কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ইলিশিয়ায় ঐতিহ্যবাহী খাবার হলো মহিষের দুধের তৈরি টক দই। সুস্বাদু ও জনপ্রিয়তায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর বেশ সুনাম রয়েছে। যুগ যুগ ধরে সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সবার পছন্দের তালিকায় অন্যতম একটি খাবার এই দই। বর্তমানে বিভিন্ন কারণে উৎপাদন কম হলেও দেশব্যাপী এ দইয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, সাহারবিল, ঢেমুশিয়া ও চিরিংগা ইউনিয়নে বেশির ভাগ লোক মহিষ পালন করেন। এখানে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ ছোট-বড় মহিষের খামার রয়েছে। এসব মহিষের দুধে এই দই তৈরি হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইলিশিয়ার দই তৈরিতে ব্যবহার করা দুধ অত্যন্ত পুষ্টিকর। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে এটি বেশ জনপ্রিয়। স্থানীয় বাজারের দোকানগুলোতে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ কেজি দই বিক্রি হয়। এতে খামারিরা এক দিনেই কয়েক হাজার টাকা আয় করেন। সাধারণত মাটির পাত্রে বা টালিতে রাখা ফলে এ দইয়ের জনপ্রিয়তা বেশি।
এতে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান এবং বৈশিষ্ট্যগত টক স্বাদের কারণে এটি খুব দ্রুত খাবারের বাজারে সাড়া ফেলেছে।
ইলিশিয়ার দইয়ের খ্যাতি এখন শুধু চকরিয়া কিংবা কক্সবাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি
বিদেশেও এর চাহিদা বাড়ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাসান জানান, ‘স্থানীয় বাজারে ১৫ থেকে ২০টি দোকানে এই দই বিক্রি হয়। জনপ্রিয়তার কারণে এখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এই দই খেতে আসেন।’
চকরিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম জাহেদ চৌধুরী বলেন, ‘এখানকার অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম উপাদান হচ্ছে ইলিশিয়ার মহিষের দুধের টক দই। এটি গুড়, মিষ্টি অথবা চিনি দিয়ে খাওয়া যায়। এ ছাড়া খাবার হজমে কাঁচা দুধের দই সহায়ক হওয়ার কারণে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
কক্সবাজার থেকে দই কিনতে আসা এহসান মিয়া বলেন, ‘কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে এই দইয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমি প্রতি সপ্তাহে একবার ইলিশিয়ার দই কিনে নিয়ে যাই।’ চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে আসা জসিম উদ্দিন লিমন বলেন, ‘আমি ব্যবসায়িক কাজে চকরিয়া বদরখালীতে আসি। সেখান থেকে ফেরার পথে নিয়মিত এ দই নিয়ে যাই। আমার ছেলে-মেয়ে এই দই খুব পছন্দ করে।’
এই অঞ্চলের মহিষের দুধের দইয়ের পাশাপাশি তৈরি হয়- মিষ্টি, মাখন, ঘি, রসমালাই, ছানা ও সন্দেসসহ নানা রকম মুখরোচক খাবার। এসব পণ্য স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি পর্যটকদেরও আকর্ষণ করছে। ফলে এ অঞ্চলের কৃষক, ব্যবসায়ী ও খাবারের প্রস্তুতকারকরা কর্মসংস্থান ও ব্যবসার সুযোগ পাচ্ছেন।
সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবী হোছাইন চৌধুরী বলেন, ‘চকরিয়ায় ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে অন্যতম মহিষের দুধের টক দই। এখানকার সবুজ প্রান্তরের ওপর নির্ভর করে শত কোটি টাকার মহিষের বাথান গড়ে উঠেছে। এটি এখানকার হাজার হাজার মানুষের জীবিকার উৎস।’ স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক বছরে মহিষের দইয়ের বাজার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। একটি স্বতন্ত্র ব্যবসা হিসেবে এই দই এখন স্থানীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহিষের দুধের দই সাধারণত মাটির পাত্রে (টালিতে) বসানো হয়। সেখান থেকে শুধু পেপার দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়। ছোট ও বড় দুই ধরনের হাঁড়িতে দই বিক্রি হয়। হাঁড়ির আকারের ওপর ভিত্তি করে দইয়ের দাম নির্ধারণ করা হয়। হাঁড়িসহ ১ হাজার ২০০ গ্রাম দই ২৫০ টাকা, ২ হাজার ২০০ গ্রাম দই ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে দুধের দামের ওঠানামার কারণে দইয়ের দামও ওঠানামা করে।