ঢাকা ৫ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

তিন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কারসাজির দায়ে ১২৬ কোটি টাকা জরিমানা

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫২ পিএম
তিন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কারসাজির দায়ে ১২৬ কোটি টাকা জরিমানা
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিনটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কারসাজির দায়ে ১৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১২৬ কোটি টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। 

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯৩৫তম কমিশন সভায় এ জরিমানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

সভা শেষে কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিমের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ৩ আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে সামির সেকান্দার সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার কারসাজি করায় তাকে ৯ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

এ ছাড়া একই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কারসাজি করায় মাহির সেকেন্দারকে ১০ লাখ টাকা, আবু সাদাত মোহাম্মদ সাঈমকে ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং তাজবিন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মুভিন মোল্লাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

গত ২০১০ সালের ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার কেনার জন্য ক্রয় আদেশ না দিয়ে সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স শেয়ার কেনায় কোম্পানিটিকে ৮৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই অপরাধে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং লিমিটেডকে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

২০২১ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার কারসাজি করায় সামির সেকান্দার ও মাহির সেকান্দারকে যথাক্রমে ২৩ কোটি ২৫ লাখ এবং ৪২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আফ্রা চৌধুরী ও আনিকা ফারহিনকে যথাক্রমে ৩৫ লাখ টাকা ও ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

২০২১ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির দায়ে আবু সাদাত মোহাম্মদ সাইমকে ১৭ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির দায়ে নাবিল ফিড মিলস লিমিটেডকে ১০ লাখ, নাবিল নাবা ফুডস লিমিটেডকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

এ ছাড়া ২০২২ সালের ২১ জুন থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির দায়ে রাশিনা করিমকে ৬ কোটি টাকা, সোহেল আলমকে ১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা, নূরুন্নাহার করিমকে ১০ লাখ টাকা, মোহাম্মদ ইবাদুল করিমকে ১৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ইপিএফ-কে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ইজিএফ-কে ১ কোটি টাকা এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

বিকন মেডিকেল লিমিটেডকে ৫ কোটি ৫০ লাখ এবং এখলাসুর রহমানকে ১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। উল্লিখিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির দায়ে জরিমানা করেছে বিএসইসি। এ ছাড়া বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল ও শাইনপুকুর সিরামিকের গত পাঁচ বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে স্পেশাল অডিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

জুনের মধ্যে গতি ফিরবে পুঁজিবাজারে: ডিএসই চেয়ারম্যান

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৪ এএম
জুনের মধ্যে গতি ফিরবে পুঁজিবাজারে: ডিএসই চেয়ারম্যান
পুঁজিবাজার গতি ফিরে পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম

আগামী তিন-চার মাস অর্থাৎ জুনের আগে দেশের পুঁজিবাজার গতি ফিরে পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে পুঁজিবাজার টাক্সফোর্স কাজ করছে। এরই মধ্যে সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। জুনের মধ্যে সব সংস্কার শেষ হবে না। তবে কিছু সংস্কার হয়ে যাবে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সহায়তা করবে।

গতকাল শনিবার ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’-এ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম এ কথা বলেন।

মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সংস্কারের পর পুঁজিবাজারে অন্যায় করে কেউ ছাড় পাবে না, সেই আস্থা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে জুন নাগাদ সংস্কারের কিছু বিষয় বাজারে ইতিবাচক বার্তা দিতে পারে। আমরা আশা করছি, জুন নাগাদ পুঁজিবাজারে ভালো অবস্থা দেখতে পারব।’

সিএমজেএফ সভাপতি এস এম গোলাম সামদানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।

ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের পুঁজিবাজার অনেক সংকুচিত। গত ১৫ বছরে পুঁজিবাজার অনেক পিছিয়েছে। তবে একই সময়ে বিশ্বের অন্য সব দেশের পুঁজিবাজার এগিয়েছে। এই অবস্থায় বর্তমান সময়ে দেশের সব স্টেকহোল্ডার বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে ইতিবাচকভাবে কাজ করছে।’

তিনি বলেন, ‘সবকিছুই বিফলে যাবে, যদি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে না পারি। এ জন্য স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে চারটি কাজকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। চারটি কাজের মধ্যে দ্রুত সময়ে কিছু ভালো কোম্পানি নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া নেগেটিভ ইক্যুইটির সমস্যা সমাধান, ট্যাক্স সুবিধা দেওয়া ও ইনসাইডার ট্রেডিং বন্ধ করা। এই ট্রেডিংয়ের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে শেয়ারবাজারের যে ভূমিকা থাকার কথা ছিল, তা হয়নি। প্রত্যাশার লেভেল থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। স্টক এক্সচেঞ্জগুলো অনেক সমস্যায় ছিল। এর মধ্যে অন্যতম নিয়ন্ত্রক সংস্থার অযাচিত হস্তক্ষেপ। এ ছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের মানবসম্পদের অদক্ষতা ও প্রযুক্তিগত সমস্যা রয়েছে। আর ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ডিএসইতে কোনো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট নেই। আমরা চার্টার্ড অ্যাকউন্ট্যান্ট নেওয়ার চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে প্রাইমারি রেগুলেটরকে সব ক্ষেত্রেই বিএসইসির অনুমোদন নিয়ে কাজ করতে হতো। যার ফলে কোম্পানিগুলোকে মনিটর করা ডিএসইর জন্য অনেকটা কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। এই অবস্থান থেকে আমরা অনেকটা বের হয়ে আসছি। দুর্বল কোম্পানিগুলোতে এখন ডিএসইর মনিটরিং বাড়বে। এখানে সমস্যা হচ্ছে, এই বাজারের বেশির ভাগ কোম্পানিই দুর্বল। এতগুলো দুর্বল কোম্পানিকে একসঙ্গে মনিটর করা ডিএসইর জন্য কষ্টকর। আমাদের বাজারে এমন কিছু কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে, যেগুলো তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা ছিল না। এগুলোকে ডিলিস্টিংয়ের পদক্ষেপ নিতে হবে।’

সফটওয়্যার সমস্যায় ডিইএসইতে লেনদেন বিঘ্ন ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ‘বর্তমানে একটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সক্ষমতার জায়গা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা। কারণ ট্রেড (লেনদেন) এখন সবই ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হচ্ছে। সেটেলমেন্টও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হচ্ছে। আমরা যে প্ল্যাটফর্ম তুলছি, সেটা আমরা এই মুহূর্তে দেখছি আন্তর্জাতিক মানের প্ল্যাটফর্ম। তার পরও ছোট ছোট যে বিচ্যুতি হচ্ছে, সেখানে আমি বলব প্রসেসগত কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যে ধরনের স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল থাকা দরকার, সেগুলো স্ট্যাবলিশ করলে এই ধরনের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসবে।’

আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ততটা ভালো নেই। ব্যাংকিং সেক্টরের একটা অস্থিরতা, সেখানে আমরা আশা করছি কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। এখনো আমরা প্রত্যাশিত অবস্থায় যেতে পারিনি। আমরা দেখছি মূলধনি মেশিনারিজ আমদানি কমে গেছে। রিয়েল ইকোনমিক বিনিয়োগ যদি ঠিক না থাকে, তাহলে পুঁজিবাজার তো পুরো মার্কেটের প্রতিচ্ছবি। তো সেটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আমরা আশাবাদী, জুন নাগাদ শেয়ারবাজারে ইতিবাচক ধারা দেখতে পারব।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ‘সংস্কার করতে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু সংস্কার করতে গিয়ে রোগী যাতে মারা না যায় সেটা দেখতে হবে। একটা জায়গায় সমন্বয় করা হয়েছে, ৫০ লাখ টাকার বেশি ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্সের ওপরে। আমাদের আরও কিছু দাবি-দাওয়া আছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর থেকে বলা হয়েছে এগুলো পজিটিভভাবে দেখবে। দ্বিতীয় ভালো কিছু কোম্পানি আনতে পারলে বাজারে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হবে। অনেক বিনিয়োগকারী নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে, তারা সক্রিয় হবেন। একটা ইতিবাচক ধারা তৈরি হবে।’

তিনি বলেন, ‘স্টক এক্সচেঞ্জগুলোও অনেক সমস্যায় ছিল। এর মধ্যে অন্যতম নিয়ন্ত্রক সংস্থার অযাচিত হস্তক্ষেপ। এ ছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের মানবসম্পদের অদক্ষতা ও প্রযুক্তিগত সমস্যা রয়েছে। আর ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’

ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কোনো রকম চাপ বা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত নির্দেশনার মতো ঘটনা হয়নি। আমরা চাপবিহীনভাবে কাজ করছি। আমাদের সব সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিকভাবে হচ্ছে। আমাদের বোর্ডের যে নিয়ম রয়েছে, সেই অনুযায়ী কাজ করছি। নিয়মের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ডিএসইর সমস্যাগুলো বের করার চেষ্টা করেছি। ইতোমধ্যে সমস্যার তালিকা অনেক লম্বা হচ্ছে, এগুলো সমাধানে কাজ করছি। যেসব ব্রোকারেজ হাউস বিনিয়োগকারীদের অর্থ সরিয়ে নিয়েছে, ইনভেস্টর প্রোটেকশন ফান্ড থেকে তাদের সাপোর্ট দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ব্রোকারেজ হাউসের সম্পদ বিক্রি করে এবং লাইসেন্স বিক্রি করে ওই সব হাউসের বিনিয়োগকারীদের তহবিল জোগান দেওয়া হবে।’

ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা বাজারের উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। বিশেষ করে আইএমএফের সঙ্গে। এ ছাড়া দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সহযোগিতা কামনা করব। আশা করছি এই সহযোগিতা আমরা পাব।’

সাপ্তাহিক লেনদেন দুর্বল কোম্পানির আধিপত্য

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৪ এএম
দুর্বল কোম্পানির আধিপত্য
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ

গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দর পতন হয়েছে। এতে সপ্তাহজুড়েই দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এমন পতনের বাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে বছরের পর বছর লভ্যাংশ না দিয়ে ‘জেড’ গ্রুপ বা দুর্বল কোম্পানির তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো। 

গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যে ১০টি কোম্পানির শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তার মধ্যে ছয়টিই ছিল ‘জেড’ গ্রুপের কোম্পানি। এর মধ্যে রয়েছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, সেন্ট্রাল ফার্মা, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ইয়াকিন পলিমার, নিউ লাইন ক্লোথিং এবং ঢাকা ডাইং।

দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দুর্বল কোম্পানি দাপট দেখালেও সার্বিক পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে প্রধান ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১০৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৬৩টির। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ৬০ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৬ শতাংশ।

গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩ টাকা ৮০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ১০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৩ টাকা ৩০ পয়সা। এতে এক সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে বেড়েছে ২৭ কোটি ৭৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে যা ছিল ৬ লাখ ৬০ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৫১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ২ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ দুই সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমল ৬ হাজার ১১ কোটি টাকা।

বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি গত সপ্তাহে কমেছে মূল্যসূচক। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে কমেছে ৬০ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৫ দশমিক ১৯ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ। 

প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ৩০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহের সূচকটি ৬ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ কমে। 

প্রধান ও ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক কমার পাশাপাশি কমেছে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ১১ দশমিক ৩০ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহের সূচকটি বাড়ে ৬ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ। 

সব কয়টি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের গতি বেড়েছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৭৮ কোটি ৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৩৪৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৩১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বা ৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

আলুর ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশ কৃষক

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৭ এএম
আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০০ এএম
আলুর ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশ কৃষক
খেত থেকে আলু তুলছেন শ্রমিকরা। খবরের কাগজ

প্রতিবছর ভালো দাম পাওয়ায় আলু চাষ বাড়িয়ে দিয়েছেন রংপুরের কৃষকরা। তবে এবার ভালো ফলন হলেও তারা দামে হতাশ। কৃষকরা জানান, গতবারের তুলনায় এবার দ্বিগুণ আলু চাষ করা হলেও খরচের পরিমাণও বেড়েছে। শুরুতে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। কিন্তু এখন তা কমে ১৬-১৮ টাকায় নেমে গেছে। ফলে কৃষকরা তাদের খরচও উঠাতে পারছেন না।

কৃষকরা আরও জানান, এক দোন (২৪ শতক) জমিতে আলু চাষ করতে ২৩০ কেজি বীজ ব্যবহার হয়েছে, যার বাজার মূল্য ২৫ হাজার ৩০০ টাকা। এ ছাড়া সার, কীটনাশক, স্প্রে, শ্রমিক, সেচ ও জমি ভাড়া মিলিয়ে মোট খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু ফলন বিক্রি করে এ খরচ উঠবে না বলেই হতাশ তারা।

কৃষক আরিফ আলী জানান, তিনি প্রতিবছর অন্যের জমিতে আলু চাষ করেন। কিন্তু এবারের মতো ক্ষতি তিনি আগে কখনোই দেখেননি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখন তারা সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছেন, যার কারণে কৃষকরা সঠিক দাম পাচ্ছেন না।

এদিকে খুচরা বাজারে আলুর দাম ৩০-৩৫ টাকা কেজি হলেও কৃষকের কাছ থেকে তা ১৬-১৮ টাকায় কিনে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্থভোগীরা। এক দোন জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৫০০ কেজি, যা বাজারে ২৭ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু কৃষকরা ১৮ হাজার ৫০০ টাকা ক্ষতিতে আছেন।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৫৭৬ হেক্টর জমি। কিন্তু তা ছাড়িয়ে ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৩৯ হেক্টর জমি চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ লাখ ৯৯ হাজার ১৯৭ টন। তবে ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ১২ হাজার ৫০৭ হেক্টর জমি কর্তন করা হয়েছে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘এবার আলুর উৎপাদন বেড়েছে। তাই দাম কিছুটা কমেছে। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থা আরও বাড়ানো উচিত। গত বছর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও কোল্ড স্টোরেজে অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু মাঝখানে আবার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।’

এভাবে আলুর দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা আরও হতাশ। তাদের দাবি, যদি সিন্ডিকেট বন্ধ না হয় এবং সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে আলু চাষে মানুষের আগ্রহ কমে যাবে।

দাম কমে যাওয়ায় খেতেই পচছে ফুলকপি

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪৮ এএম
আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৬ এএম
দাম কমে যাওয়ায় খেতেই পচছে ফুলকপি
খেত থেকে ফুলকপি তুলছেন নারীরা। ছবি: খবরের কাগজ

ঠাকুরগাঁওয়ে ফুলকপি চাষে এবার বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। বাজারে চাহিদা না থাকায় এবং দাম কমে যাওয়ায় তাদের ফসল খেতেই নষ্ট হচ্ছে। কৃষকরা গরু-ছাগলকে ফুলকপি খাওয়াচ্ছেন। খরচ মেটাতে না পেরে অনেকেই ঋণ শোধ নিয়ে চিন্তিত। কৃষকরা সরকারের হস্তক্ষেপ ও সরাসরি ফসল কেনার দাবি করেছেন। তারা বলেন, হিমাগার নির্মাণ ও সঠিক বাজারব্যবস্থা না হলে এমন ক্ষতি রোধ সম্ভব নয়।

হরিপুর উপজেলার টেংরিয়া গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম জানান, ‘সময়মতো ফুলকপি না তোলার ফলে তা খেতেই ফুটে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ফুলকপি তুলতে দেরি হলে তা আর বিক্রি করা যায় না।’

রানীশংকৈল উপজেলার রাউৎনগর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন তিন বিঘা জমিতে ফুলকপির চাষ করেছিলেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। তবে বাজারে ফুলকপির দাম এতটাই কম যে শ্রমিক ও পরিবহন খরচও মেটানো সম্ভব হয়নি। তিনি হতাশ কণ্ঠে বলেন, ‘ফুলকপি এক বস্তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। গরুর খাবার হিসেবে বিক্রি করলে খরচও উঠবে না।’

উত্তরগাঁও গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম ও তার স্ত্রী রাশিদা বেগম জানান, ‘ফুলকপির চারা দুই টাকা দরে কিনতে হয়েছে। জমিতে লাগানোর পর সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরিতে অনেক খরচ হয়েছে। কিন্তু পাইকাররা প্রতিটি ফুলকপি এক টাকা দরে কিনেছেন।’ তিনি বলেন, ‘মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করেছি। এখন ঋণ শোধ করাটাই বড় চিন্তা।’

ভবানীডাঙ্গী গ্রামের মো. জাকারিয়া জানান, ‘তার মতো অনেক কৃষক একটিও ফুলকপি বিক্রি করতে পারেননি।’ তিনি বলেন, ‘গরুকে খাওয়ানোর জন্য ফুলকপি তুলেছি। কিন্তু এখন গরুও আর ফুলকপি খেতে চায় না।’

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, এ বছর জেলায় ১ হাজার ৭৮ হেক্টর জমিতে ফুলকপির চাষ হয়েছে। এতে উৎপাদন হয়েছে ৩৬ হাজার ৫৪০ টন। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি হওয়ায় বাজারে ফুলকপির দাম কমে গেছে। তিনি বলেন, ‘সবজি একবারে বাজারে না তুলে ধাপে ধাপে তুললে ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায়। তবে কৃষকদের লোকসান থেকে রক্ষা পেতে বাজারব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা জরুরি।’

ফুলকপির এই বিপর্যয়ে কৃষকরা সরকারের হস্তক্ষেপ চান। তাদের মতে, স্থানীয়ভাবে সবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণ এবং সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কেনার ব্যবস্থা করলে এমন সমস্যা রোধ করা সম্ভব। কৃষকরা বলেন, ‘আমরা ফসল উৎপাদন করি। কিন্তু ন্যায্যমূল্য না পেলে আমাদের পরিশ্রম বৃথা যায়। সরকার যদি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কেনে, তা হলে আমাদের আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।’

অভিযানের পরও প্রভাব নেই বাজারে

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪৩ এএম
আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪৬ এএম
অভিযানের পরও প্রভাব নেই বাজারে
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বাজার অভিযান পরিচালনা করছে। ছবি: সংগৃহীত

ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বাজার অভিযান পরিচালনা করছে। ওই সময় বিভিন্ন বাজারে পণ্যের মূল্য তালিকা ঝুলানো থাকে এবং খুচরা বিক্রেতারা সেই দরে পণ্য বিক্রি করেন। কিন্তু ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বাজার থেকে চলে গেলে দেখা যায় অসাধু ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছেন। ভোক্তাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে। 

বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা না-কি অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে ভোক্তাদের পকেট থেকে বাড়তি টাকা যাচ্ছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক হাফেজ হারুন-অর রশিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে, ভোক্তাদের পকেট থেকে বেশি টাকা চলে যাচ্ছে এটা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু এই সংখ্যা খুব বেশি নয়। কারণ আমরা ফেডারেশন থেকে বিভিন্ন সময়ে বলে আসছি ৯৮ শতাংশ ব্যবসায়ী সততার সঙ্গে ব্যবসা করে। ২ শতাংশের জন্য গালি খেতে হচ্ছে। ভোক্তা অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বেশি করে বাজার মনিটরিং করলে এটা কমে যাবে। সরকার পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে বাজারে মনিটরিং একেবারে কমে গেছে। এ জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা লাভে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাই বাজারে মনিটরিং বাড়াতে হবে।’ 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘কোনো কিছুর দাম হঠাৎ বেড়ে গেলে আগে আমরা বিভিন্ন বাজারের কমিটির লোককে নিয়ে মিটিং করে হুঁশিয়ার করে দিতাম। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ফেডারেশনের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু আমলাদের পক্ষে এসব কাজ করা সম্ভব না। আমরা কিছু বললেই ফ্যাসিবাদের তকমা দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাথাচাড়া দিয়েছে। তাই বাড়ছে কিছু পণ্যের দাম। বাজার স্বাভাবিক করতে হলে সংস্কার করে দ্রুত এফবিসিসিআইর নির্বাচন দিতে হবে। তাহলে আগের মতো আমরা বাজারে তৎপরতা বাড়াতে পারব।’ 

গতকাল বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা। ভোক্তাদের কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। কারণ সরকার সোনালি মুরগির দাম বেঁধে দিয়েছে ২৭০ টাকা। কিন্তু বাজারে চাল, ডালসহ অধিকাংশ পণ্য অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করছে। তাদের এসব কার্যক্রম বন্ধ করতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অধিকাংশ দিনই সারা দেশে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২ লাখের বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ১৪৩ কোটি টাকা জরিমানা করেছে। এর মধ্যে একাধিক প্রতিষ্ঠানকে বহুবার জরিমানা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে তা জানা গেছে। 

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ভোক্তাদের স্বার্থে তারা অক্লান্ত চেষ্টা করছে। বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ভোক্তা ও ব্যবসায়ায়ীদের সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০২৩ সালে ২৪ হাজার ২২৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ১৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে বিদায়ী বছরে জুলাই-আগস্ট মাসে গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তন হলে ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়। এ জন্য বাজার অভিযানও কম হয়েছে। ২০২৪ সালে ১৫ হাজার ৪৩২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষও বাজারে যাচ্ছে। তারা খাদ্যের কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে কাজ করছে। বিএসটিআইও মানহীন পণ্য রোধে বাজারে অভিযান পরিচালনা করছে। 

এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলিম আখতার খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে সবার মাঝে অতি মুনাফার প্রবণতা বাড়ছে। অনৈতিক জীবনে জড়িয়ে পড়ছে। এ জন্য ভোক্তাদের বেশি দামে বিভিন্ন পণ্য কিনতে হচ্ছে। তারা কষ্ট পাচ্ছেন। তাদের এই কষ্ট লাঘবের জন্যই ঢাকার বিভিন্ন বাজারসহ সারা দেশে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযানে গেলেই অতি মুনাফা অর্জনকারীরা ধরা পড়ছে। তারপরও ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যক্রমে কেউ খুশি না হলে বা কঠোর শাস্তি চাইলে আমাদের সহযোগিতায় আদালতে মামলা করতে পারেন।’ 

কয়েক বছর থেকেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব পড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে আরও বেশি প্রভাব পড়েছে। ডলারের অবমূল্যায়নের কারণে গত রমজানের পর ছোলার দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। তেলের দামও দফায় দফায় বাড়ছে। গত ৯ ডিসেম্বর লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা লিটার বিক্রি করা হচ্ছে। তারপরও বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না। বিভিন্ন বাজারের মুদি দোকানে ৫ লিটারের সয়াবিন বোতলজাত তেল পাওয়া গেলেও ১ ও ২ লিটারের তেলের বোতল সহজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

খাদ্যের দাম বাড়ানোর অজুহাতে করপোরেট প্রতিষ্ঠান ডিম, মুরগির দামও বাড়িয়েছে। এভাবে প্রত্যেকটা পণ্য ভোক্তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রথমবারের মতো ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজ- এই তিনটি কৃষিপণ্যের দাম বেঁধে দেয় সরকার। বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী খুচরা পর্যায়ে আলু ৩৫-৩৬ টাকা (হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭) এবং দেশি পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তারপরও ভোক্তাদের বেশি দামে কিনতে হয়। তবে সম্প্রতি নতুন আলু ও মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠায় দাম কিছুটা কমেছে। ভোক্তারা কম দামে বাজারে পাচ্ছেন। 

তবে আমনের মৌসুমেও চালের দাম লাগাম ছাড়া। সরকার আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার এবং নতুন ধান উঠলেও চালের দাম কমছে না। কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা যে যার মতো পণ্য বিক্রি করছে। ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে সরকার নিত্যপণ্যে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। বাজার সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় হয়ে উঠেছেন ভোক্তারা। বাড়তি দামের ব্যাপারে কেউ কোনো দায় নিচ্ছে না। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ- করপোরেট ও আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা যেভাবে ইচ্ছা চালের দাম বাড়াচ্ছে। কিন্তু মিলমালিকরা বলছেন, ধানের দাম বেশি। এ জন্য ভোক্তাদের বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে।