টানা দ্বিতীয় বছরের মতো চিনি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে ভারত সরকার। কারণ বিশ্বে চিনির সবচেয়ে বড় ভোক্তা দেশটিতে চলতি মৌসুমে আখের ফলন কম হওয়ায় আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সে কারণে চিনির উৎপাদনও কমতে পারে। সরকারি একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ের প্রত্যক্ষ জ্ঞান রয়েছে এমন সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, জৈব জ্বালানি সরবরাহ বাড়ানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে চিনি কল থেকে তেল কোম্পানিগুলো যে দামে ইথানল কেনে, নয়াদিল্লি সেই দাম আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করা হোক- সূত্রগুলো সেটা চায়নি। কারণ আলোচনাগুলো অত্যন্ত গোপনীয় ছিল। সূত্র বলছে, চিনি রপ্তানিতে বিশ্ববাজারে ভারতের অনুপস্থিতি, বৈশ্বিক সরবরাহকে আরও সংকুচিত করবে। সেই সঙ্গে নিউইয়র্ক ও লন্ডনে বেঞ্চমার্ক চিনির দাম আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, নয়াদিল্লি এমনি একটি সময়ে কলগুলোকে চিনি রপ্তানি করতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে, যখন বিশ্বের শীর্ষ উৎপাদক ও সরবরাহকারী ব্রাজিল থেকে সরবরাহ কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি বিশ্বে চিনির সবচেয়ে বড় জোগানদাতা। সম্প্রতি খরার কারণে তাদের চিনির উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারত সরকারের একটি সূত্র বলেছে, বর্তমানে আখের ফলন যেই পরিস্থিতিতে রয়েছে, সেখানে চিনি রপ্তানির কোনো সুযোগ নেই। সূত্রটির বক্তব্য হলো ‘দেশীয় চিনির চাহিদা পূরণের পর আমাদের পরবর্তী অগ্রাধিকার ইথানল ব্লেন্ডিং (পেট্রলের সঙ্গে ইথানল মিশিয়ে একটি নতুন জ্বালানি তৈরির প্রক্রিয়া)। সেই সঙ্গে ইথানল ব্লেন্ডিংয়ের লক্ষ্য পূরণের জন্য আমাদের আরও অনেক বেশি আখের প্রয়োজন।’
খবরে বলা হয়, কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে ভারত ২০২৫ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে পেট্রলে ইথানলের অনুপাত বর্তমান ১৩-১৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার লক্ষ্যে কাজ করছে। ভারতের ইআইডি-প্যারি, বলরামপুর চিনি মিলস, শ্রী রেনুকা, বাজাজ হিন্দুস্তান ও দ্বারিকেশ সুগারসহ বেশ কয়েকটি চিনিকলের ইথানল উৎপাদন ক্ষমতা গত কয়েক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, সরকার নতুন বিপণন মৌসুম শুরু হওয়া নভেম্বর মাস থেকে ইথানলের মূল্য ৫ শতাংশের বেশি বাড়ানোর কথা ভাবছে। গত মাসের শেষের দিকে সরকারের একটি আদেশে বলা হয়, ভারত নভেম্বর থেকে চিনিকলগুলোকে আখের রস বা সিরাপ ব্যবহার করে ইথানল উৎপাদন শুরু করার অনুমতি দেবে।
ভারতের চিনি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো ও দেশীয় ইথানলের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনার বিষয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি। উভয় ব্যবস্থার কথা এই মাসের শেষের দিকে ঘোষণা করা হতে পারে। এ বিষয়ে রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে ভারত সরকারের একজন মুখপাত্র তাৎক্ষণিকভাবে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
খবরে বলা হয়, ব্রাজিলের পরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিনি উৎপাদক ভারতও গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া বর্তমান মৌসুমে চিনি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সাত বছর পর চিনি রপ্তানির ওপর এটি ছিল দেশটির প্রথম নিষেধাজ্ঞা।
গত মৌসুমে নয়াদিল্লির চিনি রপ্তানির পরিমাণ ৬১ লাখ মেট্রিকটনে সীমাবদ্ধ ছিল, যা ২০২১-২২ মৌসুমে দেশটির মোট রপ্তানির প্রায় অর্ধেক। সূত্রগুলো জানায়, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক রাজ্যে গত বছরের অপর্যাপ্ত বৃষ্টির প্রতিকূল প্রভাবের কারণে আগামী ২০২৪-২৫ মৌসুমে চিনির উৎপাদন চলতি মৌসুমের ৩ কোটি ৪০ লাখ টন থেকে কমে আগামী মৌসুমে ৩ কোটি ২০ লাখ টনে নেমে আসতে পারে। মুম্বাইভিত্তিক একজন ডিলার বলেছেন, ব্রাজিলের উৎপাদন কম হওয়ার প্রত্যাশায় বিশ্বকে ২০২৫ সালে ভারত থেকে চিনি আমদানির প্রয়োজন হবে। তবে ভারত থেকে রপ্তানি না হলে, বিশ্ববাজারে চিনির দাম আরও বাড়বে।