
গল্প : রেইনকোট
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন-২. ‘রেইনকোট’ গল্পে মিন্টুর বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘রেইনকোট’ গল্পে মিন্টু মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল, যা ১৯৭১ সালে তরুণদের প্রতিবাদী-প্রতিরোধী চেতনার-ই বহিঃপ্রকাশ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ দেশে পাকিস্তানি হানাদাররা ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড চালায়। বিবেকবোধসম্পন্ন কোনো মানুষ তখন ঘরে বসে থাকতে পারেনি। দেশের সম্মান রক্ষার্থে তারা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিল। ‘রেইনকোট’ গল্পের মিন্টুও ঠিক এ কারণেই বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই মিন্টু বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল। তরুণরা দলে দলে যুদ্ধে গিয়েছিল বলেই আপামর জনগণের এ যুদ্ধ গণযুদ্ধে রূপ নেয়।
প্রশ্ন-৩. ‘রেইনকোট’ গল্পে প্রিন্সিপাল সব স্কুল-কলেজ থেকে শহিদ মিনার হটানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন কেন?
উত্তর: ‘রেইনকোট’ গল্পে প্রিন্সিপাল সব স্কুল-কলেজ থেকে শহিদ মিনার হটানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন, কারণ তিনি পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন এবং তাই বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রতীক শহিদ মিনার ভাঙতে তিনি মিলিটারিকে পরামর্শ দেন।
গল্পে প্রিন্সিপাল সাহেব একজন স্বার্থান্বেষী ও বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তি। তিনি পাকিস্তানের জন্য দিন-রাত দোয়া-দরুদ পড়েন এবং কান্নাকাটি করেন। তিনি মনে করেন, শহিদ মিনার হচ্ছে পাকিস্তানের শরীরের কাঁটা। তাই তিনি পাকিস্তানি মিলিটারিকে সব স্কুল-কলেজ থেকে শহিদ মিনার হটানোর জন্য সবিনয় অনুরোধ করেন। আসলে তিনি ভেবেছিলেন শহিদ মিনার ভাঙলে বাঙালির মনোবল ভেঙে পড়বে। কারণ বায়ান্নর চেতনা থেকেই বাঙালিরা একাত্তরের সাহস-শক্তি-অনুপ্রেরণা পেয়েছিল।
আরো পড়ুন: রেইনকোট গল্পের ১টি অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর, ৭ম পর্ব
প্রশ্ন-৪. ‘এগুলো হলো পাকিস্তানের শরীরের কাঁটা’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিতে ভাষা-শহিদদের স্মরণে নির্মিত শহিদ মিনার সম্পর্কে পাকিস্তানিদের দোসর প্রিন্সিপালের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত হয়েছে।
‘রেইনকোট’ গল্পে বর্ণিত প্রিন্সিপাল পাকিস্তানপন্থি কট্টর রাজাকার। শিক্ষিত বাঙালি হওয়া সত্ত্বেও তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা করেন। বাঙালির স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করতে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীকে নানারকম পরামর্শ দেন। এর অংশ হিসেবে, তিনি পাকিস্তানি বাহিনীকে দেশের সব শহিদ মিনার ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেন। তার মতে, শহিদ মিনার মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উজ্জীবিত করে। তাই শহিদ মিনার পাকিস্তানের শরীরের কাঁটা। এখানে ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের আদর্শগত পরাজয়ের বিষয়টিও প্রকাশিত হয়েছে। সেই গ্লানি আর ঈর্ষা থেকেই প্রিন্সিপাল শহিদ মিনার ভাঙার পরামর্শ দেন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা
কবীর