
পেঁয়াজ, গম, মসলার পর খাতুনগঞ্জে এবার কমতে শুরু করেছে ডালের বাজার। পাইকারি এই বাজারে ছোলা, মসুর, মোটর, মাষকলাই, মুগসহ বিভিন্ন ধরনের ডালের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারটিতে বিভিন্ন ডালের দাম কেজিপ্রতি ৩ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
পাইকারি ডাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মসুর ডালের চাহিদা সব সময় বেশি থাকে। তবে শীতকালে ডালের চাহিদা কমে আসে। তার ওপর বিভিন্ন ধরনের ডালের আমদানিও বেড়েছে। তাই পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম কমে এসেছে।
খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি দাম কেজিপ্রতি ১৩ টাকা ৩৯ পয়সা কমে প্রতি কেজি ছোলা ১০১ টাকা ৮২ পয়সা, কেজিতে ৩ টাকা কমে মসুর ডাল ৯৭ টাকা ও কেজিতে ৩ টাকা কমে প্রতি কেজি মোটর ডাল ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া মাষকলাই ডাল কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৬০ টাকা, আমদানি করা মুগডাল কেজিতে ২৫ টাকা কমে ১০৩ টাকা ও খেসারি ডাল কেজিতে ৫ টাকা কমে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক ভোগ্যপণ্য রয়েছে। ব্যবসায়ীরা তা খালাস করছেন। ফলে খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বেশ ভালো। দামও নিম্নমুখী। রোজায় ভোগ্যপণ্যের সরবরাহে কোনো ধরনের সংকট তৈরি হবে না। তবে পাইকারি বাজারে দাম কমে এলেও সে হিসাবে বেচাকেনা বাড়েনি। আমরা কিছুটা দুশ্চিন্তায় সময় পার করছি।’
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১৪ হাজার ৭৭১ টন ছোলা, ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬১৮ টন মসুর ডাল, ২ লাখ ২৩ হাজার ৫৯৬ টন মোটর ডাল খালাস হয়েছে। তা ছাড়া একই সময়ে এই বন্দর দিয়ে ৭ হাজার ১১১ টন মুগ ডাল ও ১২৫ টন মাষকলাই খালাস করেছেন ব্যবসায়ীরা।
এর মধ্যে গত জুলাই মাসে ৫ হাজার ১৮৮ টন, আগস্টে ২ হাজার ২৩০ টন, সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ১৯৭ টন, অক্টোবরে ১ হাজার ২৭১ টন ও নভেম্বরে ৩ হাজার ৮৮৫ টন ছোলা খালাস হয়েছে।
গত জুলাই মাসে ৪৫ হাজার ৪২৮ টন, আগস্টে ৯২ হাজার ৫৯৪ টন, সেপ্টেম্বরে ১৭ হাজার ৪৪০ টন, অক্টোবরে ৩৪ হাজার ৫৯৬ টন ও নভেম্বরে ৫ হাজার ৫৬০ টন মসুর ডাল খালাস হয়েছে।
অন্যদিকে গত জুলাই মাসে ৪৮ হাজার ৩৮৮ টন, আগস্টে ৯ হাজার ৮ টন, সেপ্টেম্বরে ৪৮ হাজার ৩২৯ টন, অক্টোবরে ৫৭ হাজার ৩৩৫ টন ও নভেম্বরে ৬০ হাজার ৫৩৬টন মোটর ডাল খালাস হয়েছে। পাশাপাশি গত আগস্ট মাসে ১২৫ টন মাষকলাই খালাস করেছেন ব্যবসায়ীরা।
তা ছাড়া গত জুলাইয়ে ৬০২ টন, আগস্টে ২ হাজার ৪২০ টন, সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ২৬৯ টন, অক্টোবরে ২ হাজার ১২০ টন ও নভেম্বরে ৭০০ টন মুগ ডাল খালাস হয়েছে।
দপ্তরটির উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম খবরের কাগজকে বলেন, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানি অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন রকম ডাল, ফলমূল, খেজুর, মসলাপণ্য, ভোজ্যতেল আমদানি হচ্ছে। বন্দর দিয়ে খালাসও করে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এসব পণ্যের গুণগত মানও বেশ ভালো। আগামী দুই মাসে ভোগ্যপণ্যের আমদানি আরও বাড়বে। আশা করছি, রোজায় ভোগ্যপণ্যের কোনো ধরনের সংকট তৈরি হবে না।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন অস্থিরতার পর বর্তমানে পেঁয়াজের দর কমে এসেছে। মসলাপণ্য, ডালসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম পাইকারি বাজারে কমেছে বলে জানতে পেরেছি। তবে পর্যাপ্ত আমদানির পরও নানা অজুহাতে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেলের দাম আবার বাড়িয়েছেন। পণ্যটির দাম কেন বেড়েছে সেটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। পাশাপাশি পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরায় সুফল মিলছে না। তাই এখন থেকেই বাজার মনিটরিং করতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’