান মুদ্রার বিনিময় হার বজায় রাখার সর্বোত্তম উপায়।
প্রসঙ্গত, তালেবান সরকারের নেতৃত্বে আফগানিস্তান তাদের উত্তরোত্তর সাফল্য দেখাচ্ছে। এক সময় আফিমের ওপর নির্ভরশীল হলেও বর্তমানে সেখান থেকে ফিরে এসে অর্থনীতিকে বহুমুখী রূপান্তরের চেষ্টা করছে দেশটি। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে অন্য দেশগুলো যেখানে বৈদেশিক বাণিজ্যে হোঁচট খাচ্ছিল, আফগানিস্তান সেখানে ডলারকে হারিয়ে বিশ্বে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।