গ্রামের ঘরে ঘরে এখন নতুন ধানের ঘ্রাণ। আমনের ভরপুর উৎপাদন সত্ত্বেও বাজারে বেড়েই চলেছে চালের দাম। এর কারণ হিসেবে ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা দূষছেন মিলমালিকদের। তাদের অভিযোগ, চালকলের মালিকদের কারসাজির কারণেই চালের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। বেশি মুনাফা লাভের আশায় তারা চাল মজুত করে রাখেন। চালের সংকট না থাকলেও বাজারে সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটছেন। এ কারসাজির সঙ্গে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান, বড় মিলার ও উৎপাদন অঞ্চলের কিছু পাইকারি ব্যবসায়ী জড়িত। সরকারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিল বা বাজারে চালের কমতি নেই। সরকারকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়াচ্ছেন। প্রয়োজনে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না।
গত এক মাসে চালের দাম ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। চালের সরবরাহ বাড়াতে আমদানিতে উৎসাহ দিচ্ছে সরকার। বেনাপোল বন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মো. মহসিন মিলন খবরের কাগজকে বলেন, সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। চাল আমদানির ক্ষেত্রে দু-চারজনের ওপর নির্ভরশীল না থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে, যেন সবাই চাল আমদানি করতে পারেন। তাহলে চালের দাম কমে যাবে। বৃহত্তর যশোরে ২ হাজার লোক আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হলে ভোক্তারা কম দামে সব পণ্য পাবেন। মাত্র ২ ঘণ্টায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে সব পণ্য চলে আসে। তাই চালও দ্রুত ঢাকায় চলে যাবে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে চালের দাম বেশি। সর্বশেষ তথ্যমতে, ৩১ অক্টোবর সরু চাল ৭০-৮০ টাকা কেজি, মাঝারি ৫৮-৬৫ ও মোটা চাল ৫২-৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। যেখানে গত বছরের একই সময়ে এই দাম ছিল যথাক্রমে ৬০-৭১ টাকা, ৫২-৫৫ ও ৪৮-৫২ টাকা কেজি।
সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, দেশে বন্যায় ৭ থেকে ৮ লাখ টন ধানের ক্ষতি হয়েছে। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় খাদ্যের মজুত কম নেই। চালের বিকল্প বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। সরকার চালের ওপর শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেওয়া মাত্র সাধারণত চালের দাম কমে যায়। এবার সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার পরও তা কমছে না।
আমদানিকারকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যসচিব বলেন, ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে পিপিআর-২০০৮ আইন ফলো করে খাদ্য আমদানি
করা হচ্ছে। কোনো মনোপলি হচ্ছে না। যে কেউ চালসহ খাদ্য আমদানি
করতে পারবেন। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে এ পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন গুদামে ১৪ লাখ ৩০ হাজার টন খাদ্য মজুত রয়েছে। এর মধ্যে চাল ৯ লাখ ৮০ হাজার টন ও গমের মজুত ৪ লাখ ৫০ হাজার টন।
ভরা মৌসুমে চালের বাজার অস্থির হওয়ার পেছনে যেসব সিন্ডিকেট রয়েছে তা ভাঙতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেসব সুবিধাভোগী চালের মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন, তাদের ওপর নজরদারি বাড়িয়ে কঠোর অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এমনিতেই নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস। তার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য চাল নিয়ে চলছে কারসাজি। এগুলো শক্ত হাতে প্রতিহত করার সময় এসেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সেটিই প্রত্যাশা।