ঢাকা ২৩ কার্তিক ১৪৩১, শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪

ব্যাংক খাত সংস্কারে মালিকদের মতামত নেওয়া হবে: অর্থ উপদেষ্টা

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৬ পিএম
ব্যাংক খাত সংস্কারে মালিকদের মতামত নেওয়া হবে: অর্থ উপদেষ্টা
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক খাত সংস্কারে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে মালিকপক্ষের মতামতের প্রতিফলন থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। 

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে সচিবালয়ে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) একটি প্রতিনিধিদল অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। 

বৈঠকের পর ড. সালেহউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যাংক মালিকরা প্রস্তাব করেছেন সংস্কারের ক্ষেত্রে যেন তাদের মতামত নেওয়া হয়। আমি বলেছি, অবশ্যই তা করা হবে।’ 

প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বিএবির চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার। বৈঠক শেষে বিএবির চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ভালো নীতি প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। 

আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘ব্যাংকের শক্তি হচ্ছে ডিপোজিটর বা আমানতকারী। ডিপোজিটর না থাকলে কোনো ব্যাংক বাঁচবে না। এ জন্য তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’ 

উল্লেখ্য, ব্যাংক খাত সংস্কারে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করতে তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে রাখার জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। 

বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে প্রধানত ব্যাকিং খাতের সমস্যা ও সংস্কার বিষয়ে। কিছু সুনির্দিষ্ট সমস্যা আছে। অনেক ব্যাংক তারল্যসংকটে ভুগছে। আমি বলেছি বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলাপ করব। ব্যাংক মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে সংস্কার করা হবে তাতে যেন ব্যাংক মালিকদের মতামতের প্রতিফলন ঘটে। সেটা আমরা অবশ্যই করব। আমি তাদের অনুরোধ করেছি এই সময়ে ব্যাংকাররা যাতে যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেন। আগের মতো যাতে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি না ঘটে। একটা অভিযোগ রয়েছে, ছোট উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে যথাযথভাবে ঋণ পান না। তাদের ঋণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছি। ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য মালিকদের কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য বলা হয়েছে।’ 

অন্যদিকে বিএবির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই খাতকে উজ্জীবত করতে যে ধরনের সহযোগিতা দরকার, সে বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ঋণখেলাপি নিয়ে কথা বলেছি। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘নীতিনির্ধারকরা অনেক সময় যেসব সিদ্ধান্ত নেন, তাতে অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয় না। যে কারণে নীতিগুলো সঠিকভাবে কার্যকর হয় না। দেখা গেছে, ঘুম থেকে উঠে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার পেলাম। সেখানে কিছু বিষয় ঠিক থাকে। আবার অনেক বিষয় পরিষ্কারভাবে উল্লেখ থাকে না। এ সংস্কৃতি থেকে ধীরে ধীরে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। এতে আমরা যারা অংশীজন রয়েছি, তারা ভালোভাবে নীতি বাস্তবায়ন করতে পারব। এ জন্য আমাদের দরকার ভালো নীতি। এ বিষয়টি অর্থ উপদেষ্টাকে বলা হয়েছে।’ 

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “পোশাকশিল্পের প্রধান বাজার আমেরিকা, ইউরোপ। কাজেই পোশাকের মূল্য কী হবে না হবে, তা নির্ভর করবে কাস্টমারদের ওপর। পোশাক খাত টিকিয়ে রাখা খুব সহজ নয়। এটি একটি ‘ডেডিকেট সেক্টর’। যারা মালিক তারা বোঝেন একটি কারখানা চালাতে কী ধরনের কষ্ট সইতে হয়।” 

তিনি বলেন, ‘পোশাকের মূল্য নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর ওপর নির্ভর করে শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ সবকিছু পরিশোধ করতে হয়। শুধু কাপড় সেলাই করলেই পোশাক তৈরি হয় না। এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক অনেক কিছু রয়েছে। ভিয়েতনামসহ অনেক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আমাদের টিকে থাকতে হচ্ছে। কাজেই পোশাকশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সব দিক থেকে সাপোর্ট দিতে হবে।’ 

ব্যাংক মালিকরা কী চান সরকারের কাছে- এ প্রশ্নের উত্তরে আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘আমরা চাই ভালো নীতি। যাতে কম সুদে ঋণ পেতে পারি এবং সময়মতো টাকা ফেরত দিতে পারি।’ 

ব্যাংকের পরিচালকরাও টাকা নিয়ে ফেরত দেননি, এমন উদাহরণও রয়েছে- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তাদের সংখ্যা কম। কে করেছে আমি জানি না।’ 

বিএবি চেয়ারম্যান আশা প্রকাশ করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ভালো পলিসি (নীতি) করবে। এর ফলে ব্যাংক খাতের সংকট নিরসন হবে। তবে রাতারাতি সব করা সম্ভব নয়। সময় লাগবে। নতুন সরকারকে সময় দিতে হবে। তার মতে, যখন একটা ব্যাংক সমস্যায় পড়ে, তখন আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাদের আস্থা নষ্ট হয়। আস্থা ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবে।

শুল্ক প্রত্যাহারের পরেও চট্টগ্রামে কমছে না পেঁয়াজের দাম

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৪ পিএম
শুল্ক প্রত্যাহারের পরেও চট্টগ্রামে কমছে না পেঁয়াজের দাম
খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের বস্তা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে দফায় দফায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে ভারতীয় পেঁয়াজের কেজিতে ৭ টাকা ও পাকিস্তানি পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৬ টাকা। এদিকে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানি শুল্কের পুরোটাই প্রত্যাহার করেছে। তবুও শিগগির এর প্রভাব চট্টগ্রামের বাজারে পড়বে না বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। 

সপ্তাহখানেক আগে খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১০৭ টাকায়। প্রতি কেজি পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৮৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। তবে মিসরীয় পেঁয়াজ আগের ৭৫ টাকা কেজি দরেই বিক্রি হচ্ছে। 

উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের তথ্যমতে, চলতি মাসের ১ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত মিসর, পাকিস্তান থেকে ৪৫৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এসেছে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মানুষের আগ্রহ ভারতীয় ও দেশি পেঁয়াজে। অথচ সরবরাহ কম ও চাহিদা বেশি থাকায় এসব পেঁয়াজের দাম বাড়তি। মিসর বা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজে মানুষের আগ্রহ তেমন নেই। কিন্তু তুলনামূলক দাম কম থাকায় ক্রেতারা বাধ্য হয়ে এসব পেঁয়াজ কিনছেন। 

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ‘পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। সম্প্রতি সরকার পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু ভারতে বন্যার কারণে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে, সেখানে দাম বেড়েছে। তার ওপর আমাদের দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে আসবে জানুয়ারিতে। কাজেই আগামী দুই মাস ক্রেতাদের একটু কষ্ট করে সামলে নিতে হবে। আমরা সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এক সভায় বিষয়টি জানিয়েছি।’

পেঁয়াজ আমদানিতে এতদিন ৫ ভাগ কাস্টমস শুল্ক ও ৫ ভাগ রেগুলেটরি শুল্ক ছিল। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ সুবিধা ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে গত বুধবার জারি করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। 

আমদানিকারকরা বলছেন, কয়েক মাস আগে ভারতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৮ রুপিতে। গত মাসে দেশটিতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। বর্তমানে ভারতের মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রে দাম বেড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে ৪০ থেকে ৫০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। আমদানিকারকদের এসব পেঁয়াজ ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি করতে হচ্ছে। 

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকারক মো. মোবারক হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ কমিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার পণ্যটি আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্কের পুরোটাই প্রত্যাহার করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু ভারতে বন্যা না হলে শুল্ক প্রত্যাহারের সুফলটা এখনই ভোক্তারা পেতেন। শুল্ক প্রত্যাহার হলেও প্রতিবেশী দেশটিতে পেঁয়াজের দর অনেক বেড়েছে। নতুন বছরে ভারতেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০ থেকে ২২ রুপিতে বিক্রি হবে। আশা করছি, জানুয়ারিতেই ভোক্তারা কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।’ 

নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকার বাসিন্দা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার কাজীর দেউড়ি বাজার থেকে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০ টাকায় কিনেছি। দেশি পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে একই দরে। 

সরকার এর আগেও পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু আমরা কোনো সুফল পাইনি। এবার তো শুল্ক প্রত্যাহারই করে নিয়েছে। এবার প্রশাসন, ভোক্তা অধিকারকে অনেক বেশি কঠোর হতে হবে। তা না হলে কোনো উদ্যোগই সফল হবে না। সাধারণ মানুষেরও ভোগান্তি কমবে না।’ 

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, এলাচের দাম ক্রমশ বাড়ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকলেও মিসর, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তো পণ্যটি আমদানি হচ্ছে। আমদানিকারকের কেনা কত পড়ছে, পাইকার কত দিয়ে কিনছে এবং বিক্রি করছে, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।’ 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন অভিযান অব্যাহত রেখেছি। আমাদের সীমিত জনবল নিয়ে নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি ভোক্তার অভিযোগের ভিত্তিতেও অভিযান চলমান। ব্যবসায়ীদের সমস্যা হলো তারা ক্রয়-বিক্রয় রশিদ, মূল্যতালিকা কোনটাই রাখে না। তাদেরকেও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।’ 

উচ্চমূল্যেই স্থির চাল-পেঁয়াজ-ডিম-মাংস

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১২ এএম
উচ্চমূল্যেই স্থির চাল-পেঁয়াজ-ডিম-মাংস

সরকার চালের ওপর সম্পূর্ণ শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। এক সপ্তাহ চলে গেছে। তার পরও এক পয়সাও কমেনি এর দাম। শীতের সবজি উঠতে থাকায় দাম কমতে শুরু করেছে। শিমের কেজি ১০০ টাকায় নেমেছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম ৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকায় ঠেকেছে। পেঁয়াজ আমদানি হলেও কমছে না দর। আগের মতোই দেশি পেঁয়াজের কেজি ১৬০ টাকা। তবে আমদানি করা পেঁয়াজ ১২০ টাকায় নেমেছে। ডিমের ডজন ১৪৫-১৫০ টাকায় ঝিম ধরে আছে। আগের মতোই বেশি দামে চাল, মাছ, মাংস বিক্রি হচ্ছে। উচ্চমূল্যেই স্থির হয়ে গেছে পেঁয়াজ, ডিম, চাল, মাছ ও মাংস। 

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজার, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে একই সবজি বাজারভেদে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত কমবেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে।

সরকার চালের দাম কমাতে আমদানিতে সম্পূর্ণ শুল্ক প্রত্যাহার করেছে ৩১ অক্টোবর। এর ফলে কেজিতে প্রায় ১০ টাকা কমবে। এক সপ্তাহ ইতোমধ্যে পার হয়েছে। তার পরও চালের দাম এক পয়সা কমেনি। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে আসেনি আমদানি করা চাল। তাই আগের মতোই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। 

টাউন হল বাজারের চাল বিক্রেতা অহিদুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আগের মতোই মিনিকেট চালের কেজি ৭০-৭৬ টাকা, আটাশ চাল ৬০-৬২ ও মোটা চাল ৫২-৫৫ টাকা। এ ছাড়া চিনিগুঁড়া চাল খোলা ১৩০-১৪০ ও প্যাকেটজাত ১৭০-১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। ভারতের চাল এখনো দেশে আসেনি। এলে হয়তো কমবে এর দাম। তবে কখন আসবে তা জানি না। পাইকারি বাজারে কম দরে কিনতে পারলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারব।’ 

তার কথা মোতাবেক রাজধানীতে চালের পাইকারি বাজার মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় সব দোকানেই সাজানো চালের বস্তা। এই বাজারের মেসার্স সোহেল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. মাহাবুবুর রহমান সোহেল খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরাও শুনেছি চালের ওপর সম্পূর্ণ শুল্ক প্রত্যাহার করেছে সরকার। এটা কার্যকর হলে চালের দাম কেজিতে প্রায় ১০ টাকা কমে যাবে। কিন্তু কখন আসবে জানতে পারিনি। এলে কম দামে বিক্রি করতে পারব। ভোক্তারাও কিনতে পারবেন।’ 

ঠেকানো যাচ্ছে না আলুর দর
ঠেকানো যাচ্ছে না আলুর দরের ঊর্ধ্বগতি। গত সপ্তাহে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকায় ঠেকে। বিক্রেতারা বলছেন, গতকালও কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছে। মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। এ জন্য বাড়ছে আলুর দাম। কারণ চাহিদা কমছে না। ভারত থেকে আমদানি করা হলেও পেঁয়াজের দামও কমছে না। আগের সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে বিভিন্ন বাজারে ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

গতকালও সেই দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। টাউন হল বাজারের খুচরা বিক্রেতা অলি আহমেদসহ অন্য বিক্রেতারা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষ। এ জন্য দাম বেশি। তবে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ১২০ টাকা। আগের মতোই রসুনের কেজি ২২০-৩০০ টাকা ও আদা ২৮০-৩২০ টাকা।

বিভিন্ন বাজারের সবজি বিক্রেতারা বলেন, আগের সপ্তাহে বেগুনের দাম কমেছে। সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে ৮০-১২০ টাকা কেজি। ঝিঙার দাম কমে ৭০-৮০ টাকা, কচুরমুখী ৭০, পটোল ৫০-৭০, ধুন্দুল ৬০-৭০, ঢ্যাঁড়স ৬০-৮০, পেঁপে ৪০-৫০, শসা ৫০-৭০, বরবটি, কচুরলতি ৮০-১০০ টাকা। গাজর ১৫০ টাকা, শিম ১০০-১২০, টমেটো ১৬০-২০০ টাকা। কাঁচা মরিচের দামও কমে ১৩০-১৬০ টাকা কেজি। ফুলকপির পিস ৪০-৫০ টাকা। লাউ, চালকুমড়ার পিস ৪০-৫০ টাকা। শাকের দামও কমেছে। পুঁইশাকের আঁটি ৪০-৫০ টাকা, লাল, পালং, কলমি ও পাটশাক ২০-২৫ টাকা আঁটি। 

বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বলেন, ‘আগের মতোই ছোলা ১৪০-১৬০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা কেজি, মসুর ডাল ১১০-১৩৫, দুই কেজি ওজনের প্যাকেট আটা ১০০-১৩০, খোলা আটা ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬৫-১৬৭ টাকা ও পাঁচ লিটার ৮০০-৮১০ টাকা, চিনি ১৩০-১৩৫ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো জিনিসের দাম কমেনি।’ 

নির্ধারিত দরে মেলে না মুরগি
সরকার ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ টাকা ও সোনালি মুরগির দাম ২৭০ টাকা বেঁধে দিলেও বাজারে পাওয়া যায় না। গতকালও বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগি ভোক্তাদের ১৯০-২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩০০-৩২০ টাকা কেজিতে কিনতে হয়। কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা স্বাধীন ব্রয়লার হাউসের তৌফিক হাসান বলেন, বেশি দামে কেনা। এ জন্য আগের মতোই ব্রয়লার ১৯০-২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বিভিন্ন হাত বদল হওয়ায় কমে না মুরগির দাম। এ জন্য দাম বেশি। 

গরুর মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, কমেনি গরুর দাম। আগের মতোই ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি গরুর মাংস ও খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।

সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে ডিমের দাম কিছুটা কমে বাজারে ১৪৫-১৫০ টাকায় ডজন বিক্রি হচ্ছে। তবে এখনো নির্ধারিত ১৪২ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে না। হাতিরপুল বাজারের ডিম বিক্রেতা মোহসীন আলী বলেন, ‘আগের চেয়ে ডিমের দাম কমেছে। ডজন ১৪৫ টাকা।’ অন্য বাজারেও এই দরে বিক্রি হচ্ছে ডিম। তবে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় এখনো ১৫০-১৫৫ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে।’

মাছের দাম কমেনি 
ইলিশ মাছ আহরণ ও বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও কমে না মাছের দাম। খুচরা বিক্রেতারা বলেন, আগের মতোই রুই-কাতলা ৩৫০-৬০০ টাকা কেজি। চিংড়ি ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কাজলির কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০, মলা ৫০০, ট্যাংরা মাছ ৫০০-৮০০, তেলাপিয়া ও পাঙাশের কেজি ২০০-২৫০, চিংড়ির কেজি ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। ইলিশের কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকা। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা, এক কেজির কমেরটা ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি।

রমজানে বাজার স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ শূন্য মার্জিনে নিত্যপণ্যের এলসি খোলা যাবে: গভর্নর

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৫ এএম
শূন্য মার্জিনে নিত্যপণ্যের এলসি খোলা যাবে: গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, খেজুর, চাল, ডালসহ ছয়টি পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে কোনো মার্জিন লাগবে না। অর্থাৎ এসব পণ্য আনতে শূন্য মার্জিনে (নগদ টাকা ছাড়া) ঋণপত্র বা এলসি খোলা যাবে। একই সঙ্গে পণ্যগুলো আমদানিতে তুলে দেওয়া হয়েছে একক গ্রাহকের সর্বোচ্চ ঋণসীমা।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মূল্যস্ফীতি নিয়ে এক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে দেশে কোনো সংকট নেই। মূল্যস্ফীতি কমতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগবে।’ এই সময়টায় সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান গভর্নর।

এর আগে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা পর্যালোচনা করতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও অর্থসচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

গভর্নর বলেন, বৈঠকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ছয়টি নিত্যপণ্য আমদানিতে কোনো এলসি মার্জিন লাগবে না। এ ছাড়া গ্রাহকের একক সর্বোচ্চ ঋণসীমা সাময়িক সময়ের জন্য তুলে দেওয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের ফলে নিত্যপণ্যের আমদানি আরও সহজ হবে এবং বাজারে সরবরাহ বাড়বে। এই সুযোগ আসন্ন রমজান পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে বলে জানান গভর্নর।

ড. মনসুর বলেন, ‘রমজানে কিছু স্পর্শকাতর পণ্যের মূল্য আমাদের ধরে রাখতে হবে। এর মধ্যে চাল একটি স্পর্শকাতর পণ্য। এর দাম বেড়েছে।’ তবে গতবার যেভাবে বেড়েছে, এবার তার চেয়ে কম বেড়েছে বলে দাবি করেন তিনি। গভর্নর বলেন, চালের বর্তমান যে মূল্য আছে তা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের চেয়ে তুলনামূলক সস্তা। চালের শুল্ক শূন্য করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ আমদানি করছে না। কিন্তু কেন করছে না? ভারত থেকে চাল আনলে খরচ বেশি পড়ছে। ডিউটি শূন্য আবার আমদানিও হচ্ছে না। এটা দিয়ে নির্দেশ করছে দুটি বিষয়। একটি হচ্ছে চালের বাজারে সরবরাহ পরিস্থিতি অতটা খারাপ নয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলেছে, এ বছর দেশে চাল আমদানি করতে হবে না।

তিনি বলেন, ‘এখন চালের যে দাম রয়েছে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি সর্বোচ্চ নয়। গত বছর এর চেয়ে বেশি দাম উঠেছিল। আমরা অবশ্যই চাই চালের দাম কমুক। কিন্তু কৃষকের কথা অবশ্যই ভাবতে হবে। উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কাজেই চালের দাম যে আগামীতে খুব বেশি কমবে, তা খুব বেশি আশা করা যায় না।’ 

‘মূল্যস্ফীতি কমতে কয়েক মাস সময় লাগবে’

গভর্নর বলেন, ‘অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে বেড়েছে। এটা ১০ দশমিক ৮৭ হয়েছে। বাড়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ইউরোপ, আমেরিকাসহ পৃথিবীর সব দেশেই মুদ্রানীতি কঠোর করার পরও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তারপর ধীরে ধীরে কমে এসেছে। আমাদের এখানে মূল্যস্ফীতি বেশি হয়েছে বন্যার কারণে। এর ফলে সরবরাহব্যবস্থায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতে। আমি মনে করি, বৃদ্ধিটা সাময়িক। আরেকটা ফ্যাক্টর হচ্ছে এতদিন মূল্যস্ফীতিকে কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করে রাখা হয়েছিল। এখন এটা বাস্তবভিত্তিক করা হয়েছে। ফলে আগের তুলনায় মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেশি দেখাচ্ছে। এই প্রবণতা আরও কয়েক মাস থাকবে।’ 

তবে ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন গভর্নর। তার কারণ হিসেবে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। জ্বালানি পণ্যের দাম কমছে। এ ছাড়া আমাদের অভ্যন্তরীণ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার এখন স্থিতিশীল রয়েছে।’ এসব কারণে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি কমতে বাধ্য বলে মনে করেন গর্ভনর। 

তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের যেটা করতে হবে তা হলো, অভ্যন্তরীণভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এ জন্য মুদ্রানীতি কঠোর করা হয়েছে। আমাদের রেট বাজারভিত্তিক। পলিসি রেট বাড়ানোর কারণে ব্যাংকগুলোর কস্ট অব ফান্ড একটু বেড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর মুনাফা কিছুটা কমেছে। অর্থাৎ তারা প্রত্যাশিত মুনাফা করতে পারছে না।’ 

বৈঠকে সরবরাহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। গভর্নর জানান, প্রত্যেকটি পণ্যের দাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সরবরাহ বাড়াতে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের শুল্ক শূন্য করে দেওয়া হয়েছে। আরেকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। নিত্যপণ্যের আমদানিতে যাতে এলসি মার্জিন না নেওয়া হয়। এ বিষয়ে আগামী রবিবার একটি সার্কুলার জারি করে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হবে। এই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে আসন্ন রমজান পর্যন্ত।

তিনি বলেন, দেশে অনেক বড় বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আছে। তাদের ঋণ গ্রহণের সর্বোচ্চ সীমা (সিঙ্গেল বরোয়ার লিমিট) তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী রোজাকে সামনে রেখে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের আমদানি কার্যক্রম যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতায় বলে, মুদ্রানীতি কঠোর করার পরও মূল্যস্ফীতি কমতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। কাজেই আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। ধৈর্য ধরে পলিসি বাস্তবায়ন করতে হবে। সে সময়টা দিতে হবে।’ 

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ আমরা দেখতে পাই। কিন্তু সরকারের উদ্যোগ কী আছে? এই প্রশ্নের উত্তরে গর্ভনর বলেন, ‘সরকার শুল্ক-কর কমিয়েছে।’ এ সময় অর্থসচিব বলেন, ‘আমরা পেঁয়াজ, আলু, ভোজ্যতেলসহ অনেক নিত্যপণ্যের ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছি। এ ছাড়া সামাজিক সুরক্ষার আওতায় গরিবদের জন্য আমরা ফ্যামিলি কার্ড বাড়িয়ে দিয়েছি। পাশাপাশি কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সাশ্রয়ী দামে সবজি বিক্রি কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এটা করা হয়েছে সাধারণ ভোক্তা-শ্রেণি যাতে উচ্চমূল্যস্ফীতির অভিঘাত থেকে রেহাই পায়।’ এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থসচিব বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরবরাহব্যবস্থায় আরও কী করে উন্নতি করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। 

রিজার্ভের সংকট নেই 

গর্ভনর বলেন, ‘আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সংকট নেই। যে কেউ ঋণপত্র খুলতে পারবে।’ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে গর্ভনর বলেন, ‘আপনারা যখন ইচ্ছা, যেকোনো সময়ে এলসি খুলতে পারবেন। বাজারে পর্যাপ্ত চাহিদা রয়েছে। আমদানি করেন। বাজারের চাহিদা মেটান।’

আমানত নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই: বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৬ পিএম
আমানত নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই: বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র

ব্যাংকে রাখা আমানতের টাকা সবাই ফেরত পাবেন, এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা। 

বুধবার (৬ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

হুসনে আরা বলেন, একসঙ্গে অনেকে টাকা তুলতে গেলে পৃথিবীর কোনো ব্যাংকই টাকা দিতে পারবে না। গ্রাহকদের উদ্দেশে বলব, অহেতুক আতঙ্কের কিছু নেই। গণমাধ্যমকেও গ্রাহকদের আতঙ্ক কাটাতে এ বিষয়গুলো তুলে ধরতে হবে।

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে ভালো অবস্থানে নিয়ে আসতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপরিকল্পনা আছে। আমানতকারীদের আহ্বান জানাব, আপনারা প্রয়োজনের বেশি টাকা তুলবেন না। আমরা ব্যাংক খাতে আস্থা ফেরাতে চাই। সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে গত দেড় মাসে ৫ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকার সাপোর্ট দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রিসিভার বসানোর ব্যাপারে মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে রিসিভার নিয়োগ করবে না। আদালতের নির্দেশ থাকলেই কেবল সে অনুযায়ী কাজ করা হবে।’

অর্থ পাচারের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘পাচার করা অর্থ ফরমাল চ্যানেলে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত করবে। তবে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার হলে সেটা তদন্ত করা কঠিন হবে। এসব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) কাজ করছে।’

বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠীগুলোর ঋণসংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিএফআইইউ এরই মধ্যে অনেক হিসাব জব্দ করেছে। তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে কোনো তথ্য দেয়নি।

টাস্কফোর্স নিয়ে এ মুখপাত্র বলেন, টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, তারা কার্যকর কিছু করছে। একটি টাস্কফোর্স ব্যাংকিং সংস্কারে কাজ করছে। অন্যটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জনবলের দক্ষতা বাড়াতে এবং তৃতীয়টা পাচার করা টাকা ফেরত আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের আইনজীবী, কনসালটেন্ট নিয়োগের কাজ চলছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুশাসন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নামে-বেনামে অনেক অভিযোগ আসে। আমাদের এইচআর (মানবসম্পদ) বিভাগ সেটা খতিয়ে দেখে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গভর্নর বরাবর না এলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। আমরা ১১টি ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করেছি। এগুলো নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আমাদের মনোযোগ এখন ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর দিকে।’

নিত্যপণ্যের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ আছে : উপদেষ্টা

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৭ পিএম
নিত্যপণ্যের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ আছে : উপদেষ্টা
অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ

অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘চাল-চিনি-গমসহ রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যেন শিগগির এগুলো আনা হয়। এসব পণ্য আমদানিতে পর্যাপ্ত অর্থের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যাপারেই যেন ভোক্তাদের কোনো সমস্যা না হয়।’ 

বুধবার (৬ নভেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

খাদ্যদ্রব্য মনিটরিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কোন কোন পণ্যের মজুত কী পরিমাণ আছে, কী কী আমদানি করতে হবে, সেগুলো নিয়ে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়ানোর জন্য বলে দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা দ্রুত পণ্য আনতে পারে। চাল-গম যতটুকু মজুত আছে, যতটুকু আমদানি দরকার, তার চেয়ে কিছুটা বেশি আমদানি ও সংগ্রহ করতে নির্দেশনা দিয়েছি।’

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সরকার ধান ও চাল সংগ্রহের যে দাম ঠিক করে দিয়েছে, তা যেন ভোক্তা ও কৃষকদের জন্য যুক্তিপূর্ণ হয়। সরকার একটা দাম ঠিক করবে আর বাজারে এর বেশি ব্যবধানে বিক্রি হবে, এমন যেন না হয়। এমন হলে বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুবিধা নেবে। আসন্ন রমজানে যেন পণ্যের দাম না বাড়ে। ছোলা, ডাল, চিনি, তেল এবং খেজুর যেন দেশে ঠিক সময় আমদানি হয়। সে লক্ষ্যে সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ 

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান জানান, আগামী আমন মৌসুমে ১০ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে ৩৩ টাকা কেজি দরে ধান, ৪৭ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল এবং ৪৬ টাকা কেজি দরে ১ লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে। ১৭ নভেম্বর থেকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সিদ্ধ চাল ও ধান সংগ্রহ করা হবে। আর আতপ চাল ১৭ নভেম্বর থেকে ১০ মার্চের মধ্যে সংগ্রহ করা হবে।