ছাত্র-জনতার গণ-অভুত্থ্যানের পর শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দেশের দায়িত্ব নেয়। জুলাই-আগস্টে সহিংসতায় উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা নেমে আসে। এ সময় অধিকাংশ ঠিকাদার আত্মগোপন করেন। ফলে আবাসন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। রডের চাহিদা কমলেও দাম কমেনি। এখনো প্রতি টন রড ৯০ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে। রডের উৎপাদন, সরবরাহ, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছেন বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও শাহরিয়ার স্টিল মিল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস কে মাসাদুল আলম মাসুদের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাহাঙ্গীর আলম।
খবরের কাগজ: ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তন হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী আত্মগোপনে চলে গেছেন। ব্যবসা করতে গিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি?
এস কে মাসাদুল আলম মাসুদ: সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়নকারী অনেক ঠিকাদার ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন। ফলে তাদের পাওয়া অর্ডার বা কার্যাদেশগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যে কারণে আবাসনসহ উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। যেহেতু আমরা ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীদের কোনো দল নেই।
খবরের কাগজ: সরকার পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন কাজ স্থবির হয়ে গেছে। তারপরও রডের দাম কমছে না কেন?
এস কে মাসাদুল আলম মাসুদ: ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা হয়। দিন দিন ঋণের সুদহার বাড়ছে। ডলারের দামও বাড়ছে। ৮৬ টাকার ডলার ১২০ টাকায় ঠেকেছে। সবকিছুর দাম বেশি। কাজেই রডের দাম কমবে কীভাবে? চাহিদা কমেছে এটা সত্য। কিন্তু রড তো পচনশীল পণ্য নয়। বিক্রি কমে গেছে। মিলমালিকদের লোকসান হচ্ছে। তাই বলে একেবারে লোকসান করে বেশি দাম কমানো তো সম্ভব নয়।
খবরের কাগজ: উৎপাদন কমেনি। চাহিদা কমে গেছে। তাহলে দাম কমছে না কেন?
এস কে মাসাদুল আলম মাসুদ: চাহিদা কমলেও কারখানা তো বন্ধ রাখা যায় না। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক ঠিকাদার প্রকাশ্যে নেই। কাজেই তাদের সেসব উন্নয়ন কাজ বন্ধ রয়েছে, তা সরকারি বা ব্যক্তি পর্যায়ে হোক। এ জন্য রডের চাহিদা কমেছে। বাজার ডিমান্ড সাপ্লাইয়ের ওপর নির্ভর করে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে টনে ২০ ডলারের মতো কমেছে। তাই আগের চেয়ে রডের দাম কিছুটিা কমেছে। টনে ৪-৫ হাজার টাকা। আগে ৯০-৯৬ হাজার টাকায় রড বিক্রি হলেও বর্তমানে প্রতি টনে ৮৫-৯০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে।
খবরের কাগজ: বছর দুয়েক আগে ৬০ হাজার টাকার নিচে ছিল দাম। বর্তমানে ৯২ হাজার টাকা টন। এত বেশি দাম বাড়ল কেন?
এস কে মাসাদুল আলম মাসুদ: ডলার উচ্চমূল্য, গ্যাস ও বিদ্যুতের বাড়তি মূল্যের কারণে রডের দামও বেড়েছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না। সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অযাচিত কর ও শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বাড়তি শুল্ক কমানোর ব্যাপারে সাবেক চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি পাত্তাই দিতেন না। পথে পথে চাঁদাবজি তো আছেই। যেহেতু নতুন সরকার গঠন করা হয়েছে। কাজেই তাদের কাছে দাবি করা হবে। আজ শিল্প উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করা হবে। তার কাছে এসব কিছু দাবি করা হবে। এনবিআর চেয়্যারমানের কাছেও যাওয়া হবে। এনবিআরের সঙ্গে বৈঠকে বিভিন্ন কর ও শুল্ক কমানোর দাবি করা হবে। এসব দাবি যদি সরকার আমলে নেয়, ব্যাংকের সুদ কমে তাহলে রডের দাম কমতে পারে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কমলে রডের দাম কমতে পারে।
খবরের কাগজ: রডের উৎপাদন সক্ষমতা কত। চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে কি?
এস কে মাসাদুল আলম মাসুদ: ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, অযাচিত শুল্ক আরোপ আগে থেকেই চলে আসছে। উৎপাদন সক্ষমতা ৪০ শতাংশ কমে গেছে। এত কিছুর পরও আমরা উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সংগঠনের আওতায় ৪০টি অটোমেটিক স্টিল মিল রয়েছে। এ ছাড়া ১৫০টি ম্যানুয়ালি শিল্প রয়েছে। এসব মিলের উৎপাদন ক্যাপাসিটি বা সক্ষমতা ৯০ লাখ টনের মতো। উৎপাদন হচ্ছে ৬০ লাখ টন। তবে চাহিদা ৫০-৫৫ লাখ টন। দেশের চাহিদা মেটানের পরও উদ্বৃত্ত থাকছে। সুবিধা পেলে বাড়তি রড রপ্তানিও করা যেতে পারে। ফলে রড আমদানি করতে হবে না।