ঢাকা ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ এএম
জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশ পরিচালনায় এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর ফলে দ্বৈতনীতিতে চলছে প্রশাসনের কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত থাকা কর্মকর্তারা প্রশাসনিক পদসোপান কাঠামো ভেঙে এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিন ধাপে পদোন্নতি নিয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, বঞ্চিত ব্যক্তিদের পাশাপাশি বঞ্চিত সেজে কিছু সুবিধাভোগী, বিতর্কিত ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাও পদোন্নতি পেয়েছেন। পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও রয়েছেন, যার বিরুদ্ধে অপরাধে জড়ানোর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয়েছিল। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা চলছে এমন কর্মকর্তাও পদোন্নতি পেয়েছেন। 

প্রায় প্রতিদিনই সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে ভিড় করছেন তদবিরকারী কর্মকর্তারা। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে প্রশাসনের ওপর এত চাপ তৈরি হয়নি। গত ১৫ বছরে ব্যাপক দলীয়করণ, সেটা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগের কারণে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। 

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সময় লাগবে। জনপ্রশাসন ক্যাডারের এই বিশৃঙ্খলায় বঞ্চিত অন্যান্য ক্যাডারের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পদোন্নতিসহ বিভিন্ন দাবিতে জোট বেঁধেছেন বিসিএস ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ৩১ আগস্ট তারা আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ নামের জোট ঘোষণা করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেন।

এক মাস ধরে গোটা প্রশাসনে চলছে সমন্বয়হীনতা, বিশৃঙ্খলা। ‘সুবিধাভোগী ও বঞ্চিত’- কর্মকর্তারা এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে চলছে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব। সম্প্রতি দুই ধাপে ৫৯ জেলার ডিসি নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এ তালিকায় বঞ্চিতরা উপেক্ষিত হওয়ায় বাগবিতণ্ডা ও অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন সিনিয়র ও জুনিয়র কর্মকর্তারা। 

এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রশাসনিক ‘চেইন অব কমান্ড’ ভেঙে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক আমলা ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। তারা এ ঘটনাকে দুঃখজনক, অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মন্তব্য করেছেন। মাঠ প্রশাসনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করেছেন সচিবালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, কারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল এবং কাউকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করায় এখন সাতটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব পদ খালি। এসব মন্ত্রণালয়ের কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। গত বুধবার আট জেলার ডিসির নিয়োগ স্থগিত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া আরও চার জেলার ডিসি পদে রদবদল আনা হয়েছে।

সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ডিসি নিয়োগ ইস্যুতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র ও জুনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে যে বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে তা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলাবিরোধী। সচিবালয় হচ্ছে সরকারের প্রাণকেন্দ্র। কারণ এই সচিবালয়ে মন্ত্রী-সচিবরা বসেন। এখন সরকারের উপদেষ্টারা বসছেন। এখান থেকেই জনপ্রশাসন পরিচালিত হয়।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন হওয়া দরকার প্রশাসনের সর্বস্তরে। প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও কাজের গতি ফিরিয়ে আনতে হলে সেটাও যোগ্যতার ভিত্তিতে হতে হবে।

সরকারি চাকরির আচরণবিধি মেনে সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে প্রশাসনের প্রত্যেক কর্মকর্তাকে। কিন্তু সম্প্রতি দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কার্যালয়ে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা রীতিমতো শঙ্কার বিষয়। কারণ প্রশাসনে দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের স্থান তা সবার জানা। 

কিন্তু তাদের এ ধরনের বিতর্কিত আচরণ সাধারণ মানুষকে চরমভাবে আহত করেছে। সরকার যদি এটি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশ এক কঠিন সময়ের মুখোমুখি হবে। আশা করি, সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।

রাষ্ট্রের সব কাঠামোকে গতিশীল করতে হবে

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৫ এএম
রাষ্ট্রের সব কাঠামোকে গতিশীল করতে হবে

রাজনৈতিক বিভাজন ও দলবাজিতে রাষ্ট্রের প্রায় সব প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত। অসাধু ও সুবিধাবাদীরা দেশের রাজনীতিতে বড় রকমের জায়গা করে নিয়েছিল। যার প্রভাব প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বত্র মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এতে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামো, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত, আইনশৃঙ্খলা ও দুর্নীতি প্রতিরোধব্যবস্থা ধ্বংসের দিকে চলে যায়। ফলে রাষ্ট্র ও সাধারণ মানুষ সামগ্রিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

 সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লাগামহীন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বাজারব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সাধারণ মানুষ এখন দিশাহারা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে দেশকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য সংস্কার কমিশনও গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কমিশনগুলো তাদের কাজও শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যত দ্রুত সম্ভব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখার স্থায়ী সমাধানে পৌঁছাতে হবে। না হলে জাতি হিসেবে আমাদের অনেক খেসারত দিতে হবে।

 ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে জনপ্রশাসনে এক ধরনের অস্থিরতা চলছেই। বিগত সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তারা চাপে থাকলেও আরেকটি পক্ষ নিজেদের দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখতে পারছে না। আগের সময়ের বঞ্চিতরা এখন তাদের শক্তি ও ক্ষমতা প্রয়োগে ব্যস্ত। রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে তাদের ক্ষমতায়নের দৃঢ়তা প্রকাশ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিগত সরকারের সময়ে আমলারা বাধাহীনভাবে জড়িয়েছিলেন ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ-দুর্নীতিতে। সরকার পরিবর্তনের পর সেই সব কর্মকর্তা প্রবল চাপের মুখে এখন প্রায় নিষ্ক্রিয়। দলীয় পরিচয় চিহ্নিত অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। কেউ কেউ নিজ থেকেই চাকরি ছেড়েছেন। ফলে দেশের জনপ্রশাসন কাঠামো এখন খুবই নড়বড়ে। 

দেশের সুশাসন ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো হলো বিচার বিভাগ। অথচ সেই বিচার বিভাগই এখন কাঠগড়ায়। অন্তর্বর্তী সরকারকে বিচারব্যবস্থায় সার্বিক সংস্কারের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে। সাড়ে ১৫ বছরে পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় পরিচয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় পুলিশ বাহিনী ছাত্র-জনতার মুখোমুখি অবস্থানের কারণে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর সবচেয়ে বেশি জনরোষের শিকার হয়েছে পুলিশ বাহিনী। আন্দোলনকারীদের হাতে প্রাণ গেছে ৪৪ জন পুলিশ সদস্যের।

 আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিপীড়নে অতিষ্ঠ দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনো পুলিশকে শত্রু মনে করে। পুলিশকে গতিশীল করতে এবং জনবান্ধব করতে দ্রুত এ বিভাগের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে দলীয়মুক্ত রেখে সংস্কার করতে হবে। দুদকের প্রতি মানুষের আস্থা এখনো ফেরেনি। অবশ্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের কঠোর অবস্থান প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। দুদক কমিশন ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছে। দলীয় বিবেচনার কারণে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কার্যক্রমও বিতর্কিত ছিল। বিসিএস নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রকৃত মেধাবীরা যাতে সুযোগ পায়, এ জন্য পিএসসিকে ঢেলে সাজাতে হবে। নিয়োগবাণিজ্য, প্রশ্ন ফাঁস, স্বজনপ্রীতির পথ চিরতরে বন্ধ করার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান খবরের কাগজকে বলেন, প্রতিটি নিয়োগ স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বাঁচাতে সব ক্ষেত্রে দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এমন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে, কেউ যাতে দুর্নীতি করার সুযোগ না পায়। 

রাষ্ট্রের সব কাঠামোর সংস্কার করার সময় এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে রাষ্ট্র সংস্কারকাজে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। কমিশনগুলো ইতোমধ্যে তাদের কাজ শুরু করেছে। রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে, প্রতিটি বিভাগে রাজনীতি ও দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এই মুহূর্তে দেশের বেশির ভাগ নাগরিকের একটিই চাওয়া- দেশের ইতিবাচক পরিবর্তন। প্রত্যাশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।

শারদীয় দুর্গোৎসব: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দৃঢ় হোক

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৭ এএম
শারদীয় দুর্গোৎসব: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দৃঢ় হোক

দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। দেশের সব ধর্মের মানুষ পারস্পরিক সৌহার্দ্য সম্প্রীতির অংশ হিসেবে উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। শত শত বছর ধরে বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উৎসব উদযাপন করে আসছেন, যা সর্বজনীন রূপ পেয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায় তাদের ধর্মীয় আচারাদি পালন করেন। অন্যদিকে সামাজিক উৎসবের মতোই সব ধর্মের মানুষ একত্রিত হয়ে উৎসবটি আনন্দমুখর করে তোলেন। 

ঐতিহাসিকদের মতে, এ বাংলায় জাঁকজমকের সঙ্গে দুর্গাপূজার প্রচলন করেন সম্রাট আকবরের (১৫৫৬-১৬০৬) রাজত্বকালে বর্তমান রাজশাহী জেলার তাহিরপুরের রাজা কংস নারায়ণ। তখনকার সময়ে দশ গ্রামের ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই মেতে উঠত দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে। পাঁচ দিনের দুর্গাপূজা উৎসব চলত মাসব্যাপী। রাজা-জমিদারদের পূজামণ্ডপে সংগীতানুষ্ঠান ও উচ্চাঙ্গ সংগীতের আসর বসত। সেই সঙ্গে চলত মেলা। রাজা-জমিদার প্রথার বিলোপের পর বারোয়ারি পূজা বর্তমানে সর্বজনীন উৎসব। সবাই মিলে চাঁদা তুলে চলে দুর্গাপূজার আয়োজন। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় পূজা উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে। সংবাদপত্র ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বাঙালি জাতির কাছে দুর্গোৎসব এক সর্বজনীনতায় রূপ নিয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহালগ্নে আজকের বাংলাদেশের মানুষের মুখে মুখে তাই উচ্চারিত হয় ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বেশ কিছু স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি মুসলমানরাও তাদের পূজামণ্ডপ পাহারা দিয়েছে। এ কারণে আজ তারা নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপন করতে পারছে। ইতোমধ্যে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায়। সেখানে যশোরেশ্বরী কালীমন্দির থেকে  ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া প্রতিমার স্বর্ণের মুকুট চুরি হয়ে যায়। মুকুটটি এখনো উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদিকে এ স্বর্ণের মুকুট চুরির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারতীয় হাইকমিশন। 

শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। একই সঙ্গে পূজার আগামী দিনগুলোতেও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। গত শুক্রবার রমনা কালীমন্দিরে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, আপনারা উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন করতে পারছেন, তা দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। শুধু ঢাকাতেই নয়, ঢাকার বাইরে সব জায়গায় আমাদের লোকজন মোতায়েন আছে। আমরা আপনাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিচ্ছি। এতদিন খুব ভালোভাবে চলেছে, বাকি যে সময়টা আছে, সেটাও সুন্দরভাবে উদযাপন করতে পারবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
 
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনের সময় বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে। এটি সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। দুর্গাপূজা ঘিরে ব্যাপক তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আজ রবিবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এ উৎসবের সমাপ্তি হবে। সরকারের নীতি নির্ধারক এবং রাজনৈতিক নেতারা ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন করেছেন। তারা মন্দির পরিদর্শন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন। অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় তারা সবাই ঐকমত্য। তারা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন। সম্প্রীতির বন্ধন প্রতিষ্ঠায় বাঙালি ঐক্যবদ্ধ। বাংলাদেশের সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি অটুট থাকুক, আবহমান সমাজের রীতিনীতি বাঙালি নির্বিঘ্নে পালন করুক, এটাই প্রত্যাশা। 
সবাইকে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা।

সাইবার নিরাপত্তা আইন  জনবান্ধব করুন

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৬ এএম
সাইবার নিরাপত্তা আইন 
জনবান্ধব করুন

সাইবার নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশের জনগণের অনলাইন নিরাপত্তা প্রদানে একটি অন্যতম প্রধান আইন। তথ্যপ্রযুক্তি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইনগুলোর প্রায় একই ধারায় ঘুরেফিরে কিছু ব্যতিক্রম বাদে নিরীহ-নিরপরাধ মানুষের নামে মামলা হয়েছে বিগত সরকারের সময়ে। সরকার এটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল। বিশেষ করে ভিন্নমত পোষণ বা ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষকে দমিয়ে রাখার জন্য এটির অপব্যবহার করা হয়। সাংবাদিকরাও এ আইনের অপব্যহারের শিকার।

এরপর থেকে সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিসহ এ আইনের অপব্যবহারের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি উঠেছে। সমালোচিত এই আইনটি বাতিলের জন্য বিভিন্ন পক্ষ থেকে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগে এই আইনে গ্রেপ্তার হন নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। এখনো তার মামলা চলমান, তার বিরুদ্ধে মামলার এখনো কোনো অভিযোগপত্র হয়নি। ৫৭ ধারায় মামলার আসামি হওয়ার সঙ্গে পটুয়াখালীর নুসরাত সোনিয়া চাকরি হারিয়েছেন। সেই সঙ্গে মানসিক ও সামাজিক হয়রানির শিকার হয়েছেন।

 নুসরাতের মতো এসব আইন দ্বারা খাদিজাতুল কোবরাসহ অসংখ্য মানুষ হয়রানির শিকার হয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের বিপক্ষে সংবাদ প্রচার ও ফেসবুক পোস্ট দেওয়ায় অনেককে জেলে যেতে হয়েছে। তাদের ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচারের দাবি উঠেছে বিভিন্ন পক্ষ থেকে। গত মঙ্গলবার প্রেসক্লাবে এক গোলটেবিল বৈঠকে ভুক্তভোগীরা এই আইন বাতিলসহ মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানান।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সাইবার নিরাপত্তা আইন সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। সর্বস্তরের অংশীজনের মতামত নিয়েই এটির মেরামতকাজ শুরু করা হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যমান আইনটি নির্যাতনমূলক। এটিকে বাদ দিয়ে নতুন করে জনবান্ধব আইন প্রণয়ন করতে হবে।

গত বছর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হয়। যা ছিল বিতর্কিত আইন। পরে তৎকালীন সরকার এই আইনের ফলে সাইবার নিরাপত্তা আইন করে। বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩-এর প্রস্তাবিত খসড়া সংশোধনীবিষয়ক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন অবশ্যই বাতিল হবে। সাইবার সুরক্ষা দেওয়া, নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া, সাইবার নিরাপত্তা আইন বা এর পূর্বসূরি যে মামলাগুলো ছিল, সব প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রয়োজন, তবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও বাকস্বাধীনতা থাকতে হবে। ২০২৩ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইনটি ছিল নির্যাতনমূলক। এটিকে জনবান্ধব করতে হবে। সব অংশীজনের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে আইনটিকে সব নাগরিকের সুরক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। আইনটির অপব্যবহার রোধ করতে হবে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুগোপযোগী নীতিকৌশল গ্রহণ করতে হবে। কাউকে হয়রানির জন্য এই আইন নয়।

 বরং এই আইনে নাগরিকদের সংশোধিত হওয়ার সুযোগ রাখতে হবে। বর্তমান আইনের ভালো দিকগুলো রেখে বিতর্কিত দিকগুলো পরিহার করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালা-২০২৪ চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও সব অংশীজনের পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে একটি টেকসই যুগোপযোগী জনবান্ধব আইন প্রণয়ন করতে পারলে জনগণের বৃহৎ কল্যাণ সাধিত হবে।

বাজারে নৈরাজ্য ঠেকাতে ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫৭ এএম
বাজারে নৈরাজ্য ঠেকাতে ব্যবস্থা নিন

দেশের বাজার পরিস্থিতি ক্রমেই অসহনীয় হয়ে উঠছে। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত- সব পরিবারে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিম্ন আয়ের মানুষকে টিকে থাকার লড়াইয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে। জনগণ বিগত সরকারের আমলেও অসহনীয় দ্রব্যমূল্যের চাপে ছিল। এখনো তাই আছে। সাধারণ জনগণ আশা করেছিল, অন্তত অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

 কিন্তু এখনো তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি; বরং আরও বেড়েছে। ছাত্ররা কয়েক দিন বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছিল, ইতিবাচক সাড়াও মিলেছিল। তাতেও কাজ হয়নি। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার পরিস্থিতি এবং সরবরাহ তদারকি ও পর্যালোচনার জন্য জেলা পর্যায়ে ‘বিশেষ টাস্কফোর্স’ গঠন করেছে সরকার। গত সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের এই টাস্কফোর্সে দুজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ছাড়াও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক থাকবেন সদস্যসচিব। 

এ ছাড়া টাস্কফোর্সের অন্য সদস্যরা হলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা বা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা ও ক্যাবের প্রতিনিধি।

এই টাস্কফোর্স নিয়মিত বিভিন্ন বাজার, আড়ত, গোডাউন, কোল্ডস্টোরেজ ও সাপ্লাই চেইনের অন্যান্য স্থান সরেজমিন পরিদর্শন করবে। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার বিষয়টি তদারক করবে। সঙ্গে পণ্য উৎপাদন, পাইকারি ও ভোক্তা পর্যায়ের মধ্যে যেন দামের পার্থক্য ন্যূনতম থাকে তা টাস্কফোর্স নিশ্চিত করবে। আর সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবে। 

কয়েক দিন ধরে নিত্যপণ্যের বাজারে বড় ধরনের নৈরাজ্য চলছে। ডিমের ডজন ১৮০-১৮৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এযাবৎকালের মধ্যে এ দাম সর্বোচ্চ। খামারিরা বলছেন, নিয়মের তোয়াক্কা না করে ডিম উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত করপোরেট সিন্ডিকেট প্রতিদিন সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডিম বিক্রি করে। সরকারের নির্ধারিত দামে খুচরা পর্যায়ে ডিমের দাম হওয়ার কথা ১৪৪ টাকা ডজন। আড়তেই করপোরেট সিন্ডিকেট বেশি দামে ডিম বিক্রি করায় খুচরা ডিমের দাম এখন অনেক বেশি।

 এভাবে বেশি দামে বিক্রি করে গত ২০ দিনে ভোক্তার পকেট থেকে ১৬০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মামলা হওয়ার পরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় ভোক্তার পকেট কাটা থামছে না। এখনই কঠোরভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে বাজার আরও অস্থির হবে। এমতাবস্থায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে ডিম আমদানিতে শুল্ককর আবারও প্রত্যাহারের দাবি উঠেছে।

এদিকে সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে সাড়ে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এ খবরে ডিমের দাম কিছুটা কমেছে বলে জানা গেছে। চলতি বছর বন্যার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে নৈতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের মাঠ ও খামার। এ কারণে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের ওপর শুল্ক কমানোর সুপারিশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ট্যারিফ কমিশন।

বাজারে চাল, আলু, পেঁয়াজ, সবজি- সব নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। মরিচের কেজি ৪০০ টাকা, পেঁয়াজ ১২০, কোনো সবজির দামই ১০০ টাকার নিচে নেই। অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থির করে তোলে। মাস যেতে না যেতেই আগের মতো বিভিন্ন খাতে চাঁদাবাজি বেড়েছে। যার প্রভাব বাজারে লক্ষ করা যাচ্ছে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে ভোক্তারা এর সুফল পাচ্ছে না। বাজার তদারকির জন্য যে টাস্কফোর্স কাজ করবে, তা গতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বাড়াতে হবে। 

টাস্কফোর্সের কার্যক্রম চলমান রাখতে পারলে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা কমবে বলে আশা করা যায়। অন্তর্বর্তী সরকারকে শক্ত হাতে বাজার নিয়ন্ত্রণে ঠেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাজার পর্যবেক্ষণে জড়িত অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের যোগসাজশের বিষয়টি বারবার আলোচনায় আসে কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। 

ভোক্তা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টরা কিছু জরিমানা, মামলা করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। বাজারে নৈরাজ্য ঠেকাতে সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। সরকারনির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীদের বাধ্য করতে হবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার বর্তমানে বাজারে যে নৈরাজ্য চলছে তা অচিরেই মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।

নতুন বিনিয়োগে উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৭ এএম
নতুন বিনিয়োগে উদ্যোগ নিতে হবে

দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে অন্তর্বর্তী সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণের চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সরকার অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে সংস্কারকাজ হাতে নিয়েছে, নতুন সরকারের জন্য বিপর্যস্ত অর্থনীতি স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের ব্যাপার। বিগত সরকারের সময়ে অনেক ব্যবসায়ী বিনিয়োগের পরিকল্পনা করলেও শেষ পর্যন্ত পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তাই আর্থিক খাতের সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। এ খাতের  সংস্কার করে শক্তিশালী বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। 

বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারলে বিনিয়োগকারীরা উদ্যোগী হবেন। সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী আয় ভালোভাবেই বেড়েছে। অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এটা ধরে রাখতে সরকারকে আরও সচেষ্ট হতে হবে। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) শিল্প স্থাপনে ব্যবহৃত মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি উদ্বেগজনক হারে কমে গেছে। এর অর্থ দেশে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে নতুন কর্মসংস্থোনের সুযোগ কমেছে। উপরন্তু মোট জাতীয় উৎপাদনও (জিডিপি) কম হবে। এতে আমদানি-নির্ভরতা বাড়বে বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করছেন। আগের সরকার বিদ্যুৎ-গ্যাসের চাহিদা পূরণ করতে না পেরে নতুন বিনিয়োগকে এক রকম নিরুৎসাহিত করেছিল।

 বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থনৈতিক জোন ও শিল্প এলাকার বাইরে নতুন শিল্পকারখানা স্থাপনে ঋণ না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তের ফলে অর্থনৈতিক জোন ও শিল্প এলাকার বাইরে যারা জমি কিনে নিজস্ব বিনিয়োগ সম্পন্ন করতে অর্থ লগ্নি করেছিলেন তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ রকম বিনিয়োগপ্রত্যাশী অনেকেই রয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিনিয়োগের সঙ্গে কর্মসংস্থান ও ব্যক্তির আয় জড়িত, তাই অর্থনীতিতে বিনিয়োগের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। অর্থনীতিতে যত বিনিয়োগ হবে, সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক উৎপাদন বা সেবা তত বাড়বে। উৎপাদন ও সেবামূল্য বৃদ্ধি পেলে জিডিপিও বৃদ্ধি পাবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সুদহারের ঊর্ধ্বগতি, ডলারসংকট, গ্যাস-বিদ্যুৎ অপর্যাপ্ততা এবং ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের বাহুল্য ও তারল্য অবক্ষয়- এসব কারণে দেশে নতুন বিনিয়োগের উদ্যোগ নেই বললেই চলে। এখন বিনিয়োগের পরিবেশ ফেরানো জরুরি। আর বিনিয়োগের পরিবেশ ফেরাতে হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে হবে। বিনিয়োগের পরিবেশ যদি অনুকূলে না থাকে, সে ক্ষেত্রে তারা নতুন উদ্যোগ নেবেন না। অন্তর্বর্তী সরকারে যারা নীতিনির্ধারক রয়েছেন তাদের বিনিয়োগ-সহায়ক ভূমিকা নিতে হবে।

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, বিনিয়োগের জন্য পরিবেশ দরকার। দেশে এখন উচ্চ সুদহারের সময় চলছে। বিনিময় হার বেশি। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনিশ্চিত। এসব মিলিয়ে নতুন বিনিয়োগ কম হচ্ছে। বিনিয়োগ বাড়লে সাধারণত মূল্যস্ফীতি বেশি হয়। কিন্তু আমাদের এখানে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়েও বিনিয়োগ বাড়েনি। এটা এক ধরনের বৈরী অর্থনৈতিক আচরণ। সারা বিশ্বে এখন সুদের হার কমছে, কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো। সুদহার অনেক বেশি। এ ধরনের পরিস্থিতি কেন হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করতে হবে।

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে আস্থা বাড়াতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে হয়রানিমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগ বাড়াতে সক্ষম হবে।