
অপর্যাপ্ত ও অপরিচ্ছন্ন টয়লেটের কারণে হাসপাতালগুলোর স্যানিটেশন এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। রাজধানী নয়, ঢাকার বাইরের সরকারি হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতি আরও নাজুক। নাগরিক সচেতনতা না থাকায় এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজই (ঢামেক) নয়, রাজধানী ঢাকায় সব সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও ওয়ার্ডের টয়লেটগুলোর বেশির ভাগের অবস্থা খুবই শোচনীয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অকার্যকর এবং অপরিচ্ছন্ন টয়লেটের স্বল্পতা হাসপাতালে স্যানিটেশন চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এ কারণে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। হাত জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা না থাকায় টয়লেট ব্যবহারের পর ব্যবহারকারী যেখানে যা ধরছেন তাতেই জীবাণু লাগছে। আর সেখানে যখন অন্য কেউ স্পর্শ করছেন, সেই জীবাণু তারও হাতে লাগছে। এভাবে একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে যাচ্ছে রোগজীবাণু। অপর্যাপ্ত এবং অপরিচ্ছন্ন টয়লেটের কারণে অনেকে প্রস্রাব আটকে রাখেন। আর এ কারণে অনেকের কিডনি জটিলতা দেখা দিচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করে বলছে, অগ্রাধিকার দেওয়া হয় রোগীর চিকিৎসায়, যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং সেগুলো নষ্ট হলে রক্ষণাবেক্ষণে।
চিকিৎসায় অবহেলার কারণে রোগীর মৃত্যু হলে জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। চাকরি চলে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। কিন্তু টয়লেটের বিষয়ে কেউ কখনো কিছু জিজ্ঞেস করে না। সে জন্য এই বিষয়ে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আবার গুরুত্ব বুঝলেও তারা বিবেচনা করেন না। গুরুত্ব দেন সেবা দেওয়ার বিভিন্ন বিষয়ে। ঢামেক কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, হাসপাতালে ৭০০-এর মতো টয়লেট রয়েছে। কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া টয়লেট জীবাণুমুক্ত রাখার সামগ্রী চুরি হয়ে যায়।
কোভিড-পরবর্তী ঢাকার ১৩টি হাসপাতালের টয়লেট পরিস্থিতি জানতে একটি সমীক্ষা চালায় আইসিডিডিআরবি। এতে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সহযোগিতা করে, যা গত বছর প্লাস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ২ হাজার ৮৭৫টি টয়লেটের মধ্যে ২ হাজার ৪৫৯টি টয়লেট পরিদর্শন করে গবেষক দল। রোগীর টয়লেটসংলগ্ন বেসিনের মাত্র ২৬ শতাংশ হাত ধোয়ার জন্য একসঙ্গে পানি এবং সাবান পাওয়া যায়। বাকি ৭৪ শতাংশে একসঙ্গে সাবানও পানি পাওয়া যায়নি।
টয়লেটগুলোর একটিতেও রোগীর ব্যবহারের জন্য টয়লেট পেপার সরবরাহ করেনি গবেষক দল। বেশ কিছু টয়লেট পর্যবেক্ষণ করতে পারেননি শুধু তালাবদ্ধ থাকা বা প্রবেশের অনুমতি না পাওয়ার কারণে। স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে, ৩০ জনের ব্যবহারের জন্য একটি টয়লেট থাকার কথা কিন্তু বাস্তবে বহির্বিভাগে গড়ে ২১৪ জনের ব্যবহারের জন্য মাত্র একটি রয়েছে। কোনো এক প্রতিষ্ঠানে ৯০০ জনের জন্য একটি টয়লেট পাওয়া গেছে। ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, অপরিচ্ছন্ন টয়লেট উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে এবং কলেরা ও টাইফয়েডের মতো রোগ ছড়াতে পারে। তবু টয়লেটের দিকে কর্তৃপক্ষের নজর কম।
আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী এবং গবেষণার প্রধান তদন্তকারী ডা. মোহাম্মদ নুহু আমিন বলেন, পর্যাপ্তসংখ্যক স্যানিটেশন কর্মী নিশ্চিত করে এবং এইচসিএফএগুলোর স্যানিটেশন সুবিধাগুলো উন্নত করার জন্য টয়লেট হাইজিন এবং আইপিসি সম্পর্কে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বাংলাদেশের হাসপাতাল এবং এলএমআইসিতে টয়লেটের প্রাপ্যতা, কার্যকারিতা এবং পরিচ্ছন্ন আরও বিস্তৃতভাবে উন্নত করার জন্য মাল্টিসেক্টরাল পন্থা এবং পর্যাপ্ত অধ্যয়নের পরিকল্পনা জরুরিভাবে প্রয়োজন।
অপরিচ্ছন্ন টয়লেটের কারণে দেশের হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বহুগুণ বেড়েছে। এতে হাসপাতালগুলোতে সেবা নিতে এবং রোগীর সঙ্গে যারা আসেন তারা অনেক ভোগান্তিতে পড়েন। মশা, মাছির উপদ্রবের কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে। এ জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর টয়লেট স্থাপন, সামগ্রী বিতরণ ও দক্ষ জনবল নিয়োগ দিতে হবে। হাসপাতালগুলোতে জনদুর্ভোগ এড়াতে কর্তৃপক্ষকে আরও তৎপর হতে হবে।