আফগানিস্তান পুনর্গঠন সম্পর্কিত মার্কিন বিশেষ পরিদর্শক জেনারেল (এসআইজিএআর) দেশটির আইনসভা কংগ্রেসকে তাদের মিশন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ দেশটিতে মার্কিন সাহায্যের পরিমাণ তীব্রভাবে কমেছে। খবর খামা প্রেস নিউজ এজেন্সির।
এসআইজিএআরের বরাত দিয়ে আফগানিস্তানভিত্তিক সংবাদ সংস্থাটির খবরে বলা হয়, ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে আফগানিস্তানের পুনর্গঠন প্রচেষ্টায় মার্কিন সরকারের অবদান ৮২ শতাংশ কমে গেছে। মার্কিন বিশেষ পরিদর্শক জেনারেল জন সোপকো কংগ্রেসে এ-সংক্রান্ত সংস্থার ফলাফল উপস্থাপন করেছেন, যেখানে আর্থিক সহায়তা ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা- উভয় ক্ষেত্রেই একটি বড় ধরনের হ্রাসের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
নতুন প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, এসআইজিএআরের মিশন ২০২৫ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সমাপ্ত করা উচিত এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএস এইড) ২০২৬ অর্থবছরের পর থেকে নিজেদের সাহায্যের বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ২০২১ সালের জুন মাসে ৬৬৮ কোটি (৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন) ডলার থেকে কমে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ ১২১ কোটি (১ দশমিক ২১ বিলিয়ন) ডলারে নেমে এসেছে।
এসআইজিএআর আরও উল্লেখ করেছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে টম ওয়েস্ট পদত্যাগ করার পর আফগানিস্তানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ প্রতিনিধি পদটির জন্য কোনো প্রতিস্থাপন করা হয়নি।
তবে যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু কাবুলে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে, তবুও কাতারের দোহায় মার্কিন কর্মকর্তা এবং তালেবানের মধ্যে বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে।
খামা প্রেসের খবরে বলা হয়, ৮২ শতাংশ তহবিল কমে যাওয়া সত্ত্বেও, এসআইজিএআর (বিশেষ আফগানিস্তান পুনর্গঠন অডিটর জেনারেল) বলছে, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের বৃহত্তম দাতা হিসেবে রয়ে গেছে। ২০২১ সাল থেকে তালেবান নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় ৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার এই নাটকীয় হ্রাস আমেরিকান নীতিতে একটি পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে, যা আফগানিস্তানে আর্থিক ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণে দেশটির পতনকে চিহ্নিত করছে।
খবরে বলা হয়, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমছে, সে কারণে আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও স্থিতিশীলতার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা ক্রমশ সীমিত হয়ে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, তালেবানদের ক্ষমতা গ্রহণের দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে আফগানরা খরা, কয়েক দশকের যুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের সঙ্গে তাদের লড়াই অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে ৪০ শতাংশেরও বেশি আফগানিবাসী তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং অর্ধেকেরও বেশি মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভর করছে। এদিকে আফিম ব্যবসার ক্ষতি দেশের দরিদ্র চাষিদের মধ্যে মানবিক সাহায্যের চাহিদা বাড়াচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আফগানিস্তানের আফিম উৎপাদন থেকে দূরে থাকা চাষিদের টেকসই জীবিকা নিশ্চিত করার জন্য শক্তিশালী বিনিয়োগের খুব প্রয়োজন। সেটি করা না হলে দেশটিতে ভুক্তভোগী জনতার মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়বে।