ঢাকা ৩ ফাল্গুন ১৪৩১, রোববার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
রোববার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩ ফাল্গুন ১৪৩১

খাতুনগঞ্জে এবার নিম্নমুখী ডালের বাজার

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৬ এএম
খাতুনগঞ্জে এবার নিম্নমুখী ডালের বাজার
চট্টগ্রাম মহানগরের আসকার দীঘিরপাড় এলাকায় একটি খুচরা দোকানে বিভিন্ন ধরনের ডাল। ছবি: মোহাম্মদ হানিফ

পেঁয়াজ, গম, মসলার পর খাতুনগঞ্জে এবার কমতে শুরু করেছে ডালের বাজার। পাইকারি এই বাজারে ছোলা, মসুর, মোটর, মাষকলাই, মুগসহ বিভিন্ন ধরনের ডালের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারটিতে  বিভিন্ন ডালের দাম কেজিপ্রতি ৩ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে। 

পাইকারি ডাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মসুর ডালের চাহিদা সব সময় বেশি থাকে। তবে শীতকালে ডালের চাহিদা কমে আসে। তার ওপর বিভিন্ন ধরনের ডালের আমদানিও বেড়েছে। তাই পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম কমে এসেছে। 

খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি দাম কেজিপ্রতি ১৩ টাকা ৩৯ পয়সা কমে প্রতি কেজি ছোলা ১০১ টাকা ৮২ পয়সা, কেজিতে ৩ টাকা কমে মসুর ডাল ৯৭ টাকা ও কেজিতে ৩ টাকা কমে প্রতি কেজি মোটর ডাল ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া মাষকলাই ডাল কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৬০ টাকা, আমদানি করা মুগডাল কেজিতে ২৫ টাকা কমে ১০৩ টাকা ও খেসারি ডাল কেজিতে ৫ টাকা কমে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক ভোগ্যপণ্য রয়েছে। ব্যবসায়ীরা তা খালাস করছেন। ফলে খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বেশ ভালো। দামও নিম্নমুখী। রোজায় ভোগ্যপণ্যের সরবরাহে কোনো ধরনের সংকট তৈরি হবে না। তবে পাইকারি বাজারে দাম কমে এলেও সে হিসাবে বেচাকেনা বাড়েনি। আমরা কিছুটা দুশ্চিন্তায় সময় পার করছি।’ 

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১৪ হাজার ৭৭১ টন ছোলা, ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬১৮ টন মসুর ডাল, ২ লাখ ২৩ হাজার ৫৯৬ টন মোটর ডাল খালাস হয়েছে। তা ছাড়া একই সময়ে এই বন্দর দিয়ে ৭ হাজার ১১১ টন মুগ ডাল ও ১২৫ টন মাষকলাই খালাস করেছেন ব্যবসায়ীরা। 

এর মধ্যে গত জুলাই মাসে ৫ হাজার ১৮৮ টন, আগস্টে ২ হাজার ২৩০ টন, সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ১৯৭ টন, অক্টোবরে ১ হাজার ২৭১ টন ও নভেম্বরে ৩ হাজার ৮৮৫ টন ছোলা খালাস হয়েছে।  
গত জুলাই মাসে ৪৫ হাজার ৪২৮ টন, আগস্টে ৯২ হাজার ৫৯৪ টন, সেপ্টেম্বরে ১৭ হাজার ৪৪০ টন, অক্টোবরে ৩৪ হাজার ৫৯৬ টন ও নভেম্বরে ৫ হাজার ৫৬০ টন মসুর ডাল খালাস হয়েছে। 
অন্যদিকে গত জুলাই মাসে ৪৮ হাজার ৩৮৮ টন, আগস্টে ৯ হাজার ৮ টন, সেপ্টেম্বরে ৪৮ হাজার ৩২৯ টন, অক্টোবরে ৫৭ হাজার ৩৩৫ টন ও নভেম্বরে ৬০ হাজার ৫৩৬টন মোটর ডাল খালাস হয়েছে। পাশাপাশি গত আগস্ট মাসে ১২৫ টন মাষকলাই খালাস করেছেন ব্যবসায়ীরা।  

তা ছাড়া গত জুলাইয়ে ৬০২ টন, আগস্টে ২ হাজার ৪২০ টন, সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ২৬৯ টন, অক্টোবরে ২ হাজার ১২০ টন ও নভেম্বরে ৭০০ টন মুগ ডাল খালাস হয়েছে। 

দপ্তরটির উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম খবরের কাগজকে বলেন, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানি অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন রকম ডাল, ফলমূল, খেজুর, মসলাপণ্য, ভোজ্যতেল আমদানি হচ্ছে। বন্দর দিয়ে খালাসও করে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এসব পণ্যের গুণগত মানও বেশ ভালো। আগামী দুই মাসে ভোগ্যপণ্যের আমদানি আরও বাড়বে। আশা করছি, রোজায় ভোগ্যপণ্যের কোনো ধরনের সংকট তৈরি হবে না।’ 

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন অস্থিরতার পর বর্তমানে পেঁয়াজের দর কমে এসেছে। মসলাপণ্য, ডালসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম পাইকারি বাজারে কমেছে বলে জানতে পেরেছি। তবে পর্যাপ্ত আমদানির পরও নানা অজুহাতে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেলের দাম আবার বাড়িয়েছেন। পণ্যটির দাম কেন বেড়েছে সেটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। পাশাপাশি পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরায় সুফল মিলছে না। তাই এখন থেকেই বাজার মনিটরিং করতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সংকট, উৎপাদন ঘাটতি

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৫ এএম
আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সংকট, উৎপাদন ঘাটতি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানা। খবরের কাগজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সংকট ও পুরোনো যন্ত্রপাতির কারণে উৎপাদন বন্ধ থাকে বেশির ভাগ সময়। ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে কারখানাটি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ লাখ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ৪৮ হাজার টন ইউরিয়া সার উৎপাদিত হয়েছে। কারখানাটি চালু রাখতে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি ও যন্ত্রপাতি সংস্কারের প্রয়োজন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি সঠিকভাবে চালু হলে লাভজনক হয়ে দেশের সার আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব।

আশুগঞ্জ সার কারখানা ১৯৮০ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার চরচারতলা এলাকায় মেঘনা নদীর তীরে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮১ সালের ১৫ ডিসেম্বর এটি পরীক্ষামূলকভাবে ইউরিয়া সার উৎপাদন শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৩ সালের জুলাই থেকে বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন শুরু হয়। গুণগত মানসম্পন্ন ইউরিয়া সার উৎপাদন করে আশুগঞ্জ সার কারখানা দ্রুত কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে সাড়ে ৭০০ সার ডিলারের মাধ্যমে সাতটি জেলার কৃষকদের মধ্যে ইউরিয়া সরবরাহ করা হয়।

যে সময় কারখানাটি চালু হয়, তখন এর দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১ হাজার ৬০০ টন। তবে যন্ত্রপাতির অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে কারখানাটি প্রতিদিন ১ হাজার ১৫০ টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে সক্ষম।

গ্যাস সংকটের কারণে বছরের অর্ধেক সময় কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ থাকে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ ছিল। শ্রমিকদের আন্দোলনের পর, ১৫ নভেম্বর গ্যাস সরবরাহ শুরু হলেও উৎপাদন শুরু হতে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এই গ্যাস সংকট ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বারবার ব্যর্থ হয়েছে কারখানাটি।

২০২০-২১ অর্থবছরে ২ লাখ ৪০ হাজার টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ লাখ ৪২ হাজার ৫৫৭ টন সার উৎপাদন হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯৬ হাজার ৪৬ টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৪২০ টন ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৮ হাজার ৪৫৩ টন ইউরিয়া সার উৎপাদন হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একটি চক্রের মাধ্যমে আশুগঞ্জসহ অন্য দেশীয় সার কারখানাগুলোর গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এতে বিদেশ থেকে সার আমদানি করে ব্যবসা শুরু করা হয়েছিল। এখনো আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাসের চাপ কম থাকায় উৎপাদন পর্যাপ্ত হয় না।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্যাস সরবরাহের জন্য বিসিআইসি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী চাপ দেওয়া হয়। তবে জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের সংকটের কারণে আশুগঞ্জ সার কারখানাকে প্রয়োজনীয় চাপ সরবরাহ করা সম্ভব হয় না।

আশুগঞ্জ সার কারখানার এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু কাউসার জানান, কারখানাটির কোনো আর্থিক দায় নেই। যদি সারা বছর গ্যাস সরবরাহ করা যায়, কিছু যন্ত্রপাতি নতুন করে সংযোজন করা যায়, তবে এটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারবে।

আশুগঞ্জ সার কারখানার অ্যামোনিয়া প্লান্টের ইনচার্জ মো. ফারুক হোসেন জানান, কারখানাটি ৪০ বছরেরও বেশি পুরোনো এবং গ্যাসের পাশাপাশি যন্ত্রপাতি সমস্যার মুখোমুখি। তবে বিসিআইসি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় এই সমস্যাগুলো সমাধান করা হচ্ছে। গ্যাসের চাপ বাড়লে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে, বলে আশাবাদী কারখানা কর্তৃপক্ষ।

ছোলার প্রচুর আমদানি, দামও কমেছে

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৬ এএম
ছোলার প্রচুর আমদানি, দামও কমেছে
ছবি: সংগৃহীত

রোজাদারের জন্য খেজুরের মতো ছোলাও ইফতারির জন্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হয়ে গেছে। অভিজাত পরিবার থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের মানুষেরও ইফতারির থালায় ছোলা থাকে। রমজান মাসে এর চাহিদা বেড়ে যায়। এ সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়ানোর সুযোগ নেয়।

গত রমজানে হঠাৎ কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে যায়। রমজান সামনে রেখে এবার প্রচুর ছোলা আমদানি হওয়ায় বাজারে ছোলার সরবরাহ বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আসন্ন রমজানে ছোলার দাম বাড়বে না। বরং কমবে। 

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় নেমেছে। এক মাসের ব্যবধানে ১০ থেকে ১৭ শতাংশ কমেছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে বার্ষিক ছোলার চাহিদা দেড় লাখের মতো। সে হিসাবে মাসে লাগে সাড়ে ১২ হাজার টন। কিন্তু দেশে খুবই কম উৎপাদন হয়। আমদানি করেই চাহিদা মেটাতে হয়। রমজানে চাহিদা দ্বিগুণ অর্থাৎ ২৫ হাজার টনে দাঁড়ায়। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘নাবিল গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপসহ চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা ছোলা আমদানি করে। তারা দাম বাড়ালেই বাজারে বেড়ে যায়। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবারে আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কমেছে ছোলার। সরকারি সংস্থা টিসিবিও বলছে, গত বছরের রমজানের আগে ৮৫-৯০ টাকা কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে। কিন্তু রমজানে বেড়ে ৯৫ থেকে ১১০ টাকায় ঠেকে। রমজান শেষে চাহিদা কমে গেলেও দাম কমেনি। বরং ডলারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে ছোলার দাম ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় পৌঁছে। টিসিবির তথ্য বলছে, জানুয়ারি মাসেও ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে ছোলা। কিন্তু রমজান ঘনিয়ে আসায় আমদানিও প্রচুর বেড়েছে। এ জন্য দাম কমতে শুরু করেছে। পাইকারি পর্যায়ে ৯৫ টাকায় নেমেছে। সেই ছোলা বাজারে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।  

অস্ট্রেলিয়া থেকে চাহিদার ৮০ শতাংশ ছোলা আমদানি হয়। বাকি ছোলা ভারত, পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, রাশিয়া, ইউক্রেন, তানজানিয়া, মায়ানমার ও কানাডা থেকে আমদানি করা হয়। আমদানিকারকরা এবার বিশ্ববাজার থেকে কম দামে ছোলা সংগ্রহ করছে। এ জন্য দামও কমেছে। 

গত বছর থেকেই নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন হয়ে পড়ে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। তাই আসন্ন রোজায় আট ধরনের খাদ্যপণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে ন্যূনতম পর্যায়ে নগদ মার্জিন রাখতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত ১৭ জানুয়ারি এক নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশ দেয়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মতো ব্যাংক-গ্রাহকের সম্পর্কের ভিত্তিতে নগদ এ মার্জিনের হার নির্ধারণ করতে হবে। ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি এবং খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে। 

অভ্যন্তরীণ বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমদানির ঋণপত্র খোলায় অগ্রাধিকার দিতে বলা হয় নির্দেশনায়। তা কাজে লাগিয়ে আমদানিকারকরা প্রচুর ছোলা আনেন। 

আগামী ১ মার্চ থেকে রোজার মাস শুরু হতে পারে। এই সময়ে ইফতারের জন্য বিভিন্ন পদের খাবার তৈরিতে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের চাহিদা বছরের অন্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে বাড়ে ছোলার চাহিদাও। 

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এবং রাজধানীর লালবাগের পাইকারি বাজারেও কমেছে ছোলার দাম। মাস খানেক আগে পাইকারিতে প্রতি মণ ছোলার দাম ছিল ৪ হাজার ২০০ টাকা, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ টাকায়। অর্থাৎ মণে কমেছে ৫০০ টাকা। কেজিতে ১২ টাকার বেশি। তার প্রভাবে খুচরা বাজারেরও ছোলার দাম কমেছে।

চট্টগ্রামের এবারে প্রচুর ছোলা আমদানি হয়েছে। বাজারে ছোলার কোনো সংকট নেই। সরবরাহও আগের চেয়ে বেড়েছে। নারায়নগঞ্জের নিতাইগঞ্জ, ঢাকার লালবাগের রহমতগঞ্জ থেকেও পাইকারি পর্যায়ে ছোলা বিক্রি হয়। 

এ ব্যাপারে রহমতগঞ্জের ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ বলেন, ‘আমরা দাম বাড়াই না। আমদানিকারকরা বেশি দামে বিক্রি করলে আমাদের বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হয়। কেজিতে সামান্য লাভ থাকে। এবারে রমজান উপলক্ষে প্রচুর ছোলা আমদানি হয়েছে। আগে বেশি দামে বিক্রি করা হলেও বর্তমানে ৩ হাজার ৭০০ টাকা বস্তা (৪০ কেজি), ৯৫ টাকার মধ্যে ছোলা বিক্রি করা হচ্ছে।’ 

পাইকারিতে দাম কমায় খুচরা বাজারেও কমতে শুরু করেছে। নিউমার্কেটের সাথী এন্টারপ্রাইজের মো. মোক্তার হোসেন বলেন, ‘আগের চেয়ে ছোলার দাম কমেছে। এক মাস আগেও ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করতাম। পাইকারিতে কমেছে। এ জন্য আমরাও কম দামে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।’ 

মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের মনির স্টোরের আনোয়ার হোসেনও বলেন, ‘আগের চেয়ে ছোলার দাম কমেছে, ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। কম দামে কেনা। তাই কম দামেই বিক্রি করতে পারছি।’ কৃষি মার্কেটের মুদি বিক্রেতা নাইম শেখও জানান, আগের চেয়ে কমেছে ছোলার দাম। বর্তমানে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। সেটা আগে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি ছিল। 

কারওয়ান বাজারের মেসার্স একতা ট্রেডার্সের বিক্রয়কর্মী রায়হান বলেন, ‘এক মাস ধরে ধাপে ধাপে কমছে ছোলার দাম। বর্তমানে ১০০ টাকার মধ্যেই বিক্রি করা হচ্ছে।’ একই বাজারের খুচরা বিক্রেতা ফরিদগঞ্জ স্টোরের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গত রমজানের আগে কম দামে ৮০-৯০ টাকা কেজি ছোলা বিক্রি করেছি। রমজানে বেড়ে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়। রমজানের পর আরও বেড়ে যায়। তবে কয়েক দিন ধরে কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।’  

শুধু বড় বড় বাজারে নয়, বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দোকানেও কম দামে ছোলা বিক্রি করা হচ্ছে বলে খুচরা বিক্রেতারা জানান। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের জনতা মার্কেটের আক্তার হোসেনও বলেন, ‘মাস খানেক থেকে ছোলার দাম কমেছে। আগে ১২০ টাকার বেশি বিক্রি করা হলেও কয়েক দিন ধরে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।’

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দিকনির্দেশনা নেই

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৭ এএম
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দিকনির্দেশনা নেই
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে নীতিগত মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রত্যাশিত দিকনির্দেশনা নেই বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট বা বিল্ড। সংস্থাটির মতে, শুধু তাই নয়, এই মুদ্রানীতির কারণে মূল্যস্ফীতি দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

সম্প্রতি গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে গবেষণা সংস্থা বিল্ড।

এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্ধবার্ষিক মুদ্রানীতির মাধ্যমে যে দিকনির্দেশনা দিয়েছে, তার প্রধান লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ-ব্যবস্থা পুনর্গঠন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের বৃদ্ধির প্রবণতা মোকাবিলা করা। এতে মূলত অর্থবাজারের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, যা এই মুদ্রানীতির ভালো দিক, তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে এবারের মুদ্রানীতি খুব বেশি কার্যকর হবে না।  

বিল্ডের মতে, নতুন ও চলমান বিনিয়োগের জন্য বেসরকারি খাত স্বল্প সুদে ঋণ প্রত্যাশা করেছিল। নীতি সুদহার ১০ শতাংশ রাখায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি করবে, কাঁচামাল আমদানি ব্যয় বাড়াবে, মজুরি বাড়াবে, যন্ত্রপাতির ব্যয় বৃদ্ধি করবে, যা নীতিগতভাবে মূল্যস্ফীতি কমানোর কৌশলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শুধু উচ্চ সুদের হার দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়; সরবরাহ সংকট, আমানতকারীদের আস্থার অভাবসহ অন্যান্য কারণও বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। যেন প্রতিযোগিতামূলক বাজার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে সমন্বিতভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। 

সংস্থাটির মতে, ২০২৪ ও ২০২৫ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে বলে মুদ্রানীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ২০২৫ অর্থবছরের দ্বিতিয়ার্ধের মুদ্রানীতির মাধ্যমে কীভাবে এই সুবিধা কাজে লাগানো হবে সে বিষয়ে কোনো নতুন নীতিগত নির্দেশনা স্পষ্ট করেনি।

সম্প্রসারিত রাজস্ব নীতি ও সংকোচিত মুদ্রানীতির প্রয়োগ সত্ত্বেও মুদ্রাস্ফীতি এখনো ১০ শতাংশের ওপরে রয়েছে, যদিও ২০২৪ সালের ডিসেম্বর ও ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এটি কিছুটা কমেছে, যা প্রধানত খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমার কারণেই হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী দিনে মুদ্রাস্ফীতি ৭-৮ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। 

বিল্ডের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজম্যান্ট সুশৃঙ্খল না থাকা, মাঠপর্যায়ে চাঁদাবাজির আধিপত্য, ব্যাপক ইনফরমাল অর্থনীতির উপস্থিতি, রাজনৈতিক খাতে কনফিডেন্সের অভাব মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে না নিয়ে আসার পেছনে কাজ করছে। বর্তমানে ভোগ্যপণ্যের বাজার মাত্র ৮-৯টি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে অলিগোপলি বাজার কাঠামো তৈরি হয়েছে। উচ্চ সুদের হার উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি করছে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দিচ্ছে। আবার সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থনৈতিক শুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশের অর্থনীতির ৪২ শতাংশ হচ্ছে ইনফরমাল বা অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি।  অন্যদিকে সম্প্রতি ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক নীতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে যা মূল্যস্ফীতির একটি কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এনবিআর, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা প্রয়োজন। 

এতে বলা হয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার ১০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। যেখানে স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) ১১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৮ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারিত হয়েছে, যার ফলে নীতিগত সুদের হার পরিসীমা (+-)১৫০ বেসিস পয়েন্ট নির্ধারিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সুদহার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য উচ্চ সুদহার নির্ধারণে নীতিগত নির্দেশনা দিচ্ছে, যেখানে স্প্রেড রেট প্রায় ৬ শতাংশ। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় এই স্প্রেড ধাপে ধাপে কমানো যেতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজার পরিচালনার জন্য ‘ক্রলিং পেগ’ বিনিময় হার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং আন্তব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ বন্ধ রেখেছে, যাতে রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি বাড়ানো যায়। তবে ব্যাংকগুলোর জন্য স্থিতিশীল বিনিময় হার বজায় রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ আন্তব্যাংক বাজারের নির্ধারিত হার অন্যান্য বাজারমূল্যের তুলনায় কম। বাংলাদেশ বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহের জন্য ছয়টি ভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করছে, যা নির্দিষ্ট মুদ্রাভিত্তিক বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলে বাংলাদেশ ব্যাংক সহজেই চাহিদা ও সরবরাহ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বৈদেশিক সম্পদ (এনএফএ) ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে, যার প্রধান কারণ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ। চলমান বাজেটে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন টাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা সংশোধিত ৯৯ হাজার কোটি টাকার তুলনায় অনেক বেশি। রাজস্ব ঘাটতি প্রথমার্ধে ৫৮ হাজার কোটি টাকা হয়েছে (এনবিআর তথ্য অনুসারে)। এমতাবস্থায় স্থানীয় উৎস থেকে ঘাটতি পূরণ করাই মূল চ্যালেঞ্জ। কারণ ব্যাংকিং খাতে আমানতের পরিমাণ কমার প্রবণতা রয়েছে। মুদ্রানীতিতে এই বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

এ ছাড়া সব শেষ ডিসেম্বর মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার (৯ দশমিক ৮ শতাংশ) নিচে রয়েছে।  শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ২০২৩-২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে ৮ দশমিক ২২ শতাংশ  থাকলেও, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-অক্টোবর) তা ২ দশমিক ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির প্রবণতা ২৫ দশমিক ১ শতাংশ কমে ১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা বিনিয়োগের ধীরগতির ইঙ্গিত দেয়। কর্মসংস্থান পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী কৌশল প্রণয়ন করা প্রয়োজন, যা মুদ্রানীতিতে উল্লেখ নেই।

দোকানে ভোজ্যতেল নেই, বেড়েছে মুরগি-সবজির দাম

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ পিএম
দোকানে ভোজ্যতেল নেই, বেড়েছে মুরগি-সবজির দাম
ছবি: সংগৃহীত

‘২০০ কার্টনের দাম দিলেও দুই দিন পর তেল পাওয়া গেছে ৩০ কার্টন। সঙ্গে পোলাওয়ের চাল, সরিষার তেল ধরিয়ে দেয়। পাঁচ লিটারের বোতল পাওয়া গেলেও এক ও দুই লিটারের তেল পাই না। দাম বাড়িয়েও কোম্পানি সয়াবিন তেল সরবরাহ করে না। এ জন্য আমরাও ভোক্তাদের দিতে পারি না। বিক্রি কমে গেছে। খুবই প্যারায় (যন্ত্রণা) আছি।’ এভাবেই রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইউসুফ জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী ইউসুফ আলী তেলের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শুধু এই ব্যবসায়ী নন, অন্য বাজারের খুচরা বিক্রেতাদেরও একই ক্ষোভ দেখা গেছে। 

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) আগের মতো চড়া দামে চাল বিক্রি হতে দেখা গেছে। মুরগির দামও কমেনি। মাঘের শীত বিদায় নেওয়ায় সবজির দাম একটু বেড়েছে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

দুই মাস আগেও বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও হয়ে যায়। এরপর ৯ ডিসেম্বর সরকার লিটারে দাম ৮ টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত তেলের দর ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করে। ওই দিন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেছিলেন, ‘তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করি বাজারে আর তেলের ঘাটতি হবে না।’ কিন্তু দুই মাস চলে গেলেও সংকট কাটেনি। 

বিভিন্ন ভোজ্যতেল কোম্পানি বাজারে তেল সরবরাহ কমিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে খুচরা বিক্রেতারা সহজে তেল পাচ্ছেন না। রমজান মাস ঘনিয়ে আসায় সরবরাহ কমিয়ে মিলমালিকরা আবারও তেলের দাম বাড়ানোর ফন্দি আঁটছেন। কোনো কোনো খুচরা বিক্রেতা তেল পেলেও কোম্পানির প্রতিনিধিরা সঙ্গে ডাল, চালও ধরিয়ে দিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের অনন্ত স্টোরের স্বত্বাধিকারী নুরুল হুদা খবরের কাগজকে বলেন, ‘দোকানে তেল নেই। রাখি না। কারণ তেলের সঙ্গে পোলাওয়ের চাল, সরিষার তেল, আটা ধরিয়ে দিচ্ছে। এসব তেমন চলে না। এভাবে ব্যবসা করা যায় না।’ 

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কোম্পানি থেকে শর্ত দিয়ে পণ্য বিক্রি করবে- এ ব্যবস্থা কোন আইনে আছে? সরকারের উচিত এ বিষয়ে নজর দেওয়া।’ এই বাজারের মনির স্টোরের আনোয়ার হোসেনেরও একই বক্তব্য। এভাবে ব্যবসা হয় না। সামনে রমজান। এ জন্য কোম্পানি লুকোচুরি খেলা শুরু করেছে। কয়দিন পরপর দুই-এক কার্টন দিলেও তারপর আর খবর নেই। 

এদিকে কারওয়ান বাজারেও দেখা গেছে একই চিত্র। এই বাজারের কিচেন মার্কেটের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় অসংখ্য মুদির দোকান। ইয়াছিন স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. ইয়াসিন আলী বলেন, ‘তেল আছে। আবার নেই। এক কার্টন (২০ লিটার) এক দিন পাওয়া গেলেও সপ্তাহজুড়ে কোনো খবর থাকে না। তীর, ফ্রেশ, পুষ্টি কোনো তেলই নেই। টাকা দিয়েও পাই না। সামনে রমজান। তাই দাম বাড়ানোর খেলা চলছে।’

একই বাজারের ফরিদগঞ্জ স্টোরের মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সিটি গ্রুপের তীর ব্র্যান্ডের তেল নেই। এডিবল অয়েল কোম্পানির রূপচাঁদা ও টিকে গ্রুপের পুষ্টির ডিলাররা তেলের সঙ্গে চাল, ডাল ও সুজি ধরিয়ে দিচ্ছেন।’

একই বাজারের জব্বার স্টোরের বিক্রয়কর্মী গনি মিয়া, আল আমিন স্টোরের অন্তর বিশ্বাসসহ অসংখ্য খুচরা বিক্রেতা অভিযোগ করে জানান, দুই মাসও হয়নি দাম বাড়ানো হয়েছে। তার পরও কোম্পানির ডিলার ও পাইকারি বিক্রেতারা ঠিকমতো তেল দেন না। পাঁচ লিটারের গায়ের যে মূল্য (৮৫০ টাকা), সেই দামেই কিনতে হচ্ছে। কেউ কারও কথা শোনে না। সরকারও দেখে না। সাংবাদিকরা লিখলেও কোনো কাজ হয় না।’ 

রাজধানীর হাতিরপুল বাজারের মাসুদ স্টোরের মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর আগে বিভিন্ন কোম্পানি সরবরাহ কমিয়ে দেয়। কিছুদিন আগেই দাম বেড়েছে। সামনে রমজান। আবার সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ 

নিউ মার্কেটসহ অন্য বাজারের খুচরা বিক্রেতাদেরও একই অভিযোগ, এভাবে ব্যবসা করা যায় না। সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি করা দরকার। 

খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ব্র্যান্ডের ডিলার মেসার্স মিনু ট্রেডার্সের বিপ্লব কুমার বলেন, ‘আমি ফ্রেশসহ অন্য কোম্পানিরও সয়াবিন তেল বিক্রি করি। চাহিদা বেশি। কিন্তু আগের মতো তেল পাওয়া যায় না। এ জন্য খুচরা বিক্রেতাদের চাহিদামতো তেল দিতে পারছি না।’ 

এ ব্যাপারে ভোজ্যতেল উৎপাদনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও টিকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা হায়দার সম্প্রতি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের কোম্পানি থেকে তেল সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। আমরা শর্ত দিয়ে ভোক্তাদের কাছে কোনো তেল বিক্রি করি না। স্বাভাবিক নিয়মেই ব্যবসা করা হচ্ছে।’ 

সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে

মাঘ মাসের শেষে সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে বলে জানান সবজি বিক্রেতারা। তারা বলেন, বেগুনের কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শিম ২০ থেকে ৫০, কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১০০, টমেটো ৩০ থেকে ৬০, পেঁপে ৪০, শসা ও গাজর ৪০ থেকে ৫০, ফুলকপির পিস ২০ থেকে ৩০, বাঁধাকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি, লাউয়ের পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল বিভিন্ন বাজারে আলু ২০ টাকা কেজি, পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০, দেশি আদা ১২০ থেকে ১৬০, আমদানি করা আদা ২২০, দেশি রসুন ১৬০, আমদানি করা আদা ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। 

সপ্তাহের ব্যবধানে আগের মতোই চড়া দামে চাল বিক্রি হয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বলেন, বর্তমানে মিনিকেটের কেজি ৭২-৮৫ টাকা, আটাশ চাল ৬২-৬৫ টাকা ও মোটা চাল ৫৪-৫৬ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। মুদি দোকানিরা বলেন, রমজান ঘনিয়ে এলেও বাড়েনি ছোলা ও চিনির দাম। ছোলার দাম কমে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি, মসুর ডাল ১১০ থেকে ১৩৫, মুগ ডাল ১৮০, চিনি ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

বাড়তি দামে মুরগি বিক্রি

মাংস বিক্রেতারা জানান, আগের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগি। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২০ থেকে ৩৩০ এবং দেশি মুরগি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংসও আগের মতো ৭০০-৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ডিমও গত সপ্তাহের মতো ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা ডজন বিক্রি করতে দেখা গেছে।

জুলাই-জানুয়ারি এডিপি ৫ বছরে সর্বনিম্ন অগ্রগতি

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৯ পিএম
৫ বছরে সর্বনিম্ন অগ্রগতি
ছবি: সংগৃহীত

চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জুলাই-জানুয়ারি মাসে এক শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দুই শতাংশের নিচে রয়েছে এনবিআর। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগসহ ৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগও ১০ শতাংশের নিচে। এভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উন্নয়ন কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। সাত মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাত্র ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এই অগ্রগতি পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র পাওয়া গেছে। 

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এডিপি বাস্তবায়নের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে আইএমইডি। 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- গত সাত মাসে ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খরচ করতে পেরেছে ৫৯ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ। গতবার একই সময়ে খরচের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা বা ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এডিপিতে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম টাকা খরচ হয়েছে এই সময়ে।

সংশ্লিস্টরা বলছেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার পরিবর্তনের পর ঠিকাদার ও প্রকল্প পরিচালকদের খুঁজে না পাওয়ার কিছুর প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। চলতি বছরে বাকি আছে মাত্র ৫ মাস। এই সময়ে খরচ করতে হবে ২ লাখ ১৮ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। কারণ চলতি অর্থবছরে মোট উন্নয়ন বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। ১ হাজার ৩৫৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, কোভিডের বছরেও জুলাই-জানুয়ারিতে (২০২০-২১ অর্থবছর) ৬১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল বা বাস্তবায়ন হয়েছিলো ২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থছরে ৭১ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা  খরচ বা বাস্তবায়ন হয়েছিল ৩০ দশমিক ২১ শতাংশ। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭২ হাজার ৯০ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল বা বাস্তবায়ন হয়েছিলো ২৮ দশমিক ১৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৪ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে সর্বোচ্চ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বা ৭৮ শতাংশ। তারা খরচ করেছে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে স্থানীয় সরকার বিভাগ খরচ করেছে ১১ হাজার ২৫১ কোটি টাকা বা ২৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে এডিপি।

জাহাঙ্গীর আলম/এমএ/