ঢাকা ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪

ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ল ৮৯৮ কোটি টাকা

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩২ এএম
ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ল ৮৯৮ কোটি টাকা

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন হয়েছে। এতে সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইতে বাজার মূলধন বেড়েছে ৮৯৮ কোটি টাকা। পুঁজিবাজারের সাপ্তাহিক হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্যমতে, চলতি সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এ মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯২ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে দশমিক ১৩ শতাংশ বা ৮৯৮ কোটি টাকা।

গত সপ্তাহের চেয়ে কমেছে ডিএসইর দুটি সূচক। চলতি সপ্তাহে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা দশমিক ০৪ শতাংশ। এ ছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ১৩ দশমিক ৬১ পয়েন্ট বা দশমিক ৬৪ শতাংশ। তবে ডিএসই শরিয়াহ সূচক বেড়েছে ১৬ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

সূচকের পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ২২১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৯৯৪ কোটি ৬ লাখ টাকা। লেনদেন কমেছে ৭৭২ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

এদিকে প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ বা ১৫৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। চলতি সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬৪৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৭৯৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১০৭টি কোম্পানির, কমেছে ২৭১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।

এদিকে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত বৃহস্পতিবার চলতি সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর কমায় ডিএসইতে সূচকের মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে। তবে আগের দিনের চেয়ে বৃহস্পতিবার লেনদেন বেড়েছে। অন্যদিকে দেশের অপর পুঁজিবাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে।

বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পতনের ধারা অব্যাহত ছিল এবং দিন শেষে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বৃহস্পতিবার প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১২ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ৭২৬ দশমিক ৫১ পয়েন্টে অবস্থান করে। ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ৪ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ২৪৫ দশমিক ৬৮ পয়েন্টে অবস্থান করে। আর ডিএস৩০ সূচক ৭ দশমিক ০৫ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ কমে ২ হাজার ১০০ দশমিক ৭৪ পয়েন্টে অবস্থান করে। ডিএসইতে লেনদেন হয় ৭৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৬২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে গতকাল ডিএসইর লেনদেন ১০৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা বেড়েছে। এ দিন ১৭ কোটি ৫০ লাখ ৮৮ হাজার ৭৪৫টি শেয়ার ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯৭৬ বার হাতবদল হয়। লেনদেন হওয়া ৩৯৭ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫৮টির, কমেছে ১৮১টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৫৮টির দর।

গতকাল টাকার অঙ্কে লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড। কোম্পানিটির ৫১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর পরের অবস্থানে থাকা একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের ২৪ কোটি ৪৮ লাখ, এনআরবি ব্যাংক পিএলসির ২৩ কোটি ৭৮ লাখ, সোনালি আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ২২ কোটি ১২ লাখ, গ্রামীণফোন লিমিটেডের ১৭ কোটি ৯২ লাখ, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল পিএলসির ১৭ কোটি ৭১ লাখ, ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির ১৭ কোটি ৬৬ লাখ, অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেডের ১৫ কোটি ৭১ লাখ, ওরিয়ন ইনফিউশনস লিমিটেডের ১৩ কোটি ৯৬ লাখ এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ১৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

অন্যদিকে গতকাল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ শেয়ারদর বেড়ে টপটেন গেইনারের শীর্ষে উঠে আসে পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। এর পরের অবস্থানে থাকা সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ, মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ, রহিমা ফুড করপোরেশনের ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ, অ্যাপেক্স ট্যানারি লিমিটেডের ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ, সোনালি আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ, ওরিয়ন ইনফিউশনস লিমিটেডের ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ, রহিম টেক্সটাইলস লিমিটেডের ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ, সোনারগাঁও টেক্সটাইলস লিমিটেডের ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, লিবরা ইনফিউশনস লিমিটেডের ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে।

অন্যদিকে সিএসইতে গতকাল সিএসসিএক্স মূল্যসূচক ১৪ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ কমে ৯ হাজার ৭২৯ দশমিক ৫৩ পয়েন্টে এবং সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২১ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ কমে ১৬ হাজার ১৪০ দশমিক ০২ পয়েন্টে অবস্থান করে। গতকাল সিএসইসিতে মোট ২১১ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৭২টির, কমেছে ১০৯টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩০টির। সিএসইতে গতকাল লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকার, এর আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫ কোটি ৯১ লাখ টাকার।

ব্যাংক খাত সংস্কারে মালিকদের মতামত নেওয়া হবে: অর্থ উপদেষ্টা

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৬ পিএম
ব্যাংক খাত সংস্কারে মালিকদের মতামত নেওয়া হবে: অর্থ উপদেষ্টা
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক খাত সংস্কারে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে মালিকপক্ষের মতামতের প্রতিফলন থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। 

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে সচিবালয়ে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) একটি প্রতিনিধিদল অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। 

বৈঠকের পর ড. সালেহউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যাংক মালিকরা প্রস্তাব করেছেন সংস্কারের ক্ষেত্রে যেন তাদের মতামত নেওয়া হয়। আমি বলেছি, অবশ্যই তা করা হবে।’ 

প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বিএবির চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার। বৈঠক শেষে বিএবির চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ভালো নীতি প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। 

আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘ব্যাংকের শক্তি হচ্ছে ডিপোজিটর বা আমানতকারী। ডিপোজিটর না থাকলে কোনো ব্যাংক বাঁচবে না। এ জন্য তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’ 

উল্লেখ্য, ব্যাংক খাত সংস্কারে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করতে তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে রাখার জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। 

বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে প্রধানত ব্যাকিং খাতের সমস্যা ও সংস্কার বিষয়ে। কিছু সুনির্দিষ্ট সমস্যা আছে। অনেক ব্যাংক তারল্যসংকটে ভুগছে। আমি বলেছি বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলাপ করব। ব্যাংক মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে সংস্কার করা হবে তাতে যেন ব্যাংক মালিকদের মতামতের প্রতিফলন ঘটে। সেটা আমরা অবশ্যই করব। আমি তাদের অনুরোধ করেছি এই সময়ে ব্যাংকাররা যাতে যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেন। আগের মতো যাতে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি না ঘটে। একটা অভিযোগ রয়েছে, ছোট উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে যথাযথভাবে ঋণ পান না। তাদের ঋণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছি। ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য মালিকদের কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য বলা হয়েছে।’ 

অন্যদিকে বিএবির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই খাতকে উজ্জীবত করতে যে ধরনের সহযোগিতা দরকার, সে বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ঋণখেলাপি নিয়ে কথা বলেছি। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘নীতিনির্ধারকরা অনেক সময় যেসব সিদ্ধান্ত নেন, তাতে অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয় না। যে কারণে নীতিগুলো সঠিকভাবে কার্যকর হয় না। দেখা গেছে, ঘুম থেকে উঠে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার পেলাম। সেখানে কিছু বিষয় ঠিক থাকে। আবার অনেক বিষয় পরিষ্কারভাবে উল্লেখ থাকে না। এ সংস্কৃতি থেকে ধীরে ধীরে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। এতে আমরা যারা অংশীজন রয়েছি, তারা ভালোভাবে নীতি বাস্তবায়ন করতে পারব। এ জন্য আমাদের দরকার ভালো নীতি। এ বিষয়টি অর্থ উপদেষ্টাকে বলা হয়েছে।’ 

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “পোশাকশিল্পের প্রধান বাজার আমেরিকা, ইউরোপ। কাজেই পোশাকের মূল্য কী হবে না হবে, তা নির্ভর করবে কাস্টমারদের ওপর। পোশাক খাত টিকিয়ে রাখা খুব সহজ নয়। এটি একটি ‘ডেডিকেট সেক্টর’। যারা মালিক তারা বোঝেন একটি কারখানা চালাতে কী ধরনের কষ্ট সইতে হয়।” 

তিনি বলেন, ‘পোশাকের মূল্য নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর ওপর নির্ভর করে শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ সবকিছু পরিশোধ করতে হয়। শুধু কাপড় সেলাই করলেই পোশাক তৈরি হয় না। এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক অনেক কিছু রয়েছে। ভিয়েতনামসহ অনেক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আমাদের টিকে থাকতে হচ্ছে। কাজেই পোশাকশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সব দিক থেকে সাপোর্ট দিতে হবে।’ 

ব্যাংক মালিকরা কী চান সরকারের কাছে- এ প্রশ্নের উত্তরে আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘আমরা চাই ভালো নীতি। যাতে কম সুদে ঋণ পেতে পারি এবং সময়মতো টাকা ফেরত দিতে পারি।’ 

ব্যাংকের পরিচালকরাও টাকা নিয়ে ফেরত দেননি, এমন উদাহরণও রয়েছে- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তাদের সংখ্যা কম। কে করেছে আমি জানি না।’ 

বিএবি চেয়ারম্যান আশা প্রকাশ করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ভালো পলিসি (নীতি) করবে। এর ফলে ব্যাংক খাতের সংকট নিরসন হবে। তবে রাতারাতি সব করা সম্ভব নয়। সময় লাগবে। নতুন সরকারকে সময় দিতে হবে। তার মতে, যখন একটা ব্যাংক সমস্যায় পড়ে, তখন আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাদের আস্থা নষ্ট হয়। আস্থা ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবে।

অনলাইনে ৫০ হাজার রিটার্ন জমা পড়েছে

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৩ পিএম
অনলাইনে ৫০ হাজার রিটার্ন জমা পড়েছে
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)

অনলাইনে গত ২ অক্টোবর পর্যন্ত আয়কর বা ই-রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। 

২০২৪-২৫ করবর্ষের রিটার্ন দাখিল ও কর পরিপালন সহজীকরণের লক্ষ্যে গত ৯ সেপ্টেম্বর করদাতাদের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেম উন্মুক্ত করা হয়। তখন থেকে গতকাল বুধবার (২ অক্টোবর) পর্যন্ত ৫০ হাজার ই-রিটার্ন জমা পড়েছে।

এ বিষয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে আয়কর বিভাগের সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ১০ লাখ করদাতা অনলাইনে আয়কর নথি বা রিটার্ন জমা দেবেন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘কর কর্মকর্তাদের চেহারা না দেখলে করদাতারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এ ছাড়া অনলাইনে রিটার্ন দেওয়া হলে হয়রানি বন্ধ হয়।’

অনলাইন রিটার্ন জমাসংক্রান্ত কল সেন্টার প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চালু আছে। আগামী অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই থেকেই সব করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এ ছাড়া অনলাইনে রিটার্ন তৈরি ও জমা দেওয়া যাবে। আবার এই সিস্টেম থেকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করদাতারা কর পরিশোধ করতে পারবেন। পাশাপাশি দাখিল করা রিটার্নের কপি, প্রাপ্তি স্বীকারপত্র, আয়কর সনদ, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ডাউনলোড ও প্রিন্ট করা যাবে।

অন্য জেলার মাছে মিটছে টাঙ্গাইলে মাছের সংকট

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪৫ পিএম
অন্য জেলার মাছে মিটছে টাঙ্গাইলে মাছের সংকট
টাঙ্গাইলের বাসাইলে মাছ ধরা উৎসব। ছবি: খবরের কাগজ

টাঙ্গাইলে নদ-নদী ও জলাশয়ে দেশীয় মাছের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। সম্প্রতি মাছের উৎপাদন ২৫ শতাংশ কমে গেছে। এতে অন্য জেলা থেকে ৭৫ শতাংশ মাছ সরবরাহ করতে হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে মা ও পোনা মাছ নিধন, চায়না দোয়ারি ও কারেন্ট জালের ব্যবহার, কীটনাশক এবং শিল্পবর্জ্যের প্রভাব দেশের মাছের সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও আধুনিক মাছ চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছেন।

টাঙ্গাইলের সারুটিয়া গ্রামের জেলে রুবেল বেপারি প্রায় ২০ বছর ধরে যমুনা ও ধলেশ্বরী নদী থেকে মাছ শিকার করছেন। কয়েক বছর আগে এক টানে ১০-১২ কেজি মাছ পেলেও, চলতি ভরা মৌসুমে মাছ পাচ্ছেন সর্বোচ্চ ২ কেজি। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, মাছের আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্র ধ্বংসের পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় মাছ কমে যাচ্ছে।

যমুনা নদীর মাছের জন্য বিখ্যাত ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী বাজারে সারা রাত মাছ ধরে জেলেরা ভোরে নৌকাযোগে দেশীয় মাছ নিয়ে আসেন। কয়েক বছর আগে ঐতিহ্যবাহী এ বাজারে প্রতিদিন ৫০ মণ মাছ উঠলেও এখন মাছ উঠছে সর্বোচ্চ ১০ মণ। আড়তদাররা জানিয়েছেন, নানা কারণে নদীতে মাছ কমে যাওয়ায় জেলেরা কাঙ্ক্ষিত মাছ পাচ্ছেন না, ফলে বাজারটি তার জৌলুস হারাচ্ছে।

আড়তদার ইসমাইল শেখ বলেন, ‘আগের মতো এখন আর মাছ ধরতে পারি না। আগে ৫০ মণ মাছ ধরতাম, এখন ১০ মণও হয় না। এই পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

জেলেরা অভিযোগ করেছেন, বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে আইন অমান্য করে ডিমওয়ালা মা মাছ, পোনা মাছ নিধন, চায়না দোয়ারি, কারেন্ট জাল ও হিট ব্যবহার করে নানা অবৈধ পন্থায় মাছ শিকারের কারণে দেশীয় মাছ কমে যাচ্ছে। উজ্জ্বল নামে এক জেলে বলেন, ‘গ্রামে ও নদীর পাশ দিয়ে কিছু মানুষ কারেন্ট জাল ও চায়না জাল ফেলে মাছ শেষ করে দেয়। পোনা মাছগুলো যদি ভালোভাবে বড় হতে পারত, তাহলে মাছের ঘাটতি থাকত না।’

টাঙ্গাইল শহরের পার্ক বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফিরোজ বেপারী জানান, টাঙ্গাইলের অন্যতম বড় মাছের আড়ত পার্ক বাজার। দেশীয় মাছ কমে যাওয়ায় প্রতিদিন ভোরে বাজারে আসা চাহিদার ২০ থেকে ২৫ ট্রাক মাছই চাষ করা, যার ৭৫ শতাংশ ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসে।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক এস এম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘ইতোমধ্যে দেশের প্রায় ২৫০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদী ও মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, নদী ও মুক্ত জলাশয়ের পার্শ্ববর্তী জমিতে কীটনাশক ব্যবহার এবং বিভিন্ন কল-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলায় দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। এ ছাড়া নদীতে স্লুইসগেট নির্মাণ ও নদীর নাব্য কমে যাওয়ায় মাছের বংশবিস্তার ব্যাহত হচ্ছে। দেশীয় মাছ রক্ষায় জনসচেতনার পাশাপাশি মাছ চাষের আইন শতভাগ বাস্তবায়ন করা জরুরি।’

টাঙ্গাইল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বছরে প্রায় ৮৮ হাজার টন মাছের চাহিদা থাকলেও উৎপাদন হয় প্রায় ৬৫ হাজার টন। ঘাটতি পূরণ করতে বিভিন্ন জেলা থেকে মাছ সরবরাহ করতে হয়। এতে উৎপাদন বাড়াতে চাষিদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ ছাড়া উন্মুক্ত জলাশয় থেকে চায়না দোয়ারি ও কারেন্ট জাল জব্দ করা হচ্ছে।’
 
জন সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনা শতভাগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশীয় মাছের সুদিন ফিরে আসবে, এমনটি প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

সাক্ষাৎকার শ্রমিক অসন্তোষের নেপথ্যে ষড়যন্ত্র আছে

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪২ পিএম
আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪২ পিএম
শ্রমিক অসন্তোষের নেপথ্যে ষড়যন্ত্র আছে
মোহাম্মদ হোসেন

সম্প্রতি দেশের কারখানাগুলোয় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন। এতে কারখানার শান্তি ও শৃঙ্খলা ব্যাহত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুবিধা পেলে দেশের পোশাক খাতের রপ্তানি আয় বর্তমানের চেয়ে আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামের ডেলমাস গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন। সম্প্রতি খবরের কাগজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন চট্টগ্রামের নিজস্ব প্রতিবেদক আবদুস সাত্তার

খবরের কাগজ: আপনার পোশাক কারখানা ও ব্যবসা কেমন চলছে?

মোহাম্মদ হোসেন: মোটামুটি চলছে। কিছু অর্ডার আছে, সেগুলো দিয়ে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করে কোনো রকমে কারখানা টিকিয়ে রেখেছি। আমাদের বিশ্বাস, একসময় দেশের পোশাক খাত আবার ঘুরে দাঁড়াবে। এ লক্ষ্য নিয়েই আমরা বন্ধ না করে চালিয়ে যাচ্ছি। করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আমাদের পোশাক খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমরা সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

খবরের কাগজ: যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের পোশাক রপ্তানিতে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি?

মোহাম্মদ হোসেন: জাতিসংঘের অধিবেশনে যাওয়ার আগে আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছি। বিজিএমইএ নেতারা প্রধান উপদেষ্টাকে জিএসপি বিষয়ে অবহিত করেছেন। দেশের তৈরি পোশাক খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করতে হবে। তিনি আমাদের কথা শুনেছেন এবং সম্মতি জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। তিনি বৈষম্যের শিকার হওয়া এই পোশাক খাতের দিকে নজর দেবেন। আমরা আশা করতে পারি, বাংলাদেশে গার্মেন্টস খাত আবার প্রসারিত হবে। আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসবে। দেশের মানুষের ঘরে ঘরে চাকরি সৃষ্টি হবে। দেশের উন্নয়ন হবে। দেশ এগিয়ে যাবে।

খবরের কাগজ: বিভিন্ন স্থানে গার্মেন্টসশিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ বৃদ্ধি পেয়েছে কেন?

মোহাম্মদ হোসেন: ঢাকার আশুলিয়া, সাভারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। এর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে আমি মনে করি। কারণ গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা নেই। গত সরকার যেভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছে, সে অনুযায়ী শ্রমিকরা মেনে নিয়েছেন। সব মালিক বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করেছেন। সুতরাং কোথাও ঝামেলা থাকার কথা না। তবে যেখানে সমস্যা হচ্ছে, সেখানে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন সেনাবাহিনী। তারা গার্মেন্টসের প্রতি অনেক আন্তরিক। সুতরাং সুন্দর ও সঠিকভাবে কারখানা এগিয়ে যাক, এটিই কামনা করি। 

খবরের কাগজ: দেশের পোশাক খাতে বায়ারদের নতুন করে ফেরানোর জন্য করণীয় কী?

মোহাম্মদ হোসেন: আমাদের দেশের পোশাকের চাহিদা বিশ্বজুড়ে রয়েছে। ইউরোপে পোশাক অবাধে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু জিএসপির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তা সম্ভব নয়। যদি জিএসপি সুবিধা পাওয়া যায়, তবে বায়াররা বাংলাদেশে আবার ফিরে আসবে। কারণ একসময় যুক্তরাষ্ট্রে মোট রপ্তানির ৪০ শতাংশ রপ্তানি হতো। কিন্তু এখন ১৮ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। এক যুগ আগে কারখানা ও শ্রমিকের সংখ্যা কম ছিল। ২০১৩ সালের আগে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়েছিল, এখন তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। বিগত সরকার এসব নিয়ে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করে রেখেছিল।

খবরের কাগজ: গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, দেশে কেন তৈরি হয় না?

মোহাম্মদ হোসেন: আমরা বারবার বিগত সরকারকে বলেছি, দেশেই সুতা, কাপড় ও গার্মেন্টস এক্সেসরিজের কারখানা করা হোক। কিন্তু সরকার সেদিকে নজর দেয়নি। এবার কিছু কারখানা মিরসরাই শিল্পজোনে স্থাপন হয়েছে। সেখানে উৎপাদন শুরু হলে বিদেশের ওপর চাপ কিছুটা কমবে। আমাদের গার্মেন্টসশিল্পকে আরও মসৃণ করা প্রয়োজন। কারণ গার্মেন্টস দেশের উন্নয়নের গেটওয়ে।

খবরের কাগজ: গার্মেন্টসশিল্পের অগ্রগতিতে কী কী বাধা আছে বলে মনে করেন?

মোহাম্মদ হোসেন: গার্মেন্টসশিল্পের অগ্রগতিতে বাধা বলতে আমি কিছুই দেখছি না। সরকার যদি সহযোগিতা করে, তাহলে এই শিল্প অনেক দূর এগিয়ে যাবে। মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এ শিল্পের অগ্রগতির জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকার গার্মেন্টস মালিকদের পাশে দাঁড়ালে এই খাত এগিয়ে যাবে। দেশে ডলারসংকট থাকবে না। দেশ আরও উন্নতি করবে। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন শিল্পজোনে চীনের বিনিয়োগকারীরা আসছেন। তারা পারলে আমরা কেন পারব না?

খবরের কাগজ: গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ কী?

মোহাম্মদ হোসেন: পোশাক তৈরি করে রপ্তানির পর যদি কোনো কারখানার মালিক পুঁজিতে সমস্যা অনুভব করেন, তখন তার মূলধনের ওপর চাপ পড়ে। একসময় দেখা যায়, তিনি অনেক টাকার ঋণের মধ্যে পড়ে গেছেন। এরপর চেষ্টা করেন ঘুরে দাঁড়ানোর। না পারলে, তাকে কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়। তখন সরকারের উচিত ওই গার্মেন্টসের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু সরকারের কোনো দপ্তরই গার্মেন্টের সুযোগ-সুবিধা ভালোভাবে দেখভাল করে না। সরকার যদি কম সুদের ঋণ দিতে পারে, তাহলে গার্মেন্টসগুলো টিকে থাকতে পারবে। 

খবরের কাগজ: ডলারসংকট ও ব্যাংক বন্ধের প্রভাব পড়েছে কি?

মোহাম্মদ হোসেন: ডলারসংকটে গার্মেন্টে তেমন প্রভাব না পড়লেও সম্প্রতি ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে কষ্ট হয়েছে। একসঙ্গে অনেক ব্যাংক বন্ধ থাকায় লেনদেন করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে উপদেষ্টাদের একেক দিন একেক কথা বলায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। তাই সরকারের উচিত হবে, কীভাবে কারখানা চালু রাখা যায়, ওই দিকে নজর দেওয়া।

১ লাখ ৩০ হাজার টন সার কিনবে সরকার

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩২ পিএম
১ লাখ ৩০ হাজার টন সার কিনবে সরকার
কাফকো এবং মরক্কো ও সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টন সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার

দেশীয় প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) এবং মরক্কো ও সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টন সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৬০ হাজার টন ইউরিয়া, ৩০ হাজার টন টিএসপি এবং ৪০ হাজার টন ডিএপি সার রয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৬৭৩ কোটি ৭৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। এদিকে, সিঙ্গাপুর থেকে আনা হচ্ছে দুই কার্গে এলএনজি। এতে ব্যয় ১ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। 

বুধবার (২ অক্টোবর) সচিবালয়ে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে  সার এবং এলএনজি কেনার দর প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, সারের যাতে সংকট না হয় সে বিষয়টি আমরা দেখছি। বৈঠকে সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দেশে সারের কোনো সংকট হবে না।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাব দেয় শিল্প মন্ত্রণায়। কমিটি এই সার কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১২০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের মূল্য ধরা হয়েছে ৩৩৫ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার।

সভায় সৌদি আরবের সাবিক এগ্রো-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আর একটি প্রস্তাব নিয়ে আসে শিল্প মন্ত্রণালয়। কমিটি এই সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১২৪ কোটি ৬৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের মূল্য ধরা হয়েছে ৩৪৬.৩৩ ডলার।

সভায় সার কেনার বাকি দুটি প্রস্তাব নিয়ে আসে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায় মরক্কোর ওসিপি এসএ এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)-এর মধ্যে সই হওয়া চুক্তির আওতায় ৩০ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৪৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রতি মেট্রিক টনের মূল্য ধরা হয়েছে ৪১৫ মার্কিট ডলার।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের আর এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সৌদি আরবের মা’আদেন ও বিএডিসির মধ্যে সই হওয়া চুক্তির আওতায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানির অনুমোদ দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। এই সার আমদানিতে মোট খরচ হবে ২৭৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। প্রতি মেট্রিক টনের দাম ধরা হয়েছে ৫৮১ মার্কিন ডলার।

সিঙ্গাপুর থেকে দুই কার্গো এএনজি আনা হবে: সিঙ্গাপুর থেকে দুই কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ১ হাজার ২৮৯ কোটি ৭৪ লাখ ৮০ হাজার ৯৬০ টাকা দিয়ে সিঙ্গাপুরের গানভোর প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এই এলএনজি আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি।

বৈঠক শেষে সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে সার ও এলএনজি আমদানির বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ব্যবসার ক্ষেত্রে জ্বালানির যাতে সমস্যা না হয়, সেটা আমরা দেখছি।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ অনুসরণে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ এগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কোটেশন প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে দুই কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একটি প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুর মেসার্স গানভোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে এক কার্গো (২০২৪ সালের ২৬তম) এলএনজি কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৬৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৬ হাজার ৮০ টাকা। প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম পড়বে ১৩.৫৭ মার্কিন ডলার।

জানা গেছে, এলএনজি ক্রয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ২৩টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমএসপিএ চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পেট্রোবাংলা কর্তৃক এক কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। ৪টি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়।

দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স গানভোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩.৫৭ ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিকে, বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুর মেসার্স গানভোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে এক কার্গো (২০২৪ সালের ২৭তম) এলএনজি কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৬৪৯ কোটি ৫৯ লাখ ১৪ হাজার ৮৮০ টাকা। প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি দাম পড়বে ১৩.৭৭ মার্কিন ডলার।

এই এক কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ ২৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ৩টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। ৩টি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স গানভোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩.৭৭ ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।