বিজিএমইএসহ প্রশাসনের নানামুখী উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাতেও স্বাভাবিক হয়নি আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল এলাকায় পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ। শনিবারও (১৪ সেপ্টেম্বর) শ্রমিক অসন্তোষের কারণে নতুন করে ১৩টি পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আগে থেকেই ৩৯টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। সব মিলিয়ে বন্ধ পোশাক কারখানার সংখ্যা দাঁড়াল ৫২টি। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অস্থিরতা না কাটলে আগামীকাল রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে তারা কারখানা বন্ধ করে দেবে। এ সংকট নিরসনে রাজনৈতিক নেতাসহ সব পক্ষকে নিয়ে একটি মুক্ত আলোচনারও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
এদিকে আজ বিজিএমইএ কার্যালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে কারখানার মালিক ও সংগঠনটির নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক শেষে বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘চলমান অস্থিরতা না কাটলে রবিবার থেকে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিতে পোশাক কারখানা মালিকরা মত দিয়েছেন। পোশাকমালিকদের অপর সংগঠন বিকেএমইএ থেকেও বিজিএমইএর সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে। পোশাকমালিকদের ওই দুটি সংগঠন থেকেই শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে সর্বপক্ষীয় আলোচনা সভা আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল।’
শনিবারের বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত থেকে পোশাক কারখানা মালিকদের মতামত শোনেন। সভায় উপদেষ্টারা তাদের বক্তব্যে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন করতে ও কারখানা খোলা রাখতে শ্রমিকনেতাদের সহযোগিতা চেয়েছেন।
এদিকে বিজিএমইএ নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, পোশাক কারখানার জুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিতে বহিরাগতরা শ্রমিক অসন্তোষ টিকিয়ে রেখেছেন। গত দুই সপ্তাহ ধরে আশুলিয়া, সাভার ও গাজীপুরে পোশাক কারখানাগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ওই সব এলাকার প্রায় ৯০টির মতো পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শ্রমিকদের দাবির মধ্যে রয়েছে- বকেয়া বেতন পরিশোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, টিফিন বিল বৃদ্ধি, হাজিরা বোনাস ও শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করা। শ্রমিকদের একাধিক সংগঠন এই আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছে।
এরপর থেকে দফায় দফায় বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখে শ্রমিকনেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করে পর দিন ৫ সেপ্টেম্বর থেকেই সব পোশাক কারখানা চালু করার ঘোষণা দেওয়া হলেও তা বাস্তবে রূপ পায়নি। কারখানা চালু করে শ্রমিকরা কাজে ফিরতে সহযোগিতা চেয়ে পর দিন ৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেও তারা কাজে আসেননি। সেনাসদস্য, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের টহল সত্ত্বেও শ্রমিকদের আন্দোলন থামছে না। সপ্তাহব্যাপী শ্রমিক অসন্তোষ চলমান থাকলেও এর মধ্যে কিছু কারখানা খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় মালিকপক্ষ। কিন্তু তারপরও শ্রমিক অসন্তোষ না কমায় শনিবার সরকারের দুই উপদেষ্টাকে নিয়ে মতবিনিময় সভা করে বিজিএমইএ।
এমন পরিস্থিতিতে আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার আগামী অ্যাপারেলস কারখানার একাধিক শ্রমিক বলেন, ‘আমাদের কারখানায় আগে থেকে তেমন কোনো ঝামেলা ছিল না। আমরা সবাই একযোগে কাজ করেছি। তবে মাঝে বাইরের কারখানার শ্রমিকরা আসায় কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা কোনো রকম ঝামেলা চাই না, কাজ করতে চাই। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে আমরা এত শ্রমিক একসঙ্গে বেকার হয়ে যাব।’
এদিন বন্ধ থাকা ৯০টি পোশাক কারখানার মধ্যে ৪৭টি খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু ১৩টি কারখানায় শ্রমিকরা সময়মতো উপস্থিত হলেও কাজে যোগ দেননি বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে সূত্র জানিয়েছে। তবে শনিবার আশুলিয়া, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের শিল্প এলাকাগুলো থেকে বড় কোনো গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি।
এর আগে শুক্রবার শ্রমিকদের কাজে ফেরাতে আশুলিয়ার জামগড়ায় শ্রমিক-জনতার সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ওই সমাবেশে বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পুরো শিল্পাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল ও নবীনগর-চন্দ্রা সড়কে সেনাবাহিনী, এপিবিএন পুলিশ, শিল্প-পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের টহল জোরদার করা হয়। অনেক কারখানার সামনেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেছে।
শিল্প-পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের জানান, ‘আজ সাভার-আশুলিয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা ৮৬টি কারখানার মধ্যে আজ ৪৭টি খুলেছে। ১৩টি কারখানা আজ ছুটি ঘোষণা করে দেওয়া হয়। বাকি সব কারখানা চালু ছিল।’