প্রবন্ধ : মানবকল্যাণ
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: মানবকল্যাণ যেভাবে মানব-মর্যাদার সহায়ক হয়ে উঠবে, তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব হলে মানবকল্যাণ মানব-মর্যাদার সহায়ক হয়ে উঠবে। ‘মানবকল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক কল্যাণময় পৃথিবী রচনার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন পরস্পর সংযোগ ও সহযোগিতার ক্ষেত্র গড়ে তোলার মাধ্যমে।
‘মানবকল্যাণ’ প্রবন্ধে কল্যাণময় পৃথিবী বলতে লেখক এমন পৃথিবীকে বুঝিয়েছেন যেখানে মানব-মর্যাদা কখনো ক্ষুণ্ন হয় না। সব অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটে। তিনি মনে করেন মুক্তবুদ্ধির সহায়তায় পরিকল্পনামাফিক পথে চললে তা সম্ভব; কারণ একমাত্র সুষ্ঠু পরিকল্পনাকেই সৃজনশীল মানবিক কাজে নিয়োগ করা যায়। তাই বলা যায়, কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব হলেই মানবকল্যাণ মানব-মর্যাদার সহায়ক হয়ে উঠবে। এ জন্য দরকার হবে বিজ্ঞানের অভাবনীয় আবিষ্কারকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা। বিজ্ঞান যেন পৃথিবী ধ্বংসের কারণ না হয়।
প্রশ্ন: ‘মানবকল্যাণ’ প্রবন্ধে মনুষ্যত্বের অবমাননা বলতে লেখক যা বুঝিয়েছেন তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘মানবকল্যাণ’ প্রবন্ধে মনুষ্যত্বের অবমাননা বলতে লেখক লোকদেখানো মামুলি দান-খয়রাতকে বুঝিয়েছেন।
সমাজে মানবকল্যাণের নামে কিছু লোক মূলত এর অবমাননা করে। তারা সস্তা মানসিকতা নিয়ে দান-খয়রাত করে নিজেকে দানশীল প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে দানগ্রহণকারী ব্যক্তির মানবিক ও সামাজিক মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়। লোক দেখানোর জন্য এমন দান করা গর্হিত কাজ। এজন্য লেখক একে মনুষ্যত্বের অবমাননা বলেছেন। দান-খয়রাতের মাধ্যমে কাউকে চিরকাল পরজীবী বানিয়ে রাখলে আর নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করলে তেমন দান-খয়রাত সবচেয়ে অমানবিক কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়। কারণ কোনো মানুষ পৃথিবীতে অন্য মানুষের প্রভুত্ব করার অধিকার রাখে না।
আরো পড়ুন : মানবকল্যাণ প্রবন্ধের ৫টি অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর, ৪র্থ পর্ব
প্রশ্ন: ‘মানবকল্যাণ’ প্রবন্ধে মহৎ প্রতিভাদের আদর্শ ব্যবহার করতে না পারাকে দুঃখের বিষয় বলা হয়েছে, যে কারণে তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আমরা যে বাংলাদেশের মহৎ প্রতিভাদের রেখে যাওয়া আদর্শের উত্তরাধিকারকে জীবনে প্রয়োগ করতে পারিনি, লেখক সে বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন, কারণ যাদের বুদ্ধি-পরামর্শে সমাজ-জাতি-রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেবেন, তারা কোনো মূল্যই পেলেন না।
সত্যিকার মানবকল্যাণ মহৎ চিন্তা-ভাবনার ফসল। যুগে যুগে বাংলাদেশে অনেক মহৎ প্রতিভার জন্ম হয়েছে। তারা আমাদের জন্য মানবিক চিন্তা ও আদর্শের উত্তরাধিকার রেখে গেছেন। কিন্তু আমরা সেই আদর্শের পথে চলতে ব্যর্থ হয়েছি। এটি দুঃখের বিষয় যে, যারা জাতিকে এগিয়ে নেবে তারা কোনো মূল্যই পেলেন না। উন্নত পৃথিবী মহৎ
ব্যক্তিদেরই সাধনার ফসল। অথচ এ দেশে লালন-রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-বঙ্কিমচন্দ্র প্রমুখ ব্যক্তিদের আদর্শ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।
প্রশ্ন: যেভাবে কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব বলে প্রাবন্ধিক মনে করেন, তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘মানবকল্যাণ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক মনে করেন, মুক্তবুদ্ধির চর্চার মাধ্যমে সুপরিকল্পিত পথে কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব।
‘মানবকল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক মানবকল্যাণের প্রকৃত তাৎপর্য উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন অনেকে দুস্থ মানুষকে করুণাবশত দান-খয়রাত করাকে মানবকল্যাণ বলে মনে করেন। কিন্তু লেখকের মতে, এমন কাজ সংকীর্ণ মনোভাবের পরিচায়ক। এভাবে কখনোই কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব নয়। তার মতে, মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াসই হলো মানবকল্যাণ। অর্থাৎ অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানোই মানবকল্যাণ। তাই প্রাবন্ধিকের বিশ্বাস মুক্তবুদ্ধির চর্চার মাধ্যমে পরিকল্পনামাফিক পথেই কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব। আসলে কারও সমস্যার স্থায়ী সমাধান যে বুদ্ধিতে আসবে, সে বুদ্ধিই হলো প্রকৃত মানবকল্যাণ।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা
কবীর