ঢাকা ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
English

অস্থির চালের বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ এএম
অস্থির চালের বাজার
সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

গ্রামের ঘরে ঘরে এখন নতুন ধানের ঘ্রাণ। আমনের ভরপুর উৎপাদন সত্ত্বেও বাজারে বেড়েই চলেছে চালের দাম। এর কারণ হিসেবে ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা দূষছেন মিলমালিকদের। তাদের অভিযোগ, চালকলের মালিকদের কারসাজির কারণেই চালের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। বেশি মুনাফা লাভের আশায় তারা চাল মজুত করে রাখেন। চালের সংকট না থাকলেও বাজারে সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটছেন। এ কারসাজির সঙ্গে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান, বড় মিলার ও উৎপাদন অঞ্চলের কিছু পাইকারি ব্যবসায়ী জড়িত। সরকারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিল বা বাজারে চালের কমতি নেই। সরকারকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়াচ্ছেন। প্রয়োজনে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। 

গত এক মাসে চালের দাম ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। চালের সরবরাহ বাড়াতে আমদানিতে উৎসাহ দিচ্ছে সরকার। বেনাপোল বন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মো. মহসিন মিলন খবরের কাগজকে বলেন, সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। চাল আমদানির ক্ষেত্রে দু-চারজনের ওপর নির্ভরশীল না থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে, যেন সবাই চাল আমদানি করতে পারেন। তাহলে চালের দাম কমে যাবে। বৃহত্তর যশোরে ২ হাজার লোক আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হলে ভোক্তারা কম দামে সব পণ্য পাবেন। মাত্র ২ ঘণ্টায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে সব পণ্য চলে আসে। তাই চালও দ্রুত ঢাকায় চলে যাবে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে চালের দাম বেশি। সর্বশেষ তথ্যমতে, ৩১ অক্টোবর সরু চাল ৭০-৮০ টাকা কেজি, মাঝারি ৫৮-৬৫ ও মোটা চাল ৫২-৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। যেখানে গত বছরের একই সময়ে এই দাম ছিল যথাক্রমে ৬০-৭১ টাকা, ৫২-৫৫ ও ৪৮-৫২ টাকা কেজি।

সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, দেশে বন্যায় ৭ থেকে ৮ লাখ টন ধানের ক্ষতি হয়েছে। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় খাদ্যের মজুত কম নেই। চালের বিকল্প বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। সরকার চালের ওপর শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেওয়া মাত্র সাধারণত চালের দাম কমে যায়। এবার সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার পরও তা কমছে না। 

আমদানিকারকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যসচিব বলেন, ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে পিপিআর-২০০৮ আইন ফলো করে খাদ্য আমদানি 
করা হচ্ছে। কোনো মনোপলি হচ্ছে না। যে কেউ চালসহ খাদ্য আমদানি 
করতে পারবেন। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে এ পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন গুদামে ১৪ লাখ ৩০ হাজার টন খাদ্য মজুত রয়েছে। এর মধ্যে চাল ৯ লাখ ৮০ হাজার টন ও গমের মজুত ৪ লাখ ৫০ হাজার টন।

ভরা মৌসুমে চালের বাজার অস্থির হওয়ার পেছনে যেসব সিন্ডিকেট রয়েছে তা ভাঙতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেসব সুবিধাভোগী চালের মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন, তাদের ওপর নজরদারি বাড়িয়ে কঠোর অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এমনিতেই নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস। তার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য চাল নিয়ে চলছে কারসাজি। এগুলো শক্ত হাতে প্রতিহত করার সময় এসেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সেটিই প্রত্যাশা।

ঘুরে দাঁড়ানোর অর্থনীতি  উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০০ পিএম
ঘুরে দাঁড়ানোর অর্থনীতি 
উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দেশের অর্থনীতি। রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের অবস্থান মোটামুটি সন্তোষজনক। স্বস্তি-অস্বস্তির ডামাডোলে পড়ে মূল্যস্ফীতিতে বেশ সময় ধরে চলছে খরা। অর্থনীতির রাজস্ব ঘাটতির বোঝা কাঁধে। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ও বিনিয়োগ দুটোই ঋণাত্মক পর্যায়ে নেমেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপি বাস্তবায়নের হার গত এক যুগের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। দুর্বলতা কাটেনি ব্যাংক খাতে। উৎপাদন এবং কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধিতে শ্লথ গতি। রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাকশিল্প। এ খাতে শ্রমিক অসন্তোষ দূর হয়নি। সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কীভাবে রুগ্‌ণ অর্থনীতিকে চাঙা করা যায়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নানা চেষ্টার পর দুর্বল অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তাদের মতে, অর্থনীতি সচল হওয়ার অন্যতম পূর্ব শর্ত হলো, স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। 

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অর্থনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতি বড় চ্যালেঞ্জ। রিজার্ভের স্থিতিশীলতা ও সন্তোষজনক সুদের হারের মাধ্যমে এ অবস্থার উত্তরণ হবে। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ (গত অক্টোবর) তথ্য অনুযায়ী, শিল্প উৎপাদনে মন্দার কারণে গত অক্টোবরে ২০২৩-২৪ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি প্রায় অর্ধেকে নেমে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অথচ এর আগের অর্থবছরের জিডিপির এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ২১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। 

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ উদ্বেগজনকভাবে কমে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা অর্থনীতির স্থবিরতার লক্ষণ বলে গণ্য করা হয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার ওষুধ হচ্ছে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির ব্যবহার। আর জিডিপি প্রবৃদ্ধির জন্য দরকার সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকটিও দেখতে হবে। সে জন্য উৎপাদনশীল খাতে যাতে যথেষ্ট ঋণপ্রবাহ থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ দরকার।

 দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে দেশে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া, জ্বালানি পণ্যের সংকট, সুদহার বৃদ্ধি ও দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপে থাকবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, টাকার অবমূল্যায়নের প্রভাবে মূল্যস্ফীতির চাপ অব্যাহত থাকবে। আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমবে। জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদানও কমে যেতে পারে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী খবরের কাগজকে বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা বাড়লে উৎপাদন বাড়ে। বর্তমান ঋণের চাহিদা একদম কমে গেছে। ফলে উৎপাদন খাতে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। মূল কথা হচ্ছে, উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ড আরও বেগবান করতে হবে। তাহলে বেসরকারি খাতের ঋণের চাহিদা বাড়বে। যা উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। প্রবৃদ্ধি বাড়লে কর্মসংস্থান ও বাড়বে। 

বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উদ্যোগগুলোর যথার্থ মূল্যায়ন দরকার। রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে যে সুবাতাস ছড়িয়েছে, তার প্রভাব থাকতে হবে পুরো অর্থনীতিতে। এ ছাড়া অর্থনীতির দুর্বল খাতগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলোর সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দেশের বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।

রাজধানীতে যানজট ও দুর্ঘটনা প্রধান সড়কগুলো ব্যাটারিচালিত রিকশামুক্ত রাখুন

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১১ এএম
রাজধানীতে যানজট ও দুর্ঘটনা
প্রধান সড়কগুলো ব্যাটারিচালিত রিকশামুক্ত রাখুন

ব্যাটারিচালিত রিকশা ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ বাহন হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে নগরবাসীর মধ্যে এ নিয়ে রয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। প্রথমে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় চলাচল শুরু করলেও পর্যায়ক্রমে তা ঢাকাসহ রাজধানীর উপকণ্ঠে ছড়িয়ে পড়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যান বা ইজিবাইক রাজধানীর অলিগলি ছাপিয়ে রাজধানীর মূল সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। লাখ লাখ মানুষের রুটিরুজির সঙ্গে জড়িয়ে গেলেও তিন চাকার এ বাহনে যেসব সরঞ্জাম ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলো আইনের চোখে অবৈধ।

 এই বাহনে ব্যবহার করা হয় সিসাযুক্ত বা পাউডার ব্যাটারি এবং বৈদ্যুতিক চার্জিং স্টেশন। এর কোনোটিই ব্যবহারের আইনি বৈধতা নেই। বিআরটিএ বা সিটি করপোরেশন এই বাহনের কোনো লাইসেন্সও দেয় না। ব্যাটারিচালিত রিকশার বেপরোয়া গতি এবং কাউকে ‘কেয়ার না করার’ বিষয়টি নগরবাসী আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাহনটি বন্ধের উদ্যোগও সফল হয়নি।

সূত্রমতে, বিগত সরকারের আমলে স্থানীয় পুলিশ ও ক্ষমতাধর নেতাদের ম্যানেজ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যান ও ইজিবাইকের চলাচল শুরু হয়। সুযোগটা লুফে নেয় রিকশা গ্যারেজের মালিক ব্যবসায়ীরা। কোনো কোনো গ্যারেজ মালিকের দেড় শ থেকে দুই শ পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। এগুলো ভাড়ায় চলে। ব্যক্তিমালিকানাধীন অনেক দরিদ্র চালকও তিন চাকার এই গাড়ির আয় দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। 

পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, এই বাহনকে এখন আর রুখতেও পারছে না ট্রাফিক পুলিশ বা দায়িত্বশীলরা। এরই মধ্যে দাবি আদায়ের জন্য আবারও সংঘবদ্ধ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যান ও ইজিবাইক শ্রমিক সংগঠনগুলো। ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যান বা ইজিবাইকে ব্যবহৃত হয় সিসাযুক্ত পাউডার ব্যাটারি। এতে ৬০ শতাংশ সিসা থাকে। আগুনে পোড়ানোর সময় সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করা না হলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়। সিসা পোড়ানোর ফলে অনেক ক্ষেত্রে ক্যানসারের মতো ব্যাধির শঙ্কা তৈরি হয়। 

এ ছাড়া খোলা জায়গায় সিসা পোড়ানো এবং নাড়াচাড়া করার ফলে দ্রুত পরিবেশের সঙ্গে মিশে গিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। পরিবেশের এই ঝুঁকি বিবেচনা করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাটারি ভাঙা বা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে সিসা প্রক্রিয়াজাত করতে পারবে না। 

তথ্যমতে, ঢাকা শহরে কমবেশি প্রায় ৩ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। রাজধানীর চারপাশের এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার শত শত গ্যারেজ ও কারখানা গড়ে উঠেছে। এর সঙ্গে জড়িত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় উঠে এসেছে প্রতি রিকশার বিপরীতে চালক বা শ্রমিকের সংখ্যা ১ দশমিক ৫ জন, অর্থাৎ একটি রিকশা পালাক্রমে একাধিক ব্যক্তি চালিয়ে থাকেন।

 গ্যারেজ মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার একটা নীতিমালা করে বৈধভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানোর বা ব্যবসা করার সুযোগ দিলে সব ঝামেলা মিটে যাবে। কিছু দরিদ্র মানুষ রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন, কাজেই এটা বন্ধ না করে বা জটিলতা সৃষ্টি না করে বিষয়টি মানবিকভাবে দেখা দরকার বলে মনে করছেন তারা। 

রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে দিনে দিনে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও যানজট। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলাচলের কারণে রাস্তার শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। প্রধান সড়কগুলোয় এ ধরনের যান চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনারও বলেছেন, ব্যাটারিচালিত যান প্রধান সড়কের চলাচল করতে দেওয়া হবে না। ব্যাটারিচালিত যান একেবারেই নিষিদ্ধ না করে একটা নিয়মের মধ্যে রাখতে হবে। এ ধরনের যানের চালকদের জন্য সরকারকে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। আইন অমান্য করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে প্রধান সড়কগুলোয় শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হয়।

 

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কোন্নয়নে মতৈক্য  দুই দেশের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হোক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬ এএম
ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কোন্নয়নে মতৈক্য 
দুই দেশের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হোক

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। ধীরে ধীরে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। নিকট দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে আস্থা ও বোঝাপড়ার সংকটের এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকায় গত সোমবার অনুষ্ঠিত হলো পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক। এই বৈঠক ছিল দুই দেশের মধ্যে অনেকটা আস্থা ও স্বস্তির। বৈঠকের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে এবং বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে ভারত। ঢাকা সফরে এসে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, এই সম্পর্ক হবে ইতিবাচক, গঠনমূলক ও পারস্পরিক স্বার্থনির্ভর। ভারত চায় দুই দেশের ইতিবাচক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পর্ক। তিনি বলেন, ‘অতীতেও আমাদের সেই সম্পর্ক ছিল এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখতে চাই। এই সম্পর্ক হচ্ছে জনগণকেন্দ্রিক, যা সবার জন্য কল্যাণকর’।

গত কয়েক মাস ধরে দুই দেশের সম্পর্কে আস্থা ও বিশ্বাসের ঘাটতি ছিল বলে স্বীকার করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন বলেন, এই ঘাটতি পূরণে এই বৈঠকটি ছিল প্রাথমিক পদক্ষেপ। এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর আক্রমণের মতো দুঃখজনক কিছু ঘটনার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারত আশা করছে, সম্পর্ক বেগবান করতে বাংলাদেশ ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে বিষয়গুলো দেখবে। 

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত বৈরী আচরণ নিয়ে ভারতের গণমাধ্যম যে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তা মোটেও কাম্য নয়। এসব ভুল তথ্য প্রকাশের জন্যই দুই দেশের সম্পর্কে অনেক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই বৈঠকের মাধ্যমে তা আলোচনায় উঠে আসে এবং ঘাটতি কমে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক থাকা উচিত। 

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মাঝে মাঝেই যে হত্যাকাণ্ড হয় তা খুবই দুঃখজনক। এটা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। সীমান্তে যে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে তা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে বৈঠকে উল্লেখ করে জসীম উদ্দিন বলেন, সীমান্তে কোনো হত্যাকাণ্ড আর দেখতে চাই না। সীমান্তে যেকোনো ধরনের মাদক বা চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। 

৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের জনগণ বিপাকে পড়েছে ভারতীয় ভিসা পেতে। এতে দেশের নাগরিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং সেই সঙ্গে পর্যটকরা ভ্রমণ করতে পারছে না। পররাষ্ট্রসচিবের এই বৈঠকে ভারতীয় ভিসা দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলে জানান মো. জসীম উদ্দিন।

গত সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির সাক্ষাৎ শেষে বন, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে দুই দেশের মধ্যে কালো মেঘ এসেছে, সেই মেঘটি দূর করতে হবে। বাংলাদেশও বলেছে, এটি দূর করতে হবে। 

কোনো রাজনৈতিক দলের কারণে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক বিনষ্ট হতে পারে না। প্রতিবেশী দেশ আর রাজনৈতিক দল দুটো ভিন্ন জিনিস। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে না। দেশের পররাষ্ট্রনীতি তার নিজস্ব গতিতে চলবে। বাংলাদেশ-ভারত প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বহু আগে থেকেই সম্পর্ক ভ্রাতৃত্বমূলক এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ। সেই সম্পর্ক কোনো রাজনৈতিক কারণে শিথিল হতে পারে না। সার্কভুক্ত ও প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদশ-ভারত সম্পর্ক আরও বন্ধুত্বসুলভ হতে হবে। ঢাকা-দিল্লি একে অন্যের শত্রু নয়, বন্ধু। বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আরও জোরদার হতে হবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।

স্বৈরশাসক বাশারের পতন নিপীড়নমুক্ত গণতান্ত্রিক সিরিয়ার অপেক্ষায়

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১০ পিএম
স্বৈরশাসক বাশারের পতন
নিপীড়নমুক্ত গণতান্ত্রিক সিরিয়ার অপেক্ষায়

মধ্যপ্রাচ্যের ভূমধ্যসাগরীয় দেশ সিরিয়ায় নতুন সূর্যোদয় হয়েছে। বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের মাত্র ১২ দিনের ঝোড়ো অভিযানে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সিংহাসন। দুই যুগ ধরে দেশ শাসন করার পর ‘স্বৈরশাসকে’র কলঙ্ক নিয়ে গতকাল তিনি রাশিয়ায় পালিয়ে গেছেন। 

বহু নৃগোষ্ঠী, বহু ধর্মের সহনশীল ধর্মনিরপেক্ষ দেশ সিরিয়া। এ দেশে সুন্নিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে তারা নানা গোষ্ঠীতে বিভক্ত। এদের বাইরেও রয়েছে আরও কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠী- আলউত, শিয়া প্রভৃতি। বাশার এই আলাউত গোষ্ঠীর বংশোদ্ভূত বলে তাদের স্বার্থ রক্ষা করতেন। নিজের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সেনাবাহিনী এবং দেশের ভেতরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে ব্যবহার করেছেন। ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী রুশ-ইরান অক্ষশক্তির সঙ্গে ছিল তার সখ্য।

একুশ শতকের সূচনা বর্ষ, অর্থাৎ ২০০০ সালে বাশার আল-আসাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। পিতা হাফেজ আল-আসাদের ৩০ বছরের শাসনের পর তিনি তার স্থলাভিষিক্ত হন। শুরুতে বাশার ‘সংস্কার’ কর্মসূচির কথা বললেও ধীরে ধীরে নিজের ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ আর নির্বিঘ্ন করার জন্য গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরতে থাকেন। বাশারের শাসনামলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে দেশটি গৃহযুদ্ধে জর্জরিত ছিল। বাশার এই গৃহযুদ্ধকে জিইয়ে রেখেছেন। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। সংকট ২০১১ সালে ‘আরব বসন্তে’র সময় তুঙ্গে ওঠে। তিন লাখ মানুষ মারা যায়। এক লাখ মানুষ হয় বিলুপ্ত অথবা হারিয়ে গেছে অথবা জোরপূর্বক তাদের বিতাড়িত করা হয়েছে। কোথায় তারা, আজও আর তার হদিস মিলবে না। 

এভাবেই সাধারণ সিরীয়দের জীবনে সংকটের শুরু। মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ৬০ লাখ সিরীয় শরণার্থী হিসেবে বিভিন্ন দেশে মানবেতর জীবনযাপন করছে। হাজার হাজার মানুষকে বিনা বিচারে চরম নির্যাতন আর অবমাননাকর বন্দিজীবন কাটাতে হয়েছে। অবশেষে সিরীয়দের জীবনে এল সেই সোনালি সময়। প্রায় ৫০ বছরের স্বৈরশাসনের পর মুক্ত-স্বাধীন নতুন সিরিয়ার উদ্ভব ঘটেছে। বন্দিত্ব থেকে মুক্ত সিরিয়া আনন্দে ভাসছে। নতুন স্বপ্ন সিরীয়দের চোখেমুখে। এই স্বপ্ন যেমন মুক্তির, তেমনি ভবিষ্যতের মুক্ত-স্বাধীন-মানবিক সিরিয়ার। 

সিরিয়ার বিপ্লবীরা প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সশস্ত্র সংগ্রামের পর দেশকে মুক্ত করেছে। ‘বিপ্লব’ বলতে যা বোঝায় সেটাই তারা করেছে। তাদের ছিল সংগ্রামকালীন সুস্পষ্ট ভাবনা ও কৌশল। বিপ্লব সফল হলে কীভাবে দেশ শাসিত হবে ছিল সেই পরিকল্পনা। সিরিয়ার এই বিপ্লবে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন সেই আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি শুরুতে ছিলেন ইসলামি চরমপন্থি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কিত ‘ইসলামিস্ট’। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি মতাদর্শিকভাবে হয়ে উঠেছেন ‘জাতীয়তাবাদী’। ধর্মদ্বন্দ্ব, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব- সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে সিরিয়ার সমগ্র জনগোষ্ঠীকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করেছেন।

 বাশারের দেশ ত্যাগ করার পর বিজয়োল্লাসের মধ্যে তিনি এই জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছেন। জাতীয় সম্পদ যাতে ধ্বংস করা না হয়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি সাংবিধানিক ব্যবস্থা রক্ষা করে বাশারের নিয়োগ করা প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজী আল-জালালি ক্ষমতা হস্তান্তর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন বলেও ঘোষণা করেছেন। 

সন্দেহ নেই, বিপ্লবের পথরেখা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন আবু মোহাম্মদ আল-জোলানিসহ তার বিপ্লবী সতীর্থরা। ফলে বিপ্লবোত্তর পরিবেশে সিরিয়ার মানুষ মুক্তির আনন্দে ভাসছেন ঠিকই, কিন্তু ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছেন না। এই বিজয়ের কোনো নেতিবাচক সংবাদ বিশ্ব গণমাধ্যমে আসেনি। এভাবেই সিরিয়ার বিপ্লবীদের সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা পাচ্ছে বহির্বিশ্ব। আমরাও তাদের এই বিপ্লবকে স্বাগত জানাই। 

গ্রিক দার্শনিক প্লেটো বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে স্বৈরশাসনের উদ্ভব ঘটে।’ এখন সিরিয়ায় সেই স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেছে। আশা করি, দেশটিতে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ঘটবে। ফিরে আসবে শান্তি। বিশ্ববাসীর মতো আমরা নিপীড়নমুক্ত গণতান্ত্রিক সিরিয়ার অপেক্ষায় থাকব। সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে তারা যে সংগ্রাম করছিলেন, আমরা তার ভবিষ্যৎ সাফল্য কামনা করছি। সিরীয় জনগোষ্ঠীর উদ্দেশে জ্ঞাপন করছি উষ্ণ অভিনন্দন।

রাজনৈতিক ও জন-আকাঙ্ক্ষার দাবি  সংস্কার শেষে আগামী বছরই নির্বাচন হোক

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬ এএম
রাজনৈতিক ও জন-আকাঙ্ক্ষার দাবি 
সংস্কার শেষে আগামী বছরই নির্বাচন হোক

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দুটি বিষয় সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে- একটি ‘সংস্কার’, অন্যটি ‘নির্বাচন’। রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ যেমন সংস্কার চাইছেন, তেমনি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশ নিয়মতান্ত্রিক সুস্থ রাজনীতিতে ফিরে আসুক সেই আকাঙ্ক্ষাও ব্যক্ত করছেন। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল সরাসরি ‘রোডম্যাপ’ও দাবি করেছে। 

গত ১৭ নভেম্বর সরকারের শতদিনের মেয়াদপূর্তি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও বলেছিলেন, নির্বাচন কবে হবে, এই প্রশ্ন জনগণের মতো সরকারেও সারাক্ষণ আছে। সরকার নির্বাচনের ট্রেনযাত্রা শুরু করেছে। ‘এটা আর থামবে না। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের অনেক কাজ সেরে ফেলতে হবে। এই ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছাবে সেটা নির্ভর করবে কত তাড়াতাড়ি আমরা তার জন্য রেললাইনগুলো বসিয়ে দিতে পারি, আর তা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের মাধ্যমে।’ প্রধান উপদেষ্টা তার এই বক্তব্যে ‘অনেক কাজ’ বলতে ইঙ্গিত করেছিলেন সংস্কারের ওপর।

 সরকারের পক্ষ থেকে এও বলা হয়েছিল, সংস্কার চলবে, পাশাপাশি নির্বাচনের কাজও এগিয়ে যাবে। কিন্তু নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে, সেই কথাটি সুনির্দিষ্ট করে বলেননি। রাজনৈতিক দলগুলো যে নির্বাচনি ‘রোডম্যাপ’ দাবি করে আসছিল, তা নিয়ে সরকার এখন পর্যন্ত মুখ খোলেনি। তবে দিন দিন নির্বাচনের প্রসঙ্গটি সামনে চলে আসছে। এ নিয়েই গতকাল খবরের কাগজের শীর্ষ প্রতিবেদন ছিল এ রকম- ‘আগামী বছরের শেষে নির্বাচন!’

নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কেউ কেউ যে ভাবছেন, শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের কথায় সেটি উঠে এসেছে। একটা সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘আগামী বছর নির্বাচিত সরকার দেখা যাবে।’ এরপরই তিনি বলেছেন, এটা তার ব্যক্তিগত মত। এর আগে গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান নির্বাচন যাতে ‘আঠারো মাসের মধ্যে হতে পারে’ সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। সরকারের প্রেস উইং থেকে অবশ্য এরপর জানানো হয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টাই সুবিধামতো সময়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন। কিন্তু সেই ঘোষণা এখনো আসেনি। 

এর মাঝে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করা ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের পর সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে সর্বদলীয় সংলাপ হয়েছে। ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যের। তার এই আহ্বানে সব দল ও ধর্মীয় গোষ্ঠী বিপুলভাবে সাড়া দিয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ নির্বাচনের বিষয়টিও সংলাপে উঠে এসেছিল বলে গণমাধ্যমের সূত্রে জানা যাচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ‘দ্রুত নির্বাচন দিলে কেউ ষড়যন্ত্রের সাহস পাবে না’ বলে উল্লেখ করেছেন।

 ‘যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাই’ বলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান ও ভদ্রলোকদের দিনক্ষণ বলা লাগে না, তারা অনুমান করতে পারেন আসলে কতটা সময় দেওয়া হয়েছে।’ এই ধারাতেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এর আগে বেশ কয়েকবার দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা জোনায়েদ সাকী, ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর- এরা সবাই খবরের কাগজের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে জরুরি সংস্কার শেষে নির্বাচনের কথা বলেছেন। নির্বাচন বিলম্বের ভাবনা কোনো দলেরই নেই। রাজনৈতিক পরিমণ্ডল এবং জনমানুষের মধ্যেও এ রকম আলোচনা আছে। দেশের পরিস্থিতি ভারতীয় গণমাধ্যমের ব্যাপক নেতিবাচক প্রচারে ঘোলাটে হওয়ার আগেই নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করছেন তারা।

সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল ও গণমানুষের এই আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষাপটে আমরাও মনে করি, যৌক্তিক দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। দেশের পরিস্থিতি যেভাবে মাঝে মাঝে জটিল ও অস্থির হয়ে উঠছে, তাতে নির্বাচিত সরকারের হাতে দেশ শাসনের ভার থাকাটা যথার্থ হবে। জনগণের কাছে দায়বদ্ধতার বিষয়টি হবে আরও সুনিশ্চিত। তবে জন-আকাঙ্ক্ষার যে প্রধান বিষয়- ‘সংস্কার’ সাধনের পরেই নির্বাচন হওয়া উচিত।

গণতন্ত্রই যেহেতু শেষ কথা। নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে সেই ট্রেন তার সূচনাবিন্দু ইতোমধ্যে ছেড়ে এসেছে। সুতরাং গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছানই জাতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ও অভীষ্ট লক্ষ্য হওয়া উচিত। সরকার এ দিকটির প্রতি মনোযোগী হবে বলে আমরা আশা করছি। আর প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সেটা যদি আগামী বছরের শেষের দিকে হয়, তাহলে জাতির জন্য কল্যাণকর হবে বলে আমরা মনে করি।

 

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });