অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক খাত সংস্কারে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে মালিকপক্ষের মতামতের প্রতিফলন থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে সচিবালয়ে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) একটি প্রতিনিধিদল অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠকের পর ড. সালেহউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যাংক মালিকরা প্রস্তাব করেছেন সংস্কারের ক্ষেত্রে যেন তাদের মতামত নেওয়া হয়। আমি বলেছি, অবশ্যই তা করা হবে।’
প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বিএবির চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার। বৈঠক শেষে বিএবির চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ভালো নীতি প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘ব্যাংকের শক্তি হচ্ছে ডিপোজিটর বা আমানতকারী। ডিপোজিটর না থাকলে কোনো ব্যাংক বাঁচবে না। এ জন্য তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’
উল্লেখ্য, ব্যাংক খাত সংস্কারে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করতে তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে রাখার জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে প্রধানত ব্যাকিং খাতের সমস্যা ও সংস্কার বিষয়ে। কিছু সুনির্দিষ্ট সমস্যা আছে। অনেক ব্যাংক তারল্যসংকটে ভুগছে। আমি বলেছি বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলাপ করব। ব্যাংক মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে সংস্কার করা হবে তাতে যেন ব্যাংক মালিকদের মতামতের প্রতিফলন ঘটে। সেটা আমরা অবশ্যই করব। আমি তাদের অনুরোধ করেছি এই সময়ে ব্যাংকাররা যাতে যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেন। আগের মতো যাতে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি না ঘটে। একটা অভিযোগ রয়েছে, ছোট উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে যথাযথভাবে ঋণ পান না। তাদের ঋণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছি। ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য মালিকদের কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য বলা হয়েছে।’
অন্যদিকে বিএবির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই খাতকে উজ্জীবত করতে যে ধরনের সহযোগিতা দরকার, সে বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ঋণখেলাপি নিয়ে কথা বলেছি। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘নীতিনির্ধারকরা অনেক সময় যেসব সিদ্ধান্ত নেন, তাতে অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয় না। যে কারণে নীতিগুলো সঠিকভাবে কার্যকর হয় না। দেখা গেছে, ঘুম থেকে উঠে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার পেলাম। সেখানে কিছু বিষয় ঠিক থাকে। আবার অনেক বিষয় পরিষ্কারভাবে উল্লেখ থাকে না। এ সংস্কৃতি থেকে ধীরে ধীরে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। এতে আমরা যারা অংশীজন রয়েছি, তারা ভালোভাবে নীতি বাস্তবায়ন করতে পারব। এ জন্য আমাদের দরকার ভালো নীতি। এ বিষয়টি অর্থ উপদেষ্টাকে বলা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “পোশাকশিল্পের প্রধান বাজার আমেরিকা, ইউরোপ। কাজেই পোশাকের মূল্য কী হবে না হবে, তা নির্ভর করবে কাস্টমারদের ওপর। পোশাক খাত টিকিয়ে রাখা খুব সহজ নয়। এটি একটি ‘ডেডিকেট সেক্টর’। যারা মালিক তারা বোঝেন একটি কারখানা চালাতে কী ধরনের কষ্ট সইতে হয়।”
তিনি বলেন, ‘পোশাকের মূল্য নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর ওপর নির্ভর করে শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ সবকিছু পরিশোধ করতে হয়। শুধু কাপড় সেলাই করলেই পোশাক তৈরি হয় না। এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক অনেক কিছু রয়েছে। ভিয়েতনামসহ অনেক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আমাদের টিকে থাকতে হচ্ছে। কাজেই পোশাকশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সব দিক থেকে সাপোর্ট দিতে হবে।’
ব্যাংক মালিকরা কী চান সরকারের কাছে- এ প্রশ্নের উত্তরে আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘আমরা চাই ভালো নীতি। যাতে কম সুদে ঋণ পেতে পারি এবং সময়মতো টাকা ফেরত দিতে পারি।’
ব্যাংকের পরিচালকরাও টাকা নিয়ে ফেরত দেননি, এমন উদাহরণও রয়েছে- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তাদের সংখ্যা কম। কে করেছে আমি জানি না।’
বিএবি চেয়ারম্যান আশা প্রকাশ করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ভালো পলিসি (নীতি) করবে। এর ফলে ব্যাংক খাতের সংকট নিরসন হবে। তবে রাতারাতি সব করা সম্ভব নয়। সময় লাগবে। নতুন সরকারকে সময় দিতে হবে। তার মতে, যখন একটা ব্যাংক সমস্যায় পড়ে, তখন আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাদের আস্থা নষ্ট হয়। আস্থা ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবে।