দেশীয় প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) এবং মরক্কো ও সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টন সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৬০ হাজার টন ইউরিয়া, ৩০ হাজার টন টিএসপি এবং ৪০ হাজার টন ডিএপি সার রয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৬৭৩ কোটি ৭৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। এদিকে, সিঙ্গাপুর থেকে আনা হচ্ছে দুই কার্গে এলএনজি। এতে ব্যয় ১ হাজার ২৯০ কোটি টাকা।
বুধবার (২ অক্টোবর) সচিবালয়ে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে সার এবং এলএনজি কেনার দর প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, সারের যাতে সংকট না হয় সে বিষয়টি আমরা দেখছি। বৈঠকে সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দেশে সারের কোনো সংকট হবে না।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাব দেয় শিল্প মন্ত্রণায়। কমিটি এই সার কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১২০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের মূল্য ধরা হয়েছে ৩৩৫ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার।
সভায় সৌদি আরবের সাবিক এগ্রো-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আর একটি প্রস্তাব নিয়ে আসে শিল্প মন্ত্রণালয়। কমিটি এই সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১২৪ কোটি ৬৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের মূল্য ধরা হয়েছে ৩৪৬.৩৩ ডলার।
সভায় সার কেনার বাকি দুটি প্রস্তাব নিয়ে আসে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায় মরক্কোর ওসিপি এসএ এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)-এর মধ্যে সই হওয়া চুক্তির আওতায় ৩০ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৪৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রতি মেট্রিক টনের মূল্য ধরা হয়েছে ৪১৫ মার্কিট ডলার।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আর এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সৌদি আরবের মা’আদেন ও বিএডিসির মধ্যে সই হওয়া চুক্তির আওতায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানির অনুমোদ দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। এই সার আমদানিতে মোট খরচ হবে ২৭৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। প্রতি মেট্রিক টনের দাম ধরা হয়েছে ৫৮১ মার্কিন ডলার।
সিঙ্গাপুর থেকে দুই কার্গো এএনজি আনা হবে: সিঙ্গাপুর থেকে দুই কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ১ হাজার ২৮৯ কোটি ৭৪ লাখ ৮০ হাজার ৯৬০ টাকা দিয়ে সিঙ্গাপুরের গানভোর প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এই এলএনজি আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি।
বৈঠক শেষে সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে সার ও এলএনজি আমদানির বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ব্যবসার ক্ষেত্রে জ্বালানির যাতে সমস্যা না হয়, সেটা আমরা দেখছি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ অনুসরণে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ এগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কোটেশন প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে দুই কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একটি প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুর মেসার্স গানভোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে এক কার্গো (২০২৪ সালের ২৬তম) এলএনজি কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৬৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৬ হাজার ৮০ টাকা। প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম পড়বে ১৩.৫৭ মার্কিন ডলার।
জানা গেছে, এলএনজি ক্রয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ২৩টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমএসপিএ চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পেট্রোবাংলা কর্তৃক এক কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। ৪টি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়।
দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স গানভোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩.৫৭ ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে, বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুর মেসার্স গানভোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে এক কার্গো (২০২৪ সালের ২৭তম) এলএনজি কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৬৪৯ কোটি ৫৯ লাখ ১৪ হাজার ৮৮০ টাকা। প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি দাম পড়বে ১৩.৭৭ মার্কিন ডলার।
এই এক কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ ২৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ৩টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। ৩টি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স গানভোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩.৭৭ ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।