বন্যার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সরকারি সহায়তা পাননি ফেনীর ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৯০ হাজার কৃষক। তবে সরকারি সহায়তার আশায় বসে না থেকে নতুন উদ্যমে চাষাবাদ শুরু করেছেন ওই এলাকার কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৮৭ হাজার কৃষককে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তিন ধাপে সরকারি প্রণোদনা সহায়তা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে তালিকা করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রথম ধাপে ২৩ হাজার কৃষককে শীতের সবজির বীজ ও নগদ অর্থ প্রণোদনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া আরও দুই ধাপে সবজি চাষে ৪৩ হাজার কৃষককে বীজ, সার, তেল, ডাল ও নগদ অর্থসহ ১২ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হবে।
সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের কৃষক মির্জা আমিন বাদশা বলেন, ‘সাম্প্রতিক দুই দফা বন্যার পানিতে তার তিন একর জমিতে আবাদ করা আমন ধান তলিয়ে গেছে। নতুন করে বীজ ও অর্থ সহায়তা না পাওয়ায় জমি এখন খালি পড়ে রয়েছে’। তিনি আরও বলেন, ‘বন্যার পর ধান আবাদ করেছিলাম, কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা আবারও পানিতে ডুবে গেছে। মুছাপুর ক্লোজার না থাকায় পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর পাশে ও তেমুহনী এলাকায় জমিতে এখনো পানি জমে আছে। এখন বীজ ও অর্থের অভাবে নতুন করে কিছু করতে পারছি না।’
সোনাগাজীর চরচান্দিয়া এলাকার কৃষক মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘বন্যায় সাত একর জমির আউশ ও দশ একর জমিতে লাগানো আমন ধান নষ্ট হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময় নাম নিলেও এখনো কোনো ধরনের সহায়তা পাইনি। তবে ঘুরে দাঁড়াতে নিজ উদ্যোগে দশ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি আবাদের চেষ্টা করছি।’
শুধু বাদশা ও ফরিদই নন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলার হাজারও কৃষক বীজ, সার ও অর্থসংকটে এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। বন্যায় কৃষি খাতে কয়েক হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হলেও তালিকা তৈরিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রণোদনা কার্যক্রমে এখনো সীমাবদ্ধ রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বন্যার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও কৃষক পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের প্রণোদনার জন্য তালিকা তৈরির কাজ এখনো শেষ হয়নি। তবে সরকারি সহায়তার জন্য আশায় বসে না থেকে নতুন উদ্যমে চাষাবাদ শুরু করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা। অন্যদিকে, মুছাপুর রেগুলেট পানিতে বিলীনের প্রভাবে দাগনভূঞা ও সোনাগাজীতে জমিতে পানি জমে থাকায় আগাম চাষাবাদে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক কৃষি কর্মকর্তা।
এবারের ১৭ একর জমিতে প্রায় ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ব্যয়ে আউশ আবাদ করনে সোনাগাজীর কৃষক রাশেদ। কিন্তু বন্যায় তার জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা না পেলেও আবার নতুন করে জমিতে আবাদ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে জমিতে লাগানোর জন্য টমেটো, মরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ক্যাপসিকামের চারা তৈরি করেছি। এক সপ্তাহের মধ্যে সবজির চারা রোপণ করতে পারব।’
সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রণব চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ায় জোয়ার-ভাটার প্রভাবে কিছু জমিতে এখনো পানি জমে আছে। এতে চাষাবাদে বিলম্ব হচ্ছে।’
লেমুয়া ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শিপন চৌধুরী বলেন, ‘লেমুয়ার কৃষকরা ট্রাক ভাড়া করে কিশোরগঞ্জ, রংপুর, জয়পুরহাট, নেত্রকোনা ও গাইবান্ধা থেকে বিভিন্ন জাতের ধানের চারা কিনেছেন। তারা ৩৭০ হেক্টর জমিতে আবাদ শুরু করেছেন। এ ছাড়া এই ব্লকের পাঁচ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েয়ে। কিছু কৃষক ইতোমধ্যে লাউ, টমেটো, মুলা ও লালশাক আবাদ করেছেন। কিছু দিনের মধ্যে ওই সব সবজি খাওয়ার উপযোগী হবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক একরাম উদ্দিন বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের প্রণোদনার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। কবে নাগাদ তালিকা তৈরির কাজ শেষ হবে, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। তবে শিগগিরই ওই তালিকা হবে।’
জেলা পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ‘বসতবাড়িতে শাকসবজি চাষের জন্য ৮ ধরনের শীতের সবজির বীজ ও রোপণের জন্য কৃষক প্রতি ১ হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেওয়া হবে।’