সরকার চালের ওপর সম্পূর্ণ শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। এক সপ্তাহ চলে গেছে। তার পরও এক পয়সাও কমেনি এর দাম। শীতের সবজি উঠতে থাকায় দাম কমতে শুরু করেছে। শিমের কেজি ১০০ টাকায় নেমেছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম ৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকায় ঠেকেছে। পেঁয়াজ আমদানি হলেও কমছে না দর। আগের মতোই দেশি পেঁয়াজের কেজি ১৬০ টাকা। তবে আমদানি করা পেঁয়াজ ১২০ টাকায় নেমেছে। ডিমের ডজন ১৪৫-১৫০ টাকায় ঝিম ধরে আছে। আগের মতোই বেশি দামে চাল, মাছ, মাংস বিক্রি হচ্ছে। উচ্চমূল্যেই স্থির হয়ে গেছে পেঁয়াজ, ডিম, চাল, মাছ ও মাংস।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজার, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে একই সবজি বাজারভেদে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত কমবেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সরকার চালের দাম কমাতে আমদানিতে সম্পূর্ণ শুল্ক প্রত্যাহার করেছে ৩১ অক্টোবর। এর ফলে কেজিতে প্রায় ১০ টাকা কমবে। এক সপ্তাহ ইতোমধ্যে পার হয়েছে। তার পরও চালের দাম এক পয়সা কমেনি। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে আসেনি আমদানি করা চাল। তাই আগের মতোই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
টাউন হল বাজারের চাল বিক্রেতা অহিদুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আগের মতোই মিনিকেট চালের কেজি ৭০-৭৬ টাকা, আটাশ চাল ৬০-৬২ ও মোটা চাল ৫২-৫৫ টাকা। এ ছাড়া চিনিগুঁড়া চাল খোলা ১৩০-১৪০ ও প্যাকেটজাত ১৭০-১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। ভারতের চাল এখনো দেশে আসেনি। এলে হয়তো কমবে এর দাম। তবে কখন আসবে তা জানি না। পাইকারি বাজারে কম দরে কিনতে পারলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারব।’
তার কথা মোতাবেক রাজধানীতে চালের পাইকারি বাজার মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় সব দোকানেই সাজানো চালের বস্তা। এই বাজারের মেসার্স সোহেল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. মাহাবুবুর রহমান সোহেল খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরাও শুনেছি চালের ওপর সম্পূর্ণ শুল্ক প্রত্যাহার করেছে সরকার। এটা কার্যকর হলে চালের দাম কেজিতে প্রায় ১০ টাকা কমে যাবে। কিন্তু কখন আসবে জানতে পারিনি। এলে কম দামে বিক্রি করতে পারব। ভোক্তারাও কিনতে পারবেন।’
ঠেকানো যাচ্ছে না আলুর দর
ঠেকানো যাচ্ছে না আলুর দরের ঊর্ধ্বগতি। গত সপ্তাহে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকায় ঠেকে। বিক্রেতারা বলছেন, গতকালও কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছে। মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। এ জন্য বাড়ছে আলুর দাম। কারণ চাহিদা কমছে না। ভারত থেকে আমদানি করা হলেও পেঁয়াজের দামও কমছে না। আগের সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে বিভিন্ন বাজারে ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
গতকালও সেই দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। টাউন হল বাজারের খুচরা বিক্রেতা অলি আহমেদসহ অন্য বিক্রেতারা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষ। এ জন্য দাম বেশি। তবে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ১২০ টাকা। আগের মতোই রসুনের কেজি ২২০-৩০০ টাকা ও আদা ২৮০-৩২০ টাকা।
বিভিন্ন বাজারের সবজি বিক্রেতারা বলেন, আগের সপ্তাহে বেগুনের দাম কমেছে। সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে ৮০-১২০ টাকা কেজি। ঝিঙার দাম কমে ৭০-৮০ টাকা, কচুরমুখী ৭০, পটোল ৫০-৭০, ধুন্দুল ৬০-৭০, ঢ্যাঁড়স ৬০-৮০, পেঁপে ৪০-৫০, শসা ৫০-৭০, বরবটি, কচুরলতি ৮০-১০০ টাকা। গাজর ১৫০ টাকা, শিম ১০০-১২০, টমেটো ১৬০-২০০ টাকা। কাঁচা মরিচের দামও কমে ১৩০-১৬০ টাকা কেজি। ফুলকপির পিস ৪০-৫০ টাকা। লাউ, চালকুমড়ার পিস ৪০-৫০ টাকা। শাকের দামও কমেছে। পুঁইশাকের আঁটি ৪০-৫০ টাকা, লাল, পালং, কলমি ও পাটশাক ২০-২৫ টাকা আঁটি।
বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বলেন, ‘আগের মতোই ছোলা ১৪০-১৬০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা কেজি, মসুর ডাল ১১০-১৩৫, দুই কেজি ওজনের প্যাকেট আটা ১০০-১৩০, খোলা আটা ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬৫-১৬৭ টাকা ও পাঁচ লিটার ৮০০-৮১০ টাকা, চিনি ১৩০-১৩৫ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো জিনিসের দাম কমেনি।’
নির্ধারিত দরে মেলে না মুরগি
সরকার ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ টাকা ও সোনালি মুরগির দাম ২৭০ টাকা বেঁধে দিলেও বাজারে পাওয়া যায় না। গতকালও বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগি ভোক্তাদের ১৯০-২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩০০-৩২০ টাকা কেজিতে কিনতে হয়। কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা স্বাধীন ব্রয়লার হাউসের তৌফিক হাসান বলেন, বেশি দামে কেনা। এ জন্য আগের মতোই ব্রয়লার ১৯০-২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বিভিন্ন হাত বদল হওয়ায় কমে না মুরগির দাম। এ জন্য দাম বেশি।
গরুর মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, কমেনি গরুর দাম। আগের মতোই ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি গরুর মাংস ও খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে ডিমের দাম কিছুটা কমে বাজারে ১৪৫-১৫০ টাকায় ডজন বিক্রি হচ্ছে। তবে এখনো নির্ধারিত ১৪২ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে না। হাতিরপুল বাজারের ডিম বিক্রেতা মোহসীন আলী বলেন, ‘আগের চেয়ে ডিমের দাম কমেছে। ডজন ১৪৫ টাকা।’ অন্য বাজারেও এই দরে বিক্রি হচ্ছে ডিম। তবে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় এখনো ১৫০-১৫৫ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে।’
মাছের দাম কমেনি
ইলিশ মাছ আহরণ ও বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও কমে না মাছের দাম। খুচরা বিক্রেতারা বলেন, আগের মতোই রুই-কাতলা ৩৫০-৬০০ টাকা কেজি। চিংড়ি ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কাজলির কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০, মলা ৫০০, ট্যাংরা মাছ ৫০০-৮০০, তেলাপিয়া ও পাঙাশের কেজি ২০০-২৫০, চিংড়ির কেজি ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। ইলিশের কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকা। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা, এক কেজির কমেরটা ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি।