চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে দফায় দফায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে ভারতীয় পেঁয়াজের কেজিতে ৭ টাকা ও পাকিস্তানি পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৬ টাকা। এদিকে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানি শুল্কের পুরোটাই প্রত্যাহার করেছে। তবুও শিগগির এর প্রভাব চট্টগ্রামের বাজারে পড়বে না বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।
সপ্তাহখানেক আগে খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১০৭ টাকায়। প্রতি কেজি পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৮৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। তবে মিসরীয় পেঁয়াজ আগের ৭৫ টাকা কেজি দরেই বিক্রি হচ্ছে।
উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের তথ্যমতে, চলতি মাসের ১ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত মিসর, পাকিস্তান থেকে ৪৫৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এসেছে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মানুষের আগ্রহ ভারতীয় ও দেশি পেঁয়াজে। অথচ সরবরাহ কম ও চাহিদা বেশি থাকায় এসব পেঁয়াজের দাম বাড়তি। মিসর বা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজে মানুষের আগ্রহ তেমন নেই। কিন্তু তুলনামূলক দাম কম থাকায় ক্রেতারা বাধ্য হয়ে এসব পেঁয়াজ কিনছেন।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ‘পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। সম্প্রতি সরকার পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু ভারতে বন্যার কারণে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে, সেখানে দাম বেড়েছে। তার ওপর আমাদের দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে আসবে জানুয়ারিতে। কাজেই আগামী দুই মাস ক্রেতাদের একটু কষ্ট করে সামলে নিতে হবে। আমরা সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এক সভায় বিষয়টি জানিয়েছি।’
পেঁয়াজ আমদানিতে এতদিন ৫ ভাগ কাস্টমস শুল্ক ও ৫ ভাগ রেগুলেটরি শুল্ক ছিল। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ সুবিধা ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে গত বুধবার জারি করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
আমদানিকারকরা বলছেন, কয়েক মাস আগে ভারতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৮ রুপিতে। গত মাসে দেশটিতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। বর্তমানে ভারতের মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রে দাম বেড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে ৪০ থেকে ৫০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। আমদানিকারকদের এসব পেঁয়াজ ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকারক মো. মোবারক হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ কমিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার পণ্যটি আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্কের পুরোটাই প্রত্যাহার করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু ভারতে বন্যা না হলে শুল্ক প্রত্যাহারের সুফলটা এখনই ভোক্তারা পেতেন। শুল্ক প্রত্যাহার হলেও প্রতিবেশী দেশটিতে পেঁয়াজের দর অনেক বেড়েছে। নতুন বছরে ভারতেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০ থেকে ২২ রুপিতে বিক্রি হবে। আশা করছি, জানুয়ারিতেই ভোক্তারা কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।’
নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকার বাসিন্দা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার কাজীর দেউড়ি বাজার থেকে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০ টাকায় কিনেছি। দেশি পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে একই দরে।
সরকার এর আগেও পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু আমরা কোনো সুফল পাইনি। এবার তো শুল্ক প্রত্যাহারই করে নিয়েছে। এবার প্রশাসন, ভোক্তা অধিকারকে অনেক বেশি কঠোর হতে হবে। তা না হলে কোনো উদ্যোগই সফল হবে না। সাধারণ মানুষেরও ভোগান্তি কমবে না।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, এলাচের দাম ক্রমশ বাড়ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকলেও মিসর, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তো পণ্যটি আমদানি হচ্ছে। আমদানিকারকের কেনা কত পড়ছে, পাইকার কত দিয়ে কিনছে এবং বিক্রি করছে, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন অভিযান অব্যাহত রেখেছি। আমাদের সীমিত জনবল নিয়ে নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি ভোক্তার অভিযোগের ভিত্তিতেও অভিযান চলমান। ব্যবসায়ীদের সমস্যা হলো তারা ক্রয়-বিক্রয় রশিদ, মূল্যতালিকা কোনটাই রাখে না। তাদেরকেও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।’