ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। গতকাল সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি গণভবন থেকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে ভারতের উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করেন। তার পদত্যাগের খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। উল্লসিত ছাত্র-জনতা নেমে আসেন রাস্তায়। মিছিলে মিছিলে ভরে যায় ঢাকার রাজপথ।
মুহূর্তের মধ্যে রাজধানী ঢাকা হয়ে ওঠে আনন্দের মহানগরী। বিভিন্ন স্থানে সকালের দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ব্যারিকেড এবং টহল দেখা গেলেও হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসার পর তারা একাত্মতা প্রকাশ করেন। তুলে নেওয়া হয় ব্যারিকেড ও টহল।
এর মধ্যেই টেলিভিশনে ঘোষণা আসে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। প্রথমে দুপুর ২টায় বক্তব্য দেওয়ার কথা থাকলেও প্রক্রিয়া শেষ করতে আরও সময় লেগে যায়। সেনাপ্রধান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দল তাতে অংশ নেয়। জামায়াতের আমিরও বৈঠকে যোগ দেন।
বিকেল ৪টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেছেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ করেছিলাম। আমরা সুন্দর আলোচনা করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীন দেশের সব কার্যক্রম চলবে। আপনারা আমার ওপর আস্থা রাখেন। আমাকে সহযোগিতা করেন।’
সেনাপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ পুনর্গঠনে দেশের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। উৎফুল্ল হাজার হাজার ছাত্র-জনতা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে প্রবেশ করে আনন্দ উল্লাস করেন। অনেকে গণভবনের মালামাল, হাঁড়ি-পাতিল, চেয়ার-টেবিলসহ সব জিনিস এক এক করে যে যা পেয়েছেন নিয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও প্রবেশ করে বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যান। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যত স্মৃতিচিহ্ন ছিল তা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। কয়েকটি গণমাধ্যমের অফিস এবং পরিবহনও রেহাই পায়নি। এ ধরনের সহিংসতা পরিহার করতে হবে। দেশের সম্পদ রক্ষা করতে হবে। যা দেশের প্রত্যেক নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব। যদিও সেনাপ্রধান বারবার বলেছেন, দেশে শান্তি বজায় রাখতে হবে। জনগণকে শান্ত থাকতে হবে। দেশের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে হবে।
ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলন যেন গণ-অভ্যুত্থানে রূপ পেল। এ আন্দোলনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ছাত্রকে প্রাণ দিতে হয়। আরও প্রাণ হারান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের রক্তের বিনিময়ে যে বিজয় সূচিত হলো, তা কোনো রাজনৈতিক দলের কৃতিত্ব নয়। এর পুরো কৃতিত্ব ছাত্রদের।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। রাষ্ট্র মেরামতের যে কথা বারবার বলা হচ্ছে, সেটা যেন অবশ্যই গুরুত্ব দেওয়া হয়। সুষ্ঠু গণতন্ত্র এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা যেন মানুষ ফিরে পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এই আন্দোলন সফল হবে।