
উপন্যাস : কাকতাড়ুয়া
অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন: আলী ও মিঠু গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায় কেন?
উত্তর: আহাদ মুন্সির আক্রোশ থেকে বাঁচতে এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য আলি ও মিঠু গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়।
রাজাকার আহাদ মুন্সির বাড়িতে আগুন দেওয়ার পেছনে বুধার হাত থাকলেও নাবালক ও আপাতদৃষ্টিতে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হওয়ায় সে ছিল সন্দেহের ঊর্ধ্বে। আহাদ মুন্সি সবসময় সন্দেহ করত স্বাধীনতাকামী যুবক আলি ও মধুকে। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য তারা গ্রাম ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু আহাদ মুন্সির বাড়িতে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তাদের গ্রামে অবস্থান আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। তাই তারা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে সেই রাতেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়।
প্রশ্ন: মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন বুধাকে বঙ্গবন্ধু, মেশিনগান, যুদ্ধ ইত্যাদি নামে ডাকে কেন?
উত্তর: বুধার মাঝে মুক্তিসংগ্রামের অদম্য চেতনা লক্ষ করে বুধাকে বঙ্গবন্ধু, মেশিনগান, যুদ্ধ ইত্যাদি নাম দেয় মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন।
বুধা স্বদেশপ্রেমের অনন্য এক দৃষ্টান্ত। দুর্দান্ত সাহসিকতার সঙ্গে সে রুখে দেয় শত্রুর গতি। তার মাঝে এমন মুক্তির আকাঙ্ক্ষা দেখতে পেয়ে অভিভূত হন মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন। তার চোখে বুধা যেন দেশের মানুষের মুক্তিচেতনার অনন্য এক প্রতীক। তাই ভালোবেসে বুধাকে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন নামে ডাকেন তিনি।
প্রশ্ন: মিলিটারিদের ক্যাম্পে যাওয়ার সময় বুধা সঙ্গে করে পেয়ারা নেয় কেন?
উত্তর: পেয়ারার লোভ দেখিয়ে পাকিস্তানিদের সঙ্গে ভাব জমিয়ে তোলার উদ্দেশ্যেই বুধা মিলিটারিদের ক্যাম্পে যাওয়ার সময় সঙ্গে করে পেয়ারা নিয়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিনের নির্দেশে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পটি রেকি করার দায়িত্ব পড়েছিল বুধার ওপর। তাই ক্যাম্পে সেনাদের অবস্থান, অস্ত্রশস্ত্রের অবস্থান ও পরিমাণ ইত্যাদি খুব কাছ থেকে ভালোভাবে দেখা প্রয়োজন ছিল। সে ভাবত পাকিস্তানিদের সঙ্গে ভাব জমাতে পারলে কাজ আরও সহজ হয়ে যাবে। পেয়ারা খাওয়ানোর ছলে তাদের সঙ্গে আড্ডা জমিয়ে নিজের কার্যসিদ্ধির পরিকল্পনা করে বুধা। এ কারণেই সে সঙ্গে করে অনেক পেয়ারা নিয়ে যায়।
প্রশ্ন: আহাদ মুন্সি বুধাকে কাকতাড়ুয়া বানিয়ে রাখার নির্দেশ দেয় কেন?
উত্তর: বেয়াদবি করার শাস্তি হিসেবে আহাদ মুন্সি বুধাকে কাকতাড়ুয়া বানিয়ে রাখার নির্দেশ দেয়।
পাকিস্তানিদের নির্মম অত্যাচারের সারথী হওয়ায় আহাদ মুন্সিকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করত বুধা। তাই তার সঙ্গে দেখা হলেই অদ্ভুত কথাবার্তা বলে তাকে বিভ্রান্ত করত সে। মিলিটারিদের ক্যাম্পে বুধা আবার একই আচরণ করলে তার ওপর ভীষণ ক্ষিপ্ত হয় আহাদ মুন্সি। সঙ্গী রাজাকার তিনজনকে আদেশ দেয় বুধাকে কাকতাড়ুয়া বানিয়ে রাখতে।
আরো পড়ুন : কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের ৮টি অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর, ১ম পর্ব
প্রশ্ন: বুধাকে দেখে রাজাকার তিনজন ভয় পেয়ে যায় কেন?
উত্তর: বুধার যন্ত্রণাক্লিষ্ট, কালিমাখা মুখটি রাজাকার তিনজনকে ভয় পাইয়ে দেয়।
কাকতাড়ুয়া বানানোর জন্য বুধার মুখে রাজাকাররা কালি মেখে দিয়েছিল। প্রচণ্ড জ্বরের কারণে বুধার মুখ কদাকার হয়ে ওঠে। জ্বরের ঘোরে সুনসান পরিবেশে একাকী ছেলেটির কোঁকানোর দৃশ্য দেখে রাজাকাররা ভাবে এ যেন ভূত দেখছে। এ কারণেই ওরা ভয় পেয়ে যায়।
প্রশ্ন: বুধা মাটি কাটার দলে কাজ নিতে চায় কেন?
উত্তর: পাকিস্তানি বাহিনীর বাংকারে গোপনে মাইন পুঁতে রাখার জন্য বুধা মাটি কাটার দলে কাজ নিতে চায়।
মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন বুধাদের গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পটি ধ্বংস করে দিতে চায়। হানাদাররা বাংকার তৈরির উদ্যোগ নিলে সে বাংকারটি উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বুধাকে একটি মাইন দেওয়া হয় বাংকারে পুঁতে রেখে আসার জন্য। বাংকারের মাটি খোঁড়ার লোকদের সঙ্গে কাজের সুযোগ পেলেই কেবল তা করা সম্ভব। এ কারণেই বুধা মাটি কাটার দলে কাজ নিতে চায়।
প্রশ্ন: মধুর মা বুধাকে রোজ এসে ভাত খেয়ে যেতে বলেন কেন?
উত্তর: বুধার মুখের দিকে তাকিয়ে ছেলেকে হারানোর কষ্ট ভুলতে চান বলে মধুর মা বুধাকে রোজ এসে ভাত খেয়ে যেতে বলেন।
বুধা ও মধু সমবয়সী বন্ধু ছিল। পাকিস্তানিদের হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে শহিদ হয় মধু। ছেলের জন্য মধুর মায়ের শোকার্ত বুক হাহাকার করে ওঠে। বুধার মাঝে তিনি যেন মৃত ছেলেরই ছায়া দেখতে পান। এ কারণেই বুধাকে তিনি রোজ এসে ভাত খেয়ে যেতে বলেন।
প্রশ্ন: ‘মরণের কথা মনে করলে যুদ্ধ করা যায় না’ কুন্তি এ কথা বলেছিল কেন?
উত্তর: বুধাকে মানসিকভাবে উদ্দীপ্ত করার জন্যই কুন্তি আলোচ্য উক্তিটি করে।
বুধা অসীম সাহসী এক বালক। দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য সে তার সাহস ও বুদ্ধি খাটিয়ে যুদ্ধ করে যায়। বাবা-মায়ের কবরের সামনে এসে হঠাৎই বদলে যায় বুধা। ভয়-ডরহীন বুধার মাঝে মৃত্যুভয়ের চিহ্ন দেখা যায়। কিন্তু মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে নামা যায় না। সে ক্ষেত্রে পরাজয় সুনিশ্চিত। বুধা যাতে তার মনোবল না হারায় সে জন্যই এ কথাটি বলেছিল তার চাচাতো বোন কুন্তি।
লেখক : সিনিয়র শিক্ষক (বাংলা)
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল, ঢাকা
কবীর