
তুরস্ক তাদের বর্তমান কৌশলের অংশ হিসেবে জাপানে রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। তুর্কি সরকারের একজন কর্মকর্তা সম্প্রতি এমনটা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য রাখা এবং জাপানি বাজারে মূল্যসংযোজিত পণ্য নিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি জাপানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ১ হাজার কোটি (১০ বিলিয়ন) ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। খবর আনাদোলু এজেন্সি ও ডেইলি সাবাহের।
আনাদোলু এজেন্সির (এএ) সংকলিত তথ্য অনুযায়ী, তুরস্ক যেসব দেশে তাদের রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সেগুলোরে মধ্যে জাপান অন্যতম। ২০২৩ সালে জাপানের সঙ্গে তুরস্কের বাণিজ্যের পরিমাণ ৪৯ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে ২০২২ সালের তুলনায় দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ৪ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে গত বছরে ৬ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩ সালের মধ্যে জাপানে তুরস্কের পণ্য ও সেবা রপ্তানির পরিমাণ ৫০ কোটি ৩০ লাখ ডলার থেকে বেড়ে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে তুরস্কের লক্ষ্য হলো স্বল্প সময়ের মধ্যে জাপানের সঙ্গে তাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা।
খবরে বলা হয়, ২০০২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে জাপান থেকে তুরস্কে গড় বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ ছিল ১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। গতবছর কেবল জাপান থেকেই তুরস্কে প্রায় ৩৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছিল, যেটি ছিল মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব ইউরোপে জাপানের মোট এফডিআইয়ের একটি বড় অংশ।
ডেইলি সাবাহ জানায়, ২৫০টির বেশি জাপানি প্রতিষ্ঠান তুরস্কে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে পাইকারি ও খুচরা বাণিজ্য, হোটেল ও রেস্তোরাঁ, নির্মাণশিল্প থেকে শুরু করে আরও অনেক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ রয়েছে জাপানের। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সরাসরি বিনিয়োগ এ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
খবরে বলা হয়, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ২৭তম তুরস্ক-জাপান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের সভা গত বৃহস্পতিবার টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার নেতৃত্বে ছিলেন তুরস্কের উপবাণিজ্যমন্ত্রী মুস্তাফা তুজকু।
এ বিষয়ে আনাদোলু এজেন্সিকে তুজকু বলেন, জাপান তুরস্কের প্রধান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারদের মধ্যে প্রযুক্তিভিত্তিক যৌথ প্রকল্পগুলো দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। তুজকু বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র হলো একটি টেকসই কাঠামো স্থাপন করা, যা উন্নয়নের জন্য বিশেষভাবে উন্মুক্ত এবং যেটির মাধ্যমে আমাদের উভয় দেশই বাণিজ্য সম্পর্ক পরিচালনা থেকে উপকার লাভ করতে পারে।’
তুরস্কের উপবাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তুরস্ক ও জাপান- দুই দেশের বর্তমান পণ্যগুলো উচ্চতর ভলিউমে বিক্রি করার প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে গ্রহণযোগ্য স্তরে সামঞ্জস্য করার জন্য তুরস্কের মূল্যসংযোজিত পণ্যগুলো জাপানি বাজারে নিয়ে আসা প্রয়োজন। এ ছাড়া আমরা তুরস্ক-জাপান অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তিটির প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিই, যা তুর্কি পণ্যগুলোকে সহজেই জাপানি বাজারে প্রবেশ করতে সুযোগ করে দেবে।’
তুজকু জোর দিয়ে বলেন, জাপানের সঙ্গে প্রযুক্তি স্থানান্তর বাণিজ্য প্রসারিত হওয়া উচিত। কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে তুরস্ক ‘জাপান থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে’ এবং যার মাধ্যমে দেশটিকে উচ্চপ্রযুক্তির পণ্য ও বিনিয়োগের সুযোগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদার করে তুলতে পারে।