
গত সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা আশ্বস্ত করেছেন, অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে তারা কাজ করছেন। জনগণের প্রত্যাশা, অতি দ্রুত একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে, যার মধ্য দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন হবে। ন্যূনতম সংস্কার সম্পন্ন করে আলোচনা এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব। ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের প্রথম বৈঠক হবে। বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোকে যোগদানের আহ্বান জানানো হবে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কারের পদক্ষেপগুলো ব্যাখ্যা করবেন।
বিএনপি বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ায় জড়িত রয়েছেন মর্মে জনগণের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসনযন্ত্রকে ব্যবহার করার নানা রকম লক্ষণও প্রকাশ পাচ্ছে। যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য সুফল বয়ে আনবে না। দলটির নেতারা বলছেন, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী যথাযথ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যেকোনো দলের আত্মপ্রকাশকে তাদের দল স্বাগত জানাবে।
নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা, গুঞ্জন ও মতবিরোধের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার এই আশ্বাস পাওয়া গেল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এর ফলে নির্বাচনের অনিশ্চয়তা দূর হওয়ার পাশাপাশি জনমনে এক ধরনের স্বস্তি ফিরে আসবে। কারণ নির্বাচন নিয়ে সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির মতপার্থক্য প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। জামায়াতে ইসলামী আগে সংস্কার পরে নির্বাচনের নীতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাস রাজনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সরকারপ্রধানকে বলেছি, এ ধরনের অভিযান আগে হয়েছিল। আগের অভিযানগুলো নিয়ে অনেক অভিযোগ ছিল।
সেই ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। কোনোভাবেই যেন নিরপরাধ মানুষ আক্রান্ত না হন। বর্তমানে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের দাবি নিয়ে মব সংস্কৃতির নামে সীমাহীন জনদুর্ভোগ, সড়কে উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াস লক্ষণীয়। বিএনপি মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার ছয় মাস পার করলেও জনপ্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচিত সরকার না থাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের গতি স্থবির হয়ে পড়েছে। জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী, সংস্কার প্রস্তাবগুলোর সাংবিধানিক ও আইনি ভিত্তি প্রদানের জন্য একটি নির্বাচিত সংসদই কেবল উপযুক্ত ফোরাম। অবিলম্বে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি রয়েছে তাদের দলের পক্ষ থেকে।
অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। এর মধ্য দিয়ে একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনও ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে একজন কমিশনার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় একধাপ এগিয়েছে দেশ। জনমনে স্বস্তি ফেরাতে সরকারের এ পদক্ষেপ এই মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সব দলকে নির্বাচনি প্ল্যাটফর্মে আনতে সক্ষম হবে।