কোটা সংস্কার নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন এখন এক দফার দাবিতে পরিণত হয়েছে। এক দফা হচ্ছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি। এ নিয়ে সারা দেশে জনমনে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছাড়াও মানুষের মুখে মুখে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। ১ জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কিছু দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। ঠিক তখনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলো।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা এমন হতো না। শুরুতেই উদ্যোগ নেওয়া হলে কোটার বিষয়টি সমাধান করা যেত। কিন্তু সরকার বিষয়টি জটিল করে ফেলেছে। দিন যত গড়িয়েছে, বিষয়টি আরও জটিল হয়েছে। কোটা আন্দোলন এখন আর কোটার মধ্যে নেই। পশ্চিমারা মনে করে, এখানে ব্যাপক মাত্রায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা হয়েছে।
এ অবস্থায় বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের জন্য তারা টিম পাঠাতে চায়, তদন্তে সম্পৃক্ত হতে চায়। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, তদন্তে জাতিসংঘের সাহায্য নেওয়া হবে। জাতিসংঘ চিঠি দিয়েছে তদন্তের জন্য। তার পর একটা বিচার বিভাগীয় কমিশন করা হয়েছে। সরকারকে মৌলিক বিষয়গুলো বুঝে বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাসহ দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার আর কোনো সংঘাত চায় না। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সরকার ও দল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই বলেছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে কিছু মন্ত্রীকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক ও কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে গণভবনে মতবিনিময়ে সভা করেছেন। তিনি সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের প্রতি মানবিক হতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘গণভবনের দরজা খোলা। আমি সংঘাত চাই না।’ তিনি আটক সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দেন। আন্দোলনের সময় প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচারের আশ্বাসও দিয়েছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলন এখন জাতীয় সমস্যায় রূপ নিয়েছে। ছাত্ররা কী বলতে চায়, তাদের পালস সরকারকে বুঝতে হবে। দেশ ও জনগণের কথা মাথায় নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে সারা দেশ এখন উত্তাল রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় চলছে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে রাজনীতিবিদদের বাইরের পরামর্শ নিতে সজাগ থাকা উচিত।
অতএব, এটা স্পষ্টভাবেই বুঝতে হবে যে, পশ্চিমা শক্তির দ্বারা এ ধরনের আন্দোলন পরিচালিত হয়ে থাকে। দেশীয় রাজনীতি বাইরের রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতি ভারত, রাশিয়া ও চীন দ্বারা প্রভাবিত। ভারত বাংলাদেশের অনুকূলে হয়ে সব সময় কাজ করে থাকে। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো নিজেদেরই মোকাবিলা করতে হবে। বর্তমান যে সংকট তৈরি হয়েছে তা সহজে নির্মূল হওয়ার নয়। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যারা বিশেষজ্ঞ রয়েছেন এবং দেশের বিশিষ্টজনদের পরামর্শ এ সংকট উত্তরণে সরকারকে কাজে লাগাতে হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘এখন যে সমস্যা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা মূলত রাজনৈতিক। এ সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন গ্রুপের বা পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কীভাবে কী করা যায়। প্রধানমন্ত্রী গণভবনে যে আলোচনার ডাক দিয়েছেন, সেটি ভালো কথা। তবে এও গুরুত্বপূর্ণ যে, আলোচনার ফ্রেমওয়ার্ক কী হবে, কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, কারা কারা থাকবেন, সেটিও স্পষ্ট করা দরকার।
চলমান সংকট এখন প্রকট রূপ নিয়েছে। দ্রুতই এটি নিষ্পত্তি হবে বলে মনে হচ্ছে না। দেশ ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে দেশ ও জনগণকে রক্ষা করতে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। চলমান সংকট নিরসনে রাজনৈতিক সব দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার আলোচনায় বসে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। দেশকে মহাসংকট থেকে রক্ষা করতে না পারলে এ জাতি গভীর সংকটে পতিত হবে।