চট্টগ্রামে এক কেজি গমের দাম ৫০ টাকা এবং গমের ভুসি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এই অবস্থায় প্রান্তিক খামারি ও ডেইরি ফার্ম মালিকদের দুশ্চিন্তা কাটেনি। খরচের ভারে টিকতে না পেরে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে চাক্তাই পাইকারি বাজারেও গো-খাদ্য বেচাকেনা কমেছে।
খামারিরা বলছেন, যে হারে গো-খাদ্যের দাম বেড়েছিল, সে হারে দাম কমেনি। পাঁচ বছর আগে ৭৮০ টাকায় ৩৫ কেজি গমের ভুসি ও ৭০০ টাকায় ৫০ কেজি রাইস পলিস পাওয়া যেত। বর্তমানে গমের ভুসি ১ হাজার ৩০০ টাকায় এবং রাইস পলিস ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের মূল্যের তুলনায় ২০০ টাকা বেশি। ভাঙা ভুট্টার বস্তার দাম কমেছে মাত্র ২৫ টাকা। কাজেই উল্লেখযোগ্য হারে গো-খাদ্যের দাম কমেনি। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে খামারির সংখ্যা আরও কমতে পারে বলে তারা জানিয়েছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে গরুর খাবার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। সে সময় ৩৫ কেজি গমের ভুসি ১ হাজার ৫০০ টাকা, ৫০ কেজি রাইস পলিস ১ হাজার ৭০০ টাকা, ৪০ কেজি মসুর ভুসি ১ হাজার ৪০০ টাকা, ৬৪ কেজি সরিষার খইল ২ হাজার ৯৪৫ টাকা এবং ৫০ কেজি ভুট্টার বস্তা ১ হাজার ৬৭৫ টাকায় বিক্রি হয়।
চলতি বছরের শুরুতে যে দাম ছিল, তার তুলনায় বর্তমানে গমের ভুসি ও রাইস পলিসের বস্তার দাম কমেছে মাত্র ২০০ টাকা এবং ভাঙা ভুট্টার বস্তার দাম কমেছে ২৫ টাকা। তবে আট মাসের ব্যবধানে সরিষার খইল ও মসুর ভুসির দাম বেড়েছে। ৬৪ কেজির বস্তায় সরিষার খইল ২০৫ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ১৫০ টাকা এবং ৪০ কেজি মসুর ভুসির বস্তার দাম ২০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চাক্তাইয়ের গো-খাদ্য ব্যবসায়ী সেলিম অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী মো. তাহের খবরের কাগজকে বলেন, ‘গো-খাদ্যের ব্যবসায় মন্দাভাব তৈরি হচ্ছে। করোনার আগে চট্টগ্রাম মহানগরসহ আশপাশের উপজেলায় অনেক খামার ছিল। দিনকে দিন খামার সংখ্যা বা উদ্যোক্তা কমে আসছে। আগে আমরা দিনে গড়ে ২০ থেকে ২৫ বস্তা গো-খাদ্য বিক্রি করতাম, এখন তা ৭ থেকে ৮ বস্তায় নেমে এসেছে।’
চাক্তাইয়ের আরেক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শফি বলেন, ‘গো-খাদ্যের দাম কমলেও আমাদের বেচাকেনা খুব একটা বাড়েনি। আগে আমরা দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ বস্তা খাদ্য বিক্রি করতাম, এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ বস্তা। মনে হচ্ছে, লোকসানে পড়ে অনেকেই খামার বা ডেইরি ফার্ম বন্ধ করে দিচ্ছেন। সবমিলিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে একটা স্থবিরতা নেমে এসেছে।’
চট্টগ্রামের ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকার গো-খাদ্যের পাইকারি বিক্রেতা মোবারক স্টোরের মো. মোবারক বলেন, ‘ডলারের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত বছরের ডিসেম্বরে গো-খাদ্যের দাম বেড়েছিল। এখন দাম কমতির দিকে রয়েছে। পাশাপাশি বন্যার প্রভাব চট্টগ্রামে খুব একটা পড়েনি। নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু উদ্যোক্তা কমে যাওয়ায় ব্যবসায় ভাটা পড়েছে।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একজন প্রান্তিক খামারি ও শহরের ডেইরি ফার্মগুলোর পশু লালন-পালন এবং খাদ্য খরচ একই। কিন্তু প্রান্তিক খামারির চেয়ে শহরের ডেইরি ফার্মগুলো ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি দরে লিটারপ্রতি দুধ বিক্রি করে। তাহলে প্রান্তিক খামারিরা কীভাবে টিকে থাকবে? গো-খাদ্যের দাম কমেনি। ৪০ টাকার নিচে কোনো খামারি গরুর খাবার কিনতে পারছেন না। তাই খামারিরা লোকসানে পড়ছেন। করোনার আগে চট্টগ্রাম জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০ হাজারের ওপরে খামারি ছিল। বর্তমানে তা প্রায় ৩৫ হাজারে নেমে এসেছে। খামারিরা লাভবান হলে আরও কেউ উৎসাহিত হতো। কিন্তু এখন সে পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না।’