জাতীয়ভাবে আয়কর মেলার আয়োজন করা হবে না। তার পরিবর্তে কর অঞ্চলগুলোতে চলছে মিনি কর মেলা। এখানে মেলার মতোই সেবা দেওয়া হচ্ছে। অনেক কর অঞ্চলে অফিস কক্ষের বাইরে বসানো হয়েছে সারি সারি ডেস্ক। সাজানো হয়েছে প্ল্যাকার্ড, ব্যানারসহ কর দিতে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন ফটো।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, আয়কর মেলা না হলেও প্রতিটি কর অঞ্চলেই বিশেষ আয়োজনে মেলার মতো করেই কর দেওয়ার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে কর দিতে আসছেন।
২০১০ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা ও চট্টগ্রামে আয়কর মেলার আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি বিভাগীয় শহর, জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়েও কর মেলা অনুষ্ঠিত হতো। এসব মেলায় করদাতাদের ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে রিটার্ন জমা দিতে দেখা গেছে।
এবারও আয়কর মেলা হবে না। ফলে সাধারণ করদাতাদের কর মেলায় যাওয়ার ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে না। যদিও তাদের অনেকেই নভেম্বর মাস এলেই কর মেলার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। কারণ কর মেলায় গিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দিলে তাদের কর কর্মকর্তারা হয়রানি করেন না। করোনা শুরু হওয়ার পর। অর্থাৎ ২০২০ সাল থেকে আর কর মেলা হয়নি। এবার অবশ্য প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ক্ষমতায় নতুন অন্তর্বর্তী সরকার। তারা কর মেলা আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে
এবার ঘরে বসে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়াকেই বেশি উৎসাহ দিচ্ছে।
আয়কর তথ্য সেবা মাস হিসেবে আয়কর মেলার পরিবর্তে অফিসে অফিসে চলছে মিনি কর মেলা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) উদ্যোগে নভেম্বরজুড়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের ৪১টি কর অঞ্চলের ৮৬৯টি সার্কেলে অফিস চলাকালীন নিরবচ্ছিন্নভাবে পাওয়া যাবে করসেবা। চলবে ৩০ তারিখ পর্যন্ত।
প্রতিটি কর অঞ্চলে করদাতাদের জন্য সেবাকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সেখানে রিটার্ন জমার পাশাপাশি রিটার্ন ফরম পূরণে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। রিটার্ন জমার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে রিটার্ন জমার প্রাপ্তি স্বীকারপত্রও পাবেন করদাতারা।
কর অঞ্চলগুলোতে যেসব সেবা পাওয়া যাচ্ছে- প্রতিটি অফিসে উন্মুক্ত স্থান বা কার পার্কিং এরিয়ায় রিটার্ন গ্রহণ বুথ ও হেল্প ডেস্ক স্থাপন করে রিটার্ন গ্রহণ করা হচ্ছে। অনলাইনে কীভাবে রিটার্ন দাখিল করা যায়, সে বিষয়টি হাতে-কলমে দেখিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করলে কর সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য অফিস যেতে হবে না। সব কর কমিশনার সেবাকেন্দ্রে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন ও রি-রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। কর অঞ্চল-৪ এবং কর
অঞ্চল-১৬ ব্যবস্থাপনায় সচিবালয়ের সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য বাংলাদেশ সচিবালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন, অনলাইন রিটার্ন রেজিস্ট্রেশন, অনলাইন রিটার্ন দাখিল সুবিধা ও হেল্প ডেস্ক স্থাপনের মাধ্যমে ৩-১৮ নভেম্বর পর্যন্ত কর তথ্য সেবা দেওয়া হচ্ছে।
কর অঞ্চল-১১-এর ব্যবস্থাপনায় ১৮-১৯ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর সেবা দেওয়া ----
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, অনেক কর--- রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সামনে ১২ তলা ভবনে অবস্থিত কর অঞ্চল-১-এর অফিস। এখানে রিটার্ন দাখিল, অনলাইনে রিটার্ন দাখিল, ইটিআইএন, ডিজিটাল চালানসহ বিভিন্ন সেবা দিতে মোট ৬টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। কর অঞ্চল-১-এর আওতায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭১৬ ব্যক্তি ই-টিআইএন নিবন্ধন নিয়েছেন। অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছিলেন ৩ হাজার ৭৭৬ জন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ২ হাজারের কিছু বেশি ব্যক্তি রিটার্ন দাখিল করেছেন। এ বিষয়ে কর অঞ্চল-১-এর কমিশনার মো. লুৎফুল আজীম সাংবাদিকদের বলেন, হয়রানিমুক্ত সেবা দেওয়া হচ্ছে। অনেক করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করছে। এতে সময় ও হয়রানির অভিযোগ কমে যাবে। অহেতুক অডিট থেকে মুক্তি পাবে করদাতারা।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পুরোনো এনবিআর প্রধান কার্যালয়ের ভবনে কর অঞ্চল-৪ অফিসেও চলছে মিনি কর মেলা। এখানে রিটার্ন দাখিল, অনলাইনে রিটার্ন দাখিল, ইটিআইএন, ডিজিটাল চালানসহ বিভিন্ন সেবা দিতে মোট ১৭টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এখানে প্রায় দেড় লাখের বেশি ব্যক্তি ই-টিআইএন নিবন্ধন নিয়েছেন। যার মধ্যে প্রায় ১ লাখ ব্যক্তি নিয়মিত রিটার্ন দাখিল করে থাকেন। মোট ২২ কর সার্কেল রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত মিনি মেলায় প্রায় ৩ হাজার
ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ও প্রায় ৮ হাজার অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছেন।
এনবিআর জানায়, ২০২৪-২৫ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিল ও কর পরিশোধ পদ্ধতি গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেম করদাতাদের জন্য উন্মুক্ত করেছে। ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় করদাতাদের সহায়তা প্রদানের জন্য এনবিআরে একটি কল সেন্টার স্থাপন করেছে। অফিস চলাকালীন যেকোনো সময়ে কল সেন্টারের ০৯৬৪৩৭১৭১৭১ নম্বরে করদাতারা তাৎক্ষণিক টেলিফোনিক সমাধান পাচ্ছেন। এ ছাড়া www.etaxnbr.gov.bd এর eTax Service অপশন থেকে করদাতারা ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা e-mail এর মাধ্যমে জানাতে পারছেন, যা দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বিষয়ক একটি ভিডিও টিউটোরিয়াল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবপেজ (www.nbr.gov.bd), ইউটিউব চ্যানেল www.youtube.com/@nbr.bangladesh এবং ফেসবুক পেজ www.facebook.com/nbr.bangladesh -এ পাওয়া যাচ্ছে।
এবারে ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে অবস্থিত আয়কর সার্কেলগুলোর অধিক্ষেত্রভুক্ত সব সরকারি কর্মচারী, তফসিলি ব্যাংক, মোবাইল টেলিকম সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আগামী ৩০ নভেম্বর জাতীয় আয়কর দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সভা-সেমিনারসহ নানা আয়োজন থাকবে। ২০১৬ সাল থেকে প্রতিবছর জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণিতে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক করদাতাদের কর কার্ড ও সম্মাননা দেওয়া হয়। প্রতিবারের মতো এবারেও কর কার্ড দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সিদ্ধান্তহীনতা। উল্লেখ্য, প্রতিবছর ১৪১ জন সেরা করদাতাকে কর কার্ড ও সম্মাননা দেওয়া হয়।