ঢাকা ২৪ কার্তিক ১৪৩১, শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪

রাজনৈতিক দলের মতামতকে গুরুত্ব দিন

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২০ এএম
রাজনৈতিক দলের মতামতকে গুরুত্ব দিন

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেশের ১৮টি রাজনৈতিক দলের গত শনিবার তৃতীয় দফা বৈঠক হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাষ্ট্রসংস্কার নিয়ে ভাবনা এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ বিষয়ে তাদের মনোভাব ও প্রস্তাবগুলো তুলে ধরে। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ শেষ করে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন দলের নেতারা। তারা বলছেন, যত দ্রুত সংস্কারকাজ করে নির্বাচন দেওয়া হবে অন্তর্বর্তী সরকার এবং রাজনৈতিক দলের জন্য ততই কল্যাণকর হবে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেছেন, সংলাপের সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে সব রাজনৈতিক দল সমর্থন জানিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে ছয় কমিশন।

বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এক নম্বর অগ্রাধিকার নির্বাচন। সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংস্কার করতে এবং আগামী নির্বাচন কবে হবে, তার একটি রোডম্যাপ দেওয়ার ওপর জোর দেন তিনি। এ ছাড়া প্রশাসনের ফ্যাসিবাদের দোসরদের সরানো, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল, বঞ্চিতদের পদোন্নতি, আইনশৃঙ্খলা ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা, সংস্কার কমিটির সাবেক দুজন সচিব, একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালককে নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। বৈঠক শেষে জামায়াতের আমির জানান, ভোটের আগে সংস্কার, এর পর নির্বাচন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশ শাসনের জন্য আসেনি। তারা দেশ শাসনের সুষ্ঠু পথ বিনির্মাণের জন্য এসেছে। 

আমরা আশা করব, বর্তমান সরকার কোনো পক্ষ-বিপক্ষের মানসিকতা না নিয়ে দেশকে ভালো জায়গায় নিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সক্ষম হবে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমকে নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে গণধিকার পরিষদ। এ ছাড়া হেফাজতে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ দলের পরিচয়ে বৈঠকে না ডাকায় মনোক্ষুণ্ন হয়েছেন সেসব দলের নেতা। বিতর্কিতদের দায়িত্ব কমানো এবং নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ দাবি এবি পার্টির। 

সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার ঐকমত্যে আসবে, এটা আশা করা যায়। রাজনৈতিক দলগুলো একটি ন্যূনতম ঐকমত্যে এলে এর ওপর নির্ভর করবে নির্বাচনের সময়সীমা। সংস্কার কাজের মধ্যদিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নেওয়ার কাজ চলবে। বেশকিছু রাজনৈতিক দলের নেতা সরকারের সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ততা ও নিয়মিত সংলাপের কথা বলেছেন। কেউ বলেছেন, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এখনো রোধ হয়নি। জনগণ আশাহত হলে সংস্কারের কথা শুনবে না। কোনো দলের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, পুলিশ বাহিনী অকার্যকর, দুর্বল ও নৈতিক মনোবলহারা। সশস্ত্র বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হলেও মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। 

গণ-অভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে বিভেদ দেখা যাচ্ছে। সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয় না থাকার বিষয়টিও দৃশ্যমান। সংস্কারে গঠিত কমিশনগুলো কাজ শুরু না করায় হতাশা দেখা দিয়েছে। সব নাগরিকের চাওয়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর গণতান্ত্রিক সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ দেবে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টেকসই ও গ্রহণযোগ্য সংস্কার হওয়ার প্রয়োজন। বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কারের জন্য ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।

 একটি নির্বাচন চাইলেই হয়ে যাবে, সে অবস্থায় এখন দেশ নেই। সর্বজন গ্রহণযোগ্য নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা ও সহযোগিতা থাকতে হবে। বাস্তবতার নিরিখে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। একটি জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও স্বচ্ছতা আনা দরকার। তা না হলে দেশ এক কঠিন সময়ের মুখোমুখি হবে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি থেকে দেশ বঞ্চিত হবে। 

ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষের চাওয়ার প্রতিফলন ঘটাতে হবে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় উত্তরণের মাধ্যমে। দেশের কল্যাণে অন্তর্বর্তী সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলো সেই যৌক্তিক সময়টুকু দেবে। জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকেও গুরুত্বের সঙ্গে সরকার বিবেচনা করবে।

স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য  সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানই কাম্য

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ এএম
স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য 
সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানই কাম্য

চীন, সিঙ্গাপুর ও ভারত স্থানীয় মুদ্রায় ব্যবসা-বাণিজ্যে সুবিধা সৃষ্টি করে নিজেদের আঞ্চলিক ব্যবসা বাড়িয়েছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোরও এ ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু নেপাল ভারতের মুদ্রা ব্যবহারে যে সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ তা পাচ্ছে না। গত বছর ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য সুবিধা পেলেও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা তা কাজে লাগাতে পারেনি। ফলে ওই সুবিধা চালুর পর খুব সামান্যই লেনদেন হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে স্থানীয় মুদ্রার দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আর্থিক নীতিমালা পরিবর্তন বা সংশোধন করার প্রয়োজন হবে। এ সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে আগ্রহী সদস্যদেশগুলোকে একটি সমন্বিত আর্থিক অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 

প্রতিবেদনে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বিনিময় হার এবং মার্কেটের গ্রহণযোগ্যতা। অর্থাৎ বেসরকারি খাতকে বাণিজ্য অংশীদার দেশের স্থানীয় মুদ্রা গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিনিময় হার একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য বাড়িয়েছে। থাই বাথ আশিয়ানের সব সদস্যদেশে গ্রহণযোগ্য। ক্রমাগত এর ব্যবহারের মাধ্যমে আসিয়ানের সদস্যদেশগুলোর মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৭ শতাংশ এখন নিজেদের মধ্যে ইনভয়েসিং করে। এই হার স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য সুবিধা সৃষ্টির আগে ছিল ৩ শতাংশের মতো। 

গত বছরের ১৬ নভেম্বর খবরের কাগজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য বা কারেন্সি সোয়াপ চুক্তির পুরো সুবিধা বাংলাদেশ নিতে পারছে না। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববাণিজ্য ডলার সরবরাহে ঘাটতির কারণে বহির্বাণিজ্য বিভিন্ন দেশ আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় মুদ্রা ব্যবহার করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে রুপির ব্যবহারকে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দেয়। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর মূল কারণ বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা। বাংলাদেশ ভারত থেকে যে পরিমাণ আমদানি করে তার তুলনায় রপ্তানি আয় খুবই কম। তাই বিগত দুই বছরে বাংলাদেশ ডলারসংকটের সময় রুপিতে বাণিজ্য সুবিধা কাজে 
লাগাতে পারেনি। 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, যেহেতু এই দুই দেশের বাণিজ্যে অনেক বড় ঘাটতি এবং এতে বাংলাদেশই পিছিয়ে রয়েছে, সেহেতু দ্বিপক্ষীয় অন্য লেনদেনগুলো রুপিতে করা যায় কি না তা দেখতে হবে। কারণ আমরা বিনিয়োগ বা ঋণ যা-ই পাই না কেন, তা টাকায় রূপান্তর করে দেশে কাজে লাগাতে হয়। এ জন্য দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের মধ্যে সমন্বয়টা জোরালো করতে হবে। এক্সচেঞ্জ রেট বা বিনিময় হার নির্ধারণের ক্ষেত্রেও স্পষ্ট ঘোষণা থাকতে হবে। বিনিময় হারের কারণে যেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। 

স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য বাড়াতে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। আমদানি ব্যয়ের বিল পরিশোধে রুপির সুবিধা নিতে হলে রুপি প্রাপ্তির পরিধি বাড়াতে হবে। ভারত থেকে পাওয়া বিনিয়োগ, ঋণ, ভ্রমণ, পর্যটন ও পড়ালেখা করতে আসা ভারতীয়দের আয় থেকেও আমদানি বাণিজ্য ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে। শুধু রপ্তানি আয় দিয়ে আমদানির জন্য চাহিদামতো রুপি সরবরাহ করা যাবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। প্রত্যাশা করছি, সরকার বিশেষজ্ঞ পরামর্শকদের সহায়তা নিয়ে দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যৌথভাবে নীতিগত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।

সংস্কার কমিশনের বৈঠক জনমতের ভিত্তিতে যুগোপযোগী পরিবর্তন আনুন

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৯ এএম
সংস্কার কমিশনের বৈঠক
জনমতের ভিত্তিতে যুগোপযোগী পরিবর্তন আনুন

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশের মানুষের অনেক প্রত্যাশা। বেশির ভাগ মানুষ চায় দেশে সংস্কার হোক। অন্তর্বর্তী সরকারও দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই প্রত্যাশা পূরণে জনমুখী কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন তিনি। এ ছাড়া গত ১৭ অক্টোবর আরও চারটি সংস্কার কমিশন করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। 

এখনো সদস্যদের নামসহ আনুষ্ঠানিকভাবে এই চার কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেনি সরকার। গত সোমবার ঢাকায় তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ছয় সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই বৈঠকে সংস্কার কমিশনের প্রধানরা তাদের কাজের অগ্রগতি তুলে ধরেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা যে বার্তা দিয়েছেন, তা হলো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় এমন সুপারিশ যেন করে সংস্কার কমিশনগুলো। অধ্যাপক ইউনূস তার ভাষণে বলেন, তারা সংস্কার চান। সংস্কারের মাধ্যমে জাতি হিসেবে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে চান। গত মাস থেকে কমিশনগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। কমিশনগুলোকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এই হিসেবে জানুয়ারির প্রথম দিকে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

জনপ্রশাসন সংস্কারকাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেছেন কমিশন প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। তিনি জানান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কাজ পুরোদমে চলছে। ইতোমধ্যে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সবার মতামত সংগ্রহ শুরু হয়েছে। কমিশনের সদস্যরাও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সফর করে জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন পেশ করবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন। পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন বলেন, পুলিশ সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে ১০টি সভা করেছে। পাশাপাশি অংশীজনের সঙ্গেও বৈঠক করেছে। জনসাধারণের মতামত চেয়ে একটি প্রশ্নমালা প্রস্তুত করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। কিছু আইন ও বিধি সংশোধনের প্রস্তাব এসেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। মব নিয়ন্ত্রণে বলপ্রয়োগ পদ্ধতি পরিবর্তন করার প্রস্তাব নিয়ে কাজ চলছে। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর কিছু ধারা পরিবর্তন করার জন্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। 

নির্বাচন সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বৈঠকে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। তার কমিশন প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে। অনুপস্থিত ভোটারদের জন্য পোস্টাল ব্যালট নিয়ে কাজ চলছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে ভোটার তালিকার সমন্বয় করা হচ্ছে। নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে জোর দিচ্ছে নির্বাচন সংস্কার কমিশন। এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অংশীজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি তুলে ধরেন কমিশন প্রধান ইফতেখারুজ্জামান। তার কমিশন ইতোমধ্যে ১০টি সভা করেছে। অংশীজনদের কাছ থেকে ও তথ্য সংগ্রহ করেছে। ইতোমধ্যে ২০০-এর বেশি প্রস্তাব পেয়েছেন। সেগুলো এখন বিশ্লেষণ করছেন। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের কাজও এগিয়ে চলছে। কমিশন অংশীজনদের সঙ্গে সভা করেছে। আগামী সপ্তাহে আরও দু-একটি সভা হতে পারে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, তার কমিশন অন্তত ১০টির মতো সভা করেছে। তারা সাতটি বিষয় চিহ্নিত করেছেন। এখন সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন। 

জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা যাতে টেকসই হয়, সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। সরকার যে সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জনমতকে প্রাধান্য দিতে হবে। অংশীজনের মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ ক্ষেত্রে। একটি টেকসই, সমন্বিত ও যুগোপযোগী সংস্কার উদ্যোগ নিতে পারলে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণ সাধিত হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প  বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৬ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প 
বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন। দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন ছিল এটি। নির্বাচনি প্রচারে এক প্রার্থী আরেক প্রার্থীকে ঘায়েল করতে সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করেছেন। রাজনৈতিক বক্তব্যের বাইরে গিয়ে অনেক সময় তারা ব্যক্তিগত আক্রমণেও লিপ্ত হন। ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে অবশেষে জয়ের মুকুটটি পেলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে ট্রাম্প ২০১৬ সালে এক মেয়াদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।

 দেশটিতে সব অঙ্গরাজ্য মিলিয়ে ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। আর হোয়াইট হাউসে অবস্থান নিশ্চিত করতে হলে কোনো প্রার্থীকে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হয়। রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প তা নিশ্চিত করেছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের ফলই শেষ কথা। জয়ী হওয়ার পর ফ্লোরিডায় জনসমক্ষে গতকাল বুধবার এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্র আবার ফিরে পেয়েছি।’ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এবং গণতন্ত্রের সূতিকাগারখ্যাত দেশটির নির্বাচনের ওপর নিবিড় দৃষ্টি ছিল বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষের। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক সূচক কাজ করে। কমলা হ্যারিস দেশের জনগণকে কী দিতে পারবেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি বলে অনেকে অভিযোগ করেন। আর ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করবেন। ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি। এটি চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিতে হবে। যা দেশটির একবিংশ শতাব্দীর নীতির পরিপন্থি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করেছে।

 নির্বাচনের প্রায় ছয় মাস আগে গত ৩০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের টাইম সাময়িকীতে এক সাক্ষাৎকারে এরিক কোর্টেলিসকে ট্রাম্প বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি অবৈধ অভিবাসীদের জন্য বন্দিশিবির নির্মাণ করবেন। কথা না শুনলে অ্যাটর্নি জেনারেলকে বরখাস্ত করার অভিপ্রায়ের কথাও সাংবাদিকদের বলেন ট্রাম্প। তিনি এও বলেছেন, তিনবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য সংবিধান সংশোধনের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান একজনকে দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ দেয় না। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পদ বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো শুধু আলংকারিক বা আনুষ্ঠানিক কোনো পদ নয়। বরং এটি দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং বিশ্বে নানা ধরনের প্রভাব পড়ে ওই পদে বিশ্বমঞ্চে কে বসেছেন তার ভিত্তিতে। যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রভাব পৃথিবীব্যাপী। যা ভূরাজনীতিতেও বিরাজমান। বিশ্বে এই মুহূর্তে বড় দুটি যুদ্ধ চলমান। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন-ইরান এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। সারা বিশ্ব এই যুদ্ধের গ্লানি বয়ে বেড়াচ্ছে। করোনা মহামারি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয় এ যুদ্ধ। যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। আমেরিকান নয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেছেন। নিশ্চয়ই এখন তিনি এ যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

 বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবেন। যুক্তরাষ্ট্র একটি অভিবাসী দেশ। অভিবাসীদের ব্যাপারে আমরা ট্রাম্পের মনোভাবের পরিবর্তন আশা করছি। 
নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খবরের কাগজের পক্ষ থেকে প্রাণঢালা অভিনন্দন।

অস্থির চালের বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ এএম
অস্থির চালের বাজার
সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

গ্রামের ঘরে ঘরে এখন নতুন ধানের ঘ্রাণ। আমনের ভরপুর উৎপাদন সত্ত্বেও বাজারে বেড়েই চলেছে চালের দাম। এর কারণ হিসেবে ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা দূষছেন মিলমালিকদের। তাদের অভিযোগ, চালকলের মালিকদের কারসাজির কারণেই চালের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। বেশি মুনাফা লাভের আশায় তারা চাল মজুত করে রাখেন। চালের সংকট না থাকলেও বাজারে সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটছেন। এ কারসাজির সঙ্গে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান, বড় মিলার ও উৎপাদন অঞ্চলের কিছু পাইকারি ব্যবসায়ী জড়িত। সরকারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিল বা বাজারে চালের কমতি নেই। সরকারকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়াচ্ছেন। প্রয়োজনে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। 

গত এক মাসে চালের দাম ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। চালের সরবরাহ বাড়াতে আমদানিতে উৎসাহ দিচ্ছে সরকার। বেনাপোল বন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মো. মহসিন মিলন খবরের কাগজকে বলেন, সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। চাল আমদানির ক্ষেত্রে দু-চারজনের ওপর নির্ভরশীল না থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে, যেন সবাই চাল আমদানি করতে পারেন। তাহলে চালের দাম কমে যাবে। বৃহত্তর যশোরে ২ হাজার লোক আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হলে ভোক্তারা কম দামে সব পণ্য পাবেন। মাত্র ২ ঘণ্টায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে সব পণ্য চলে আসে। তাই চালও দ্রুত ঢাকায় চলে যাবে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে চালের দাম বেশি। সর্বশেষ তথ্যমতে, ৩১ অক্টোবর সরু চাল ৭০-৮০ টাকা কেজি, মাঝারি ৫৮-৬৫ ও মোটা চাল ৫২-৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। যেখানে গত বছরের একই সময়ে এই দাম ছিল যথাক্রমে ৬০-৭১ টাকা, ৫২-৫৫ ও ৪৮-৫২ টাকা কেজি।

সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, দেশে বন্যায় ৭ থেকে ৮ লাখ টন ধানের ক্ষতি হয়েছে। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় খাদ্যের মজুত কম নেই। চালের বিকল্প বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। সরকার চালের ওপর শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেওয়া মাত্র সাধারণত চালের দাম কমে যায়। এবার সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার পরও তা কমছে না। 

আমদানিকারকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যসচিব বলেন, ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে পিপিআর-২০০৮ আইন ফলো করে খাদ্য আমদানি 
করা হচ্ছে। কোনো মনোপলি হচ্ছে না। যে কেউ চালসহ খাদ্য আমদানি 
করতে পারবেন। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে এ পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন গুদামে ১৪ লাখ ৩০ হাজার টন খাদ্য মজুত রয়েছে। এর মধ্যে চাল ৯ লাখ ৮০ হাজার টন ও গমের মজুত ৪ লাখ ৫০ হাজার টন।

ভরা মৌসুমে চালের বাজার অস্থির হওয়ার পেছনে যেসব সিন্ডিকেট রয়েছে তা ভাঙতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেসব সুবিধাভোগী চালের মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন, তাদের ওপর নজরদারি বাড়িয়ে কঠোর অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এমনিতেই নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস। তার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য চাল নিয়ে চলছে কারসাজি। এগুলো শক্ত হাতে প্রতিহত করার সময় এসেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সেটিই প্রত্যাশা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখুক

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৫ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখুক

ক্ষণগণনার দিন পেরিয়ে ক্ষণমুহূর্তের দিকে এগিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে চার বছর পরপর নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবারটি এ রকমই লাল-অক্ষরে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এই দিনেই অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। আজ সেই দিন। কিন্তু আমাদের বসবাস পূর্ব গোলার্ধে। সময়ের দিক থেকে আমরা এগিয়ে। দিন-রাতের ব্যবধান- কোথাও দশ, কোথাও বারো ঘণ্টার মতো। আমাদের সময় অনুসারের মঙ্গলবার রাতে আমেরিকায় ভোট গ্রহণ করা হবে। 
এবার ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পদপ্রার্থী দুজন- কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। হ্যারিস ডেমোক্র্যাটদলীয় প্রার্থী, ট্রাম্প রিপাবলিকান। হ্যারিস ভারতীয় বংশোদ্ভূত আর ট্রাম্প জন্মগতভাবে মার্কিনি। হ্যারিস ও ট্রাম্প দুজনেরই পূর্বপুরুষ অভিবাসী হয়ে আমেরিকায় যান। দুজনেরই জন্ম আমেরিকায়। ট্রাম্পের বয়স ৭৮ আর হ্যারিসের ৬০। দুই প্রার্থীর মধ্যে আরও কিছু পার্থক্য লক্ষ করা যায়। প্রার্থী হিসেবে লৈঙ্গিক দিক থেকে হ্যারিস নারী আর ট্রাম্প পুরুষ।
 
নৃতাত্ত্বিকভাবে হ্যারিস ‘বাদামি’ আর ট্রাম্প ‘শ্বেতাঙ্গ’। ট্রাম্প এর আগে ২০১৬ সালে এক মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী নির্বাচন, অর্থাৎ ২০২০ সালে জো বাইডেনের কাছে হেরে যান। এবার আবার প্রার্থী হলেন তিনি। এভাবে দ্বিতীয়বার প্রার্থী হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বিরল। দ্বিতীয়বার হেরে যাওয়ার পর তিনি সেই পরাজয়কে মেনে নিতে পারেননি। কারচুপির অভিযোগ করেছিলেন। এবার আবার তিনি প্রার্থী হলেন। অন্যদিকে হ্যারিস জো বাইডেনের রানিংমেট হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। শারীরিক কারণে বাইডেন নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস দলীয় মনোনয়ন পান। এ রকম ঘটনাও মার্কিন নির্বাচনে বিরল। 

সাধারণত নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয়বারের জন্য প্রার্থী হওয়া এক ধরনের রেওয়াজ ছিল। কিন্তু শারীরিক কারণে ৮১ বছর বয়সী বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে যান আর তখনই হ্যারিসের সুযোগ ঘটে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রধান দুই প্রার্থীর এই যে পরিচয়, নির্বাচনের পর নানা কারণে তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। হ্যারিস অনেক দিক থেকেই হবেন ‘প্রথম’। প্রথম নারী, প্রথম ‘বাদামি’ (কালারড), প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রেসিডেন্ট। নারী হিসেবে আমেরিকার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে অনেকেই ভিক্টোরিয়া উডহালের কথা বলে থাকেন, কিন্তু তিনি নিজেই জানিয়ে গেছেন যে প্রেসিডেন্ট হওয়ার বয়স তখন তার হয়নি। 

এবারের ভোটে মোট ১৮৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন বা ১৮ কোটি ৬৫ লাখ মার্কিনি ভোটার পপুলার ভোট দেবেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের নিয়ম অনুসারে যিনি সবচেয়ে বেশি ইলেকটোরাল ভোট পাবেন, তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। সেই ম্যাজিক সংখ্যাটি হচ্ছে ২৭০। কিন্তু নির্বাচনের আগেই বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে যে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে তাতে এবারের ‘দাঁতে নখ কামড়ানোর’ মতো রুদ্ধশ্বাস নির্বাচন হবে। সর্বশেষ জরিপে দেখা যাচ্ছে, কমলা হ্যারিস ১ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন। কিন্তু এটা তো পপুলার ভোট। ইলেকটোরাল ভোটে কে এগিয়ে যাবেন সেটাই হচ্ছে আসল কথা। অবশ্যই পপুলার ভোটই নির্ধারণ করে দেবে ইলেকটোরাল ভোটের ভাগ্য, কিন্তু যেসব রাজ্যের ভোট পেলে ইলেকটোরাল ভোটে এগিয়ে থাকা যাবে, সেই রাজ্যগুলোই ভাগ্য নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে দোদুল্যমান রাজ্যগুলোই হয়তো জয়-নির্ধারক হয়ে উঠবে। কিন্তু সেসব রাজ্য থেকেও খবর মিলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার অন্তত সাতটি দিক যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের ভাবাচ্ছে এবং এসব ইস্যুতে যে প্রার্থী ভোটারদের মন গলাতে পারবেন তিনিই এই নির্বাচনে জয়ী হবেন। ইস্যুগুলো হচ্ছে অর্থনীতি, মুদ্রাস্ফীতি, গর্ভপাত, প্রজননস্বাস্থ্য, গণতন্ত্র, সীমান্ত নিরাপত্তা, অভিবাসন, পররাষ্ট্রনীতি, জলবায়ু ও জ্বালানি নীতি। যুক্তরাষ্ট্র একটি বহুত্ববাদী জনগোষ্ঠী-অধ্যুষিত রাষ্ট্র। নানা ধর্মের মানুষ যেমন বাস করে, তেমনি আছে নানা ভাষা ও নৃগোষ্ঠীর মানুষ। অভিবাসী জনগোষ্ঠীও নানা দিক থেকে বিভক্ত। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গাজা, ইরান ও লেবাননে ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণ ওই অঞ্চলের আরব-আমেরিকান মুসলিম জনগোষ্ঠীকে হ্যারিসের ভোট প্রাপ্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে। গণতন্ত্র, গর্ভপাত ও জলবায়ু নীতির কারণে আবার তার বাক্সে ভোট পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নারী আর বাইডেনের উত্তরাধিকার হিসেবে তিনি সুবিধা-অসুবিধা-  দুইয়েরই মুখোমুখি হতে পারেন। 

অন্যদিকে ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গ পুরুষ হওয়ায় পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিসম্পন্ন পুরুষের ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মধ্যপ্রাচ্য-নীতি, বিশেষ করে গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার অবসান ঘটানো কিংবা স্থিতাবস্থা আনার বিষয়ে তিনি সুবিধা পেতে পারেন। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়েও জনমত তার দিকে ঝুঁকতে পারে। তাকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা দেবে মুদ্রাস্ফীতির সংকট। মার্কিনিরা এই বিষয়টি নিয়ে অনেক বেশি ভাবছে। সংবাদপত্রের বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে এমনই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে গণতন্ত্রকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা, গর্ভপাত ও প্রজনন সমস্যাকে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণেও তার বাক্সে আশানুরূপ ভোট না-ও পড়তে পারে। বাংলাদেশের দিক থেকে যদি বিবেচনা করা যায় তাহলে অনেকেরই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আছে এই নির্বাচনের প্রতি। রাজনৈতিক দিক থেকেও বাংলাদেশের অনেকে এই নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি ডায়াসপোরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন বলে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি জানিয়েছেন।
 
নির্বাচন সব দিক থেকে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা চাই এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনটি আগের নির্বাচনগুলোর মতো সুন্দরভাবে সম্পন্ন হোক। ট্রাম্প আগেরবার ক্যাপিটল হিলে আক্রমণের যে প্ররোচনা দিয়েছিলেন, এবার হেরে গেলে তা থেকে বিরত থাকবেন। 
বাংলাদেশের মানুষ যাতে এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সে দেশে শান্তিপূর্ণভাবে পূর্ণ অধিকার নিয়ে বসবাস করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত হোক। বাংলাদেশের সঙ্গে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে যিনিই নির্বাচিত হন, সুসম্পর্ক বজায় রাখবেন। আমাদের সমৃদ্ধি আর বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমেরিকার ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্প- যিনিই জয়ী হন, তাকে খবরের কাগজের পক্ষ থেকে অগ্রিম অভিনন্দন।