ঢাকা ৯ চৈত্র ১৪৩১, রোববার, ২৩ মার্চ ২০২৫
English

সিংগাইরে আড়াই কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৪ এএম
সিংগাইরে আড়াই কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা
সিংগাইর উপজেলার ফোর্ডনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামে ফুলের বাগান পরিচর্যা করছেন এক চাষি। খবরের কাগজ

পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ফুলচাষিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। উপজেলার জয়মন্টপ, ধল্লা, শায়েস্তা ও তালেবপুর ইউনিয়নে ফুল চাষ হচ্ছে। চাষিরা ভালো ফলনের আশা করছেন। এমনিতে ফুলের বাজার বেশ ভালো। তবে বিদেশি ফুলের আমদানির কারণে তারা উদ্বিগ্ন। চলতি মাসে ফুলচাষীরা প্রায় আড়াই কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করছেন।

সিংগাইর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে এগিয়ে যাচ্ছে সিংগাইর উপজেলা। সাভারের বিরুলিয়া কিংবা যশোরের গদখালীর মতো এখানে বড় পরিসরে গোলাপ, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি ও স্টারের মতো জনপ্রিয় ফুল চাষ হচ্ছে। বর্তমানে উপজেলার জয়মন্টপ, ধল্লা, শায়েস্তা ও তালেবপুর ইউনিয়নের আট থেকে ১০ গ্রামে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে ১৬ হেক্টর জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ হয়েছে। বাকি চার হেক্টর জমিতে গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি ও স্টারের মতো ফুল রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ফুল চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ ফুল সংগ্রহ করে তা দেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠানোয় ব্যস্ত আছেন।

ধল্লা ইউনিয়নের ফোর্ডনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাবুল হোসেন সিংগাইরের অন্যতম সফল ফুলচাষি। ১৮ বছর আগে মাত্র দুই বিঘা জমিতে ফুল চাষ শুরু করেছিলেন তিনি। এখন তার ফুলের খেতের পরিমাণ ২৫ বিঘা। বাবুল বলেন, ‘এই মৌসুমে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। তাই আমরা আরও বেশি শ্রম দিয়ে ফুলের যত্ন নিচ্ছি। এবার ফলন ভালো হয়েছে। বাজারও ভালো। আশা করছি, লাভবান হব।’

বাবুলের মতো আরও ২০-২৫ জন কৃষক বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করছেন। জয়মন্টপ, ধল্লা, শায়েস্তা ও তালেবপুর ইউনিয়নে ফুল চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
জয়মন্টপের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি সাত বছর ধরে তিন বিঘা জায়গায় চায়না গোলাপ ফুল চাষ করছি। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ফুলের ফলন ভালো হয়েছে। এখন প্রতি পিস গোলাপ বিক্রি করছি ৩০ টাকায়, আর ক্যাপ পরানো গোলাপ বিক্রি করছি ৪৫-৫০ টাকায়।’

ফোর্ডনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামের তরুণ চাষি সবুজুর রহমান বলেন, ‘আমি ৫২ শতাংশ জায়গায় সাদা ও হলুদ জাতের চন্দ্রমল্লিকা ফুলের আবাদ করেছি। এসব গাছের বীজ ভারত থেকে আনতে হয়। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। বাজার ঠিক থাকলে খরচ বাদ দিয়ে দেড় লাখ টাকা লাভ হবে।’

একই গ্রামের ফুলচাষি তুহিন বলেন, ‘দেড় বিঘা জায়গায় জিপসি ফুলের আবাদ করেছি। ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এই খেত থেকে ৩০-৪০ হাজার টাকা লাভ হবে। আমাদের ফুল ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রি হয়।’

তবে চাষিদের একটি উদ্বেগ রয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা ফুলের কারণে স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। জয়মন্টপের কানাইনগর গ্রামের আনোয়ার বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসের এই তিনটি দিবসে সবচেয়ে বেশি ফুল কেনাবেচা হয়। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, ভারত ও চায়না থেকে যেন কোনো ফুল আমদানি না হয়। যদি আমদানি না হয়, তাহলে আমরা লাভবান হব।’

সিংগাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, ‘অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ফুল চাষ এখানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রাজধানীর কাছে হওয়ায় পরিবহন খরচ কম। বাজারজাতকরণ সহজ হওয়ায় চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই আড়াই কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করা হচ্ছে।’

মার্চের ২২ দিনে ২৯ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৯:০২ পিএম
আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৯:১৯ পিএম
মার্চের ২২ দিনে ২৯ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স
ছবি: সংগৃহীত

ঈদ উপলক্ষে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বেড়েছে। চলতি মাস মার্চের ২২ দিনে রেমিট্যান্স দেশে এসেছে প্রায় আড়াই বিলিয়ন (২৪৪ কোটি) ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (ডলারপ্রতি ১২২ টাকা হিসাব ধরে) এর পরিমাণ ২৯ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকার বেশি। এই হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ১১ কোটি ডলার বা ১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। এ ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে মার্চ মাসে প্রবাসী আয়ের নতুন রেকর্ড হতে পারে।

এবারের মার্চে রেমিট্যান্স ৩ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করতে পারে, যা দেশে রেমিট্যান্সের নতুন রেকর্ড হবে। এর আগে, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স (প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার) আসে গত ডিসেম্বরে এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে ফেব্রুয়ারিতে (প্রায় ২৫৩ কোটি ডলার)। 
রবিবার (২৩ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গত ৫ আগস্টের পর নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দেশের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন হওয়ার পর প্রবাসী আয়ের গতি বাড়ে। একই সঙ্গে কমে গেছে হুন্ডি ব্যবসা এবং অর্থ পাচার। বর্তমানে, ব্যাংকগুলোতে খোলাবাজারের মতোই রেমিট্যান্সের ডলার পাওয়া যাচ্ছে, যার ফলে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী।

মার্চের ২২ দিনে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো মাধ্যমে এসেছে ৫৩ কোটি ডলার, বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকের মধ্যে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে প্রায় ২০ কোটি ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৭০ কোটি ৬৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার, আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার।

তবে, এই সময়কালে ৭টি ব্যাংকে রেমিট্যান্স আসেনি। এই ব্যাংকগুলো হলো- রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), বিশেষায়িত খাতের রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসরকারি খাতের পদ্মা ব্যাংক পিএলসি ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক।

এছাড়াও মার্চের ২২ দিনে বিদেশি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও উরি ব্যাংকের মাধ্যমেও দেশে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৮ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসের চেয়ে ৩৫৫ কোটি ডলার বেশি।

এমএ/

অভিনেতা মাহফুজ ও তার স্ত্রীসহ ৪ জনের ব্যাংক হিসাব তলব

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৮:২৮ পিএম
অভিনেতা মাহফুজ ও তার স্ত্রীসহ ৪ জনের ব্যাংক হিসাব তলব
অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ ও তার স্ত্রী ইশরাত জাহান কাদের

অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ ও তার স্ত্রী ইশরাত জাহান কাদের, শ্বশুর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও তার স্ত্রী শরীফা কাদেরের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

রবিবার (২৩ মার্চ) এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল থেকে পাঠানো চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

চিঠিতে তাদের নিজ নামে কিংবা তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা হিসাবের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সাত কার্যদিবসের মধ্যে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে যেকোনো মেয়াদি আমানত হিসাব, সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, লকার বা ভল্ট, সঞ্চয়পত্র বা অন্য যেকোনো ধরনের সেভিংস ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে হালনাগাদ বিবরণী পাঠানোর অনুরোধ করা হলো।

একই দিনে জি এম কাদের ও তার স্ত্রী শরীফা কাদেরের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করতে চিঠি দেয় এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল।

অন্যদিকে গত ২০ মার্চ থেকে চাঁদাবাজি, মনোনয়ন বাণিজ্য ও দলীয় ফান্ডের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) ১৯৯৬ সাল থেকে বিভিন্ন আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯-২০১৪ সালে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। 

পায়রা বন্দরের প্রকল্পটি চাইলেও বন্ধ করতে পারব না: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩৯ পিএম
আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৫:৪১ পিএম
পায়রা বন্দরের প্রকল্পটি চাইলেও বন্ধ করতে পারব না: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
একনেক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ছবি: খবরের কাগজ

পায়রা বন্দরকে দেশের অর্থনীতির বিষফোঁড়া আখ্যায়িত করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘আমরা পায়রা বন্দরের প্রকল্পটি বন্ধ করতে চাইলেও পারব না। কারণ এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অনেক খরচ করা হয়েছে।’ 

রবিবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

সভায় পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনীসহ ১৫টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় ১৫টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২১ হাজার ১৩৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা, বিদেশি ঋণ ছয় হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪০৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘এ বন্দরের কারণে অনেক জমি নষ্ট হয়েছে। সুন্দরবন ধ্বংস হয়েছে। এ বছর ১০টি নদী রক্ষায় একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। ১০টি গুরুত্বপূর্ণ নদী বাঁচাতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ নিয়েছে। তাতে বগুড়ার করতোয়া নদী, উত্তরবঙ্গের আহট নদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীসহ অনেক মৃতপ্রায় নদীকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

একনেক সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বরাষ্ট্র এবং কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, খাদ্য এবং ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা।

জাহাঙ্গীর/সালমান/

দিনাজপুরে ঈদ উপলক্ষে দর্জিপাড়ায় বাড়ছে ব্যস্ততা

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৫ এএম
আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০১:২৮ পিএম
দিনাজপুরে ঈদ উপলক্ষে দর্জিপাড়ায় বাড়ছে ব্যস্ততা
জামা তৈরির কাজ করছেন একজন দর্জি। খবরের কাগজ

ঈদের সময় দর্জির কাজ বেড়ে যায়। নতুন জামা তৈরি করতে দর্জিরা ব্যস্ত সময় পার করেন। যদিও আগের তুলনায় জামা তৈরি করার অর্ডার কমেছে। তবে মেয়েদের জামা তৈরিতে ব্যস্ততা বেশি। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, দিনাজপুরের দর্জির দোকানগুলোতে ততই ভিড় বাড়ছে।

দিনাজপুরে এ বছর মেয়েদের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত দর্জিরা। কাপড়ের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও নতুন জামা তৈরির জন্য অনেকেই দর্জির কাছে ছুটছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দর্জিরা কাজ করছেন। শবে বরাত থেকেই নতুন জামা তৈরির অর্ডার পাওয়া শুরু হয়।

থ্রি-পিস, প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবি ও পায়জামা তৈরিতে বেশি ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে। তবে রেডিমেড পোশাকের কারণে আগের মতো জমজমাট ব্যবসা নেই। কাপড়ের দাম বাড়ার কারণে দর্জিরাও কিছুটা উদ্বিগ্ন। তবে তারা নিজেদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি শার্ট-প্যান্ট তৈরিতে ৬৫০ টাকা, পাঞ্জাবি ৩৩০ টাকা ও থ্রি-পিস ২৫০ টাকা নেন।

দিনাজপুরের কনফিডেন্স টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান বলেন, ‘এবারও ঈদের সময় কাজের চাপ বেড়েছে। অনেক নতুন কাস্টমার আমাদের দোকানে আসছেন। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর কিছুটা কম। তবে যারা আসছেন, তাদের পছন্দ অনুযায়ী মানসম্মত পোশাক তৈরির চেষ্টা করছি।’

চলতি বছর কাপড়ের দাম ও মজুরি বেড়েছে। ভিআইপি টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাজের পরিমাণ বেড়েছে। ক্রেতাদের রুচি এবং পছন্দের গুরুত্ব দিয়ে আমাদের কাজ চলমান।’

বজলুর রশিদ লিটন ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, ‘রেডিমেড কাপড়ের চেয়ে সেলাই করা পোশাক নিজের পছন্দ অনুযায়ী বানানো যায়। তাই আমি শার্ট-প্যান্ট সেলাই করতে দিয়েছি।’

জহির রায়হান নামে একজন দর্জি বলেন, ‘বিভিন্ন উৎসবে পোশাক তৈরির যে ঐতিহ্য তা এখনো অটুট আছে। তবে এবারে কিছুটা কম অর্ডার আসছে। তারপরও প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় হচ্ছে।’

নিরাপদ লেনদেনে বাড়ছে কার্ডের ব্যবহার

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১১:৪১ এএম
নিরাপদ লেনদেনে বাড়ছে কার্ডের ব্যবহার
ক্রেডিট কার্ড

উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশেও বাড়ছে কাগুজে টাকার পরিবর্তে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন। দেশে সব ধরনের কার্ডে লেনদেন অব্যাহতভাবে বাড়ছে। লেনদেনে স্বচ্ছতা বাড়ানো, ঝুঁকিমুক্ত, কম খরচ ও দ্রুত করতে আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত শহরকেন্দ্রিক নাগরিকরা কার্ড ছাড়া নিজেদের অচল মনে করেন।

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখনো দেশের বড় অংশের মানুষের ব্যক্তিগত লেনদেন নগদ টাকায় সম্পন্ন হচ্ছে। পাশাপাশি কার্ডের মাধ্যমে যে লেনদেন হচ্ছে তা আর্থিক খাতের মোট লেনদেনের তুলনায় হয়তো অনেক কম। তবে আশার দিক হচ্ছে, দিনকে দিন কার্ডে লেনদেন বাড়ছে। ব্যাংকারদের মতে, শহরের মানুষ এখন অনেক সচেতন। তারা আর নগদ লেনদেন করতে চায় না। শহরাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ কার্ডের মাধ্যমে সব ধরনের লেনদেন করে থাকে। যদিও গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ এখনো নগদ লেনদেন করেন।

এই প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, গ্রাহক সহজেই সেবা নিতে চায়। ব্যাংকগুলোও সেদিকে ঝুঁকছে। ফলে বাড়ছে ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার। ডলার সংকট এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ফলে মানুষের ভ্রমণ ও চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি বেড়েছে। সেই সঙ্গে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মানুষের কেনাকাটাও বেড়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশ মানুষ ক্যাশ লেনদেন ছেড়ে কার্ডে লেনদেন করছে। এসব কারণেই কার্ডের লেনদেন প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তিনি বলেন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক সব সময়ই গ্রাহকদের সর্বোচ্চ মানের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে। তরুণ প্রজন্মের আগ্রহের জায়গা থেকে আমরা চলতি বছর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ তরুণরাই আজকে দেশটাকে নতুন করে বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়েছে। আমরা সেই পরিবেশটা তৈরি করতে চাই, তরুণরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী সেবা পাবে। এজন্য আমরা সম্প্রতি একটা ডিজিটাল ওয়ালেট চালু করেছি, যেখানে এমন কিছু নেই যা পাওয়া যাবে না। এটা পুরোপুরি হয়ে গেলে বড় ঋণের লেনদেন ছাড়া দিনের যাবতীয় সব কাজই গ্রাহক এই কার্ড থেকেই করতে পারবেন। উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে কার্ডের লেনদেন কিছুটা বেড়েছে বলেও মনে করেন তিনি। 

একই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বর্তমানে মানুষের জীবনযাত্রা অনেকটা স্বাভাবিক ধারায় ফিরেছে। আবার অর্থনীতির কর্মচাঞ্চল্যও ফিরে এসেছে। তাই মানুষ খরচও বেশি করছে। শহরাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ এখন নগদ লেনদেনের পরিবর্তে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন ধরনের কার্ডে লেনদেন বেড়েছে। 

একই বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল খবরের কাগজকে বলেন, দেশে মানুষের মাঝে কার্ডের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ব্যাংকগুলোও কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ডের ব্যবহার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ব্যাংকের ওপর গ্রাহকদের আস্থা এবং ডিজিটাল পেমেন্ট বৃদ্ধির প্রতিফলন। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে প্রথম অটোমেটেড টেলার মেশিন বা এটিএম যন্ত্র স্থাপন শুরু করে কয়েকটি ব্যাংক। যার মাধ্যমে কার্ড দিয়ে নগদ টাকা তোলার সুযোগ তৈরি হয়। ১৯৯৬ সালে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করে। এরপর বিভিন্ন ব্যাংক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের কার্ড সেবা নিয়ে আসে। এসব কার্ডের মধ্যে ভিসা, মাস্টারকার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস, ডিসকভার, জেবিসি ও ইউনিয়ন পে উল্লেখযোগ্য। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, দেশে গত জানুয়ারি মাসে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৯৩ হাজার ৮৮২। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল প্রায় ৩ কোটি ৫২ লাখ। ক্রেডিট কার্ড রয়েছে ২৭ লাখ ৬ হাজার ৯৮টি। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৪ লাখ ২৯ হাজার। আর প্রি-পেইড কার্ড ইস্যু করা হয়েছে ৭৫ লাখ ৪৭ হাজার ২৪৪টি। সব কার্ড দিয়ে এটিএম ও বিক্রয়কেন্দ্রে (পয়েন্ট অব সেলস) লেনদেন করা যায়। প্রি-পেইড কার্ড দিয়ে গ্যাস-বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করা হয়। এ সময় এসব কার্ডে ৪৩ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এ থেকে অনুমান করা যায় দেশে কেনাকাটা বা লেনদেনে নগদ অর্থের পরিবর্তে কার্ডের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে ডেবিট, ক্রেডিট এবং প্রিপেইড কার্ড ইস্যুর পরিমাণ বেড়েছে ১৪২ শতাংশ এবং এই তিন ধরনের কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে ১৬৬ শতাংশ। 

কার্ডে কেনাকাটা সহজ ও সুলভ মূল্যে পাওয়ার সহযোগিতা করছে ব্যাংকগুলো

গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থ ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে এটিএম বুথ থেকে গ্রাহক নগদ টাকা উত্তোলন করার পাশাপাশি বিভিন্ন শপিংমলে কেনাকাটা করতে পারেন। এতে নগদ টাকা বহনের ঝামেলা খুব সহজেই এড়ানো যায়। এবারের ঈদে রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে গ্রাহকরা কেনাকাটা করতে গিয়ে অধিকাংশই নগদ টাকার পরিবর্তে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করছেন। জানতে চাইলে নাবিল আহমেদ নামে একজন গ্রাহক খবরের কাগজকে বলেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটেও ভালো না। তাই আমি ঈদের কেনাকাটার পুরোটাই কার্ডের মাধ্যমে করেছি। এতে প্রতিটি লেনদেনের রেকর্ড যেমন আমার কাছে রয়েছে, তেমনি কোনো ধরনের ঝুঁকিও নিতে হয়নি। 

আর ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহক বাকিতে পণ্য কিনে নির্দিষ্ট মেয়াদে সেটা পরিশোধ করতে পারেন। অর্থাৎ গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকলেও তার কাছে থাকা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে তিনি নির্বিঘ্নে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে পারবেন। বর্তমানে দেশে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক ২৭ লাখ। প্রতি মাসে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার লেনদেন করছেন তারা। পরিসংখ্যান বলছে, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীরা সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করেন সুপারমার্কেট ও রিটেইল আউটলেটে।

ডিজিটাল লেনদেন মানুষের জীবনকে যেমন সহজ করেছে, তেমনি কিছু সমস্যাও আছে। কার্ডে লেনদেন করতে গিয়ে মানুষ প্রায়ই নানা ধরনের ভোগান্তি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে। যেমন- অনেক সময় এটিএম বুথে গিয়ে পর্যাপ্ত টাকা পাওয়া যায় না বা কার্ড আটকে যায় অথবা পিন চুরি করে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে। এ ছাড়া এসব সেবার বিনিময়ে অনেক সময় ব্যাংকগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে বড় অঙ্কের হিডেন চার্জ আরোপ করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতারণা ঠেকাতে মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানকেও সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হতে হবে। মোবাইলে আর্থিক সেবায় একটি সেবাদাতা থেকে অন্য সেবাদাতার হিসাবে যাতে সহজে টাকা লেনদেন করা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে। সব সেবা প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্মুক্ত করাও দরকার।