ঢাকা ৩০ মাঘ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১

হাসপাতালে অপরিচ্ছন্ন টয়লেট স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:২২ এএম
হাসপাতালে অপরিচ্ছন্ন টয়লেট
স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে পদক্ষেপ নিন

অপর্যাপ্ত ও অপরিচ্ছন্ন টয়লেটের কারণে হাসপাতালগুলোর স্যানিটেশন এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। রাজধানী নয়, ঢাকার বাইরের সরকারি হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতি আরও নাজুক। নাগরিক সচেতনতা না থাকায় এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজই (ঢামেক) নয়, রাজধানী ঢাকায় সব সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও ওয়ার্ডের টয়লেটগুলোর বেশির ভাগের অবস্থা খুবই শোচনীয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অকার্যকর এবং অপরিচ্ছন্ন টয়লেটের স্বল্পতা হাসপাতালে স্যানিটেশন চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। 

এ কারণে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। হাত জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা না থাকায় টয়লেট ব্যবহারের পর ব্যবহারকারী যেখানে যা ধরছেন তাতেই জীবাণু লাগছে। আর সেখানে যখন অন্য কেউ স্পর্শ করছেন, সেই জীবাণু তারও হাতে লাগছে। এভাবে একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে যাচ্ছে রোগজীবাণু। অপর্যাপ্ত এবং অপরিচ্ছন্ন টয়লেটের কারণে অনেকে প্রস্রাব আটকে রাখেন। আর এ কারণে অনেকের কিডনি জটিলতা দেখা দিচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করে বলছে, অগ্রাধিকার দেওয়া হয় রোগীর চিকিৎসায়, যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং সেগুলো নষ্ট হলে রক্ষণাবেক্ষণে।

 চিকিৎসায় অবহেলার কারণে রোগীর মৃত্যু হলে জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। চাকরি চলে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। কিন্তু টয়লেটের বিষয়ে কেউ কখনো কিছু জিজ্ঞেস করে না। সে জন্য এই বিষয়ে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আবার গুরুত্ব বুঝলেও তারা বিবেচনা করেন না। গুরুত্ব দেন সেবা দেওয়ার বিভিন্ন বিষয়ে। ঢামেক কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, হাসপাতালে ৭০০-এর মতো টয়লেট রয়েছে। কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া টয়লেট জীবাণুমুক্ত রাখার সামগ্রী চুরি হয়ে যায়। 

কোভিড-পরবর্তী ঢাকার ১৩টি হাসপাতালের টয়লেট পরিস্থিতি জানতে একটি সমীক্ষা চালায় আইসিডিডিআরবি। এতে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সহযোগিতা করে, যা গত বছর প্লাস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ২ হাজার ৮৭৫টি টয়লেটের মধ্যে ২ হাজার ৪৫৯টি টয়লেট পরিদর্শন করে গবেষক দল। রোগীর টয়লেটসংলগ্ন বেসিনের মাত্র ২৬ শতাংশ হাত ধোয়ার জন্য একসঙ্গে পানি এবং সাবান পাওয়া যায়। বাকি ৭৪ শতাংশে একসঙ্গে সাবানও পানি পাওয়া যায়নি।

 টয়লেটগুলোর একটিতেও রোগীর ব্যবহারের জন্য টয়লেট পেপার সরবরাহ করেনি গবেষক দল। বেশ কিছু টয়লেট পর্যবেক্ষণ করতে পারেননি শুধু তালাবদ্ধ থাকা বা প্রবেশের অনুমতি না পাওয়ার কারণে। স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে, ৩০ জনের ব্যবহারের জন্য একটি টয়লেট থাকার কথা কিন্তু বাস্তবে বহির্বিভাগে গড়ে ২১৪ জনের ব্যবহারের জন্য মাত্র একটি রয়েছে। কোনো এক প্রতিষ্ঠানে ৯০০ জনের জন্য একটি টয়লেট পাওয়া গেছে। ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, অপরিচ্ছন্ন টয়লেট উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে এবং কলেরা ও টাইফয়েডের মতো রোগ ছড়াতে পারে। তবু টয়লেটের দিকে কর্তৃপক্ষের নজর কম। 

আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী এবং গবেষণার প্রধান তদন্তকারী ডা. মোহাম্মদ নুহু আমিন বলেন, পর্যাপ্তসংখ্যক স্যানিটেশন কর্মী নিশ্চিত করে এবং এইচসিএফএগুলোর স্যানিটেশন সুবিধাগুলো উন্নত করার জন্য টয়লেট হাইজিন এবং আইপিসি সম্পর্কে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বাংলাদেশের হাসপাতাল এবং এলএমআইসিতে টয়লেটের প্রাপ্যতা, কার্যকারিতা এবং পরিচ্ছন্ন আরও বিস্তৃতভাবে উন্নত করার জন্য মাল্টিসেক্টরাল পন্থা এবং পর্যাপ্ত অধ্যয়নের পরিকল্পনা জরুরিভাবে প্রয়োজন।

অপরিচ্ছন্ন টয়লেটের কারণে দেশের হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বহুগুণ বেড়েছে। এতে হাসপাতালগুলোতে সেবা নিতে এবং রোগীর সঙ্গে যারা আসেন তারা অনেক ভোগান্তিতে পড়েন। মশা, মাছির উপদ্রবের কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে। এ জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর টয়লেট স্থাপন, সামগ্রী বিতরণ ও দক্ষ জনবল নিয়োগ দিতে হবে। হাসপাতালগুলোতে জনদুর্ভোগ এড়াতে কর্তৃপক্ষকে আরও তৎপর হতে হবে।

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার  সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৪ পিএম
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার 
সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন

গত সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা আশ্বস্ত করেছেন, অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে তারা কাজ করছেন। জনগণের প্রত্যাশা, অতি দ্রুত একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে, যার মধ্য দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন হবে। ন্যূনতম সংস্কার সম্পন্ন করে আলোচনা এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব। ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের প্রথম বৈঠক হবে। বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোকে যোগদানের আহ্বান জানানো হবে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কারের পদক্ষেপগুলো ব্যাখ্যা করবেন। 

বিএনপি বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ায় জড়িত রয়েছেন মর্মে জনগণের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসনযন্ত্রকে ব্যবহার করার নানা রকম লক্ষণও প্রকাশ পাচ্ছে। যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য সুফল বয়ে আনবে না। দলটির নেতারা বলছেন, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী যথাযথ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যেকোনো দলের আত্মপ্রকাশকে তাদের দল স্বাগত জানাবে। 

নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা, গুঞ্জন ও মতবিরোধের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার এই আশ্বাস পাওয়া গেল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এর ফলে নির্বাচনের অনিশ্চয়তা দূর হওয়ার পাশাপাশি জনমনে এক ধরনের স্বস্তি ফিরে আসবে। কারণ নির্বাচন নিয়ে সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির মতপার্থক্য প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। জামায়াতে ইসলামী আগে সংস্কার পরে নির্বাচনের নীতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাস রাজনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 
‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সরকারপ্রধানকে বলেছি, এ ধরনের অভিযান আগে হয়েছিল। আগের অভিযানগুলো নিয়ে অনেক অভিযোগ ছিল। 

সেই ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। কোনোভাবেই যেন নিরপরাধ মানুষ আক্রান্ত না হন। বর্তমানে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের দাবি নিয়ে মব সংস্কৃতির নামে সীমাহীন জনদুর্ভোগ, সড়কে উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াস লক্ষণীয়। বিএনপি মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার ছয় মাস পার করলেও জনপ্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচিত সরকার না থাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের গতি স্থবির হয়ে পড়েছে। জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী, সংস্কার প্রস্তাবগুলোর সাংবিধানিক ও আইনি ভিত্তি প্রদানের জন্য একটি নির্বাচিত সংসদই কেবল উপযুক্ত ফোরাম। অবিলম্বে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি রয়েছে তাদের দলের পক্ষ থেকে। 

অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। এর মধ্য দিয়ে একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনও ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে একজন কমিশনার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় একধাপ এগিয়েছে দেশ। জনমনে স্বস্তি ফেরাতে সরকারের এ পদক্ষেপ এই মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সব দলকে নির্বাচনি প্ল্যাটফর্মে আনতে সক্ষম হবে।

 

 

অপারেশন ডেভিল হান্ট  নিরপরাধ মানুষকে যেন হয়রানি করা না হয়

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৩ পিএম
অপারেশন ডেভিল হান্ট 
নিরপরাধ মানুষকে যেন হয়রানি করা না হয়

‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। বিশেষ এই অভিযানে নেমেছে যৌথ বাহিনীর বিশেষায়িত দল। সরকারের ভাষ্য অনুসারে, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার এবং সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিহত এবং সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে চলছে 
এই অভিযান।

খবরের কাগজে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত শনিবার রাতে এই অভিযানে নেমেছে যৌথ বাহিনী। এতে সেনাসদস্যের পাশাপাশি পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্য বাহিনীর সদস্যরাও অংশ নিচ্ছেন। প্রধানত দুটি লক্ষ্য সামনে রেখে এই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সন্ত্রাসী, অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করছেন ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছেন, তাদের আইনের আওতায় আনা। গতকাল সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে এই অভিযানে ১ হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা লক্ষ করেছেন, ৮ আগস্ট সরকার গঠনের পর থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনায় দেশের সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা নানা সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জনমনে বাড়ছিল উৎকণ্ঠা। স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মাত্র এক সপ্তাহ আগে নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ‘সেন্ট্রাল কমান্ড সেন্টার’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার এবার শুধু এতে সীমাবদ্ধ না থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর লক্ষ্যে সর্বাত্মক অভিযানে নেমেছে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে অস্থিতিশীল এলাকাগুলোকে। অভিজ্ঞ মহল একে স্বাগত জানিয়েছেন।

 সুপ্রিম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, পরিস্থিতির যেভাবে অবনতি ঘটছিল, তাতে এই অভিযানের যৌক্তিকতা আছে। স্বাভাবিকভাবেই মনে করা হচ্ছে, এতে অপরাধের সংখ্যা কমে আসবে। তবে এই অভিযান নিয়ে অভিন্ন মত থাকলেও অনেকেই সরকারকে সচেতন থাকতে বলেছেন। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। এ জন্য মাঠপর্যায়ের প্রয়োজনীয় গোয়েন্দা তথ্য থাকা জরুরি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোই যুক্তিযুক্ত হবে। কোনো অবস্থাতেই নিরপরাধ বা নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না। খেয়াল রাখতে হবে, এই অভিযান যেন কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ বা বিতর্কিত না হয়। কারণ, অতীতে আমরা এ ধরনের অভিযানের সময় আইনের ব্যত্যয় ঘটতে দেখেছি। মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এবার কিছুতেই যেন তা না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। 

সাবেক পুলিশপ্রধান আবদুল কাউয়ুম বলেছেন, ‘সরিষার ভেতরে ভূত’ রয়েছে, ইতোমধ্যে এমন অভিযোগ উঠেছে। ফলে স্থিতিশীলতার পরিবর্তে পরিস্থিতি যেন অস্থিতিশীল হয়ে না ওঠে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই অভিযানের সাফল্যের ওপর দেশের অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি নির্ভর করছে। দেশের মানুষ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন করতে পারে, সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার প্রকৃত সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে। জনজীবনে দ্রুত ফিরে আসবে স্বস্তি, এটাই প্রত্যাশা।

অস্থিতিশীল অর্থনীতি  স্বস্তি ফেরাতে পদক্ষেপ জরুরি

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:২৬ এএম
অস্থিতিশীল অর্থনীতি 
স্বস্তি ফেরাতে পদক্ষেপ জরুরি

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ছয় মাসে অর্থনীতিতে স্বস্তি দিতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর সুফল পেলেও অর্থনীতি অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতিও বেশকিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে হলে জরুরি সংস্কারগুলো আগে করতে হবে। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই গতি বেড়েছে রেমিট্যান্স মজুতে। আগস্ট থেকে প্রতি মাসে টানা ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসছে দেশে। পাশাপাশি বাড়ছে রপ্তানি আয়। স্থিতিশীল হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার। রিজার্ভও মোটামুটি সন্তোষজনক অবস্থায় আছে। সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছে ২১৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। অর্থনীতির এই দুটি সূচক ইতিবাচক হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্বস্তিদায়ক অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। 

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষেত্রে সরকার চাঁদাবাজি ও মজুতদারি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ এখনো তেমনটা নিতে পারেনি। মধ্যস্বত্বভোগীদের নেটওয়ার্ক ভাঙতে এবং অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের মতো অনিয়ম বন্ধ করতে না পারায় নিত্যপণ্যের দাম কমাতে পারেনি সরকার। কিছু কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর পরও এর সুফল ভোক্তা পাচ্ছেন না। যে কারণে মূল্যস্ফীতি এখনো অনেক চড়া। তবে বিবিএসের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারিতে তার আগের মাসের তুলনায় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। যদিও মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের কাছাকাছি। সম্প্রতি সচিবালয়ে ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অর্থনীতির অবস্থা যতটা খারাপ ভাবা হচ্ছে, ততটা খারাপ নয়। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অবস্থা কখনো শ্রীলঙ্কার মতো হবে না। আগামী বাজেটে ভালো কিছু পদক্ষেপ দেখতে পাবেন।’

বর্তমান সরকার অর্থনীতিতে স্বস্তি ফেরাতে নানাভাবে চেষ্টা করলেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে এখনো। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থানের অভাব, বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমা, অস্থির পুঁজিবাজার ও বৈদেশিক বিনিয়োগে ভাটা। অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশে রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিশীলতা না থাকলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসে না। এ জন্য সরকারকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য স্থিতিশীল বিনিময় হার দরকার। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাও বাড়ানো দরকার। 

দেশে গ্যাসের অনুসন্ধান বাড়ানো দরকার, সেই সঙ্গে শিল্পে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা দরকার। 
সরকার চেষ্টা করছে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে, যাতে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পায়। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক কারণেও অনেক সময় অর্থনীতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। এ কারণে পুরোপুরি সংকটমুক্ত থাকা সম্ভব না। সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে সরকার অস্থিতিশীল অর্থনীতিতে স্বস্তি দিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। প্রত্যাশা করছি, সরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেবে।

 

রাজনীতিতে অনৈক্য  দেশের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করুন

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৩৫ পিএম
রাজনীতিতে অনৈক্য 
দেশের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করুন

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একজোট হয়ে আন্দোলন করা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব দিন দিন বাড়ছে। বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি, জামায়াত এবং ছাত্র নেতৃত্বের মধ্যে এক ধরনের মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। আলাদা বলয় তৈরি করতে নিজেদের মতো করে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে দল দুটি। ইতোমধ্যে ছাত্রদের নতুন দল গঠনের তৎপরতা চলছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন উপদেষ্টা এখনো সরকারে রয়েছেন। তারা নতুন দল গঠন করে রাজনীতিতে টিকে থাকতে চাইছেন। ছাত্রনেতারা মনে করেন আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি এবং বিএনপির আগের সরকারের কর্মকাণ্ডের কারণে জনগণ ছাত্র নেতৃত্বকে গ্রহণ করতে পারে।

 ছাত্রদের দল গঠনের বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সর্বশেষ মন্তব্যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে বিএনপি একটি সুন্দর, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে। কারণ, একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে বলে নেতা-কর্মীরা মনে করেন। জামায়াত নির্বাচনের পক্ষে থাকলেও তারা সংস্কারের জন্য সরকারকে বেশি সময় দিতে চায়। দলটি মনে করে, অনেক দেরিতে নির্বাচন হলে বিএনপির ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়বে। বিএনপি বেকায়দায় থাকলে জামায়াতের ভোট বাড়বে বলে মনে করেন ইসলামপন্থি এই দলের নেতারা। এ কারণে আগে সংস্কারের পরে নির্বাচনের পক্ষে জামায়াত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ছয় মাস পরে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা সমর্থন করেন না। তারা মনে করেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের এতদিন পরে এসে এ ধরনের ঘটনা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দীর্ঘায়িত করার একটি সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত অথবা দেশের ভিন্ন খাতে নেওয়ার প্রেক্ষাপট সৃষ্টির চেষ্টা থাকতে পারে।

 যদিও প্রধান উপদেষ্টা গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, চলতি বছরের শেষ দিকেই হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। 
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পদ্ধতিগত বা প্রক্রিয়াগত কারণে সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না তা কিন্তু নয়। নানা মত ও পথ থাকবে। তবে গণতন্ত্রের প্রশ্নে সবাইকে একমত থাকতে হবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। অন্যদিকে জামায়াতের নেতারাও মনে করেন, রাজনৈতিক দল যেহেতু ভিন্ন, তাই দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। তবে জাতীয় স্বার্থে, দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় ঐকমত্য থাকতে হবে। যারা গত ছয় মাসে জাতীয় ঐকমত্য ধরে রাখতে পারেনি এটা তাদের ব্যর্থতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র বলছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব আশাব্যঞ্জক নয়। ছাত্রদের নতুন দল আসছে। রাজনৈতিক যে ঐক্য ছিল তা অনেকটাই বিনষ্ট হয়েছে। এমন পরিস্থিতি বা অস্থিরতা প্রত্যাশিত ছিল না বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার খবরের কাগজকে বলেন, নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল। মনে রাখা দরকার, এ সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে একটা ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়ে। বিশেষ করে আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অকার্যকর, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণ হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এই সরকার সবকিছু ভালো করেছে, নিঃসন্দেহে তা না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভালো করেছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতা রয়েছে। ফলে সরকারের আরও সতর্ক থাকা দরকার। 

বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক দিকটা হারিয়ে গেছে। রাজনীতিতে অনৈক্যের সুর স্পষ্ট হয়েছে। এ কারণে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন না হলে দেশের গণতন্ত্র আলোর মুখ আর দেখবে না। গত ছয় মাসে জাতীয় ঐকমত্য স্থাপিত হয়নি সব দলের মধ্যে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য ধরে রাখার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগ দেবে।

 

ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ  বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির অবসান হোক

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম
ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ 
বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির অবসান হোক

ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই তার বিশ্ব বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর যে নিশানা সামনে এনেছেন, তা বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুন করে গভীর সংকটে ফেলতে পারে। ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বাড়তি শুল্ক আরোপের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতে। এতে মূল্যস্ফীতিতে আরও আঘাতের শঙ্কা রয়েছে। এদিকে এশিয়ার শেয়ারবাজারে ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ইউরোপের শেয়ারবাজারেও এর প্রভাব দেখা গেছে। কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর শুল্ক আরোপের পর ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর শুল্ক আরোপ করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘অবশ্যই’ এ কাজ করবে।

 শুল্ক আরোপ করা প্রসঙ্গে ট্রাম্প বিভিন্ন কারণ দেখাচ্ছেন। সেসব কারণের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ফেনটানিল ও অন্যান্য মাদকের প্রবাহ বেড়ে যাওয়া, সীমান্ত নিরাপত্তা ইস্যু ইত্যাদি। চীন, মেক্সিকো ও কানাডা দৃঢ়ভাবেই ট্রাম্পের চাপিয়ে দেওয়া শুল্কের বিরোধিতা করেছে। কানাডা ও মেক্সিকো জানিয়েছে যে, তারাও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা ভাবছে। তবে নিজ দেশে রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের সমর্থন পাচ্ছেন ট্রাম্প। কংগ্রেসওম্যান মারজোরি টেইলর গ্রিনও ট্রাম্পের এ পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শুল্ক আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রমাণিত ও শক্তিশালী উৎস। শুল্কনীতির বড় প্রভাব পড়বে জার্মানির ওপরও। চীনের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের কড়া জবাব দিয়েছে চীন। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। এমনকি তদন্ত শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সার্চ জায়ান্ট গুগলের বিরুদ্ধেও। এ ছাড়া আরও দুই মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ তালিকার আওতায় এনেছে দেশটি। চীনের ওপর ১০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের বিপরীতে বেইজিংয়ের কড়া জবাবের পর অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই দুই দেশের মধ্যে কি বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হচ্ছে? 

যুক্তরাষ্ট্র শুধু চীনের ওপর নয়, কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপ করেছিল। জবাবে তারাও পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। কানাডার জনসাধারণ যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু পণ্য বয়কট করতেও শুরু করে। পরে দেশটি জানায়, আপাতত ৩০ দিনের জন্য শুল্ক আরোপ স্থগিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পণ্যের ওপর চীন পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ায় বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়বে। অর্থনীতিবিদদের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের ফলে স্বল্প মেয়াদে রপ্তানিতে কিছু সুবিধার আশঙ্কা তৈরি হলেও দীর্ঘ মেয়াদে সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ।

 বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির প্রভাব থেকে তখন বাংলাদেশও মুক্ত থাকতে পারবে না। যা দেশের বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে। বিদ্যমান অর্থনীতির যে সংকট তা আরও গভীর হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধের যাত্রাকালে বাংলাদেশও তখন রক্ষা পাবে না। শুল্ক আরোপের ফলে আমদানিতে ব্যয় বাড়বে। যে কারণে সংকট আরও গভীরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের তথ্যমতে, বাংলাদেশ প্রতিবছর গড়ে ৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করছে। অপরদিকে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করছে ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার কোটি ডলারের। 

দেশের অর্থনীতি যাতে দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যায় না পড়ে, সে জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তা পুরো অর্থনীতিকে মন্থর করে দিতে পারে। সে জন্য দেশের অর্থনীতিকে সুরক্ষা দিতে হলে সরকারের অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি বাড়াতে হবে। বৈশ্বিক সংকটে উচ্চ মূল্যস্ফীতির অবসান হোক, সেটাই প্রত্যাশা।