বিদায়ী সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন হয়েছে। এতে গত সপ্তাহে ডিএসইতে বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। সূচকের উত্থানের পাশাপাশি আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণও। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ২৯ কোটি ৬ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৮৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এক সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে ৯৪৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজারের সাপ্তাহিক হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিদায়ী সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। আর সপ্তাহ শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭১ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ বা ৬ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা।
সমাপ্ত সপ্তাহে বেড়েছে ডিএসইর সব কটি সূচকও। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১১৬ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। সপ্তাহ শেষে সূচকটি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩১৬ পয়েন্টে।
এ ছাড়া ডিএস-৩০ সূচক বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। আর ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ৪৩ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
গত সপ্তাহে প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬০৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৪১৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট ৩৯১টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৫৪টি কোম্পানির, কমেছে ১১১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে ২০ খাতের মধ্যে ১৯ খাতের শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা মুনাফা পেয়েছে।
গেল সপ্তাহে দর বেড়েছে ১৯ খাতের শেয়ারে। এই ১৯ খাতের শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা মুনাফায় রয়েছেন। আলোচ্য সপ্তাহে কেবল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা লোকসানে রয়েছেন।
আলোচ্য সপ্তাহে বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি মুনাফা পেয়েছেন কাগজ ও প্রকাশনা খাতে। এখাতে বিদায়ী সপ্তাহে দর বেড়েছে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ।
এরপর ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ দর বেড়ে সাপ্তাহিক রিটার্নের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভ্রমণ ও অবকাশ খাত। একই সময়ে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ দর বেড়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে পাট খাত।
সাপ্তাহিক রিটার্নে অন্য ১৬ খাতের মধ্যে বস্ত্র খাতের শেয়ারে মুনাফা বেড়েছে ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ, সেবা ও আবাসন খাতে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ, লাইফ ইন্স্যুরেন্স খাতে ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ, প্রকৌশল খাতে ৩ শতাংশ, আর্থিক খাতে ২ দশমিক ৬০ শতাংশ, সিমেন্ট খাতে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১ দশমিক ২০ শতাংশ, চামড়া খাতে ১ দশমিক ২০ শতাংশ, ব্যাংক খাতে শূন্য দশমিক ৯০ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ, টেলিকমিউনিকেশন খাতে শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ, বিবিধ খাতে শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ, জেনারেল ইন্স্যুরেন্স খাতে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ, সিরামিক খাতে শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে কোম্পানিগুলোর মাঝে লেনদেনের তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড।
সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড় ১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ২ দশমিক ৯২ শতাংশ।
লেনদেনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানটির প্রতিদিন গড়ে ১৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাপ্তাহিক লেনদেনের তৃতীয় স্থানে থাকা ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন গড়ে ১৪ কোটি ২৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে। যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এ ছাড়া প্রতিদিন গড় লেনদেনে সাপ্তাহিক শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফারইস্ট নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ১৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেডের ১২ কোটি ৫২ লাখ টাকা, অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেডের ১২ কোটি ২৪ লাখ টাকা, বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের ১১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের ১১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির ১১ কোটি ৩ লাখ টাকা, তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসির ১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৪টি কোম্পানির মাঝে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে গ্লোবাল হেভি ক্যামিক্যালস লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৭ টাকা ৮০ পয়সা, অর্থাৎ ৪২ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়েছে।
সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৩ টাকা ৪০ পয়সা বা ২৮ দশমিক ৮১ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেড। এ ছাড়া ৭ টাকা ৮০ পয়সা ২৫ দশমিক ১৬ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে আফতাব অটোমোবাইলস লিমিটেড।
সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেডের ২৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, আরামিট সিমেন্ট লিমিটেডের ২২ দশমিক ৮১ শতাংশ, ইনভয় টেক্সটাইল লিমিটেডের ২১ দশমিক ৬৩ শতাংশ, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার লিমেটেডের ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ, ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেডের ২০ দশমিক ৩৭ শতাংশ, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের ২০ শতাংশ এবং ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেডের ২০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানির মাঝে দরপতনের শীর্ষে উঠে এসেছে প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৬০ পয়সা বা ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ কমেছে।
সাপ্তাহিক দরপতনের শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা কোম্পানগুলোর মধ্যে ৫৭ টাকা ৮০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ দরপতনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ফার্মা এইডস লিমিটেড। এ ছাড়া ৮ টাকা বা ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ দরপতনে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে শ্যামপুর সুগার মিলস লিমিটেড।
সাপ্তাহিক দরপতনের শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ফারিস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, জিল বাংলা সুগার মিলস লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড।