দিনাজপুরের বিরল উপজেলার পুড়িয়া গ্রামে আদর্শ কৃষক মতিউর রহমান ১৫ একর জমিতে বিএডিসি সরবরাহ করা উচ্চ ফলনশীল আলুর বীজ রোপণ করছেন। ৮০ দিনের মধ্যে আলু ঘরে তোলার লক্ষ্য নিয়ে একই জমিতে তিনটি ফসল উৎপাদনের পরিকল্পনা চলছে। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে এবং শতাধিক শ্রমিকের সহযোগিতায় কাজ দ্রুত এগোচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তা জানান, এই উদ্যোগে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন ও দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, খেতে নারী ও পুরুষ কৃষি শ্রমিকরা একযোগে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা কোনো সময় নষ্ট করছেন না। আলু রোপণের প্রক্রিয়া অত্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করছেন। যাতে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকদের আয়েরও বৃদ্ধি ঘটে।
এখানে নারীরা সারিবদ্ধভাবে ৬ ইঞ্চি ফাঁকা রেখে এক একটি করে আলুর বীজ মাটিতে রোপণ করছেন। পুরুষরা কোদাল দিয়ে দুই পাশ থেকে ক্যানাল তৈরি করে আলুর বীজ ঢেকে দিচ্ছেন। চাষিরা কেউ কোনো কথা বলছেন না, সবাই মগ্ন হয়ে কাজ করছেন। এক একর জমিতে আলু রোপণ শেষ করতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময় লাগছে। শতাধিক শ্রমিকের সক্রিয় উপস্থিতি এবং সমন্বিত প্রয়াসের ফলে কাজ দ্রুত সম্পন্ন হচ্ছে।
মতিউর রহমানের এই ১৫ একর জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে তার উদ্ভাবনী চিন্তা এবং সময়মতো কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ রয়েছে। তার লক্ষ্য- একে একে তিনটি ফসল ঘরে তোলা, যাতে আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। আলু রোপণের পরই তিনি এই জমিতে বোরো ধান রোপণ করবেন। আলু উৎপাদনের পরই ধানের আবাদ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। এরই মধ্যে জমিতে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে এক সপ্তাহ পিছিয়ে গেছে কাজ। তবে কৃষি শ্রমিকরা দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছেন।
আলু চাষের জন্য বিএডিসির সরবরাহ করা বীজ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই জাতের আলুর উৎপাদনের হার বেশি এবং ফসল তোলার সময়ও কম। আগামী ৮০ দিনের মধ্যে আলু ঘরে তোলা যাবে, এমনটাই আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। বিএডিসি আলু-১ (সানশাইন) জাতের আলু এই অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কারণ এর ফলন খুবই ভালো এবং তা তোলার সময় মাত্র ৭০ দিন।
কৃষি শ্রমিক আব্দুল কাদের বলেন, ‘মতিউর রহমান অত্যন্ত সচেতন ও পরিশ্রমী। তিনি নিয়মিত কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। তার কারণে আমরা এখানে তিনটি ফসল উৎপাদন করতে পারি, যা আমাদের জন্য লাভজনক।’
অপর কৃষি শ্রমিক মোসাদ্দেক বলেন, ‘কিছুদিন আগেই আমরা এই জমিতে ধান কেটেছিলাম। এখন এখানে আলুর চাষ করছি। বিএডিসি থেকে আলুর বীজ পাওয়া গেছে, যা খুব দ্রুত মাটিতে রোপণ করা যাচ্ছে।’
মতিউর রহমান বলেন, ‘এ বছর ১৫ একর জমিতে বিএডিসির দেওয়া আলুর বীজ রোপণ করেছি। এই জাতের আলু খুবই ফলপ্রসূ এবং পরিশ্রমের তুলনায় ভালো ফলন দেয়। আমি আশাবাদী, এক একর জমিতে ২৩০ থেকে ২৫০ মণ আলুর উৎপাদন হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই আলু পরে বিএডিসির বীজ হিসেবে সংগ্রহ করা হবে। এটি পরে দেশের অন্য কৃষকদের কাছে সরবরাহ করা যাবে।’
দিনাজপুর নসিপুর আলু (বীজ) উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু জাফর মোহাম্মদ নেয়ামতুল্লাহ বলেন, ‘মতিউর রহমানের এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এই ১৫ একর জমিতে আলুর বীজ উৎপাদন করতে বিএডিসি সর্বাত্মক সহায়তা দিয়েছে। এর ফলে এ অঞ্চলের কৃষকরা একই জমিতে তিনটি ফসল উৎপাদন করতে পারবেন। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন এবং দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এটি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’