ঢাকা ১ আশ্বিন ১৪৩১, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চলমান সংকট রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৪, ০১:৪৪ পিএম
চলমান সংকট রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে

কোটা সংস্কার নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন এখন এক দফার দাবিতে পরিণত হয়েছে। এক দফা হচ্ছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি। এ নিয়ে সারা দেশে জনমনে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছাড়াও মানুষের মুখে মুখে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। ১ জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কিছু দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। ঠিক তখনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলো। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা এমন হতো না। শুরুতেই উদ্যোগ নেওয়া হলে কোটার বিষয়টি সমাধান করা যেত। কিন্তু সরকার বিষয়টি জটিল করে ফেলেছে। দিন যত গড়িয়েছে, বিষয়টি আরও জটিল হয়েছে। কোটা আন্দোলন এখন আর কোটার মধ্যে নেই। পশ্চিমারা মনে করে, এখানে ব্যাপক মাত্রায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা হয়েছে। 

এ অবস্থায় বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের জন্য তারা টিম পাঠাতে চায়, তদন্তে সম্পৃক্ত হতে চায়। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, তদন্তে জাতিসংঘের সাহায্য নেওয়া হবে। জাতিসংঘ চিঠি  দিয়েছে তদন্তের জন্য। তার পর একটা বিচার বিভাগীয় কমিশন করা হয়েছে। সরকারকে মৌলিক বিষয়গুলো বুঝে বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাসহ দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার আর কোনো সংঘাত চায় না। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সরকার ও দল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই বলেছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে কিছু মন্ত্রীকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক ও কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে গণভবনে মতবিনিময়ে সভা করেছেন। তিনি  সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের প্রতি মানবিক হতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘গণভবনের দরজা খোলা। আমি সংঘাত চাই না।’ তিনি আটক সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দেন। আন্দোলনের সময় প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচারের আশ্বাসও দিয়েছেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন এখন জাতীয় সমস্যায় রূপ নিয়েছে। ছাত্ররা কী বলতে চায়, তাদের পালস সরকারকে বুঝতে হবে। দেশ ও জনগণের কথা মাথায় নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে সারা দেশ এখন উত্তাল রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় চলছে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে রাজনীতিবিদদের বাইরের পরামর্শ নিতে সজাগ থাকা উচিত। 

অতএব, এটা স্পষ্টভাবেই বুঝতে হবে যে, পশ্চিমা শক্তির দ্বারা এ ধরনের আন্দোলন পরিচালিত হয়ে থাকে। দেশীয় রাজনীতি বাইরের রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতি ভারত, রাশিয়া ও চীন দ্বারা প্রভাবিত। ভারত বাংলাদেশের অনুকূলে হয়ে সব সময় কাজ করে থাকে। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো নিজেদেরই মোকাবিলা করতে হবে। বর্তমান যে সংকট তৈরি হয়েছে তা সহজে নির্মূল হওয়ার নয়। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যারা বিশেষজ্ঞ রয়েছেন এবং দেশের বিশিষ্টজনদের পরামর্শ এ সংকট উত্তরণে সরকারকে কাজে লাগাতে হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘এখন যে সমস্যা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা মূলত রাজনৈতিক। এ সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন গ্রুপের বা পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কীভাবে কী করা যায়। প্রধানমন্ত্রী গণভবনে যে আলোচনার ডাক দিয়েছেন, সেটি ভালো কথা। তবে এও গুরুত্বপূর্ণ যে, আলোচনার ফ্রেমওয়ার্ক কী হবে, কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, কারা কারা থাকবেন, সেটিও স্পষ্ট করা দরকার।

চলমান সংকট এখন প্রকট রূপ নিয়েছে। দ্রুতই এটি নিষ্পত্তি হবে বলে মনে হচ্ছে না। দেশ ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে দেশ ও জনগণকে রক্ষা করতে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। চলমান সংকট নিরসনে রাজনৈতিক সব দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার আলোচনায় বসে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। দেশকে মহাসংকট থেকে রক্ষা করতে না পারলে এ জাতি গভীর সংকটে পতিত হবে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৭ পিএম
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্বাস্থ্য প্রশাসনে এক ধরনের অচলাবস্থায় দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে দেশের স্বাস্থ্যসেবা। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম। ভাটা পড়েছে ডেঙ্গুসংক্রান্ত সামগ্রিক কার্যক্রমে। এ অবস্থার উন্নয়নে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে স্বাস্থ্যখাত মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, স্বাস্থ্য প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বিগত সরকার সমর্থিত চিকিৎসকরা কর্মরত ছিলেন। সরকার পতনের পর নিরাপত্তাহীনতায় তারা অনেকেই কর্মস্থলে অনুপস্থিত। 

দেশের বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মশানিধন কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে আছে। এখন ডেঙ্গুর মৌসুম। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম তেমন একটা চোখে পড়ছে না। এরই মধ্যে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত মঙ্গলবার দেশে ৬১৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যা চলতি বছরে একদিনে আক্রান্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ১০৬ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৮ হাজার ৫৮৯ জন। এর মধ্যে চলতি মাসে এ পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৭৪৮, মারা গেছেন ২৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৬ হাজার ৮১৯ জন। দেশের পরিবর্তিত অবস্থায় অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আত্মগোপনে থাকায় এক মাসের অধিক সময় মশানিধন কার্যক্রম প্রায় বন্ধ রয়েছে। মাঠপর্যায়ে অনেকে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের সব শীর্ষ জনপ্রতিনিধিকে পদ থেকে বরখাস্ত করায় এসব জায়গায় মশানিধন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো এলাকায় মশার হটস্পটের খবর তথ্যকেন্দ্রে না আসায় এক ধরনের অস্পষ্টতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এডিস মশার ঘনত্ব এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ফলে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ধীরে ধীরে মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। 

চলছে বর্ষার শেষ মৌসুম। এ সময়টাতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরকে এডিস মশার বংশবিস্তারের উৎকৃষ্ট মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু এ সময় মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সর্বোচ্চ অবহেলিত। গত দুই মাসে বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে নতুন করে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। হাসপাতালগুলোতে শয্যা খালি নেই। রোগী ঠাঁই নিয়েছে মেঝেতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রোগীর শক সিনড্রোম দেখা দেওয়ার আগেই চিকিৎসা নিশ্চিত করা দরকার। তথ্যমতে, প্রতিদিনই গড়ে ৫০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই নিচ্ছে। গত বছর দেশে ডেঙ্গু নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে। রাজধানী ছাড়াও জেলাগুলোর ডেঙ্গু অবস্থা ছিল খুবই ভয়াবহ। তখন মারা যায় ১ হাজার ৭০৫ জন। হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। 

ডেঙ্গু মৌসুমের শুরুতেই সচেতনতামূলক নানা কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি। প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তৎপর থাকতে হবে। বিশেষ করে লিফলেট বিতরণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সমন্বয়ে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদারকি বাড়াতে হবে। প্রয়োজনীয় মুহূর্তে বিশেষায়িত হাসপাতাল চালু রাখতে হবে।

হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট ও আইভি ফ্লুইড সরবরাহ করতে হবে। ডেঙ্গুর হটস্পটগুলো চিহ্নিত করে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

মব জাস্টিস কঠোর হাতে দমন করুন

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৫ এএম
মব জাস্টিস কঠোর হাতে দমন করুন

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর দলে দলে মানুষ বিজয় মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামে। তারা বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত করে তোলে ঢাকার রাজপথ। দলে দলে সাধারণ মানুষ গণভবন, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ করে। যে যেমন পেরেছে গণভবন, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মালামাল নিয়ে যায়। 

এ জাতির এহেন কর্মকাণ্ডকে অনেকেই ‘মগের মুল্লুক’ বলে উল্লেখ করেছেন। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে বেড়ে যায় ডাকাতের উপদ্রব। হঠাৎ হঠাৎ লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কার্যত দুই দিন দেশে কোনো সরকার ছিল না। সে সময়টাতে সবচেয়ে বেশি নাজুক ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। পুলিশ তাদের স্বাভাবিক দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থ হয়েছিল। বিভিন্ন স্থানে থানায় আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র লুট হওয়ায় এ বাহিনীকে চিন্তিত করে তুলেছিল। 

বিগত সরকারের সময় পুলিশ তাদের ক্ষমতার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অভ্যুত্থানে তাদের ভূমিকাও এ বাহিনীকে বিতর্কের মুখে ফেলে দেয়। এরপর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান গ্রহণ করে তাদের দাবি পেশ করতে থাকে। 

এর মধ্যে আনসারদের সচিবালয় ঘেরাও, চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, রাজপথে রিকশা মিছিল- এ রকম অনেকে অনেক দাবি নিয়ে আসতে থাকেন রাজপথে। বিভিন্ন গোষ্ঠীর দাবিগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে যেমনভাবে পেরেছে তার মতপ্রকাশ করেছেন। এতে নানা রকম উসকানি ও বিদ্রুপমূলক মন্তব্যের ছড়াছড়িও দেখা গেছে, যা এখনো চলমান। 

ক্ষমতার পটপরিবর্তনের এক মাসের মধ্যে দেশে মব জাস্টিস বেড়েছে। এতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। মব ট্রায়াল সমাজের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। হুজুগে জনতার দ্বারা কারও বিচারবহির্ভূত হত্যাকে মব জাস্টিস বলা হয়। ‘মব জাস্টিস’ (উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে বিচার) বিষয়ে সরকারের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। 

এটা কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবে না। যারা এর সঙ্গে জড়িত এবং হামলা করছে, তাদের ব্যাপারে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের এই অবস্থানের কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. মাহফুজুল আলম। 

সম্প্রতি দেশের মব ট্রায়াল তথা বিক্ষুব্ধ জনতা কর্তৃক মানুষকে হেনস্তা বা সাজাদানের ঘটনা ঘটছে। এভাবে ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকেও এসব ঘটছে অনেক স্থানে। ধর্মীয় স্থাপনা, মূর্তি, মাজার ভাঙা হচ্ছে; যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। প্রাণ-আরএফএল, গাজী টায়ারসহ বেশ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, লুটপাট করা হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হতো,  তা এখন নিঃশেষ হয়ে গেছে। অসংখ্য কর্মী বেকার হয়ে পড়েছেন। 

গত শনিবার রাজশাহীতে ছাত্রলীগের এক নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বগুড়ায় ২ ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনকে হত্যা করা হয়েছে। এসব ঘটনা দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে এ রকম ঘটনা ঘটছে। বিগত সরকারের একচ্ছত্র আধিপত্য ও টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনের ফলে মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছিল। 

সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেই চলেছে। কিছু দুষ্কৃতকারী এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে। সরকারকে এসব মব ট্রায়ালের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত ও দমন করতে হবে। আপামর জনসাধারণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা রাষ্ট্র সংস্কার। সরকারও চায় দেশ আগে মেরামত হোক। অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের এ প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে।

দেশ একটি অস্থিতিশীল অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সেই পরিবেশ তৈরির সুযোগ করে দিতে হবে জনগণকেই। বাংলাদেশের নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালতে একধরনের মব ট্রায়াল তৈরির অপচেষ্টা চলেছে কিছুদিন। 

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের ওপর ডিম ছুড়ে মারা, কিলঘুসি ও হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। আইনজীবীরা আইনের বিধান জেনেও আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে মব ট্রায়াল সৃষ্টি করেছেন। বিচারপতি মানিককে আদালতে নেওয়ার পর বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। সরকার এসব কর্মকাণ্ড প্রতিহত করবে। মব ট্রায়ালের কারণে যাতে প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি ব্যাহত না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ এএম
জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশ পরিচালনায় এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর ফলে দ্বৈতনীতিতে চলছে প্রশাসনের কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত থাকা কর্মকর্তারা প্রশাসনিক পদসোপান কাঠামো ভেঙে এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিন ধাপে পদোন্নতি নিয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, বঞ্চিত ব্যক্তিদের পাশাপাশি বঞ্চিত সেজে কিছু সুবিধাভোগী, বিতর্কিত ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাও পদোন্নতি পেয়েছেন। পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও রয়েছেন, যার বিরুদ্ধে অপরাধে জড়ানোর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয়েছিল। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা চলছে এমন কর্মকর্তাও পদোন্নতি পেয়েছেন। 

প্রায় প্রতিদিনই সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে ভিড় করছেন তদবিরকারী কর্মকর্তারা। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে প্রশাসনের ওপর এত চাপ তৈরি হয়নি। গত ১৫ বছরে ব্যাপক দলীয়করণ, সেটা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগের কারণে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। 

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সময় লাগবে। জনপ্রশাসন ক্যাডারের এই বিশৃঙ্খলায় বঞ্চিত অন্যান্য ক্যাডারের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পদোন্নতিসহ বিভিন্ন দাবিতে জোট বেঁধেছেন বিসিএস ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ৩১ আগস্ট তারা আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ নামের জোট ঘোষণা করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেন।

এক মাস ধরে গোটা প্রশাসনে চলছে সমন্বয়হীনতা, বিশৃঙ্খলা। ‘সুবিধাভোগী ও বঞ্চিত’- কর্মকর্তারা এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে চলছে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব। সম্প্রতি দুই ধাপে ৫৯ জেলার ডিসি নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এ তালিকায় বঞ্চিতরা উপেক্ষিত হওয়ায় বাগবিতণ্ডা ও অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন সিনিয়র ও জুনিয়র কর্মকর্তারা। 

এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রশাসনিক ‘চেইন অব কমান্ড’ ভেঙে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক আমলা ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। তারা এ ঘটনাকে দুঃখজনক, অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মন্তব্য করেছেন। মাঠ প্রশাসনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করেছেন সচিবালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, কারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল এবং কাউকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করায় এখন সাতটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব পদ খালি। এসব মন্ত্রণালয়ের কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। গত বুধবার আট জেলার ডিসির নিয়োগ স্থগিত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া আরও চার জেলার ডিসি পদে রদবদল আনা হয়েছে।

সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ডিসি নিয়োগ ইস্যুতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র ও জুনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে যে বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে তা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলাবিরোধী। সচিবালয় হচ্ছে সরকারের প্রাণকেন্দ্র। কারণ এই সচিবালয়ে মন্ত্রী-সচিবরা বসেন। এখন সরকারের উপদেষ্টারা বসছেন। এখান থেকেই জনপ্রশাসন পরিচালিত হয়।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন হওয়া দরকার প্রশাসনের সর্বস্তরে। প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও কাজের গতি ফিরিয়ে আনতে হলে সেটাও যোগ্যতার ভিত্তিতে হতে হবে।

সরকারি চাকরির আচরণবিধি মেনে সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে প্রশাসনের প্রত্যেক কর্মকর্তাকে। কিন্তু সম্প্রতি দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কার্যালয়ে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা রীতিমতো শঙ্কার বিষয়। কারণ প্রশাসনে দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের স্থান তা সবার জানা। 

কিন্তু তাদের এ ধরনের বিতর্কিত আচরণ সাধারণ মানুষকে চরমভাবে আহত করেছে। সরকার যদি এটি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশ এক কঠিন সময়ের মুখোমুখি হবে। আশা করি, সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।

সংস্কারের মাধ্যমে গণমানুষের প্রত্যাশা প্রতিফলিত হোক

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০২ এএম
সংস্কারের মাধ্যমে গণমানুষের প্রত্যাশা প্রতিফলিত হোক

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বুধবার তৃতীয় দফায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে এই ভাষণ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গণমানুষের মধ্যে এখন একটাই আলোচনা- রাষ্ট্র সংস্কার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গণমানুষের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। 

সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব কমিশনের কাজ পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে দেশের ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্র সংস্কারের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেছেন, আমরা সংস্কার চাই। 

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের একান্ত অনুরোধ, আমাদের ওপর যে সংস্কারের গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন, সেই দায়িত্ব দিয়ে আপনারা দর্শকের গ্যালারিতে চলে যাবেন না। আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমরা একসঙ্গে সংস্কার করব। এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। আপনারা নিজ নিজ জগতে সংস্কার আনুন। এই সংস্কারের মাধ্যমে আমরা জাতি হিসেবে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে চাই।

প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রীয় সংস্কারের সম্ভাব্য ধারণা পাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী মতাদর্শের ব্যাপার থাকলেও নতুন সরকারের সংস্কারের ব্যাপারে তারা আগ্রহী। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং সংস্কারের পক্ষে জনসমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ইতিবাচকভাবে অগ্রসর হতে সক্ষম হবে। ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে। 

ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা- নতুন একটি ন্যায়ভিত্তিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। ছাত্র-জনতা স্বৈরাচারী শাসন দেখতে চায় না। গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে। সব রাজনৈতিক দলই নীতিগতভাবে বৈষম্য হ্রাসের পক্ষে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের কারণে কোনো ভেদাভেদ করা হবে না।

সংস্কারের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির জন্য সবার আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। কোনোভাবে এটি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে সমাজে অস্থিরতা তৈরি হবে। তাই দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান, ‘কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ।

 ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন কোনো কাজ কেউ কোনোভাবেই করবেন না।’ একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রূপরেখা তৈরির জন্য তার সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নির্বাচনব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। এসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার জনমালিকানাভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে বলে তিনি জানান। 

এর পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব ও স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয় তুলে ধরেন। মাঠ প্রশাসনকে জনবান্ধব করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের এক মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ১৯৮টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের এগিয়ে যাওয়ার জন্য ভালো উদ্যোগ। 

তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ যাতে উজ্জ্বল হয় সেটি নিশ্চিত করতে শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কারের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মিডিয়া যাতে কোনো রকম বাধাবিপত্তি ছাড়া নির্বিঘ্নে তাদের কাজ করতে পারে, সে জন্য একটি মিডিয়া কমিশন গঠন করার ইচ্ছা সরকারের রয়েছে। 

আমরা সবাই চাই, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে গণমানুষের প্রত্যাশা প্রতিফলিত হোক। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সংস্কারগুলোর সফল বাস্তবায়ন হলেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি এবং প্রতিযোগিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ তৈরি হবে। 

অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। সেই সঙ্গে চলমান সংস্কার উদ্যোগগুলোর প্রয়োজনীয় আইনি ভিত্তি ও বৈধতা প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। আশা করছি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারকাজের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে সক্ষম হবে।

পোশাক খাতে চলমান অস্থিরতা নিরসন করুন

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫২ এএম
পোশাক খাতে চলমান অস্থিরতা নিরসন করুন

আশুলিয়া, সাভার, টঙ্গী, গাজীপুরে পোশাক কারখানাগুলোয় শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছে। শ্রমিকদের নানা দাবির পাশাপাশি আছে ঝুট ব্যবসাকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব। অনেকে ধারণা করছেন, ‘সুবিধাভোগী’ নানা গ্রুপ এর পেছনে থাকতে পারে। অনেকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঝুট ব্যবসার হাতবদল নিয়ে কারখানায় অস্থিরতা তৈরি করে নিজেদের নতুন প্রভাববলয় তৈরি করছেন। গত দুই সপ্তাহে ঝুট ব্যবসা নিয়ে একাধিক গ্রুপের মধ্যে আশুলিয়ায় সংকট হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওই সব এলাকার বেশ কিছু পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। গাজীপুরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা গতকাল বিগবস কারখানায় আগুন লাগিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও নাশকতা ঠেকাতে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।

উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে বিদেশি ক্রেতারাও উদ্বিগ্ন। সামগ্রিকভাবে পোশাকশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ দেশের পোশাক খাতে রাজনীতি ঢুকে পড়েছে। এ সংকট দূর করতে না পারলে দেশের পুরো পোশাকশিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে শ্রমিক আন্দোলনে মোট ১৬৭টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। তবে ওই আন্দোলনে শ্রমিকদের সংশ্লিষ্টতা ছিল না এবং বহিরাগতদের সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল বলে তিনি জানান। পোশাক কারখানার ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে বহিরাগতরা শ্রমিকদের উসকে দিয়ে এসব নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।

নানামুখী সমস্যায় বিপর্যস্ত বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থায় কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প। অব্যাহত বিশৃঙ্খলায় এ খাতে নৈতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কায় রয়েছে মালিকপক্ষ। শিল্পে চলমান অস্থিরতা কাটাতে বিজিএমইএ, কারখানার মালিক, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বৈঠক করছেন। দেশের ক্রান্তিলগ্নে শিল্প টিকিয়ে রাখাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। কারণ শিল্প না বাঁচলে অনেক শ্রমিক কর্মহীন হবেন এবং দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে।

অনেকে অভিযোগ করে বলছেন, যারা কারখানায় হামলা করছে তাদের অনেকেই শিশু-কিশোর। অনেক রিকশা ও ভ্যানচালক হামলায় জড়াচ্ছেন। আবার এক এলাকার লোক অন্য এলাকায় গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। এর নেপথ্যে তৃতীয় কোনো পক্ষের ইন্ধন থাকতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন। শ্রমিকরা যেসব দাবিদাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন, সেগুলো অযৌক্তিক বলে মালিকপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। একেক কারখানার শ্রমিকরা একেক ধরনের দাবিদাওয়ার কথা জানাচ্ছেন। আবার কিছু দাবি অভিন্ন। কিছু শ্রমিকনেতা কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন। যে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মালিকপক্ষের কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশে কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের নজির ভালো কিছু বয়ে আনেনি। তাই তারা এ প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান করছেন।

আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের হাজিরা বোনাস ২২৫ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া নতুন নিয়োগে নারী-পুরুষ বৈষম্য থাকবে না। এ ক্ষেত্রে যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

দেশে পোশাক খাতে চলমান অস্থিরতা নিরসন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তৈরি পোশাক খাতের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চলছে। এগুলো সুকৌশলে মোকাবিলা করতে হবে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিল্পকারখানায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। যা রীতিমতো শিল্পোদ্যোক্তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বিদেশিরা এ দেশে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবেন। তাই শিল্পাঞ্চলে যারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পোশাক খাতের চলমান অস্থিরতা নিরসন করে এ খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুতই এ সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হবে।