প্রচণ্ড গরমে নাকাল জনজীবন। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। এতে স্বাভাবিক জীবন ও ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন চাঁদপুরের মতলব-উত্তর উপজেলার পোলট্রি খামারিরা। দিন ও রাতের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে প্রচণ্ড গরমে বিভিন্ন এলাকার খামারে থাকা মুরগি মারা যাচ্ছে।
খামারিদের অভিযোগ, গত এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ নিজেদের ইচ্ছামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। কোনো রুটিন বা শিডিউল না করে দিন-রাত মিলে ৮-৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। এটি ক্ষতির বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে দুপুরের দিকে প্রচণ্ড গরমের কারণে হিট স্ট্রোকে মুরগি মারা যাচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩৫৭টি পোলট্রি খামার রয়েছে। এর মধ্যে ব্রয়লার খামার রয়েছে ৩১৫টি, লেয়ার ও দেশি মুরগির খামার রয়েছে ৪২টি। তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে প্রতিদিন এসব খামারের মুরগি মারা যাচ্ছে। খামারের ওপর নির্ভরশীল অনেক খামারি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর না থাকাসহ পর্যাপ্ত আলো-বাতাস খামারে প্রবেশ করতে না পারায় মুরগির হিট স্ট্রোকের প্রধান কারণ।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা জানান, হিট স্ট্রোক কোনো রোগ নয়। গরমের হাত থেকে মুরগিকে রক্ষা করতে পারলে হয়তো হিট স্ট্রোকে মুরগির মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া কোনো প্রকার ওষুধ বা চিকিৎসা দিয়ে মুরগি বাঁচানো সম্ভব নয়। বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এতে উৎপাদনের খরচ আরও বেড়ে যাবে।
ছেংগারচর পৌরসভার ঘনিয়ারপাড় গ্রামের খামারি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমার খামারে ৩ হাজার ব্রয়লার মুরগি রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় এবং প্রচণ্ড গরমের কারণে গত এক সপ্তাহে আমার প্রায় ৬০০ মুরগি মারা গেছে। লোডশেডিংয়ের জন্য আমি দায়ী। যদি রুটিন মাফিক লোডশেডিং হতো, তবু আগাম ব্যবস্থা নিয়ে হয়তো মুরগিগুলো বাঁচানো যেত।’
উপজেলার ওঠারচর গ্রামের খামারি শিপন মিয়া বলেন, ‘গত দুই দিনে হিট স্ট্রোকে আমার খামারের ৯০টি মুরগি মারা গেছে। প্রতিটি মুরগি দুই কেজির ওপরে। গরমের কারণে কোনোভাবেই হিট স্ট্রোক থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। লোডশেডিংয়ের কারণে ফ্যান চালিয়েও রাখতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে লোকসান কোথায় ঠেকবে বলা মুশকিল।’
লোডশেডিংয়ের বিষয়ে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর মতলব উত্তর জোনাল অফিসের এজিএম রায়হানুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার গ্রাহকের জন্য প্রতিদিনের বিদ্যুতের যা চাহিদা, তার মাত্র ৫০ শতাংশ বরাদ্দ পাচ্ছি। এ ছাড়া প্রধান সংযোগ লাইনও মাঝে মাঝে বন্ধ হচ্ছে। এ কারণে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তা (প্রাণী ও স্বাস্থ্য) পলাশ কুমার দাস বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকলে শুধু জেনারেটর দিয়ে মুরগি পালন করা কঠিন। এ জন্য এমন স্থানে খামার তৈরি করতে হবে, যেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসতে পারে। এ ছাড়া প্রচণ্ড গরমের সময় বিদ্যুৎ না থাকলে মুরগির শরীরে পানি স্প্রে করতে হবে। এতে হিট স্ট্রোকে মুরগি মারা যাওয়ার হার কমবে।’