শীতের সবজি বাজারে উঠতে থাকায় দাম কমতে শুরু করেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির কেজি ১০০ টাকার নিচে নেমেছে। তবে তা বেশ উচ্চমূল্যেই স্থির আছে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হলেও দাম কমছে না। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজ ১৬০ টাকায় ঠেকেছে। আলুর দামও ৫ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকা হয়ে গেছে। ডিমের ডজন ১৪৫-১৫০ টাকায় নেমেছে। চাল, মাছ, মাংস আগের মতোই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
একই সবজির দাম বাজার ভেদে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত কম-বেশি হতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজার, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
পেঁয়াজের কেজি ১৬০ টাকা
টাউন হল বাজারের খুচরা বিক্রেতা অলি আহমেদসহ অন্য বিক্রেতারা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষ। সরবরাহ কমে গেছে। এ জন্য দাম বেশি। আমদানি করা পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম ৫ টাকা বেড়ে ৬০-৬৫ টাকা কেজি। রসুন আগের মতোই ২২০-২৪০ টাকা ও আদা ২৮০-৩২০ টাকা কেজি।
বিভিন্ন বাজারের সবজি বিক্রেতারা বলেন, বেগুনের দাম ৩০-৪০ টাকা কমে ৮০-১২০ টাকায় নেমেছে। গত সপ্তাহে বেগুন ১২০-১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও গতকাল ৮০-১২০ টাকায় নামে। ঝিঙ্গার দাম কমে ৮০-৯০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ টাকা, পটোল ৫০-৭০ টাকা, ধুন্দুল ৬০-৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০-৮০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, শসার কেজি ৫০-৭০ টাকা, বরবটি, কচুরলতি ৮০-১০০ টাকা। গাজর ১৪০ টাকা, শিম ১৬০-১৮০ টাকা, টমেটো ১৬০-১৮০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ২০০-২৪০ টাকা কেজি। কপির পিস ৪০-৬০ টাকা। লাউ, চালকুমড়ার পিস ৪০-৬০ টাকা। শাকের দামও কমেছে। পুঁইশাকের আঁটি ৪০ টাকা। লাল, পালং, কলমি ও পাটশাক ২০-২৫ টাকা আঁটি।
কারওয়ান বাজারের ইউসুফ স্টোরের ইউসুফ আলীসহ অন্য মুদি বিক্রেতারা বলেন, ‘আগের মতোই ছোলা ১৪০-১৬০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা কেজি, মসুর ডাল ১১০-১৩৫ টাকা, ২ কেজি ওজনের প্যাকেট আটা ১০০-১৩০ টাকা, খোলা আটা ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ১ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬৫-১৬৭ টাকা ও ৫ লিটার ৮০০-৮১০ টাকা, চিনি ১৩০-১৩৫ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো জিনিসের দাম কমেনি।’
নির্ধারিত দরের ধারে কাছেও নেই মুরগি
সরকার সম্প্রতি ব্রয়লার ১৮০ টাকা ও সোনালি মুরগির দাম ২৭০ টাকা কেজি বেঁধে দিলেও বাজারে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। গতকালও বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগি ভোক্তাদের ১৯০-২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩০০-৩২০ টাকা কেজিতে কিনতে হয়েছে। টাউন হল বাজারের খুচরা বিক্রেতা ব্রয়লার হাউসের বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘বেশি দামে কেনা। এ জন্য আগের মতোই ব্রয়লার ১৯০-২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা কেজি। তবে ডিমের মতো উৎপাদকরা আমাদের কাছে মুরগি বিক্রি করলে আমরাও নির্ধারিত দরে বিক্রি করতে পারব। বিভিন্ন হাত বদল হয়ে আমাদের কাছে মুরগি আসে। এ জন্য দাম বেশি।’ গরুর মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, কমে না দাম। এ জন্য আগের মতোই ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি গরুর মাংস ও খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে ডিমের দাম কিছুটা কমে বিভিন্ন বাজারে ১৪৫-১৫০ টাকা ডজন দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এখনো নির্ধারিত ১৪২ টাকা ডজনে পাওয়া যাচ্ছে না। কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা সোহরাব আলী বলেন, ‘আগের চেয়ে ডিমের দাম কমেছে। ডজন ১৪৫ টাকা।’ টাউন হল বাজারের সোহেল রানাও বলেন, ‘ডিম ১৪৫ টাকা ডজন। তবে বিভিন্ন পাড়া-মহাল্লায় এখনো ১৫০-১৫৫ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে।’
কমেনি মাছের দাম
ইলিশ মাছ আহরণ ও বিপণন বন্ধ থাকায় অন্য মাছের দাম চড়া। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কারওয়ান বাজার, সোয়ারি ঘাটসহ অন্য আড়তে বেশি দাম। এ জন্য আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারি না। রুই-কাতলা ৩৫০-৬০০ টাকা কেজি। চিংড়ি ৬০০-১২০০ টাকা, কাজলির কেজি ১০০০-১২০০, মলা ৫০০ টাকা, ট্যাংরা মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, তেলাপিয়া ও পাঙাশের কেজি ২০০-২৫০ টাকা, চিংড়ির কেজি ৭০০-১২০০ টাকা।
চালের দামও বেশি
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমদানি শুল্ক কমালেও কমেনি চালের দাম। বরং মৌসুম শেষের অজুহাতে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২-৪ টাকা বেড়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বলেন, মিনিকেট ৭২-৭৬ টাকা, আটাশ চাল ৬০-৬২ টাকা ও মোটা চাল ৫২-৫৫ টাকা। চিনিগুঁড়া চাল খোলা ১৩০-১৪০ টাকা ও প্যাকেটজাত ১৭০-১৮০ টাকা কেজি।