
প্রবন্ধ রচনা
(২৩ জানুয়ারি প্রকাশের পর)
শ্রমের মর্যাদা
ছাত্র জীবনে শ্রমের উপযোগিতা: শ্রম যে শুধু সমষ্টির জীবনকেই সুন্দর ও মহিমাময় করে তা নয়, ছাত্রজীবনে তার গুরুত্ব ব্যাপক। যে ব্যক্তি অলস তার জীবনে নেমে আসে অভিশাপ। ব্যর্থতার গ্লানিতে তার জীবন হয় লাঞ্ছিত। মানুষের, স্নেহ ভালোবাসার অঙ্গন থেকে তার নির্বাসন হয়। ছাত্র জীবনে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় পরিশ্রম করতে না পারলে তাকে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হতে হয়। কিন্তু তখন যদি সে পরিশ্রম করত তবে তার জীবনে নেমে আসত সফলতা। শ্রমের ক্লান্তি তার জীবনে বিশ্রামের মাধুর্য ছড়িয়ে দেয়। শিক্ষার্থীরা মেধাবী ও পরিশ্রমী হলে অন্যের কাছে মর্যাদার আসন করে নিতে পারে।
শ্রমজীবী মনীষীর দৃষ্টান্ত: বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তি ও মনীষীদের জীবনে সাফল্যের কারণ পরিশ্রম। জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন, আইনস্টাইন প্রমুখ ব্যক্তিরা শ্রমের মর্যাদার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শুধু মেধার জোরে কেউ বিখ্যাত হননি বা মনীষী খেতাবও তারা পাননি। পরিশ্রমের কারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখনো দুপুরে ঘুমাননি। নজরুল ইসলাম রুটির দোকানে কাজ করতেন। পরিশ্রমী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ও জর্জ ওয়াশিংটন ছিলেন জগদ্বিখ্যাত। পরিশ্রম করতে গিয়ে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন সাদাসিধে জীবনযাপন করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী। তিনি বলেছেন, ‘নিজ পরিশ্রমে উপার্জিত রুজি সর্বোত্তম।’
শ্রমের মর্যাদা: মানব জীবনে শ্রমের মর্যাদার গুরুত্ব অনেক। মানুষের পরিশ্রমই মানুষকে পরিচয় করে দেয়, নির্দিষ্ট করে দেয় তার স্থান, মর্যাদা ও ক্ষমতা। পরিশ্রমের কারণেই মানুষ অন্য অনেক মানুষের কাছে শ্রদ্ধাভাজন হয়ে ওঠে। আবার পরিশ্রম না করার ফলে সে হয় লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত। জনৈক মনীষী শ্রমবিমুখ মানুষকে ‘চোর’ বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পরিশ্রম না করে খায়, সে চুরি করে খায়।’ খোলাফায়ে রাশেদীন হজরত ওমর নিজ হাতে সংসারের কাজ সম্পাদন করতেন। প্রখ্যাত ইংরেজি সাহিত্যিক কার্লাইল শারীরিক শ্রমকে ‘পবিত্র’ বলে অভিহিত করেছেন। শ্রমের প্রতি মর্যাদা আছে বলেই আমেরিকার অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীই অন্যের বাড়িতে পরিচারকের কাজ করে নিজের লেখাপড়ার খরচ বহন করত। প্রতিটি মানুষের জীবনে মর্যাদার প্রশ্নে পরিশ্রমের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। প্রতিটি ধর্ম ও সব মনীষীরা শ্রম ও শ্রমিকের প্রতি বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। কেননা পরিশ্রম না করলে প্রাণীদেরও বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ত।
শ্রম ও কীর্তি: বিশ্বে সব কালজয়ী কীর্তিগুলো শ্রমের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। তাজমহল, রোম নগরী, চীনের প্রাচীর, মিসরের পিরামিড প্রভৃতি কীর্তিগুলো শত বছরের হাজার হাজার মানুষের পরিশ্রমের ফলে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান কাল পর্যন্ত যত সভ্যতার উদ্ভব ঘটেছে সবই শ্রমের ফলশ্রুতি। যে দেশগুলো আজ উন্নতির শিখরে আসীন, সেই উন্নতির পেছনে রয়েছে তাদের জাতির পরিশ্রম।
উপসংহার: জীবনকে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিকভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য শ্রম ছাড়া অন্য কোনো সহজ পথ নেই। তাই শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ব্যক্তিগত তথা জাতিগতভাবে একান্ত প্রয়োজন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা
কবীর