আগামী তিন-চার মাস অর্থাৎ জুনের আগে দেশের পুঁজিবাজার গতি ফিরে পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে পুঁজিবাজার টাক্সফোর্স কাজ করছে। এরই মধ্যে সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। জুনের মধ্যে সব সংস্কার শেষ হবে না। তবে কিছু সংস্কার হয়ে যাবে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সহায়তা করবে।
গতকাল শনিবার ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’-এ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম এ কথা বলেন।
মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সংস্কারের পর পুঁজিবাজারে অন্যায় করে কেউ ছাড় পাবে না, সেই আস্থা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে জুন নাগাদ সংস্কারের কিছু বিষয় বাজারে ইতিবাচক বার্তা দিতে পারে। আমরা আশা করছি, জুন নাগাদ পুঁজিবাজারে ভালো অবস্থা দেখতে পারব।’
সিএমজেএফ সভাপতি এস এম গোলাম সামদানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের পুঁজিবাজার অনেক সংকুচিত। গত ১৫ বছরে পুঁজিবাজার অনেক পিছিয়েছে। তবে একই সময়ে বিশ্বের অন্য সব দেশের পুঁজিবাজার এগিয়েছে। এই অবস্থায় বর্তমান সময়ে দেশের সব স্টেকহোল্ডার বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে ইতিবাচকভাবে কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘সবকিছুই বিফলে যাবে, যদি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে না পারি। এ জন্য স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে চারটি কাজকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। চারটি কাজের মধ্যে দ্রুত সময়ে কিছু ভালো কোম্পানি নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া নেগেটিভ ইক্যুইটির সমস্যা সমাধান, ট্যাক্স সুবিধা দেওয়া ও ইনসাইডার ট্রেডিং বন্ধ করা। এই ট্রেডিংয়ের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে শেয়ারবাজারের যে ভূমিকা থাকার কথা ছিল, তা হয়নি। প্রত্যাশার লেভেল থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। স্টক এক্সচেঞ্জগুলো অনেক সমস্যায় ছিল। এর মধ্যে অন্যতম নিয়ন্ত্রক সংস্থার অযাচিত হস্তক্ষেপ। এ ছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের মানবসম্পদের অদক্ষতা ও প্রযুক্তিগত সমস্যা রয়েছে। আর ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ডিএসইতে কোনো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট নেই। আমরা চার্টার্ড অ্যাকউন্ট্যান্ট নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে প্রাইমারি রেগুলেটরকে সব ক্ষেত্রেই বিএসইসির অনুমোদন নিয়ে কাজ করতে হতো। যার ফলে কোম্পানিগুলোকে মনিটর করা ডিএসইর জন্য অনেকটা কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। এই অবস্থান থেকে আমরা অনেকটা বের হয়ে আসছি। দুর্বল কোম্পানিগুলোতে এখন ডিএসইর মনিটরিং বাড়বে। এখানে সমস্যা হচ্ছে, এই বাজারের বেশির ভাগ কোম্পানিই দুর্বল। এতগুলো দুর্বল কোম্পানিকে একসঙ্গে মনিটর করা ডিএসইর জন্য কষ্টকর। আমাদের বাজারে এমন কিছু কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে, যেগুলো তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা ছিল না। এগুলোকে ডিলিস্টিংয়ের পদক্ষেপ নিতে হবে।’
সফটওয়্যার সমস্যায় ডিইএসইতে লেনদেন বিঘ্ন ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ‘বর্তমানে একটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সক্ষমতার জায়গা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা। কারণ ট্রেড (লেনদেন) এখন সবই ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হচ্ছে। সেটেলমেন্টও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হচ্ছে। আমরা যে প্ল্যাটফর্ম তুলছি, সেটা আমরা এই মুহূর্তে দেখছি আন্তর্জাতিক মানের প্ল্যাটফর্ম। তার পরও ছোট ছোট যে বিচ্যুতি হচ্ছে, সেখানে আমি বলব প্রসেসগত কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যে ধরনের স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল থাকা দরকার, সেগুলো স্ট্যাবলিশ করলে এই ধরনের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসবে।’
আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ততটা ভালো নেই। ব্যাংকিং সেক্টরের একটা অস্থিরতা, সেখানে আমরা আশা করছি কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। এখনো আমরা প্রত্যাশিত অবস্থায় যেতে পারিনি। আমরা দেখছি মূলধনি মেশিনারিজ আমদানি কমে গেছে। রিয়েল ইকোনমিক বিনিয়োগ যদি ঠিক না থাকে, তাহলে পুঁজিবাজার তো পুরো মার্কেটের প্রতিচ্ছবি। তো সেটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আমরা আশাবাদী, জুন নাগাদ শেয়ারবাজারে ইতিবাচক ধারা দেখতে পারব।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ‘সংস্কার করতে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু সংস্কার করতে গিয়ে রোগী যাতে মারা না যায় সেটা দেখতে হবে। একটা জায়গায় সমন্বয় করা হয়েছে, ৫০ লাখ টাকার বেশি ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্সের ওপরে। আমাদের আরও কিছু দাবি-দাওয়া আছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর থেকে বলা হয়েছে এগুলো পজিটিভভাবে দেখবে। দ্বিতীয় ভালো কিছু কোম্পানি আনতে পারলে বাজারে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হবে। অনেক বিনিয়োগকারী নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে, তারা সক্রিয় হবেন। একটা ইতিবাচক ধারা তৈরি হবে।’
তিনি বলেন, ‘স্টক এক্সচেঞ্জগুলোও অনেক সমস্যায় ছিল। এর মধ্যে অন্যতম নিয়ন্ত্রক সংস্থার অযাচিত হস্তক্ষেপ। এ ছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের মানবসম্পদের অদক্ষতা ও প্রযুক্তিগত সমস্যা রয়েছে। আর ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কোনো রকম চাপ বা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত নির্দেশনার মতো ঘটনা হয়নি। আমরা চাপবিহীনভাবে কাজ করছি। আমাদের সব সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিকভাবে হচ্ছে। আমাদের বোর্ডের যে নিয়ম রয়েছে, সেই অনুযায়ী কাজ করছি। নিয়মের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ডিএসইর সমস্যাগুলো বের করার চেষ্টা করেছি। ইতোমধ্যে সমস্যার তালিকা অনেক লম্বা হচ্ছে, এগুলো সমাধানে কাজ করছি। যেসব ব্রোকারেজ হাউস বিনিয়োগকারীদের অর্থ সরিয়ে নিয়েছে, ইনভেস্টর প্রোটেকশন ফান্ড থেকে তাদের সাপোর্ট দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ব্রোকারেজ হাউসের সম্পদ বিক্রি করে এবং লাইসেন্স বিক্রি করে ওই সব হাউসের বিনিয়োগকারীদের তহবিল জোগান দেওয়া হবে।’
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা বাজারের উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। বিশেষ করে আইএমএফের সঙ্গে। এ ছাড়া দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সহযোগিতা কামনা করব। আশা করছি এই সহযোগিতা আমরা পাব।’