প্রবন্ধ: বায়ান্নর দিনগুলো
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন-১. ‘আমরা অনশন ভাঙব না’ উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার উপরোক্ত উক্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন ধর্মঘট পালন করে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাবন্দি ছিলেন। সেখানে তার সঙ্গী ছিলেন মহিউদ্দিন আহমদ। রাজবন্দিদের বিনা বিচারে আটক রাখার প্রতিবাদে তারা অনশন ধর্মঘট পালন করেন এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে অনশন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিতে অন্যায়ের বিরদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের জন্য তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমানের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে।
প্রশ্ন-২. ‘যদি এ পথে মৃত্যু এসে থাকে তবে তাই হবে’ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার উপরোক্ত উক্তিটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপসহীন মানসিকতা ও দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।
তরুণ বয়স থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন আদর্শ দেশপ্রেমিক এবং ন্যায়ের পথের সৈনিক। ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় দেখা যায়, ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সরকার বিনা বিচারে এ দেশের অসংখ্য নেতাকর্মীকে জেলে আটক করে রেখেছিল। পাকিস্তান সরকারের এমন দমন-নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমদ অনশন ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সে সময় তারা উভয়েই কারাবন্দি ছিলেন। সরকার যতদিন না রাজবন্দিদের মুক্তি দেবে, ততদিন তাদের এই অনশন ধর্মঘট অব্যাহত রাখতে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন। আর এজন্য প্রয়োজনে তারা জীবন দিতেও প্রস্তুত। শেখ মুজিবুর রহমান প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে সেই দৃঢ়তারই প্রমাণ দিয়েছেন।
আরো পড়ুন : বায়ান্নর দিনগুলো প্রবন্ধের ২৬টি জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর, ২য় পর্ব
প্রশ্ন-৩। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা কারাগার থেকে বের হতে দেরি করেছিলেন, যে কারণে তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানা পরিবর্তনের খবর অন্যদের জানানোর জন্য ঢাকা কারাগার থেকে বের হতে দেরি করেছিলেন।
ঢাকা কারাগারে অনশনের খবরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমদকে জেল পরিবর্তন করে ফরিদপুর জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল। এ সময় বঙ্গবন্ধু বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন। তিনি ঢাকার নেতাকর্মীদের তার এ বদলির খবর জানাতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি নানা রকম বাহানায় দেরি করতে থাকেন যাতে জাহাজ ফেল হয়। নারায়ণগঞ্জ থেকে জাহাজে ফরিদপুর নিয়ে যাওয়া হবে তাদের এ খবর ঢাকার নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তিনি বুদ্ধি ও কৌশল করেন এবং জাহাজ ফেল করাতে সক্ষম হন। এর পর সহকর্মীরা খবর পান এবং পরবর্তী জাহাজে তারা ফরিদপুর যান। বিষয়টি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতারই ফল।
প্রশ্ন-৪. ‘অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যদি মরতে পারি, সে মরাতেও শান্তি আছে’ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার উপরোক্ত উক্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আত্মত্যাগের মাহাত্ম্য বোঝাতে রাজনৈতিক সহকর্মীদের উদ্দেশে এ কথা বলেছিলেন।
‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় লেখক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামী মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য তার সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করার মানসিকতা ছিল ছেলেবেলা থেকেই। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে জীবন দেওয়াকে গৌরবজনক বলে মনে করতেন। তাই মৃত্যুকে তিনি ভয় করতেন না। উদ্ধৃত উক্তিটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই বিশ্বাসই ধ্বনিত হয়েছে কারাগারে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অনশন করে প্রয়োজনে জীবন দেওয়ার প্রতিজ্ঞায়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে তরুণ ছাত্রনেতা হিসেবে তার ভূমিকা ছিল ইতিহাস প্রসিদ্ধ।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা
কবীর