চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সংযুক্ত আরব-আমিরাতে কাঁচা পেঁপে ও আনারসের রপ্তানি শুরু হয়েছে। সাউথ ব্রিজ অ্যাগ্রো নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলকভাবে এ দুই ফলের রপ্তারি শুরু করে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ ও প্যাকেজিং জটিলতার কারণে আগে ব্যবসায়ীরা এই ফলগুলো রপ্তানি করতে চাইতেন না। তবে যেহেতু প্রথম চালান গেল, এক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা দ্বার উন্মোচন হতে পারে।
বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাঁচা সবজি রপ্তানি হয়ে আসলেও পেঁপে বা আনারসের মতো ফল রপ্তানি হয়নি। এই দুটি ফল এমনভাবে সংরক্ষণ করতে হয় যাতে দুবাই পৌঁছানোর সময় নষ্ট না হয়ে যায়। তাই আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বিভিন্ন তাপমাত্রায় ফলগুলো সংরক্ষণ করতে হয়। মূলত সংরক্ষণের ঝামেলা থাকায় কোনো রপ্তানিকারক এ পণ্যগুলো রপ্তানি করেননি।
রাজধানীর উত্তরার প্রতিষ্ঠান ‘সাউথ ব্রিজ অ্যাগ্রো’ স্বল্প পরিসরে এক হাজার ৮৯ কার্টনে পাঁচ হাজার ৮১৬ টন কাঁচা পেঁপে, আনারস, লেবু ও কলার চালান রপ্তানি করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে শহর দুবাইয়ের ‘আল আউইর ফ্রুট অ্যান্ড ভেজিটেবল মার্কেট’র মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রুট ট্রেডিং এলএলসি কোম্পানি এ চালানটি কিনেছে। আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে এই চালান দুবাই পৌঁছানোর কথা।
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সাউথ ব্রিজের মালিক মোহাম্মদ রাশেদুর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষামূলক হিসেবে এ ফলগুলোর চালান বিদেশে পাঠানো হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এসব ফল অন্য দেশ থেকে যায়। কিন্তু আমাদের দেশ থেকে এতদিন যেত না। যদিও এই পণ্য রপ্তানির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তবে রপ্তানির সঠিক পদ্ধতি না জানায় বাংলাদেশ থেকে এসব ফল এতদিন বিদেশে যেত না।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে এসব ফলের চালান পাঠাতে বেশ কিছু সংস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ফলের মান বজায় রাখার জন্য প্যাকেজিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের দেশ থেকে সঠিক পদ্ধতিতে প্যাকেজিং মেনে কাঁচামাল রপ্তানির মতো প্রতিষ্ঠান এতদিন ছিল না।’
সংশ্লিষ্টদের মতে, ফলগুলোকে এমনভাবে সংরক্ষণ করতে হবে যেন বিদেশে পৌঁছানোর পর সেগুলো পাকা অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রায় আধা পাকা অবস্থায় এগুলো বিদেশে পাঠাতে হয়। আর এসব কাঁচা পণ্যের মান ঠিক রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সব মিলিয়ে, মানসম্পন্ন পণ্য বিদেশে পৌঁছাতে পারলেই পরবর্তী সময় দেশ থেকে বড় আকারের চালান বিদেশে পাঠানো যাবে। যদি পণ্য জাহাজে থাকা অবস্থায় নষ্ট হয়ে যায়, তবে বিদেশের বন্দর কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করবে না।’
এ চালান বিদেশে পাঠানোর দায়িত্বে থাকা সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান ‘স্পিড লিংক’র কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান মিন্টু জানান, চলতি মাসের শুরুতে ফলগুলো জাহাজে তোলা হয়েছিল। এক সপ্তাহ পর আমদানিকারকের হাতে পৌঁছাবে চালানটি। বর্তমানে এই চালানের কনটেইনার সমুদ্রপথে রয়েছে। বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাঁচা পেঁপে ও আনারসের প্যাকেটিং করা হয়েছে, যাতে এসব পণ্য নষ্ট না হয়। তবে এই চালানে কাঁচা কলা ও লেবুও রয়েছে, যা এর আগেও রপ্তানি করা হয়েছে। কিন্তু প্রথমবারের মতো পেঁপে ও আনারস রপ্তানি করা হলো।
চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কোয়ারেন্টি প্যাথলজিস্ট সৈয়দ মনিরুল হক জানান, কাঁচা পেঁপে ও আনারস রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমাদের দেশে মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বা প্যাকেজিং করার মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রণের জন্য পরামর্শক সংস্থা প্রয়োজন। এই পণ্য চালান বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে দেশে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ সম্ভব। এ রপ্তানির কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানসহ দেশের কৃষকরা লাভবান হবেন। কারণ আমাদের দেশে প্রচুর আনারস ও পেঁপে উৎপাদিত হয়। এসব পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। কিন্তু বিদেশে রপ্তানি হয় না। আমরা যদি রপ্তানির দ্বার উন্মোচন করতে পারি, তবে দেশের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে কৃষক আরও লাভবান হবেন।
তিনি আরও জানান, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে পেঁপে ও আনারস খুবই জনপ্রিয়। বিশ্বে যেসব দেশে বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন, সেসব দেশে এ দুটি পণ্য বিপুল পরিমাণে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। সেই চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে সঠিক মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিদেশে এ দুটি পণ্য পাঠানো সম্ভব হলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হবে।