ঢাকা ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

নকল প্রসাধনীতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৭ এএম
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ এএম
নকল প্রসাধনীতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
নকল প্রসাধনীর বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকারের অভিযান। ছবি: খবরের কাগজ

ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে তৈরি মানহীন বা নকল প্রসাধনীতে বাজার সয়লাব। এত নিখুঁতভাবে নকল প্রসাধনী বাজারজাত করা হয় যে কোনটা আসল আর কোনটা নকল ভোক্তার পক্ষে তা আলাদা করা কঠিন। নকল ও মানহীন প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দেয়। 

শুধু তা-ই নয়, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, কিডনি বিকল হওয়া থেকে ক্যানসারের মতো মরণব্যাধি রোগও হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নকল প্রসাধনীতে ইচ্ছামতো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এসব রাসায়নিক বেশি মাত্রায় প্রয়োগের ফলে মানবদেহে ক্যানসার, অ্যালার্জি, ত্বকের প্রদাহ, কিডনির ক্ষতিসহ বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। আর শিশুদের জন্য এসব প্রসাধনীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আরও বেশি মারাত্মক।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সমরেশ চন্দ্র হাজরা খবরের কাগজকে বলেন, ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে তৈরি মানহীন প্রসাধনী ব্যবহারে শুধু ক্যানসার হতে পারে তা নয়; এসব থেকে স্নায়ুবিক দুর্বলতা ও কিডনি বিকল হতে পারে। এসব প্রসাধনী মৃত্যুর কারণও হতে পারে। 

দামে কিছুটা সস্তা হওয়ায় সেগুলো দেদারছে কিনছেন সাধারণ মানুষ। নকল ধরতে না পারায় বিত্তশালীরাও এগুলো কিনছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘ভেজাল ও মানহীন প্রসাধনীর অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ায় রোগী মারাও যেতে পারেন। দীর্ঘদিন এসব ব্যবহারে ত্বকের পাশাপাশি কিডনি এবং শরীরে অন্যান্য অংশেও মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। 

প্রতিদিন আমরা যেসব রোগী পাই তাদের মুখে কালো দাগ, র‌্যাশ, গোটা, লাল হয়ে যাওয়া, অ্যালার্জি, অত্যধিক ঘাম ঝরে। এ সময় রোগীরা কিছু ক্রিম, লোশনের কথা বলেন। আমরা সেগুলো পরীক্ষা করে দেখেছি মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদান থাকে। তবে রোগীদের পক্ষে জানা সম্ভব নয় তারা কী ব্যবহার করছেন।’

এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, বিএসটিআই, ভোক্তা অধিদপ্তর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠান নকল ও মানহীন প্রসাধনীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। নকল প্রসাধনী ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের আটকও করা হচ্ছে। নকল পণ্য জব্দ করে কারখানা সিলগালা করে দেওয়া হচ্ছে।

ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি সাবেক সচিব গোলাম রহমান খবরের কাগজকে বলেন, প্রসাধনসামগ্রীতে ভেজালের সঙ্গে জড়িতদের বিএসটিআইয়ের আইন অনুযায়ী মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান থাকলেও বাস্তবে প্রয়োগ কম। নকল প্রসাধনীগুলো সস্তায় পাওয়া যায়। যা কিনে সাধারণ মানুষ যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন; তেমনি নানা ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীরা জামিনে বেরিয়ে আবারও নকল প্রসাধানীর কারবার করছে। 

এর অন্যতম কারণ নকল প্রসাধনী বাজারজাত করতে পারলেই বড় অঙ্কের অর্থ পকেটে আসছে। এসব ব্যক্তির নকল পণ্য বাজারজাত করার নেটওয়ার্কও শক্তিশালী। ফলে উৎপাদিত পণ্যগুলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাশাপাশি রাজধানীসহ সারা দেশের মার্কেটগুলোতেও সহজে বিক্রি করতে পারছে। 

চলতি বছরের (জানুয়ারি-অক্টোবর) বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অভিযানে ১৭ কোটি ৩৪ হাজার ৩৯২ টাকার নকল ও মানহীন প্রসাধনী জব্দ করা হয়েছে। 

দেশের বিভিন্ন স্থানে গোপনে নকল প্রসাধনী তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। বিশেষভাবে পুরান ঢাকা এলাকা, আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুরে এসব বেশি হচ্ছে। অভিযানে দেখা গেছে, বিদেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর নকল বেশি হচ্ছে। এসব নকল প্রসাধনীতে ব্যবহার হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর রাসায়নিক। অনুমোদনহীন ও লেভেলবিহীন অনিরাপদ কাঁচামালের সঙ্গে অ্যাসিড ও অন্যান্য কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি করা হয় ত্বক ফর্সা করার নকল ক্রিম।

সম্প্রতি আশুলিয়ায় গোপনে নকল প্রসাধনী তৈরি করার দায়ে চারজনকে আটক করা হয়। কারখানার বাইরে লাবিবা কসমেটিকস এন্টারপ্রাইজের সাইনবোর্ড দিয়ে নকল প্রসাধনী তৈরির কারবার চালিয়েছে। এখানে অনিরাপদ পরিবেশে অনুমোদহীন স্কিন ক্রিম তৈরি করছে। 

পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিএসটিআই থেকে লাইসেন্স না নিয়েই অবৈধভাবে বিএসটিআইয়ের লোগো ব্যবহার করে নকল পণ্য বাজারজাত করছিল প্রতিষ্ঠানটি। নকল প্রসাধনী জব্দ করে কারখানাটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।

অভিযান সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কারখানায় তাদের কোনো কেমিস্ট ছিল না। কারখানার ভেতর ছোট একটি ‘ল্যাবরেটরি’ বানিয়ে সেখানে কিছু জিনিসপত্র সাজিয়ে রেখেছিল। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে প্রসাধনীর (ক্রিম, শ্যাম্পু, সাবান, লোশন, আফটার শেভ লোশন, পারফিউম) যে চাহিদা রয়েছে, তার ১৫ শতাংশ জোগান দিচ্ছে অনুমোদিত দেশীয় কোম্পানি। ২৫ শতাংশ আমদানি করা পণ্য। বাকি ৬০ শতাংশ প্রসাধনী নকল ও ক্ষতিকারক উপাদান দিয়ে তৈরি হচ্ছে, যার মূল কেন্দ্র পুরান ঢাকা।

এ বিষয়ে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ আবু খালেদ খবরের কাগজকে বলেন, ভেজাল প্রসাধনীগুলো মারাত্মক ক্ষতিকারক উপাদানে তৈরি হয়, যা ব্যবহারে ত্বক পুড়ে (বার্ন) যায়। চামড়া ড্যামেজ হয়ে পড়ে। বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি হয়। এমনকি চেহারা বিকৃত হয়ে যেতে পারে। এসব প্রসাধনীতে হেভি মেটাল থাকলে তা কিডনি ড্যামেজ করে ফেলতে পারে। এমনকি এসব পণ্য ব্যবহারে পুরোনো রোগগুলো নতুন করে দেখা দিতে পারে।

সম্প্রতি পুরান ঢাকার লালবাগের হায়দার বক্স লেনের একটি বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে চলা একটি কারখানায় অভিযান চালানো হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বমানের ব্র্যান্ড গার্নিয়ার, লরিয়েল, রেভলন, হেড অ্যান্ড শোল্ডার, লাক্স লোশন, মাস্ক লোশন, অ্যাকুয়া মেরিন লোশন, পেনটিন, নিভিয়া লোশন, ফেড আউট ক্রিম, ডাভ সাবান, ইমপেরিয়াল সাবান, সুগন্ধির মধ্যে হুগো, ফেরারি, পয়জন, রয়েল, হ্যাভক ও কোবরা, অলিভ অয়েল, কিওকারপিন, আমলা, আফটার সেভ লোশন, জনসন, ভ্যাসলিন হেয়ার টনিক, জিলেট ফোম, প্যানটিন প্রো-ভি ও হারবাল এসেনশিয়াল লোশনের নামে ভেজাল প্রসাধনী বিক্রি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

নকল প্রসাধনীতে ১৩ ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের বিশেষজ্ঞরা। 

এর মধ্যে প্যারাবেন (মিথাইল প্যারাবেন, বিউটেল প্যারাবেন, প্রপেল প্যারাবেন, ইসোবিউটেল প্যারাবেন, ইথাইল প্যারাবেন ইত্যাদি নামে পাওয়া যায় এই রাসায়নিক), ডাই ইথানল এমিন (ডিইএ), বিএইচএ (বিউটিলেটেড হাইড্রক্সি এনিসল) ওবিএইচটি (বিউটিলেটেড হাইড্রক্সি টলুইন), পলি ইথিলিন গ্লাইকল (পিইজি), সোডিয়াম লোরেল সালফেট এবং সোডিয়াম লরেথ সালফেট উল্লেখযোগ্য।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন প্রসাধন, ডিওডোরেন্ট, বডি স্প্রে এবং পারফিউম উৎপাদনে প্রায় তিন হাজার রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসব রাসায়নিক উপাদানগুলো ক্ষতিকরভাবে ব্যবহার করা হলে অ্যালার্জি, মাইগ্রেন ও হাঁপানি সৃষ্টি করতে পারে। 

এ ছাড়া ত্বকে চুলকানি, চোখ জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। এর অধিক ব্যবহারে চোখের ক্ষতি, বিষণ্নতা, শ্বাসনালির ক্ষতি, ডায়রিয়া এবং তীব্র চামড়া জ্বালা হতে পারে। ইমিউন সিস্টেমের ক্ষতি করতে পারে; যা পরবর্তী সময়ে হার্ট, লিভার, ফুসফুস ও মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করে।’

তিন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কারসাজির দায়ে ১২৬ কোটি টাকা জরিমানা

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫২ পিএম
তিন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কারসাজির দায়ে ১২৬ কোটি টাকা জরিমানা
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিনটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কারসাজির দায়ে ১৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১২৬ কোটি টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। 

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯৩৫তম কমিশন সভায় এ জরিমানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

সভা শেষে কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিমের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ৩ আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে সামির সেকান্দার সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার কারসাজি করায় তাকে ৯ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

এ ছাড়া একই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কারসাজি করায় মাহির সেকেন্দারকে ১০ লাখ টাকা, আবু সাদাত মোহাম্মদ সাঈমকে ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং তাজবিন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মুভিন মোল্লাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

গত ২০১০ সালের ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার কেনার জন্য ক্রয় আদেশ না দিয়ে সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স শেয়ার কেনায় কোম্পানিটিকে ৮৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই অপরাধে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং লিমিটেডকে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

২০২১ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার কারসাজি করায় সামির সেকান্দার ও মাহির সেকান্দারকে যথাক্রমে ২৩ কোটি ২৫ লাখ এবং ৪২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আফ্রা চৌধুরী ও আনিকা ফারহিনকে যথাক্রমে ৩৫ লাখ টাকা ও ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

২০২১ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির দায়ে আবু সাদাত মোহাম্মদ সাইমকে ১৭ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির দায়ে নাবিল ফিড মিলস লিমিটেডকে ১০ লাখ, নাবিল নাবা ফুডস লিমিটেডকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

এ ছাড়া ২০২২ সালের ২১ জুন থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির দায়ে রাশিনা করিমকে ৬ কোটি টাকা, সোহেল আলমকে ১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা, নূরুন্নাহার করিমকে ১০ লাখ টাকা, মোহাম্মদ ইবাদুল করিমকে ১৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ইপিএফ-কে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ইজিএফ-কে ১ কোটি টাকা এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

বিকন মেডিকেল লিমিটেডকে ৫ কোটি ৫০ লাখ এবং এখলাসুর রহমানকে ১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। উল্লিখিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির দায়ে জরিমানা করেছে বিএসইসি। এ ছাড়া বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল ও শাইনপুকুর সিরামিকের গত পাঁচ বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে স্পেশাল অডিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

পরিবর্তন আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ও মুদ্রানীতিতে

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪১ পিএম
পরিবর্তন আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ও মুদ্রানীতিতে
ছবি: সংগৃহীত

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে শক্তিশালী স্বায়ত্বশাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ এ পরিবর্তন আসতে পারে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘রিভিউ মিটিং’ বা পর্যালোচনা সভায় আলোচনা হয়েছে। সভায় মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন আনার বিষয়টিও আলোচনা হয়। 

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে এ সভা চলছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক মুখপাত্র হোসনে আরা শিখা সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ও মুদ্রানীতি পরিবর্তনের বিষয়ে ‘রিভিউ মিটিং’ এর সমাপনী সেশনে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। তখন বিস্তারিত জানানো হবে।

মুখপাত্র আরও জানান, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার গত দুই মাস ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। তারপরও ক্রলিং পেগ পদ্ধতি আবারও ফিরিয়ে আনা হবে কি না সেটিও আইএমএফ এর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। 

এছাড়াও আর্থিক খাতে সংস্কার, খেলাপি ঋণ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে সভায় আলোচনা হয়।

মনিরুল/এমএ/

ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ সমর্থন করি না: আবদুল আউয়াল মিন্টু

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭ এএম
আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০৯ পিএম
ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ সমর্থন করি না: আবদুল আউয়াল মিন্টু
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু

‘শুধু এবার না, আগেও দেখেছি ক্ষমতার পালা বদল হলে কিছু ব্যবসায়ী এবং তার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ (জব্দ) করা হয়। আমি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করাকে সমর্থন করি না।’ 

কনভারসেশন উইথ ইআরএফ মেম্বারস অনুষ্ঠানে গতকাল এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু এসব কথা বলেন। অর্থনীতি বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ইআরএফের উদ্যোগে রাজধানীর বিজয়নগরে সংগঠনের কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। 

বেক্সিমকো গ্রুপের কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার ঘটনাকে আপনি কীভাবে দেখছেন জানতে চাওয়া হলে ব্যবসায়ীদের নেতা আবদুল আউয়াল বলেন, একজন ব্যবসায়ী দুর্নীতিবাজ হলে তার বিচার হবে। কিন্তু তাই বলে তার প্রতিষ্ঠান কেন বন্ধ করতে হবে? একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তারা বেকার হয়ে যাবেন। তাদের পরিবার কষ্টে পড়বে। 

গত রবিবার এক অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি শুধু আমানতকারীদের টাকা দিতে ছয়টি দুর্বল ব্যাংককে বিশেষ তারল্য সুবিধা দিয়েছে। এটা ঠিক না। দুর্বল ছয়টি ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা সরাসরি বিশেষ ধার দেওয়া উচিত হবে না। বাংলাদেশে ৬০টি ব্যাংকের প্রয়োজন ছিল না। সরকার পরিবর্তন হলে রাজনৈতিক প্রভাবে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিমা কোম্পানির লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এভাবে লাইসেন্স পাওয়া অনেক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তারা সেবা দেওয়ার জন্য আসেনি। আমানতকারীদের অর্থ লোপাট ছিল তাদের উদ্দেশ্য।’

প্রশ্নোত্তর পর্বে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘দেশের জন‍্য কিছু অর্থনীতিবিদ এখন সমস‍্যা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এরা এখন কথা একটু বেশি বলছেন। এদের মুখ খোলা বন্ধ করতে না পারলে বাংলাদেশের জন‍্য বিরাট সমস‍্যা হয়ে যাবে। আমার প্রশ্ন হলো, এসব ব্যক্তি কি সারা জীবনেও একটি প্রতিষ্ঠান গড়েছেন? তারা কি একজন মানুষকেও চাকরি দিয়েছেন?’

ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলাম। কখনো ‘দরবেশ’ হইনি।” 

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি বাড়লে অর্থনীতির বহু ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। সার্বিক চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে আমদানি ব্যয়।
মিন্টু বলেন, অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় যে একনায়কতন্ত্র, স্বেচ্ছাচারী শাসন, দলীয়করণ, দলীয় লোকদের তোষণ-পোষণকে বিগত সরকার রাষ্ট্রীয় রীতিনীতিতে পরিণত করে ফেলেছিল। অন্যদিকে আবার বিগত সরকার জনগণের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের মাধ্যমে নিজেদের কবজায় নিয়ে ধ্বংস বা দুর্বল করে দেয়। ফলে বাজার ব্যবস্থাপনা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়।

আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘পৃথিবীতে অন্য কোনো দেশে আইন করে লুটপাটকে বৈধ করা হয়েছে কি না আমার জানা নেই। একইভাবে মেগা প্রজেক্টে হোক কিংবা খেলাপি ঋণ মাফ হোক, ব্যাংক বা বিশ্ববিদ্যালয় দখল করা হোক, সব আইন-কানুন-নীতিই তখন আত্মস্বার্থ-সন্ধানী দুর্নীতিবাজদের সহায়তায় প্রণীত হয়েছিল। ওই সব আইন-কানুন-রীতি-নীতি বাস্তবায়নে নিয়োগ দেওয়া হতো বড় বড় দুর্নীতিবাজ দলীয় কর্মকর্তাকে।’ 

আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, স্বৈরাচারী শাসনকে দীর্ঘায়িত করতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বারংবার পুনর্নিয়োগ দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। এরাই স্বার্থান্বেষী মহল যেমন- প্রশাসনে অনভিজ্ঞ ও অনির্বাচিত রাজনীতিবিদদের সঙ্গে মিলেমিশে রাজনীতি ও সামষ্টিক অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল। 

দেশের ব্যাংক খাতের অন্যতম এই কর্ণধার বলেন, বিগত দশকে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেদের চরিত্র বদলিয়ে দলীয় সংগঠন হিসেবে কাজ করছে। বিগত কয়েক বছরে স্বৈরাচারী সরকারের ভ্রান্তনীতি অনুসরণ করায় অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে গেছে। বিগত সরকারের মতলব ছিল পূর্বের সরকারের চেয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক সাফল্যকে অতিরজ্ঞিত উপায়ে জাহির করা। এসব ভ্রান্ত নীতির ফলে সমাজে দুর্নীতি, লুটপাট এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় বেড়ে গেছে। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে কিছু অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করা হয়েছে, যার সঙ্গে ভবিষ্যৎ আয় ও ব্যয়ের কোনো সামঞ্জস্য নেই। বিনিয়োগের নামে বহু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে একমাত্র দুর্নীতি ও লুটপাটের জন্য। এ ধরনের অপরিকল্পিত অতিরিক্ত ব্যয় দেশের মুদ্রাস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার বিদেশি ব্যাংক থেকে উচ্চসুদে অনেক স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়েছে। সুনিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এ ধরনের ঋণ দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতিকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে বেসরকারি খাতকে বিদেশি ঋণ নিতে উৎসাহিত করার পেছনে একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল স্বল্পমেয়াদে রিজার্ভ বাড়ানো। এসব বাণিজ্যিক ঋণের সুদ বেশি ও স্বল্প মেয়াদে পরিশোধ করতে হয়, যা দেশের আর্থিক লেনদেনের ভারসাম্য নষ্ট করে। এ ধরনের ঋণ নেওয়ার সঙ্গে দুর্নীতি ও অপচয় বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, কায়েমি স্বার্থবাদীদের রক্ষক হিসেবে রাজনৈতিক ও গতানুগতিক আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা কখনো প্রচলিত ব্যবস্থার সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নিতে চায় না। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থেই সর্বত্র ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় রাখার পক্ষে যুক্তিতর্ক দাঁড় করায়। সত্যিকার অর্থে সমাজের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য অথবা দারিদ্র্য ও ধনী-গরিবের মধ্যে ব্যবধান কমানোর জন্য প্রথম কাজ হবে রাজনৈতিক সংস্কারে হাত দেওয়া।’

পোশাকশ্রমিকরা পাবেন ৯ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৩ এএম
আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫২ এএম
পোশাকশ্রমিকরা পাবেন ৯ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট
ছবি : খবরের কাগজ

তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট হবে ৯ শতাংশ। নিম্নতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত পোশাকশ্রমিকরা নিয়মিত ৫ শতাংশের সঙ্গে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ অর্থাৎ ৯ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পাবেন। চলতি ডিসেম্বর থেকে এটি কার্যকর হবে। ফলে শ্রমিকদের জানুয়ারির মজুরির সঙ্গে ৯ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হবে।

ন্যূনতম মজুরি পুনর্মূল্যায়ন ও বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির পঞ্চম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সচিবালয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গতকাল সোমবার অতিরিক্ত সচিব মো. সবুর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের ছয় ও সরকার পক্ষের চার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গাজীপুর ও সাভারের আশুলিয়ায় শ্রমিকরা টানা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সেপ্টেম্বরে ১৮টি বিষয়ে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিক ও শ্রমিকনেতারা সমঝোতায় পৌঁছান। সমঝোতা অনুযায়ী, ছয় মাসের মধ্যে ন্যূনতম মজুরি পুনর্মূল্যায়ন ও নভেম্বরের মধ্যে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারকে প্রতিবেদন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তারপর ন্যূনতম মজুরি পুনর্মূল্যায়ন ও বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে সক্ষমতা ও করণীয় নির্ধারণে একটি কমিটি গঠন করে শ্রম মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, বৈঠকে একপর্যায়ে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিরা ইনক্রিমেন্ট ১০ শতাংশ দাবি করেন। তবে মালিক পক্ষ দিতে চায় ৮ শতাংশ। পরে সবার সম্মতিক্রমে ৯ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এ বিষয়ে মালিক, শ্রমিক ও সরকার পক্ষের প্রতিনিধিরা এক যৌথ ঘোষণায় সই করেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহায়ক কমিটির সদস্য এ এন এম সাইফুদ্দিন ও বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের মহাসচিব ফারুক আহাম্মাদ, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুববিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কবির আহম্মেদ, শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক এস এম এমাদুর হক, নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক মো. হাসিবুজ্জামান ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান সিকদার।

৩ ডিসেম্বর কমিটির চতুর্থ বৈঠকে মালিক পক্ষ ৭ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দিতে রাজি আছে জানালে শ্রমিক পক্ষ আগের অবস্থান থেকে সরে এসে ১২ শতাংশ দাবি করে। তার আগে শ্রমিক পক্ষ অতিরিক্ত ১০ শতাংশসহ মোট ১৫ শতাংশ বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছিল।

জাতীয় ভ্যাট দিবস আজ ভ্যাটে একক রেট করলে ফাঁকি কমবে

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৮ এএম
ভ্যাটে একক রেট করলে ফাঁকি কমবে
সংগৃহীত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছেন, মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাটে একক রেট নির্ধারণ করতে পারলে ফাঁকি অনেক কমে যাবে। তিনি বলেন, যেসব জায়গায় করছাড় দেওয়া রয়েছে, তা ধীরে ধীরে তুলে দেওয়া হবে।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় ভ্যাট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

এ সময় এনবিআরের বিভিন্ন বিভাগের সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘করছাড় বা কমানোর বিকল্প নেই। কিন্তু কাউকে ছাড় দিলেন, কাউকে দিলেন না। এটা একধরনের বৈষম্য। যদিও করছাড় জনস্বার্থেই দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে অতিরিক্ত ছাড়ও দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে এটা যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। করছাড়ের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। এখান থেকে বেরোতে না পারলে রাজস্ব বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। আমাদের মূল মেসেজ হলো, সিঙ্গেল রেটে ভ্যাট নির্ধারণ করলে ভালো হয়। তাতে ফাঁকি অনেক কমে যাবে। এটা বাস্তবায়ন করা অনেক সহজ। আমরা অবশ্যই সেটা করার চেষ্টা করব। সব ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যেসব জায়গায় ছাড় দেওয়া রয়েছে, সেখানে ধীরে ধীরে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করব।’

তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কর অব্যাহতির বিষয়টি সব গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। অনেক পণ্যে করছাড়ে বাজারে ইতিবাচক প্রভাবও পড়েছে। সব পণ্যের ক্ষেত্রে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। মূল সমস্যা হচ্ছে, রিজার্ভ কমে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট। এর ফলে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে। 

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চাল, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, ডিম ভোজ্যতেল ও খেঁজুরের ওপর কর প্রত্যাহার করেছি। যার নেতিবাচক প্রভাব কর আদায়ে পড়েছে। যদিও এটা জনস্বার্থে করতে হয়েছে। আমরা আশা করছি, পরিস্থিতির উন্নতি হবে। উন্নতি হলে ভ্যাট আদায় বৃদ্ধি পাবে। অন্য পণ্যগুলো আছে, ধারণা করা হয়, সেখান থেকে যথাযথ ভ্যাট পাই না। আমাদের আয়কর নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা এখনো যথেষ্ট কম। বর্তমানের এক কোটি ১০ লাখ নিবন্ধিত করদাতা। সেই তুলনায় ভ্যাট নিবন্ধিত সংখ্যা কম। ভ্যাট নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা ৫ লাখের বেশি। এটা অত্যন্ত কম।’

তিনি বলেন, ‘আমি করদাতাদের ভ্যাট নিবন্ধনের জন্য আহ্বান জানাব। কারণ এখন ঘরে বসেই ভ্যাট নিবন্ধন, ভ্যাট পরিশোধ ও সহজেই ভ্যাট রিটার্ন দেওয়া যাবে। আর অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন জমা দিলে অফিসে হার্ডকপি জমা দেওয়া লাগবে না। আমাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে করনেট বাড়াতে হবে। এ কারণে যারা ভ্যাট রিটার্ন দেন তাদের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হবে, তাদের নেটের আওতায় আনা হবে। আমরা ডোর টু ডোর যাব। আমরা যদি ভ্যাট নেটের পরিধি বৃদ্ধি করতে পারি তাহলে বাকি যে ছয় মাস আমাদের হাতে রয়েছে, ওই সময়ে রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করতে পারব। এটা আমাদের করতেই হবে। আমরা অনেক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছি। সংকট থেকে উত্তরণে আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই।’ 

এ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অত্যন্ত সততার সঙ্গে করদাতাদের সেবা দিতে হবে। করদাতারা যেন কোনোভাবেই মনে না করেন তাদের ওপর জুলুম করা হচ্ছে।

এনবিআর জানায়, ভ্যাটব্যবস্থা আমাদের দেশের অর্থনীতির অন্যতম একটি চালিকাশক্তি। চলতি বছরে ভ্যাট সিস্টেমকে সামগ্রিকভাবে অনলাইনভিত্তিক করে ঘরে বসে সব ভ্যাট সেবা প্রদানের জন্য একটি রোবাস্ট ভ্যাট সিস্টেম নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে সারা দেশের ছাত্র-জনতা অংশ নিয়ে যেমন গণতান্ত্রিক মুক্তি নিশ্চিত করেছে, তেমনি দেশের জনগণ একই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অর্থনৈতিক মুক্তিও নিশ্চিত করবে।

২০১৩ সাল থেকে ১০ ডিসেম্বর ‘ভ্যাট দিবস’ এবং ১০-১৫ ডিসেম্বর ‘ভ্যাট সপ্তাহ’ উদযাপন করা হচ্ছে। ভ্যাটব্যবস্থা প্রবর্তনের পর থেকে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এবারের ভ্যাট দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘ভ্যাট দেব জনে জনে, অংশ নেব উন্নয়নে’- এ স্লোগানে মূলত ভ্যাট প্রদানে জনগণের ব্যাপকভিত্তিক অংশগ্রহণ ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের অবদানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরেও একইভাবে ‘ভ্যাট দিবস’ এবং ‘ভ্যাট সপ্তাহ’ উদযাপন করা হচ্ছে।

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });