ঢাকা ১ চৈত্র ১৪৩১, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
English

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার  সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৪ পিএম
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার 
সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন

গত সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা আশ্বস্ত করেছেন, অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে তারা কাজ করছেন। জনগণের প্রত্যাশা, অতি দ্রুত একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে, যার মধ্য দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন হবে। ন্যূনতম সংস্কার সম্পন্ন করে আলোচনা এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব। ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের প্রথম বৈঠক হবে। বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোকে যোগদানের আহ্বান জানানো হবে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কারের পদক্ষেপগুলো ব্যাখ্যা করবেন। 

বিএনপি বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ায় জড়িত রয়েছেন মর্মে জনগণের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসনযন্ত্রকে ব্যবহার করার নানা রকম লক্ষণও প্রকাশ পাচ্ছে। যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য সুফল বয়ে আনবে না। দলটির নেতারা বলছেন, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী যথাযথ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যেকোনো দলের আত্মপ্রকাশকে তাদের দল স্বাগত জানাবে। 

নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা, গুঞ্জন ও মতবিরোধের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার এই আশ্বাস পাওয়া গেল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এর ফলে নির্বাচনের অনিশ্চয়তা দূর হওয়ার পাশাপাশি জনমনে এক ধরনের স্বস্তি ফিরে আসবে। কারণ নির্বাচন নিয়ে সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির মতপার্থক্য প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। জামায়াতে ইসলামী আগে সংস্কার পরে নির্বাচনের নীতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাস রাজনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 
‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সরকারপ্রধানকে বলেছি, এ ধরনের অভিযান আগে হয়েছিল। আগের অভিযানগুলো নিয়ে অনেক অভিযোগ ছিল। 

সেই ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। কোনোভাবেই যেন নিরপরাধ মানুষ আক্রান্ত না হন। বর্তমানে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের দাবি নিয়ে মব সংস্কৃতির নামে সীমাহীন জনদুর্ভোগ, সড়কে উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াস লক্ষণীয়। বিএনপি মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার ছয় মাস পার করলেও জনপ্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচিত সরকার না থাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের গতি স্থবির হয়ে পড়েছে। জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী, সংস্কার প্রস্তাবগুলোর সাংবিধানিক ও আইনি ভিত্তি প্রদানের জন্য একটি নির্বাচিত সংসদই কেবল উপযুক্ত ফোরাম। অবিলম্বে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি রয়েছে তাদের দলের পক্ষ থেকে। 

অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। এর মধ্য দিয়ে একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনও ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে একজন কমিশনার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় একধাপ এগিয়েছে দেশ। জনমনে স্বস্তি ফেরাতে সরকারের এ পদক্ষেপ এই মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সব দলকে নির্বাচনি প্ল্যাটফর্মে আনতে সক্ষম হবে।

 

 

জাতিসংঘ মহাসচিবের ঢাকা সফর রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৭:০৭ পিএম
জাতিসংঘ মহাসচিবের ঢাকা সফর
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফরের আন্তর্জাতিক গুরুত্ব রয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের আগমন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মহাসচিবের এই সফরের মধ্য দিয়ে ঝিমিয়ে পড়া রোহিঙ্গা ইস্যুটি ফের আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণে সুযোগ সৃষ্টি হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এটি একটি বড় উদ্যোগ বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছে। এ সময়টা জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা সংকটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করবেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গুতেরেসের ঢাকা সফর এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এই সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখবে।

 এ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এ বছর জাতিসংঘের উদ্যোগে যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেই প্রেক্ষাপটে এই সফরটি গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৭ সালে মায়ানমার সরকারের নির্যাতন ও অত্যাচারে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় রোহিঙ্গারা। 
ওই সময় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসে, তা আন্তর্জাতিক মহলকে ব্যাপক নাড়া দেয়। সে সময় রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চীন উদ্যোগ নেয়। কিন্তু চীনের মধ্যস্থতার উদ্যোগ সফল হয়নি। ফলে রোহিঙ্গা সংকটের কোনো সমাধান হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলছেন, রোহিঙ্গারা যেন মর্যাদার সঙ্গে এবং স্বেচ্ছায় মায়ানমারে প্রত্যাবাসন করতে পারে, সে জন্য বাংলাদেশ সরকার সর্বোচ্চ কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরকে ইতিবাচক উল্লেখ করে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির খবরের কাগজকে বলেন, তার এই সফর তিনটি দিক থেকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 

প্রথমত, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও নির্বাচন-প্রক্রিয়া নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে একটি ধারণা পাবেন মহাসচিব। চাইলে সরকারের এই উদ্যোগে সমর্থন ও কারিগরি সহায়তা দিতে পারে জাতিসংঘ। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র সরকার রোহিঙ্গাদের যে মানবিক সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে, সেই ঘাটতি পূরণে মহাসচিবের সহযোগিতা চাইতে পারে বাংলাদেশ। কেননা, একমাত্র তিনিই পারেন এই ঘাটতি মেটাতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করতে। তৃতীয়ত, রাখাইনে এখন দুর্ভিক্ষ চলছে। সেখান থেকে এখনো রোহিঙ্গা আসছে। তাই রাখাইনে জাতিসংঘ মানবিক সহায়তা দিতে পারে কি না, যাতে রোহিঙ্গারা আর না আসে। 
এ বিষয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে বাংলাদেশ সরকার। রোহিঙ্গা ইস্যুটি দেশের দীর্ঘদিনের একটি অমীমাংসিত সমস্যা।

 বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশে এত বড় বোঝা বহন করা কঠিন। বিষয়টি জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা উন্নত দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের কাছে তুলে ধরা হলেও এ সংকট সমাধানে এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাদের আর্থিক সহায়তার জন্য দাতা সংস্থাগুলো থেকে যে সাহায্য পাওয়া গিয়েছিল, তাও অপ্রতুল। বিদ্যমান এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান খুবই জরুরি। এ ক্ষেত্রে মায়ানমার সরকারকে প্রত্যাবাসন-প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করার জন্য জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আশা করি। আমরা মনে করি, জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফরের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের পথ উন্মোচিত হবে।

 

পাচারের অর্থ ফেরানোর উদ্যোগ সুশাসন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৪:০৭ পিএম
পাচারের অর্থ ফেরানোর উদ্যোগ
সুশাসন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে

দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল খবরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বর্তমান সরকার যেহেতু দেশে আর্থিক দুর্নীতি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ, ফলে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। 

ইতোপূর্বে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র কমিটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ২০২৪ সালে এক গবেষণায় বলেছিল, ৫০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ১১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। আর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি (জিএফআই) বলেছে, ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৯ হাজার কোটি বা ৯০ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, পাচার করা টাকার অঙ্ক বিশাল। সব টাকা ফেরত আনতে সেগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। গ্রহণ করা হচ্ছে আইনি পদক্ষেপ। এই আইনি পদক্ষেপের সঙ্গে আবার যুক্ত থাকবে বিভিন্ন দেশ।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তার মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পাচার হওয়া টাকা উদ্ধার ও তথ্য সংগ্রহে সহযোগিতা চেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পর্যন্ত ৭৫টি মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএএলআর) পাঠিয়েছে। ইতোমধ্যে এই অনুরোধের ৩১টির জবাব পাওয়া গেছে। দুদক বেশ কয়েকটি দেশের সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গেও বৈঠক করেছে। দুদকের এই উদ্যোগে বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো সহযোগিতা করছে। সবচেয়ে বেশি পাচার হয়েছে এমন শীর্ষ ১০টি দেশের সঙ্গে চুক্তি করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এই দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও হংকং। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ চাইছে ৩০টি আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে। সরকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, এভাবে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। অর্থ উপদেষ্টাও এ কথা বলেছেন। ২০০ কোটি টাকার বেশি যারা পাচার করেছেন, তাদের অনেককে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের পাচার করা টাকা ফেরত আনা সম্ভব বলে সরকার মনে করে। এই টাকা ফিরিয়ে আনা গেলে তা থেকে রাজস্বও পেতে পারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রতিষ্ঠানটির ১২ সদস্যের টাস্কফোর্স পাচার করা অর্থ ফেরত এবং তা থেকে রাজস্ব আদায়ে কাজ করছে। 

সব মিলিয়ে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার সমন্বিত বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তারা আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও পাচ্ছে। ফলে আমরা আশান্বিত হতে পারি। আমরাও মনে করি, সরকারের এই উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হতে পারে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব অর্থ হয়তো ফেরত আনা কঠিন হবে। কিন্তু এর সিংহভাগ যদি ফেরত আনা যায়, তাহলে তাও সরকারের অভূতপূর্ব সাফল্য হিসেবে প্রশংসিত হবে। অর্থ পাচার করতে চাইলেও পারা যায় না- এই বার্তাও ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বন্ধ হতে সাহায্য করবে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে সুশাসন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য এই উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি।

নাগরিক সেবায় স্থবিরতা জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত ও সহজ করুন

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩৯ পিএম
নাগরিক সেবায় স্থবিরতা
জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত ও সহজ করুন

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন যেসব নাগরিক সেবা দিয়ে থাকে, সেই সেবাদান প্রক্রিয়ায় চলছে স্থবিরতা ও নৈরাজ্য। এই নগরের ওয়ার্ডের সংখ্যা উত্তরে ৫৪ আর দক্ষিণে ৭৫। আগে এই সেবা পাওয়া যেত স্ব স্ব কাউন্সিলরদের মাধ্যমে। গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই সেবা-প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটছে। সরকার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণসহ দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রদের সঙ্গে কাউন্সিলরদের অপসারণ করে। সেবাপ্রার্থী নাগরিকদের ভোগান্তির শুরু তখন থেকে।   

সিটি করপোরেশন ১৪ ধরনের নাগরিক সেবা দেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন। এ ছাড়া নাগরিক, চারিত্রিক, উত্তরাধিকারী (ওয়ারিশ), আয়, অবিবাহিত, দ্বিতীয় বিয়ে, পারিবারিক সমস্যা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার সত্যায়িত সনদও দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রত্যয়ন, অনাপত্তিপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকার যাচাইকারী হিসেবে স্বাক্ষর দিতে হতো কাউন্সিলরদের। এর বাইরে নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে মশক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজের তদারকির কাজও পরিচালিত হতো কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে। বর্তমানে এর সবকিছুই চলছে জোড়াতালি দিয়ে। খবরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নাগরিক সেবা প্রাপ্তির স্থবিরতার এই ছবিই উঠে এসেছে।

উল্লিখিত কাজগুলোর সঙ্গে জনপ্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত ছিলেন স্ব স্ব ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। তাদের সঙ্গে স্থানীয়দের জানাশোনা ছিল। তিনি সনদ বা নাগরিক সেবার বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে সনদে স্বাক্ষর করতেন। কিন্তু মেয়র ও কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতির কারণে প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরবাসী। 

ওয়ার্ডগুলোর অফিস কাঠামোতেও পরিবর্তন এসেছে। সাত-আটটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠন করা হয়েছে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস। এই নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরেই মিলছে সনদ। কিন্তু একাধিক কাউন্সিলরের দায়িত্ব একজন নির্বাহী কর্মকর্তাকে পালন করতে হচ্ছে বলে সেবা দিতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। সিটি করপোরেশনের অন্য কর্মকর্তারা কয়েক ধাপে সেবাপ্রার্থীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করছেন। ফলে পুরো প্রক্রিয়াটি জটিল হয়ে পড়েছে। সেবাপ্রার্থীদেরও বেড়েছে ভোগান্তি।   
সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ, জন্ম-মৃত্যু ও নাগরিকত্ব সনদ পাওয়া এখন কঠিন হয়ে উঠেছে। নানা ধাপ পেরিয়ে একটি জন্মসনদ নিতে ১০-১২ দিনেরও বেশি সময় লেগে যায়। আগে শুধু একটি নির্দিষ্ট ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলর সনদগুলোতে স্বাক্ষর করতেন। এখন স্বাক্ষর করছেন তিনজন- প্রথম ধাপে যাচাইকারী কর্মকর্তা, দ্বিতীয় ধাপে পরীক্ষক ও তৃতীয় ধাপে প্রধান আঞ্চলিক কর্মকর্তা। ফলে সময় লাগছে বেশি। বাড়ছে সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তি। খবরের কাগজের প্রতিবেদকের কাছে এই ভোগান্তি নিয়ে সেবা নিতে আসা নাগরিকরা অভিযোগ করেছেন। 

আমরা একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। কিন্তু এ জন্য নগরের সেবাপ্রার্থী নাগরিকদের কোনো ধরনের ভোগান্তি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বড় সমস্যা হচ্ছে সময়ক্ষেপণ। বোঝাই যায়, লোকবলের অভাবেই সেবা পেতে নাগরিকদের সময় লাগছে। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে এই লোকবলের সংকট- সাময়িকভাবে হলেও দূর করে- নাগরিক সেবা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করা।

ওয়ার্ডগুলোর অফিসগুলোতে অনেক সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পাওয়া যায় না, বন্ধ থাকে, নাগরিকরা এই অভিযোগও করছেন। প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই সমস্যাও দূর করা সম্ভব। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেবাপ্রার্থীরা জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত সনদ পাওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। ফলে জরুরি ভিত্তিতেই তাদের সেবা দেওয়া প্রয়োজন। আমরা যেন ভুলে না যাই, এই নগরীর প্রত্যেক বাসিন্দা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য কর দিয়ে থাকেন। নাগরিক সেবা পাওয়া তাদের অধিকার। সিটি করপোরেশনের কাজ হচ্ছে তাদের সেবা দেওয়া। যথাসময়ে কোনো রকমের হয়রানি ছাড়াই তা হওয়া বাঞ্ছনীয়। সিটি করপোরেশনের এই কথাটি মনে রাখা জরুরি। সেই সঙ্গে স্থানীয় সরকারেরও বিষয়টির প্রতি নজর থাকতে হবে। আমরা আশা করব, তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নাগরিক সেবা পাওয়াকে সহজ ও দ্রুততর করার চেষ্টা করবে।

বেপরোয়া অপরাধী, আতঙ্কে মানুষ অপরাধ দমনে কঠোর ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম
বেপরোয়া অপরাধী, আতঙ্কে মানুষ
অপরাধ দমনে কঠোর ব্যবস্থা নিন

প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটছে ধর্ষণসহ নানা অপরাধ। ছিনতাইকারী নানা স্থানে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি উন্নতির জন্য পুলিশ দিন-রাত পরিশ্রম করলেও আতঙ্কে রয়েছে মানুষ। অভিভাবক মহল চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছে তাদের শিশুসন্তানদের নিয়ে। দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশু ধর্ষণের সংবাদে আতঙ্কিত রয়েছে তারা। মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনাটি দেশে এই মুহূর্তে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনা মানুষের মনোজগৎকে ব্যাপকভাবে নাড়া দিচ্ছে।

 বিশেষ করে মানুষের মধ্যে কেন ‘বিকৃত রুচি ও মনোবৈকল্য’ সৃষ্টি হচ্ছে, তা নিয়ে সচেতন জনগোষ্ঠীর মধ্যে আলোচনা চলছে। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই দেশের সীতাকুণ্ড, কুমিল্লা, রাজবাড়ী, ঠাকুরগাঁওয়েও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীতে বিভিন্ন এলাকায় চোর ও ছিনতাইকারী সন্দেহে আটজনকে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাই এসব ঘটনার প্রতিবাদে এবং জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুরু হয়েছে সোচ্চার আন্দোলন। ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, নিপীড়নের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে সারা দেশ। আকস্মিকভাবে এ ধরনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এবং সর্বস্তরের মানুষের প্রতিবাদ শুরু হওয়ায় সরকারও নড়েচড়ে বসেছে।

এদিকে সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চলমান রয়েছে। এর পরও দেশজুড়ে হত্যাকাণ্ড, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ, গণপিটুনি বা মব ভায়োলেন্স প্রায় সব স্থানেই চলছে। পাশাপাশি চলছে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান। তবু যেন থেমে নেই অপরাধীরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে অপরাধীরা কাউকেই তোয়াক্কা করছে না। বরং দিনে দিনে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ঈদের সময় গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার আগে বাসাবাড়ি, দোকানপাটসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নিজ দায়িত্বে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন। এ ঘটনায় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের গত সাত মাসে দেশে গণপিটুনির অন্তত ১১৪টি ঘটনায় ১১৯ জন নিহত ও ৭৪ জন আহত হয়েছেন। পুলিশের সদর দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ছয় মাসে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যের ওপর হামলায় ২২৬টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৭০টি বড় ধরনের ঘটনা জনমনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। পুলিশের পরিসংখ্যান অনুসারে চলতি বছরের জানুয়ারিতে সারা দেশে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ২৪২টি। 

দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হলে পুলিশকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাদের আরও বেশি জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। আইন প্রয়োগের বিষয়টি জোরালো হচ্ছে না বলেই নানাভাবে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। এতে পেশাদার অপরাধীরা যেমন সুযোগ নিচ্ছে, আবার ব্যক্তিগত লোভ-লালসা থেকে যে অপরাধ সৃষ্টি হয় সেটিও হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন পরিপূর্ণভাবে আইনের প্রয়োগ ঘটাতে পারছে না, তখনই অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং দেশের ভেতরে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভূমিকা রয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের এক ধরনের সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়েছে। পুলিশের মনোবল চাঙা করা, কাউন্সেলিং অথবা মোটিভেশনের মাধ্যমে পুলিশকে আরও গতিশীল ও সক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে। অনেক সময় পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে নিজেরাই শারীরিক আক্রমণের শিকার হচ্ছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অনেক পুলিশ পরিদর্শক অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি পান না। যার ফলে অপরাধীরা অপরাধ করে পার পেয়ে যায়।

দেশের বর্তমান সংকট পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হতে হবে। অপরাধ দমনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে অন্তর্বর্তী সরকার এই মুহূর্তে আরও উদ্যোগী হবে, এটাই প্রত্যাশা।

রাজধানীতে রিকশার দৌরাত্ম্য শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ০৫:৫৬ পিএম
রাজধানীতে রিকশার দৌরাত্ম্য
শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যবস্থা নিন

রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান এবং  ইজিবাইক এখন অলিগলি ছাপিয়ে মূল সড়কে দাপটের সঙ্গে চলছে। সম্প্রতি সড়কে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সাইনবোর্ডও টাঙানো হয়েছে। তার পরও নিয়ম মানছেন না চালকরা। ঢাকায় ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা বাড়লেও যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এর প্রধান কারণ ভিআইপিসহ প্রধান সড়কে রিকশার বেপরোয়া চলাচল। 

খবরের কাগজের প্রাপ্ত তথ্যমতে, রাজধানীজুড়ে ১০ লাখ রিকশা চলাচল করছে। এর মধ্যে শুধু কামরাঙ্গীরচরে ২০ হাজার রিকশা চলাচল করে। এই রিকশাচালকরা কিছুদিন আগে আন্দোলনে নেমেছিলেন। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করার দাবিতে কয়েক দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন করেছিলেন ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা। ইউনিয়ন নেতারা বলছেন, সড়কে রিকশার শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তারা প্রস্তুত। ৫ আগস্টের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সড়কে রিকশার চলাচল বেড়ে যায়, যা এখন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। 

খবরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিদিনের তথ্যমতে, রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে রিকশা (ব্যাটারি/প্যাডেলচালিত)। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে প্রধান সড়কে রিকশাচালকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। কয়েক মাস ধরে চেষ্টা করেও পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। প্রধান সড়কগুলোয় রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ লেখা বড় সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সতর্ক করার চেষ্টা করলেও মানছেন না চালকরা। ট্রাফিক আইন অমান্য করা একরকম অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। রাস্তা পার হওয়ার জন্য জেব্রা ক্রসিং ও ফুট ওভারব্রিজ কেউ ব্যবহার করছে না। হুটহাট দৌড় দিয়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে। এ ছাড়া সড়কে রিকশার বিশৃঙ্খলা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আইন করে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। ট্রাফিক কনস্টেবলদের অভিযোগ, তারা বাধা দিলে বা কিছু বলতে গেলে অনেক চালকই বাজে আচরণ করেন। কখনো কখনো হামলার হুমকিও দেন। 

গত বছর নভেম্বরে চেম্বার আদালতের রায়ের আলোকে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছিলেন, এখন থেকে প্রধান সড়কে কোনো অটোরিকশা চলবে না। ভেতরের সড়কগুলোতে আগের মতো এসব যান চলবে। এ ছাড়া নতুন কোনো অটোরিকশা যাতে রাজধানীর রাস্তায় না নামে এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার তাগিদ দেন কমিশনার। নভেম্বর মাসেই ডিএমপি সদর দপ্তরের ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক, মালিক, গ্যারেজ মালিক ও রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠকে ট্রাফিক আইন মেনে চলা ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন কমিশনার।

ভিআইপিসহ প্রধান সড়কগুলোয় রিকশা চলাচল বন্ধ করতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ  করতে হবে।  লাইসেন্স, রুট পারমিট ও চালকদের প্রশিক্ষণ দিতে নীতিমালা দ্রুত করতে হবে। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রতিটি থানায় চালক ও মালিকদের নিয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে। যাতে তারা প্রধান সড়ক ব্যবহার করতে নিরুৎসাহিত হয়। চালকরা সচেতন হলে এবং নিয়ম মেনে চলাচল করলে সড়কগুলোয় দুর্ঘটনার সংখ্যাও কমে আসবে।