টানা দরপতনের পর দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতি ফিরেছে। আগের কার্যদিবসের মতো বুধবারও (৩১ অক্টোবর) মূল্যসূচকের বড় উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। আগের কার্যদিবসের তুলনায় এদিন প্রধান সূচক বেড়েছে ১৪৮ পয়েন্ট। একই সঙ্গে প্রায় এক মাস পর বাজারে ৫০০ কোটি টাকা ছাড়াল লেনদেন।
এদিন দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠান। এমনকি লেনদেনের বেশির ভাগ সময় এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রির আদেশের ঘর শূন্য পড়ে থাকে। দাম বাড়ার ক্ষেত্রে প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠান দাপট দেখানোর পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এতে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ার প্রবণতাও বাড়ে। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার পাশাপাশি সব কটি মূল্যসূচক বেড়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৩৭৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৪৭ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ১৬৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯১৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৩৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সব কটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫১৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৪৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ১৭২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ২০ কার্যদিবস পর ডিএসইতে ৫০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো। টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে লেনদেন হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির ২১ কোটি ৪৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের ১২ কোটি ৯৪ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১২ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফারইস্ট নিটিং।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস, একমি ল্যাবরেটরিজ, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, টেকনো ড্রাগস ও ইসলামী ব্যাংক।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৩৭৩টির শেয়ারদর বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিন দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকার সবার ১০ শতাংশ করে দর বেড়েছে।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ কোম্পানিগুলোর মধ্যে সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৩ টাকা ৮০ পয়সা বা ১০ শতাংশ বেড়েছে।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিএন্ডএ টেক্সটাইলের শেয়ারদর বেড়েছে ৪০ পয়সা বা ১০ শতাংশ। আর ৪ টাকা ১০ পয়সা বা ১০ শতাংশ শেয়ারদর বৃদ্ধি পাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
এ ছাড়া এদিন ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফু-ওয়াং ফুড, জনতা ইন্স্যুরেন্স, মুন্নু ফেব্রিক্স, নাভানা ফার্মা, কুইন সাউথ টেক্সটাইল, সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স এবং ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
বুধবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৫ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। এদিন দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে মিডল্যান্ড ব্যাংক পিএলসি।
বুধবার মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে ২ টাকা ৭০ পয়সা বা ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ। তাতে দরপতনের শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি।
দর হারানোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা বিআইএফসির শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ারদর ৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কমে যাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে নিউ লাইন ক্লোথিং।
বুধবার ডিএসইতে দরপতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলো প্রগ্রতি লাইফ, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ডেসকো, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, খান ব্রাদার্স, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংক পিএলসি।
অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩৩০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯টির এবং ১৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা।